অনলাইন ডেস্ক
কয়েক মাস ধরে পানামা খালের পানি ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির স্তর কমে যাওয়ায় বড় ধরনের নৌ–জটের সৃষ্টি হয়েছে, চলাচল করছরে নগণ্যসংখ্যক জাহাজ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই খরা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রতিকূল অবস্থার কারণে নৌযান চলাচলে বেশি সময় লাগছে, এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
লেথ এজেন্সির আঞ্চলিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপক সোরেন স্টোকেবেক অ্যান্ডারসেন বলেছেন, ‘খরা এই খালে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের গতিপ্রকৃতি আমূল বদলে দিয়েছে।’
পানামা খালের খরা আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহন শিল্পকেও ব্যাহত করছে। বিশ্বে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের প্রায় ৫ শতাংশ ও মার্কিন কনটেইনারের ৪০ শতাংশ এই খাল দিয়ে যাতায়াত করে। শুষ্ক মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে পানামা খাল হয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে পরিবহন সংস্থাগুলোর অপেক্ষার প্রহর আরও বাড়তে থাকে। ফলে দীর্ঘকাল ধরে এই খালের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলো এখন রুট পরিবর্তনের কথা ভাবছে। বিকল্প হিসেবে সুয়েজ খালের মতো বিশ্বের অন্যান্য প্রধান সহজ রুটে পণ্য পরিবহনে প্রতিষ্ঠানগুলো লজিস্টিক ধাঁধায় পড়েছে।
চরম জলবায়ুর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন শিপিং কোম্পানি, বিশ্লেষক এবং সরকার আশঙ্কা করছে, পানামা খাল সংকট কোনো বিপর্যয় নয় বরং নতুন বাস্তবতা হতে পারে। সময়মতো পণ্য সরবরাহের জন্য খালটি বিশ্ব বাণিজ্যের একটি নির্ভরযোগ্য ধমনি হয়ে থাকবে কি না—তা নিয়ে শিপিং কোম্পানিগুলো প্রশ্ন তুলেছে এবং খালের বিকল্প খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।
নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রকৌশলের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোসেফ এল. শোফার বলেন, ‘খরা পানামা খালের জন্য গুরুতর হুমকি। ১০০ বছরেরও আগে তৈরি খালটি স্বল্প বৃষ্টিসহনীয় করে বানানো হয়নি।’
খালটি সচল রাখতে নিয়মমাফিক বৃষ্টিপাত অপরিহার্য। প্রতিটি ট্রানজিটের জন্য প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়। এই পানি আসে কৃত্রিম হ্রদ থেকে, যেটি বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল।
পানামায় বর্ষাকাল সাধারণত এপ্রিলের শেষ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলে। কিন্তু গত বছর অক্টোবরে গড় থেকে ৪১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং চলতি বছরের বর্ষাকাল পর্যন্ত কম বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরে খালের প্রধান জলাধার লেক গাতুনের পানি বছরের এই সময়ের জন্য অস্বাভাবিক মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে এবং আগামী মাসগুলোতে পানির স্তর আরও নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শক্তিশালী এল নিনোর প্রভাবে এই খরা দেখা দিয়েছে। এল নিনো জলবায়ুর একটি চক্র, যা প্রতি দুই থেকে সাত বছরে সমুদ্রের উষ্ণতা দিয়ে পরিমাপ করা হয়। এল নিনো বায়ু ও সমুদ্র স্রোতের স্বাভাবিক সঞ্চালনকে ব্যাহত করে। এমনটি না হলে পানামা এবং অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে বেশি বৃষ্টিপাত হতো।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতের ইসাম ফারেস ইনস্টিটিউটের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ কর্মসূচির পরিচালক নাদিম ফারাজাল্লা বলেন, ‘পানামা এল নিনোর সঙ্গে পরিচিত হলেও এবারের খরা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি তীব্র। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হওয়ার কারণে পানামায় এমন ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন আসবে। আর আমরা এখনো এল নিনোর প্রকৃত ভয়ংকর রূপ দেখিনি।’
পানামার জন্য এল নিনোর প্রভাব হবে ভয়াবহ। প্রথমত, পানামার অর্থনীতি এই খালের ওপর নির্ভরশীল। ২০২২ সালে পানামা এই খাল থেকে ৪৩২ কোটি ডলার আয় করেছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এল নিনো সৃষ্ট খরার কারণে চলতি অর্থবছরে খালটি আনুমানিক ২০ কোটি ডলার রাজস্ব হারাতে পারে। খরা পানামার পানি সরবরাহকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
পানামার কর্মকর্তারা খাল দিয়ে জাহাজ চলাচলে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন মাত্র ৩৬–২৪টি জাহাজ চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ১৮–তে নামিয়ে আনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফরেন পলিসির কাছে একটি ই–মেইল পাঠিয়ে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাঁরা অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছেন। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন লক চেম্বারের জন্য পানি পুনর্ব্যবহার শুরু করেছে এবং জাহাজগুলো যথেষ্ট ছোট হলে একসঙ্গে দুটি জাহাজ ট্রানজিটের অনুমতি দিচ্ছে। খাল কর্তৃপক্ষ সঞ্চারণ সীমাও কঠোর করেছে, এটি বোঝায় কতটা গভীরে জাহাজের তলা যেতে পারে তার সীমা নির্ধারণ। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, এটি কিছু জাহাজকে পণ্যের ভার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে বাধ্য করতে পারে।
ইমেরিটাস অধ্যাপক শোফার বলেন, এগুলো কঠোর ব্যবস্থা। এসব জলপথে পণ্য পরিবহন কোম্পানিগুলোর মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।
২০০৬ সালে খালের ক্ষমতা দ্বিগুণ করার একটি প্রকল্পের নেতৃত্ব দানকারী পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্টিন টোরিজোস বলেন, অপ্রত্যাশিত বিধিনিষেধ খাল ব্যবহারকারীদের ভবিষ্যতে সক্ষমতা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বাণিজ্য ব্যবস্থাপক অ্যান্ডারসন বলেন, খরার আগে জাহাজগুলো মাত্র তিন সপ্তাহ আগে পারাপারের জন্য বুকিং দিতে পারত বা বুকিং ছাড়াই লাইনে অপেক্ষা করতে পারত। কিন্তু এখন কিছু ক্ষেত্রে অপেক্ষার সময় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে এবং কখনো কখনো কয়েক মাস আগে বুকিং করতে হচ্ছে। খাল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ লাইন এড়াতে অতিরিক্ত স্লটের নিলাম শুরু করেছে। সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠান নিলামে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ ডলারে রাজি হয়েছে।
শিপিং কোম্পানিগুলোর সামনে এখন তিনটি বিকল্প পথ খোলা আছে, যার সবকটিই ব্যয়বহুল: লাইনে দাঁড়াতে না চাইলে টাকা ঢালো, অপেক্ষা করো অথবা অন্য কোনো রুট খোঁজো।
ভিন্ন রুট বেছে নেওয়া জাহাজগুলোর জন্য আবার তিনটি পথ খোলা। সেগুলো হলো—মিসরের সুয়েজ খাল, চিলির ম্যাগেলান প্রণালি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ। পরের দুটি নির্ভরযোগ্য কিন্তু যাত্রাপথ অতি দীর্ঘ। সংক্ষিপ্ততম বিকল্প পথ হলো মানবসৃষ্ট জলপথ সুয়েজ খাল, যা ভূমধ্যসাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সুয়েজ খাল দিয়ে দিনে ১০০ টির মতো জাহাজ চলাচল করতে পারে, যা পানামা খালের বর্তমান সক্ষমতার চারগুণ বেশি।
তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ চলায় সুয়েজ নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। লোহিত সাগরে ইরান–সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ২৭টি জাহাজে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বাহিনী গত বৃহস্পতিবার ইয়েমেনজুড়ে ১৬টি স্থানে কমপক্ষে ৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রকাশ্যে এটিকে ‘লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক জাহাজে হুথি হামলার প্রতিক্রিয়া’ বলে অভিহিত করেছেন।
নৌ–সংকট বেড়ে যাওয়ায় জাহাজগুলো রুট পরিবর্তন করছে। বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম কন্টেইনার-শিপিং সংস্থাগুলোর মধ্যে চারটি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত স্থগিত করেছে।
এদিকে বিকল্প পথের অনুসন্ধান লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে অবস্থিত বাণিজ্য রুটের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে। দেশগুলো পানামা খালের ট্র্যাফিক থেকে জাহাজগুলো নিজেদের দিকে টানার আশা করছে।
এসব প্রণালি নির্মাণ এখনো বাকি। নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওর্তেগা বলেছেন, তিনি একটি আন্তঃমহাসাগরীয় খাল নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান। তবে অনেক নিকারাগুয়ান এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র এবং সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশটিতে এমন সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করেন।
অন্যদিকে কলম্বিয়ার পরিকল্পনা সম্ভবত কিছুটা বাস্তবসম্মত। ফরেন পলিসি সাময়িকীকে পাঠানো একটি ই–মেইলে কলম্বিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকার এরই মধ্যে দেশের প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্যারিবীয় উপকূলগুলোকে সংযুক্ত করার জন্য ৭ মাইল টানেলসহ ১২৩ মাইল দীর্ঘ আন্তঃমহাসাগরীয় ট্রেনের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ এগিয়েছে। মন্ত্রণালয় আশা করছে, প্রকল্পটি ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ টেন্ডারের জন্য প্রস্তুত হবে।
অন্যান্য প্রকল্প এরই মধ্যে সম্পন্ন বা চলমান। ২০২২ সালে প্যারাগুয়ে একটি ডুয়েল–ক্যারেজ মোটরওয়ের প্রথমার্ধের উদ্বোধন করেছে। এই বায়োসেনিক রোড করিডর চিলি থেকে শুরু হয়ে আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়ের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়ে ব্রাজিলে গিয়ে শেষ হবে। এ ছাড়া, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর মেক্সিকো পণ্য পরিবহনে পানামা খালের সঙ্গে পাল্লা দিতে প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে রেলওয়ে প্রকল্পের জন্য ২৮০ কোটি ডলার রেলওয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে।
এই প্রকল্পগুলো শিগগিরই পানামা খালের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও অধ্যাপক শোফার মেক্সিকোর প্রকল্পটিকে প্রতিশ্রুতিশীল বলে মনে করেন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, এটি আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে পণ্য পরিবহনের একটি ছোট অংশের জন্যই কাজ করবে এবং ব্যায়বহুল হওয়ায় এটি পানামা খালের চেয়ে কম আকর্ষণীয় হবে। যেখানে অ্যান্ডারসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী শিপিং সংস্থাগুলোর এসব অপরীক্ষিত রুটে মুখ ফেরানোর সম্ভাবনা নেই, কারণ এই শিল্পে নির্ভরযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ।
আপাতত, পানামা খালই এ অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্য রুট থাকছে। কিন্তু খাল কর্তৃপক্ষ যদি জলবায়ু পরিবর্তনের চরম মাত্রাকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা ব্যবসা হারাতে পারে।
পানামা খালের বোর্ড প্রস্তাবিত একটি সমাধান হলো ইন্দিও নদীতে বাঁধ দেওয়া এবং নিকটবর্তী একটি পাহাড়ের মাঝ দিয়ে খাল খনন করে গাতুন হ্রদে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৯০ কোটি ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এটি সম্পন্ন হতে ছয় বছর লাগতে পারে। ২০০৬ সালে খাল সম্প্রসারণে এই প্রকল্পের ব্যাপক সমর্থন থাকলেও এটি এখন বেশ বিতর্কিত। একটি নতুন বাঁধ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অনেক ভূমি প্লাবিত করবে এবং স্থানীয় অনেক সম্প্রদায়কে বাস্তুচ্যুত করবে। চলতি বছরের মে মাসে পানামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এটিকে সমর্থন করার বিষয়ে বেশ সতর্ক রাজনীতিকরা।
এই নতুন জলাধার সৃষ্টির প্রস্তাব এরই মধ্যে চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত বসন্তের পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। যেখানে বিক্ষোভে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পানামা অচল ছিল। পানামাবাসী তড়িঘড়ি করে নেওয়া একটি সরকারি চুক্তির প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী, পানামার সরকার কানাডীয় কোম্পানি ফার্স্ট কোয়ান্টাম মিনারেলসের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘মিনেরা পানামা’কে অন্তত ২০ বছরের জন্য দেশটির একটি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জঙ্গলে বিশাল ওপেন–পিট (উন্মুক্ত) তামার খনি পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিল। সে সময় পানামাবাসী রাজপথে নেমে ‘আমরা একটি খালের দেশ, খনির দেশ নয়’ স্লোগান দিয়েছিল।
পানামা সিটির সাবেক ভাইস মেয়র এবং পরিবেশবাদী সংস্থা ‘সাসটেইনেবল পানামার’ প্রেসিডেন্ট রাইসা ব্যানফিল্ড বলেছেন, বিক্ষোভটি দেশের ‘আত্মপরিচয় সংকটকে’ প্রকাশ করেছে। কারণ এটি তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারক। পানামার জনগণ খাল ও খনিজ শিল্পের সঙ্গে জলজ সম্পদের জন্যও লড়াই করে।
তাই অধ্যাপক শোফার বলেন, ‘তাঁরা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করুক বা না করুক, খাল কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আগে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে।’
তবে পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট টোরিজোস এখনো আশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন, পানামা এটিকে শেষ জলবায়ু দুর্ঘটনা হিসেবে নিতে পারে, যেখানে খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়। আমি মনে করি, [প্রতিযোগিতা] একটি ইতিবাচক চাপ তৈরি করে, কারণ এটি আমাদের বিকাশের সুযোগ দেয়।
শোফার আরও আশাবাদী যে, প্রতিযোগিতা খালটিকে আরও উপযুক্ত করে তোলার প্রকৃত পরিবেশ তৈরি করতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, পানামা খাল কর্তৃপক্ষ সমাধান নিয়ে আসবে—ঠিক যেমনটি ২০১৬ সালে এটি একটি ছোট পরিসরে করেছিল, যখন এটি সফলভাবে পানি অপচয় রোধ করেছিল।
পরিশেষে অধ্যাপক শোফার বলেন, ‘তবে এতে সময় লাগবে এবং অন্তর্বর্তী সময়ে তারা কীভাবে এটি পরিচালনা করে তা সত্যিই আগ্রহের বিষয় হবে।’
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ
কয়েক মাস ধরে পানামা খালের পানি ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির স্তর কমে যাওয়ায় বড় ধরনের নৌ–জটের সৃষ্টি হয়েছে, চলাচল করছরে নগণ্যসংখ্যক জাহাজ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই খরা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রতিকূল অবস্থার কারণে নৌযান চলাচলে বেশি সময় লাগছে, এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
লেথ এজেন্সির আঞ্চলিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপক সোরেন স্টোকেবেক অ্যান্ডারসেন বলেছেন, ‘খরা এই খালে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের গতিপ্রকৃতি আমূল বদলে দিয়েছে।’
পানামা খালের খরা আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহন শিল্পকেও ব্যাহত করছে। বিশ্বে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের প্রায় ৫ শতাংশ ও মার্কিন কনটেইনারের ৪০ শতাংশ এই খাল দিয়ে যাতায়াত করে। শুষ্ক মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে পানামা খাল হয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে পরিবহন সংস্থাগুলোর অপেক্ষার প্রহর আরও বাড়তে থাকে। ফলে দীর্ঘকাল ধরে এই খালের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলো এখন রুট পরিবর্তনের কথা ভাবছে। বিকল্প হিসেবে সুয়েজ খালের মতো বিশ্বের অন্যান্য প্রধান সহজ রুটে পণ্য পরিবহনে প্রতিষ্ঠানগুলো লজিস্টিক ধাঁধায় পড়েছে।
চরম জলবায়ুর কারণে বিশ্বের বিভিন্ন শিপিং কোম্পানি, বিশ্লেষক এবং সরকার আশঙ্কা করছে, পানামা খাল সংকট কোনো বিপর্যয় নয় বরং নতুন বাস্তবতা হতে পারে। সময়মতো পণ্য সরবরাহের জন্য খালটি বিশ্ব বাণিজ্যের একটি নির্ভরযোগ্য ধমনি হয়ে থাকবে কি না—তা নিয়ে শিপিং কোম্পানিগুলো প্রশ্ন তুলেছে এবং খালের বিকল্প খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।
নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রকৌশলের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোসেফ এল. শোফার বলেন, ‘খরা পানামা খালের জন্য গুরুতর হুমকি। ১০০ বছরেরও আগে তৈরি খালটি স্বল্প বৃষ্টিসহনীয় করে বানানো হয়নি।’
খালটি সচল রাখতে নিয়মমাফিক বৃষ্টিপাত অপরিহার্য। প্রতিটি ট্রানজিটের জন্য প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়। এই পানি আসে কৃত্রিম হ্রদ থেকে, যেটি বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল।
পানামায় বর্ষাকাল সাধারণত এপ্রিলের শেষ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চলে। কিন্তু গত বছর অক্টোবরে গড় থেকে ৪১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং চলতি বছরের বর্ষাকাল পর্যন্ত কম বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরে খালের প্রধান জলাধার লেক গাতুনের পানি বছরের এই সময়ের জন্য অস্বাভাবিক মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে এবং আগামী মাসগুলোতে পানির স্তর আরও নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শক্তিশালী এল নিনোর প্রভাবে এই খরা দেখা দিয়েছে। এল নিনো জলবায়ুর একটি চক্র, যা প্রতি দুই থেকে সাত বছরে সমুদ্রের উষ্ণতা দিয়ে পরিমাপ করা হয়। এল নিনো বায়ু ও সমুদ্র স্রোতের স্বাভাবিক সঞ্চালনকে ব্যাহত করে। এমনটি না হলে পানামা এবং অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে বেশি বৃষ্টিপাত হতো।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতের ইসাম ফারেস ইনস্টিটিউটের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ কর্মসূচির পরিচালক নাদিম ফারাজাল্লা বলেন, ‘পানামা এল নিনোর সঙ্গে পরিচিত হলেও এবারের খরা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি তীব্র। জলবায়ু পরিবর্তন তীব্র হওয়ার কারণে পানামায় এমন ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন আসবে। আর আমরা এখনো এল নিনোর প্রকৃত ভয়ংকর রূপ দেখিনি।’
পানামার জন্য এল নিনোর প্রভাব হবে ভয়াবহ। প্রথমত, পানামার অর্থনীতি এই খালের ওপর নির্ভরশীল। ২০২২ সালে পানামা এই খাল থেকে ৪৩২ কোটি ডলার আয় করেছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এল নিনো সৃষ্ট খরার কারণে চলতি অর্থবছরে খালটি আনুমানিক ২০ কোটি ডলার রাজস্ব হারাতে পারে। খরা পানামার পানি সরবরাহকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
পানামার কর্মকর্তারা খাল দিয়ে জাহাজ চলাচলে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন মাত্র ৩৬–২৪টি জাহাজ চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ১৮–তে নামিয়ে আনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফরেন পলিসির কাছে একটি ই–মেইল পাঠিয়ে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাঁরা অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছেন। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন লক চেম্বারের জন্য পানি পুনর্ব্যবহার শুরু করেছে এবং জাহাজগুলো যথেষ্ট ছোট হলে একসঙ্গে দুটি জাহাজ ট্রানজিটের অনুমতি দিচ্ছে। খাল কর্তৃপক্ষ সঞ্চারণ সীমাও কঠোর করেছে, এটি বোঝায় কতটা গভীরে জাহাজের তলা যেতে পারে তার সীমা নির্ধারণ। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, এটি কিছু জাহাজকে পণ্যের ভার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে বাধ্য করতে পারে।
ইমেরিটাস অধ্যাপক শোফার বলেন, এগুলো কঠোর ব্যবস্থা। এসব জলপথে পণ্য পরিবহন কোম্পানিগুলোর মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।
২০০৬ সালে খালের ক্ষমতা দ্বিগুণ করার একটি প্রকল্পের নেতৃত্ব দানকারী পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্টিন টোরিজোস বলেন, অপ্রত্যাশিত বিধিনিষেধ খাল ব্যবহারকারীদের ভবিষ্যতে সক্ষমতা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বাণিজ্য ব্যবস্থাপক অ্যান্ডারসন বলেন, খরার আগে জাহাজগুলো মাত্র তিন সপ্তাহ আগে পারাপারের জন্য বুকিং দিতে পারত বা বুকিং ছাড়াই লাইনে অপেক্ষা করতে পারত। কিন্তু এখন কিছু ক্ষেত্রে অপেক্ষার সময় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে এবং কখনো কখনো কয়েক মাস আগে বুকিং করতে হচ্ছে। খাল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ লাইন এড়াতে অতিরিক্ত স্লটের নিলাম শুরু করেছে। সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠান নিলামে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ ডলারে রাজি হয়েছে।
শিপিং কোম্পানিগুলোর সামনে এখন তিনটি বিকল্প পথ খোলা আছে, যার সবকটিই ব্যয়বহুল: লাইনে দাঁড়াতে না চাইলে টাকা ঢালো, অপেক্ষা করো অথবা অন্য কোনো রুট খোঁজো।
ভিন্ন রুট বেছে নেওয়া জাহাজগুলোর জন্য আবার তিনটি পথ খোলা। সেগুলো হলো—মিসরের সুয়েজ খাল, চিলির ম্যাগেলান প্রণালি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ। পরের দুটি নির্ভরযোগ্য কিন্তু যাত্রাপথ অতি দীর্ঘ। সংক্ষিপ্ততম বিকল্প পথ হলো মানবসৃষ্ট জলপথ সুয়েজ খাল, যা ভূমধ্যসাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সুয়েজ খাল দিয়ে দিনে ১০০ টির মতো জাহাজ চলাচল করতে পারে, যা পানামা খালের বর্তমান সক্ষমতার চারগুণ বেশি।
তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ চলায় সুয়েজ নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। লোহিত সাগরে ইরান–সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ২৭টি জাহাজে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বাহিনী গত বৃহস্পতিবার ইয়েমেনজুড়ে ১৬টি স্থানে কমপক্ষে ৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রকাশ্যে এটিকে ‘লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক জাহাজে হুথি হামলার প্রতিক্রিয়া’ বলে অভিহিত করেছেন।
নৌ–সংকট বেড়ে যাওয়ায় জাহাজগুলো রুট পরিবর্তন করছে। বিশ্বের পাঁচটি বৃহত্তম কন্টেইনার-শিপিং সংস্থাগুলোর মধ্যে চারটি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত স্থগিত করেছে।
এদিকে বিকল্প পথের অনুসন্ধান লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে অবস্থিত বাণিজ্য রুটের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে। দেশগুলো পানামা খালের ট্র্যাফিক থেকে জাহাজগুলো নিজেদের দিকে টানার আশা করছে।
এসব প্রণালি নির্মাণ এখনো বাকি। নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওর্তেগা বলেছেন, তিনি একটি আন্তঃমহাসাগরীয় খাল নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান। তবে অনেক নিকারাগুয়ান এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র এবং সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশটিতে এমন সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করেন।
অন্যদিকে কলম্বিয়ার পরিকল্পনা সম্ভবত কিছুটা বাস্তবসম্মত। ফরেন পলিসি সাময়িকীকে পাঠানো একটি ই–মেইলে কলম্বিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকার এরই মধ্যে দেশের প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্যারিবীয় উপকূলগুলোকে সংযুক্ত করার জন্য ৭ মাইল টানেলসহ ১২৩ মাইল দীর্ঘ আন্তঃমহাসাগরীয় ট্রেনের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ এগিয়েছে। মন্ত্রণালয় আশা করছে, প্রকল্পটি ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ টেন্ডারের জন্য প্রস্তুত হবে।
অন্যান্য প্রকল্প এরই মধ্যে সম্পন্ন বা চলমান। ২০২২ সালে প্যারাগুয়ে একটি ডুয়েল–ক্যারেজ মোটরওয়ের প্রথমার্ধের উদ্বোধন করেছে। এই বায়োসেনিক রোড করিডর চিলি থেকে শুরু হয়ে আর্জেন্টিনা এবং প্যারাগুয়ের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়ে ব্রাজিলে গিয়ে শেষ হবে। এ ছাড়া, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর মেক্সিকো পণ্য পরিবহনে পানামা খালের সঙ্গে পাল্লা দিতে প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে রেলওয়ে প্রকল্পের জন্য ২৮০ কোটি ডলার রেলওয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে।
এই প্রকল্পগুলো শিগগিরই পানামা খালের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও অধ্যাপক শোফার মেক্সিকোর প্রকল্পটিকে প্রতিশ্রুতিশীল বলে মনে করেন। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, এটি আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে পণ্য পরিবহনের একটি ছোট অংশের জন্যই কাজ করবে এবং ব্যায়বহুল হওয়ায় এটি পানামা খালের চেয়ে কম আকর্ষণীয় হবে। যেখানে অ্যান্ডারসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী শিপিং সংস্থাগুলোর এসব অপরীক্ষিত রুটে মুখ ফেরানোর সম্ভাবনা নেই, কারণ এই শিল্পে নির্ভরযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ।
আপাতত, পানামা খালই এ অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্য রুট থাকছে। কিন্তু খাল কর্তৃপক্ষ যদি জলবায়ু পরিবর্তনের চরম মাত্রাকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা ব্যবসা হারাতে পারে।
পানামা খালের বোর্ড প্রস্তাবিত একটি সমাধান হলো ইন্দিও নদীতে বাঁধ দেওয়া এবং নিকটবর্তী একটি পাহাড়ের মাঝ দিয়ে খাল খনন করে গাতুন হ্রদে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৯০ কোটি ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এটি সম্পন্ন হতে ছয় বছর লাগতে পারে। ২০০৬ সালে খাল সম্প্রসারণে এই প্রকল্পের ব্যাপক সমর্থন থাকলেও এটি এখন বেশ বিতর্কিত। একটি নতুন বাঁধ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অনেক ভূমি প্লাবিত করবে এবং স্থানীয় অনেক সম্প্রদায়কে বাস্তুচ্যুত করবে। চলতি বছরের মে মাসে পানামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এটিকে সমর্থন করার বিষয়ে বেশ সতর্ক রাজনীতিকরা।
এই নতুন জলাধার সৃষ্টির প্রস্তাব এরই মধ্যে চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত বসন্তের পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। যেখানে বিক্ষোভে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পানামা অচল ছিল। পানামাবাসী তড়িঘড়ি করে নেওয়া একটি সরকারি চুক্তির প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী, পানামার সরকার কানাডীয় কোম্পানি ফার্স্ট কোয়ান্টাম মিনারেলসের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘মিনেরা পানামা’কে অন্তত ২০ বছরের জন্য দেশটির একটি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জঙ্গলে বিশাল ওপেন–পিট (উন্মুক্ত) তামার খনি পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিল। সে সময় পানামাবাসী রাজপথে নেমে ‘আমরা একটি খালের দেশ, খনির দেশ নয়’ স্লোগান দিয়েছিল।
পানামা সিটির সাবেক ভাইস মেয়র এবং পরিবেশবাদী সংস্থা ‘সাসটেইনেবল পানামার’ প্রেসিডেন্ট রাইসা ব্যানফিল্ড বলেছেন, বিক্ষোভটি দেশের ‘আত্মপরিচয় সংকটকে’ প্রকাশ করেছে। কারণ এটি তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারক। পানামার জনগণ খাল ও খনিজ শিল্পের সঙ্গে জলজ সম্পদের জন্যও লড়াই করে।
তাই অধ্যাপক শোফার বলেন, ‘তাঁরা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করুক বা না করুক, খাল কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আগে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে।’
তবে পানামার সাবেক প্রেসিডেন্ট টোরিজোস এখনো আশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন, পানামা এটিকে শেষ জলবায়ু দুর্ঘটনা হিসেবে নিতে পারে, যেখানে খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়। আমি মনে করি, [প্রতিযোগিতা] একটি ইতিবাচক চাপ তৈরি করে, কারণ এটি আমাদের বিকাশের সুযোগ দেয়।
শোফার আরও আশাবাদী যে, প্রতিযোগিতা খালটিকে আরও উপযুক্ত করে তোলার প্রকৃত পরিবেশ তৈরি করতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, পানামা খাল কর্তৃপক্ষ সমাধান নিয়ে আসবে—ঠিক যেমনটি ২০১৬ সালে এটি একটি ছোট পরিসরে করেছিল, যখন এটি সফলভাবে পানি অপচয় রোধ করেছিল।
পরিশেষে অধ্যাপক শোফার বলেন, ‘তবে এতে সময় লাগবে এবং অন্তর্বর্তী সময়ে তারা কীভাবে এটি পরিচালনা করে তা সত্যিই আগ্রহের বিষয় হবে।’
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ
গত সেপ্টেম্বরে ভ্লাদিভস্টকের একটি অর্থনৈতিক ফোরামে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। এ বিষয়ে পরে তিনি একটি উপহাসমূলক হাসি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
৯ ঘণ্টা আগেআব্রাহাম অ্যাকর্ডস মূলত একটি চটকদার বিষয়। এতে বাস্তব, স্থায়ী আঞ্চলিক শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছুই এতে ছিল না। যেসব রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেছে তারা তা করেছে—কারণ, তারা ইসরায়েলকে ওয়াশিংটনে প্রভাব বিস্তারের পথ হিসেবে দেখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ইসরায়েলের ওপর মার
৯ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেখেয়ালি, সেটা আগা থেকেই সবার জানা। তবে দেশটির নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এসেও তিনি অসংলগ্ন, অশ্লীল, স্বৈরতান্ত্রিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ থেকে অন্তত একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে একটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
৯ দিন আগেএবারের আইএমইএক্স মহড়ায়ও কিছু দেশ আছে যারা আগেরবারও অংশগ্রহণ করেছিল। এসব দেশের নাম আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই মহড়ার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—ইরান ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে এমন দেশগুলোর কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত
১০ দিন আগে