অনলাইন ডেস্ক
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সিংহাসনে রাজা হিসেবে অভিষেক ঘটেছে রাজা তৃতীয় চার্লসের এবং নিয়ম অনুসারে তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। তবে রানির অনুপস্থিতি অস্ট্রেলিয়ায় এখনো তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।
ফ্রান্সেস কিনরাইড নামের এক অস্ট্রেলীয় নারী ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘রানির মৃত্যুতে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। রানি চলে গেছেন, আমরা অবশ্য একজন নতুন রাজা পেয়েছি। আমরা আশা করি, নতুন রাজা আমাদের জন্য ভালো কিছুই করবেন।’
গত বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) স্কটল্যান্ডের বালমোরালে ৯৬ বছর বয়সী রানি এলিজাবেথ শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। রানির মৃত্যুর পর কয়েক দিনের ধারাবাহিক শোকানুষ্ঠান শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। যেমন, শনিবার অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের কুইন্স টেরেসে রানির স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। পার্লামেন্টের কার্যক্রম ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ২২ সেপ্টেম্বরে এক দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া রানির শেষকৃত্যের আগপর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকছে।
এসবের পাশাপাশি ‘প্রজাতন্ত্র’ থাকবে কি না, তা নিয়েও নতুন করে বিতর্ক উঠেছে দেশটিতে। রানির মৃত্যু এ বিতর্ককে উসকে দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল গত শুক্রবার বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি বলেছিলাম, রানির রাজত্ব শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে (প্রজাতন্ত্র) আসলে আমাদের ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, এখন রানির রাজত্ব শেষ হয়েছে। তার মানে এখনই গণভোট হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে গণভোট অনিবার্য ছিল।’
টার্নবুল একজন কট্টর প্রজাতন্ত্রপন্থী হওয়া সত্ত্বেও বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি রানির স্মৃতি স্মরণ করে কেঁদেছেন। এই দৃশ্যই প্রমাণ করে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে রাজতন্ত্রের সম্পর্ক একই সঙ্গে জটিল এবং মর্মস্পর্শী।
এদিকে গত রোববার একই প্রসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, ‘বড় বড় সাংবিধানিক প্রশ্ন পরে মোকাবিলা করতে হবে। এখন এসব নিয়ে কথা বলার সময় নয়।’
আলবেনিজ গত জুনে ‘সহকারী মন্ত্রী’ নামে একটি নতুন পদ সৃষ্টি করেছেন এবং সেই পদে ম্যাট থিসলেথওয়েটকে নিয়োগ দিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থিসলেথওয়েট বলেছিলেন, ‘রানির জীবদ্দশায় অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ রাজপরিবারের ভূমিকার কোনো পরিবর্তন হবে না।’
অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডাটন। তিনি একজন রাজতন্ত্রপন্থী হিসেবে সুপরিচিত। নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকেরা যখন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন—অস্ট্রেলিয়ায় কেন একজন রাজা প্রয়োজন, তখন তিনি সে প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। কোনো উত্তর দেননি। যদিও আলবেনিজের সরকার এর আগে একবার স্পষ্ট করেই বলেছিল, প্রজাতন্ত্র প্রসঙ্গে কোনো এক সময় অবশ্যই গণভোট হবে।
বিবিসি বলেছে, আলবেনিজের সরকার যদি ২০২৪ বা ২০২৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে, তবে একটি গণভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে প্রজাতন্ত্র বিষয়ে ১৯৯৯ সালে একবার গণভোট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। তখন ‘না’ ভোট জয়যুক্ত হয়েছিল। কারণ, বেশির ভাগ অস্ট্রেলীয় রানির সঙ্গে থাকাকেই বেছে নিয়েছিলেন।
রানির মৃত্যুর পরপরই সেই গণভোটের প্রসঙ্গ টেনে একটি বিবৃতি দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় প্রজাতন্ত্র আন্দোলনের (অস্ট্রেলিয়ান রিপাবলিক মুভমেন্ট) নেতারা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ সালের গণভোটের সময় স্বয়ং রানি অস্ট্রেলীয়দের সম্পূর্ণ স্বাধীন জাতি হওয়ার অধিকারকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ দেশটির জনগণের হাতেই রয়েছে। তারাই গণতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবে রাজতন্ত্র থাকবে কি না। এটিই সাংবিধানিক উপায়।
সেই গণভোটের পর সিডনি অপেরায় অনেক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। অনেক জল গড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নদ-নদীতে। অস্ট্রেলিয়ার মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। এখন রানির মৃত্যু একটি বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার জাতিসত্তার ভেতর। কারণ, তিনিই ছিলেন মূলত অস্ট্রেলিয়া ও রাজতন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সেতু। অনেক অস্ট্রেলীয় বলেছেন, রানির মৃত্যুর পর তাঁরা পরিবারের একজন সদস্য হারানোর মতো ব্যথা অনুভব করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার একটি বড় অংশের মানুষের কাছে রানি এখনো ভীষণ জনপ্রিয়। এর পেছনে কারণ কী? অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং বলেছেন, ‘রানি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেক জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। তিনি আজীবন জনগণের জন্য সেবাধর্মী অনেক কাজ করে গেছেন। জনকল্যাণমূলক কাজ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি।’ ধারণা করা হয়, রানির বিপুল জনপ্রিয়তার এটি একটি বড় কারণ।
এদিকে নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসকেও অনেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সিডনিতে বসবাসরত এলসে ফক্স নামের এক নারী বলেছেন, ‘আমরা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি। গণতন্ত্রকে সঙ্গী করে আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি, তা ভেবে দেখতে হবে। একই সঙ্গে রানি আমাদের জন্য যা করেছেন, তাকেও সম্মান করতে হবে।’
অস্ট্রেলীয় প্রজাতন্ত্র আন্দোলনের চেয়ারপারসন পিটার ফিটজসিমন্স বলেছেন, ‘রাজা তৃতীয় চার্লসকে অবশ্যই শ্রদ্ধা জানাই। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। তবে তাঁর মা যে অপরিসীম আনুগত্য উপভোগ করে গেছেন, তিনি সম্ভবত তা করতে পারবেন না।’
ব্রিটিশ রাজতন্ত্র থেকে স্বাধীনতা চান পিটার। তিনি আরও বলেন, ‘এতে সন্দেহ নেই, রানির শাসনামলে অস্ট্রেলিয়া একটি সাবালক ও স্বাধীন দেশ হয়ে উঠেছে। এর অর্থ এই নয়, নতুন রাজাকে অস্ট্রেলিয়ার জনগণ প্রশংসচিত্তে গ্রহণ করবে।’
রানির মৃত্যুর পর অস্ট্রেলিয়ার ‘প্রজাতন্ত্র আন্দোলন’ নতুন গতি পেয়েছে। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল অস্ট্রেলিয়ান গ্রিনসের প্রধান অ্যাডাম বন্ড টুইটারে এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘এখন অস্ট্রেলিয়াকে অবশ্যই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। অস্ট্রেলিয়াকে হতে হবে একটি প্রজাতন্ত্র। এ জন্য আমাদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।’
নতুন প্রজন্মের অস্ট্রেলীয়রা মনে করেন, রানির উপস্থিতি ব্যাপকভাবে থেকে গেলেও ভেতরে-ভেতরে অস্ট্রেলিয়ার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। এমা স্ট্যান্টন নামের এক তরুণ হিসাবরক্ষক ও অর্থ ব্যবস্থাপক বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার তরুণেরা রাজপরিবারের তরুণদের সঙ্গে বেশি সম্পর্কযুক্ত। তারা উইলিয়ামকে রাজা হিসেবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।’ এমা আরও বলেন, ‘আমি প্রিন্স হ্যারির সমান বয়সী। রাজপরিবারের নতুন প্রজন্মের সঙ্গে আমি বড় হয়েছি। সুতরাং তাদের সঙ্গে বেশি নৈকট্য অনুভব করি।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম প্রজন্মের কাছে রানির মৃত্যু গভীর আবেগ বয়ে এনেছে। তাঁরা অনেকেই শোক প্রকাশ করছেন। আবার অনেকে ব্রিটিশ উপনিবেশের বেদনা ও অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ওপর ব্রিটিশদের সহিংসতার জন্য রানির ভূমিকাকেও ঘৃণাভরে স্মরণ করছেন। অনেকে মনে করেন, আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুতির পেছনে রানির ভূমিকা রয়েছে।
যখন রানির রাজত্ব শুরু হয়, তখন অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের জনসংখ্যার অংশ হিসেবে গণনাও করা হয়নি। ম্যালকম টার্নবুল রানির ঐতিহাসিক প্রথম রাজকীয় সফর সম্পর্কে বলেছেন, ১৯৫৪ সালে রানি যখন প্রথমবারের মতো এখানে এসেছিলেন, তখন তিনি একজন ব্রিটিশ হিসেবেই এই জাতিকে দেখেছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলীয়রা ছিল ব্রিটিশদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
অস্ট্রেলিয়ার কেউ কেউ এখনো রাজতন্ত্রকে স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে দেখেন। নিজেকে রাজতন্ত্রবাদী পরিচয় দিয়ে জোশ রব নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া এখনো নতুন রাজাকে রাজত্ব করার সুযোগ দেবে। কারণ, আমাদের শাসনের ধারাবাহিকতা দরকার। নতুন রাজার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হতে হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত রাজা তৃতীয় চার্লস ঠিকঠাকমতো কথাবার্তা বলছেন এবং কাজ করছেন।’
অস্ট্রেলিয়া এখনো তার অন্ধকার অতীত ও রাজপরিবারের ভূমিকার সমাধান করতে লড়াই করে যাচ্ছে। রানির মৃত্যুর পর এ লড়াই আরও সামনে চলে এসেছে। বিশ্ববাসী দেখছে, অস্ট্রেলিয়ায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতিমধ্যে একধরনের মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। যেমনটা টার্নবুল বলেছিলেন, ‘আপনি রানিকে ভালোবাসতে পারেন...সমস্যা নেই, তারপরও বলুন—আমরা একটি স্বাধীন দেশ। আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের ভেতর থেকেই একজন হওয়া উচিত।’ বিতর্কটাও ঠিক এইখানেই!
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ফিন্যান্সিয়াল রিভিউ ও এপি
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সিংহাসনে রাজা হিসেবে অভিষেক ঘটেছে রাজা তৃতীয় চার্লসের এবং নিয়ম অনুসারে তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। তবে রানির অনুপস্থিতি অস্ট্রেলিয়ায় এখনো তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।
ফ্রান্সেস কিনরাইড নামের এক অস্ট্রেলীয় নারী ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘রানির মৃত্যুতে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। রানি চলে গেছেন, আমরা অবশ্য একজন নতুন রাজা পেয়েছি। আমরা আশা করি, নতুন রাজা আমাদের জন্য ভালো কিছুই করবেন।’
গত বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) স্কটল্যান্ডের বালমোরালে ৯৬ বছর বয়সী রানি এলিজাবেথ শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। রানির মৃত্যুর পর কয়েক দিনের ধারাবাহিক শোকানুষ্ঠান শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। যেমন, শনিবার অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের কুইন্স টেরেসে রানির স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। পার্লামেন্টের কার্যক্রম ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ২২ সেপ্টেম্বরে এক দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া রানির শেষকৃত্যের আগপর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকছে।
এসবের পাশাপাশি ‘প্রজাতন্ত্র’ থাকবে কি না, তা নিয়েও নতুন করে বিতর্ক উঠেছে দেশটিতে। রানির মৃত্যু এ বিতর্ককে উসকে দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল গত শুক্রবার বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি বলেছিলাম, রানির রাজত্ব শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে (প্রজাতন্ত্র) আসলে আমাদের ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, এখন রানির রাজত্ব শেষ হয়েছে। তার মানে এখনই গণভোট হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে গণভোট অনিবার্য ছিল।’
টার্নবুল একজন কট্টর প্রজাতন্ত্রপন্থী হওয়া সত্ত্বেও বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি রানির স্মৃতি স্মরণ করে কেঁদেছেন। এই দৃশ্যই প্রমাণ করে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে রাজতন্ত্রের সম্পর্ক একই সঙ্গে জটিল এবং মর্মস্পর্শী।
এদিকে গত রোববার একই প্রসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, ‘বড় বড় সাংবিধানিক প্রশ্ন পরে মোকাবিলা করতে হবে। এখন এসব নিয়ে কথা বলার সময় নয়।’
আলবেনিজ গত জুনে ‘সহকারী মন্ত্রী’ নামে একটি নতুন পদ সৃষ্টি করেছেন এবং সেই পদে ম্যাট থিসলেথওয়েটকে নিয়োগ দিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থিসলেথওয়েট বলেছিলেন, ‘রানির জীবদ্দশায় অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ রাজপরিবারের ভূমিকার কোনো পরিবর্তন হবে না।’
অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডাটন। তিনি একজন রাজতন্ত্রপন্থী হিসেবে সুপরিচিত। নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকেরা যখন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন—অস্ট্রেলিয়ায় কেন একজন রাজা প্রয়োজন, তখন তিনি সে প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। কোনো উত্তর দেননি। যদিও আলবেনিজের সরকার এর আগে একবার স্পষ্ট করেই বলেছিল, প্রজাতন্ত্র প্রসঙ্গে কোনো এক সময় অবশ্যই গণভোট হবে।
বিবিসি বলেছে, আলবেনিজের সরকার যদি ২০২৪ বা ২০২৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে, তবে একটি গণভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে প্রজাতন্ত্র বিষয়ে ১৯৯৯ সালে একবার গণভোট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। তখন ‘না’ ভোট জয়যুক্ত হয়েছিল। কারণ, বেশির ভাগ অস্ট্রেলীয় রানির সঙ্গে থাকাকেই বেছে নিয়েছিলেন।
রানির মৃত্যুর পরপরই সেই গণভোটের প্রসঙ্গ টেনে একটি বিবৃতি দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় প্রজাতন্ত্র আন্দোলনের (অস্ট্রেলিয়ান রিপাবলিক মুভমেন্ট) নেতারা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ সালের গণভোটের সময় স্বয়ং রানি অস্ট্রেলীয়দের সম্পূর্ণ স্বাধীন জাতি হওয়ার অধিকারকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ দেশটির জনগণের হাতেই রয়েছে। তারাই গণতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবে রাজতন্ত্র থাকবে কি না। এটিই সাংবিধানিক উপায়।
সেই গণভোটের পর সিডনি অপেরায় অনেক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। অনেক জল গড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নদ-নদীতে। অস্ট্রেলিয়ার মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। এখন রানির মৃত্যু একটি বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার জাতিসত্তার ভেতর। কারণ, তিনিই ছিলেন মূলত অস্ট্রেলিয়া ও রাজতন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সেতু। অনেক অস্ট্রেলীয় বলেছেন, রানির মৃত্যুর পর তাঁরা পরিবারের একজন সদস্য হারানোর মতো ব্যথা অনুভব করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার একটি বড় অংশের মানুষের কাছে রানি এখনো ভীষণ জনপ্রিয়। এর পেছনে কারণ কী? অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং বলেছেন, ‘রানি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেক জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। তিনি আজীবন জনগণের জন্য সেবাধর্মী অনেক কাজ করে গেছেন। জনকল্যাণমূলক কাজ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি।’ ধারণা করা হয়, রানির বিপুল জনপ্রিয়তার এটি একটি বড় কারণ।
এদিকে নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসকেও অনেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সিডনিতে বসবাসরত এলসে ফক্স নামের এক নারী বলেছেন, ‘আমরা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি। গণতন্ত্রকে সঙ্গী করে আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি, তা ভেবে দেখতে হবে। একই সঙ্গে রানি আমাদের জন্য যা করেছেন, তাকেও সম্মান করতে হবে।’
অস্ট্রেলীয় প্রজাতন্ত্র আন্দোলনের চেয়ারপারসন পিটার ফিটজসিমন্স বলেছেন, ‘রাজা তৃতীয় চার্লসকে অবশ্যই শ্রদ্ধা জানাই। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। তবে তাঁর মা যে অপরিসীম আনুগত্য উপভোগ করে গেছেন, তিনি সম্ভবত তা করতে পারবেন না।’
ব্রিটিশ রাজতন্ত্র থেকে স্বাধীনতা চান পিটার। তিনি আরও বলেন, ‘এতে সন্দেহ নেই, রানির শাসনামলে অস্ট্রেলিয়া একটি সাবালক ও স্বাধীন দেশ হয়ে উঠেছে। এর অর্থ এই নয়, নতুন রাজাকে অস্ট্রেলিয়ার জনগণ প্রশংসচিত্তে গ্রহণ করবে।’
রানির মৃত্যুর পর অস্ট্রেলিয়ার ‘প্রজাতন্ত্র আন্দোলন’ নতুন গতি পেয়েছে। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল অস্ট্রেলিয়ান গ্রিনসের প্রধান অ্যাডাম বন্ড টুইটারে এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘এখন অস্ট্রেলিয়াকে অবশ্যই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। অস্ট্রেলিয়াকে হতে হবে একটি প্রজাতন্ত্র। এ জন্য আমাদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।’
নতুন প্রজন্মের অস্ট্রেলীয়রা মনে করেন, রানির উপস্থিতি ব্যাপকভাবে থেকে গেলেও ভেতরে-ভেতরে অস্ট্রেলিয়ার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। এমা স্ট্যান্টন নামের এক তরুণ হিসাবরক্ষক ও অর্থ ব্যবস্থাপক বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার তরুণেরা রাজপরিবারের তরুণদের সঙ্গে বেশি সম্পর্কযুক্ত। তারা উইলিয়ামকে রাজা হিসেবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।’ এমা আরও বলেন, ‘আমি প্রিন্স হ্যারির সমান বয়সী। রাজপরিবারের নতুন প্রজন্মের সঙ্গে আমি বড় হয়েছি। সুতরাং তাদের সঙ্গে বেশি নৈকট্য অনুভব করি।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম প্রজন্মের কাছে রানির মৃত্যু গভীর আবেগ বয়ে এনেছে। তাঁরা অনেকেই শোক প্রকাশ করছেন। আবার অনেকে ব্রিটিশ উপনিবেশের বেদনা ও অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ওপর ব্রিটিশদের সহিংসতার জন্য রানির ভূমিকাকেও ঘৃণাভরে স্মরণ করছেন। অনেকে মনে করেন, আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুতির পেছনে রানির ভূমিকা রয়েছে।
যখন রানির রাজত্ব শুরু হয়, তখন অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের জনসংখ্যার অংশ হিসেবে গণনাও করা হয়নি। ম্যালকম টার্নবুল রানির ঐতিহাসিক প্রথম রাজকীয় সফর সম্পর্কে বলেছেন, ১৯৫৪ সালে রানি যখন প্রথমবারের মতো এখানে এসেছিলেন, তখন তিনি একজন ব্রিটিশ হিসেবেই এই জাতিকে দেখেছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলীয়রা ছিল ব্রিটিশদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
অস্ট্রেলিয়ার কেউ কেউ এখনো রাজতন্ত্রকে স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে দেখেন। নিজেকে রাজতন্ত্রবাদী পরিচয় দিয়ে জোশ রব নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া এখনো নতুন রাজাকে রাজত্ব করার সুযোগ দেবে। কারণ, আমাদের শাসনের ধারাবাহিকতা দরকার। নতুন রাজার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হতে হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত রাজা তৃতীয় চার্লস ঠিকঠাকমতো কথাবার্তা বলছেন এবং কাজ করছেন।’
অস্ট্রেলিয়া এখনো তার অন্ধকার অতীত ও রাজপরিবারের ভূমিকার সমাধান করতে লড়াই করে যাচ্ছে। রানির মৃত্যুর পর এ লড়াই আরও সামনে চলে এসেছে। বিশ্ববাসী দেখছে, অস্ট্রেলিয়ায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতিমধ্যে একধরনের মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। যেমনটা টার্নবুল বলেছিলেন, ‘আপনি রানিকে ভালোবাসতে পারেন...সমস্যা নেই, তারপরও বলুন—আমরা একটি স্বাধীন দেশ। আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের ভেতর থেকেই একজন হওয়া উচিত।’ বিতর্কটাও ঠিক এইখানেই!
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ফিন্যান্সিয়াল রিভিউ ও এপি
আব্রাহাম অ্যাকর্ডস মূলত একটি চটকদার বিষয়। এতে বাস্তব, স্থায়ী আঞ্চলিক শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছুই এতে ছিল না। যেসব রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেছে তারা তা করেছে—কারণ, তারা ইসরায়েলকে ওয়াশিংটনে প্রভাব বিস্তারের পথ হিসেবে দেখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ইসরায়েলের ওপর মার
৮ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেখেয়ালি, সেটা আগা থেকেই সবার জানা। তবে দেশটির নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এসেও তিনি অসংলগ্ন, অশ্লীল, স্বৈরতান্ত্রিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ থেকে অন্তত একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে একটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
৯ দিন আগেএবারের আইএমইএক্স মহড়ায়ও কিছু দেশ আছে যারা আগেরবারও অংশগ্রহণ করেছিল। এসব দেশের নাম আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই মহড়ার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—ইরান ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে এমন দেশগুলোর কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত
৯ দিন আগেএই শহরের সমর্থকেরা, এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। শহরটিতে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সংযোগ সাধন করা হবে বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন। কিন্তু এই শহরের মূল ধারণাটি আসলে জটিল। মূলত এই শহরকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যাতে এটি একটি ‘অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র’ হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে এবং ভারতে প্রবেশে একটি দুয়ার হি
১০ দিন আগে