অনলাইন ডেস্ক
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। ৬ সপ্তাহের এই নির্বাচন ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবিসহ ছোট-বড় পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ জয় পেতে মোদির জনপ্রিয়তাকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি। ‘অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মোদি’- এই মূলমন্ত্র নিয়েই বিজেপির ভারতীয়দের কাছে প্রচারণা চালাচ্ছে।
৫৪৩ আসনের লোকসভায় ৪ শতাধিক আসনে জিততে চায় বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৫২ আসন জিতেছিল এই জোট। এবার চারশ আসনের মাইলফলক পার হতে স্থানীয় কৌশল ব্যবহার করছে বিজেপি। জনমত জরিপ বলছে, টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন মোদি। তবে তাঁর দল ও জোটের জন্য ৪ শতাধিক আসন পাওয়া কঠিন। ইতিহাস বলছে, ভারতের একমাত্র দল হিসেবে কংগ্রেস একবার ৪ শতাধিক আসন পায়, সেটার পেছনেও ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের ভূমিকা ছিল।
এবার নির্বাচনে বাজিমাত করতে মোদি ও বিজেপির কৌশল নিয়ে জানতে এনডিএর নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি দিক ওঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—প্রবীণ বিরোধী নেতাদের হারাতে তারকাদের প্রার্থী করা, দক্ষিণ ভারতে বিরোধী দুর্গ ভাঙতে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়া ও বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তর ভারতের ভোটারদের মধ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ব্যবহার করে বিভাজন তৈরি করা।
বিজেপি ও এনডিএ জোটের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এপ্রিলে দলটির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি ও পরিবর্তনশীল কৌশলসহ বেশকিছু রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয় এমন আসনগুলো জিততে সাহায্য করবে। এসব আসন আগে কখনো দলের (বিজেপির) দখলে ছিল না।’
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই চলতি নির্বাচনে চার শতাধিক আসন জিতলে বিজেপি নিজস্ব কট্টরপন্থী এজেন্ডা আরও জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলছে। আপাতদৃষ্টে তা সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য। সেসঙ্গে মুসলিমদের লক্ষ্য করে ভারতে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা একক পারিবারিক আইন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মুসলিমসহ নানা উপজাতি মানুষ এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। কারণ, এর মধ্য দিয়ে ধর্ম বা জাতি নির্বিশেষে বিয়ে ও উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সব আইন বদলে অভিন্ন আইন হবে। কিন্তু এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন, সেজন্য অন্তত লোকসভার দুই-তৃতীয়াংশ আসন থাকতে হবে। মূলত এ কারণেই বিজেপি ৪ শতাধিক আসন জিততে চায়।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে রয়টার্সকে বলেন, শুধু নীতিগত বিষয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক ও আলোচনার অবসানের জন্যই মোদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চান।
তবে ভোটের প্রচারে থাকা বিজেপি নেতাদের কণ্ঠে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিয়ে তেমন আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠেনি। কারণ, দুই দফা ভোটগ্রহণে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম। তবে দলটি পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারবে বলেই আশাবাদী।
দক্ষিণে জিততে বিজেপির কৌশল
‘কংগ্রেস পরিবারতান্ত্রিক’ বলে মোদির দল বিজেপি সব সময়ই অভিযোগ করে এসেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গান্ধী পরিবারের প্রাধান্য বজায় রয়েছে দলটিতে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, কেরালার পাথানামথিত্তা আসনে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা একে অ্যান্টনির ছেলে অনিল অ্যান্টনিকে প্রার্থী করেছে বিজেপি ।
২০০৯ সালে এই আসন সৃষ্টির পর থেকেই কংগ্রেসের দখলে। এবারের নির্বাচনে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনি খ্রিষ্টান প্রাধান্যের এই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছেন এবং খ্রিষ্টান হয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলকে প্রতিনিধিত্ব করায় ছেলে অনিলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। অনিলের পাশে তাঁর বাবা না দাঁড়ালেও মোদি আছেন। গত মার্চে পাথানামথিত্তায় এসে অনিলের প্রশংসা করেন মোদি। কেবল এই আসন নয়, গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে দক্ষিণ ভারতের ৫টি রাজ্যে ১৬ বার সফর করেছেন মোদি।
বিজেপির সভাপতি নাড্ডার মতে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাইলে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে ভালো করতে হবে। এই রাজ্যগুলোতে ভারতের মোট ভোটের ২০ শতাংশ থাকলেও এরা প্রায় কখনোই বিজেপিকে ভোট দেয়নি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এনডিএ দক্ষিণের পাঁচ রাজ্য—অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুর ১৩০ আসনের মধ্যে মাত্র ৩১টি পেয়েছিল। ভারতের এই অংশটি উত্তর ভারতের চেয়ে ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের দিক থেকে আলাদা। এসব রাজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খ্রিষ্টান ও মুসলমান আছে।
কেরালায় বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার সাধারণ সম্পাদক জিজি জোসেফ জানান, তাঁর দল রাজ্যে খ্রিষ্টান ভোটারদের অন্তত ১৮ শতাংশের ভোট জিততে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেটা কতটা সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে ইতিহাস বলে, সর্বশেষ নির্বাচনে বিজেপি কেরালায় একটি আসনও জেতেনি।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার কথা জানিয়ে জিজি জোসেফ বলেন, ‘বিজেপি চার্চের পাদ্রীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেছে।’ এ সময় তিনি জানান, রাজ্যে তাঁর দলে এখন ১১ হাজার সক্রিয় কর্মী আছে। তিনি বলেন, ‘একটা পরিবর্তন হয়েছে। খ্রিষ্টানরা এখন বিশ্বাস করতে চায় যে, বিজেপি তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’
চলতি বছরের এপ্রিলে কেরালার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটি অংশের সমর্থনে বিজেপির প্রার্থী হন অনিল অ্যান্টনি। এ বিষয়ে অনিল জানান, তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার মাধ্যমে বিজেপি সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকেও প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
কেরালার খ্রিষ্টান ভোটার জয়ন্ত জোসেফ জানান, তিনি বিজেপিকেই সমর্থন দেবেন। তাঁর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, গণমাধ্যমের খবরে তিনি পড়েছেন—মুসলিমরা খ্রিষ্টান নারীদের বিয়ে করে তাদের ধর্মান্তরিত করছে। অথচ, মধ্যপন্থী হিন্দুরা পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ই মনে করেন। জয়ন্তর আরও বলেন, ‘কেরালা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য। কিন্তু এটিকে ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য হিসেবে বজায় রাখতে চাইলে মুসলিম জনসংখ্যা এবং তাদের ধর্মান্তরকরণের যে কৌশল সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোদির এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী রয়টার্সকে বলেছেন, এনডিএ জোট দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে অন্তত ৫০টি আসনে জিততে চায়। তবে কেরালার ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্কসবাদী) জ্যেষ্ঠ নেতা কে অনিল কুমার মনে করেন, বিজেপি তাঁর রাজ্যে খুব একটা ভালো করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘বিজেপি হয়তো কিছু ইস্যুতে খ্রিষ্টানদের পক্ষ নেওয়ার চেষ্টা করবে কিন্তু তাঁরা মৌলিকভাবে হিন্দুদের নিয়ে গঠিত হিন্দু স্বার্থের একটি দল।’
তারকা প্রার্থী
উত্তর ভারতের হিমাচল রাজ্যের মান্ডি লোকসভা আসনে কংগ্রেসের দুর্গ ভাঙতে বিজেপি বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতকে বেছে নিয়েছে। কঙ্গনার বিপরীতে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ছেন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের ছেলে বিক্রমাদিত্য সিং। এই আসনের বর্তমান এমপি প্রতিভা সিং, বিক্রমের মা।
বলিউডে মোটামুটি জায়গা করে নেওয়া কঙ্গনা রনৌত রাজনীতিতে একেবারেই নতুন। যদিও তিনি নিজেকে ‘গর্বিত ডানপন্থী’ রাজনীতিবিদ বলেই উল্লেখ করে বেশির ভাগ সময়। নিকট অতীতে তিনি বলিউডে বেশ কিছু জাতীয়তাবাদী ঘরানার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। রাজনীতিতে নবীন হলেও এই এই অভিনেত্রীর ওপর বিজেপির নেক নজর আছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে অন্তত ৫ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী লড়ছেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ জন। যাই হোক, মান্ডিতে কে জিতবেন এমন পূর্বাভাস দিয়ে কোনো জরিপ এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে রাজনীতিতে নতুন কঙ্গনার পক্ষে ভোট পড়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।
অঞ্জনা নেগি নামে এক প্রাক—প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা জানালেন, তিনি কঙ্গনাকেই ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। তাঁর মতে, কঙ্গনার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও মোদি-সমর্থিত নতুন মুখকে ক্ষমতায় এনে এলাকার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্টের ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মিলন বৈষ্ণব বলেন, তারকাদের মাঠে নামানো এবং বিনোদন জগতের তারকাদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো বিজেপির জন্য তুলনামূলক নতুন। বিজেপি তৃণমূলে কর্মীভিত্তিক রাজনীতিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।
নিজের প্রার্থিতার ব্যাপারে রয়টার্সের সঙ্গে কঙ্গনা কথা না বললেও বিজেপির মুখপাত্র শাহজাদ পূনওয়ালা বলেছেন, ‘তিনি (কঙ্গনা) বলিউডে পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সফলভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন। একই কাজ তিনি এখন রাজনীতিতেও করে যাচ্ছেন।’
তবে বিক্রমাদিত্য সিং বিজেপির নেতাদের পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে তাঁকে রাজনীতির বিষয়ে গভীর বোঝাপড়া দিয়েছে। আর তাই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ এখানে হালে পানি পাবে না।
উল্লেখ্য, কঙ্গনা রনৌত ছাড়াও বলিউড থেকে বিজেপির টিকিটে এবার লড়ছেন—হেমা মালিনি, অরুন গোভিল, রবি কিষান এবং মনোজ তিওয়ারি।
লোকসভা আসন পুনঃনির্ধারণের ফায়দা
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রায় প্রতি নির্বাচনের আগেই লোকসভা আসনের সীমানা জনসংখ্যার ভিত্তিতে পুনঃ নির্ধারণ করে থাকে। আর তার ওপর ভিত্তি করেই দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাজির দান জিততে চায় বিজেপি। যেমন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলছেন, এবারের নির্বাচনে তাঁর দল রাজ্যের ১৪ লোকসভা আসনের ১৩ টিতেই জিতবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল ৯ আসনে।
আসামে এত ভালো ফলাফলের প্রত্যাশার পেছনের কারণ হলো, আসন সীমানা পুনর্বণ্টন। ভারতের নির্বাচন কমিশন জনমিতির পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য নিয়মিত আসনের সীমানা পুনঃ নির্ধারণ করে। এমনটা করা হয় যেন, কোনো রাজনৈতিক দল জনমিতির কারণে অযাচিত সুবিধা লাভ করতে না পারে।
তবে খোদ এনডিএ এবং বিরোধী দলের ৭ নেতার মতে, নিকট অতীতে আসাম ও জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনের পর থেকে কিছু কিছু অঞ্চলে আসনগুলোর—বিশেষ করে যেগুলোকে বিজেপি টার্গেট করেছে জেতার জন্য—সীমানা এমনভাবে বণ্টন করা হয়েছে যে, সেগুলোতে মুসলিম ভোটারের প্রাধান্য কমে গেছে।
আসামে এনডিএ জোট বারপেতা লোকসভা আসন জয়ের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী। সেখানে জোটের প্রার্থী ফনীভূষণ চৌধুরী জানিয়েছেন, নতুন সীমানায় বেশ কয়েকটি গ্রাম ও শহর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলোর বেশির ভাগই হিন্দু অধ্যুষিত। তিনি বলেন, ‘আগে বারপেতায় মুসলিম প্রাধান্য থাকলেও বর্তমানে এই আসনে হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এই পরিবর্তন আমার অনুকূলে কাজ করেছে।’
ফনীভূষণ চৌধুরীর অনুমান, বর্তমানে বারপেতা আসনে প্রায় ১২ লাখ হিন্দু ভোটার আছে এবং তাঁর লক্ষ্য হলো—উন্নয়নের প্রচারণা এবং আদি আসাবাসীর অধিকার রক্ষা করা। উল্লেখ্য, রাজ্যটিতে আদি আসামবাসী বলতে হিন্দুদেরই বোঝানো হয়।
বারপেতা আসনে বিজেপির বিপরীতে লড়ছেন কংগ্রেসের দীপ বয়ন। তিনি বলেন, বারপেতায় হিন্দু জনসংখ্যার হার ৩০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশে উঠে গেছে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি এখানে প্রকৃত সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন-মেরুকরণ তৈরি করছে।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের পাঁচটি লোকসভা আসনই মুসলিম অধ্যুষিত। তবে তারপরও বিজেপি অন্তত একটি—অনন্তনাগ-রাজৌরি—আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ, ভারত সরকারের সর্বশেষ হিসাব বলছে, আসনটিতে ভোটার সংখ্যা গত নির্বাচনের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। যাদের অধিকাংশই হিন্দু বা অন্যান্য আঞ্চলিক গোত্রের। যা বিজেপিকে নির্বাচনে সুবিধা দেবে বলেই আশাবাদী দলটির আঞ্চলিক প্রধান রবিন্দর রায়না।
তবে আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি তুলনামূলক গরিব ও হিন্দু অধ্যুষিত উত্তর ভারতে বিজেপিকে সুবিধা দিলেও দক্ষিণের ধনী ও সেক্যুলার রাজ্যগুলোতে তা হিতে বিপরীতই হতে পারে বলেই মনে করেন কার্নেগি এনডাউমেন্টের মিলন বৈষ্ণব।
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। ৬ সপ্তাহের এই নির্বাচন ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবিসহ ছোট-বড় পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ জয় পেতে মোদির জনপ্রিয়তাকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি। ‘অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মোদি’- এই মূলমন্ত্র নিয়েই বিজেপির ভারতীয়দের কাছে প্রচারণা চালাচ্ছে।
৫৪৩ আসনের লোকসভায় ৪ শতাধিক আসনে জিততে চায় বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৫২ আসন জিতেছিল এই জোট। এবার চারশ আসনের মাইলফলক পার হতে স্থানীয় কৌশল ব্যবহার করছে বিজেপি। জনমত জরিপ বলছে, টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন মোদি। তবে তাঁর দল ও জোটের জন্য ৪ শতাধিক আসন পাওয়া কঠিন। ইতিহাস বলছে, ভারতের একমাত্র দল হিসেবে কংগ্রেস একবার ৪ শতাধিক আসন পায়, সেটার পেছনেও ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের ভূমিকা ছিল।
এবার নির্বাচনে বাজিমাত করতে মোদি ও বিজেপির কৌশল নিয়ে জানতে এনডিএর নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি দিক ওঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—প্রবীণ বিরোধী নেতাদের হারাতে তারকাদের প্রার্থী করা, দক্ষিণ ভারতে বিরোধী দুর্গ ভাঙতে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়া ও বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তর ভারতের ভোটারদের মধ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ব্যবহার করে বিভাজন তৈরি করা।
বিজেপি ও এনডিএ জোটের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এপ্রিলে দলটির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি ও পরিবর্তনশীল কৌশলসহ বেশকিছু রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয় এমন আসনগুলো জিততে সাহায্য করবে। এসব আসন আগে কখনো দলের (বিজেপির) দখলে ছিল না।’
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই চলতি নির্বাচনে চার শতাধিক আসন জিতলে বিজেপি নিজস্ব কট্টরপন্থী এজেন্ডা আরও জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলছে। আপাতদৃষ্টে তা সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য। সেসঙ্গে মুসলিমদের লক্ষ্য করে ভারতে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা একক পারিবারিক আইন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মুসলিমসহ নানা উপজাতি মানুষ এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। কারণ, এর মধ্য দিয়ে ধর্ম বা জাতি নির্বিশেষে বিয়ে ও উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সব আইন বদলে অভিন্ন আইন হবে। কিন্তু এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন, সেজন্য অন্তত লোকসভার দুই-তৃতীয়াংশ আসন থাকতে হবে। মূলত এ কারণেই বিজেপি ৪ শতাধিক আসন জিততে চায়।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে রয়টার্সকে বলেন, শুধু নীতিগত বিষয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক ও আলোচনার অবসানের জন্যই মোদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চান।
তবে ভোটের প্রচারে থাকা বিজেপি নেতাদের কণ্ঠে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিয়ে তেমন আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠেনি। কারণ, দুই দফা ভোটগ্রহণে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম। তবে দলটি পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারবে বলেই আশাবাদী।
দক্ষিণে জিততে বিজেপির কৌশল
‘কংগ্রেস পরিবারতান্ত্রিক’ বলে মোদির দল বিজেপি সব সময়ই অভিযোগ করে এসেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গান্ধী পরিবারের প্রাধান্য বজায় রয়েছে দলটিতে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, কেরালার পাথানামথিত্তা আসনে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা একে অ্যান্টনির ছেলে অনিল অ্যান্টনিকে প্রার্থী করেছে বিজেপি ।
২০০৯ সালে এই আসন সৃষ্টির পর থেকেই কংগ্রেসের দখলে। এবারের নির্বাচনে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনি খ্রিষ্টান প্রাধান্যের এই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছেন এবং খ্রিষ্টান হয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলকে প্রতিনিধিত্ব করায় ছেলে অনিলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। অনিলের পাশে তাঁর বাবা না দাঁড়ালেও মোদি আছেন। গত মার্চে পাথানামথিত্তায় এসে অনিলের প্রশংসা করেন মোদি। কেবল এই আসন নয়, গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে দক্ষিণ ভারতের ৫টি রাজ্যে ১৬ বার সফর করেছেন মোদি।
বিজেপির সভাপতি নাড্ডার মতে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাইলে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে ভালো করতে হবে। এই রাজ্যগুলোতে ভারতের মোট ভোটের ২০ শতাংশ থাকলেও এরা প্রায় কখনোই বিজেপিকে ভোট দেয়নি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এনডিএ দক্ষিণের পাঁচ রাজ্য—অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুর ১৩০ আসনের মধ্যে মাত্র ৩১টি পেয়েছিল। ভারতের এই অংশটি উত্তর ভারতের চেয়ে ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের দিক থেকে আলাদা। এসব রাজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খ্রিষ্টান ও মুসলমান আছে।
কেরালায় বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার সাধারণ সম্পাদক জিজি জোসেফ জানান, তাঁর দল রাজ্যে খ্রিষ্টান ভোটারদের অন্তত ১৮ শতাংশের ভোট জিততে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেটা কতটা সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে ইতিহাস বলে, সর্বশেষ নির্বাচনে বিজেপি কেরালায় একটি আসনও জেতেনি।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার কথা জানিয়ে জিজি জোসেফ বলেন, ‘বিজেপি চার্চের পাদ্রীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেছে।’ এ সময় তিনি জানান, রাজ্যে তাঁর দলে এখন ১১ হাজার সক্রিয় কর্মী আছে। তিনি বলেন, ‘একটা পরিবর্তন হয়েছে। খ্রিষ্টানরা এখন বিশ্বাস করতে চায় যে, বিজেপি তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’
চলতি বছরের এপ্রিলে কেরালার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটি অংশের সমর্থনে বিজেপির প্রার্থী হন অনিল অ্যান্টনি। এ বিষয়ে অনিল জানান, তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার মাধ্যমে বিজেপি সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকেও প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
কেরালার খ্রিষ্টান ভোটার জয়ন্ত জোসেফ জানান, তিনি বিজেপিকেই সমর্থন দেবেন। তাঁর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, গণমাধ্যমের খবরে তিনি পড়েছেন—মুসলিমরা খ্রিষ্টান নারীদের বিয়ে করে তাদের ধর্মান্তরিত করছে। অথচ, মধ্যপন্থী হিন্দুরা পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ই মনে করেন। জয়ন্তর আরও বলেন, ‘কেরালা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য। কিন্তু এটিকে ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য হিসেবে বজায় রাখতে চাইলে মুসলিম জনসংখ্যা এবং তাদের ধর্মান্তরকরণের যে কৌশল সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোদির এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী রয়টার্সকে বলেছেন, এনডিএ জোট দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে অন্তত ৫০টি আসনে জিততে চায়। তবে কেরালার ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্কসবাদী) জ্যেষ্ঠ নেতা কে অনিল কুমার মনে করেন, বিজেপি তাঁর রাজ্যে খুব একটা ভালো করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘বিজেপি হয়তো কিছু ইস্যুতে খ্রিষ্টানদের পক্ষ নেওয়ার চেষ্টা করবে কিন্তু তাঁরা মৌলিকভাবে হিন্দুদের নিয়ে গঠিত হিন্দু স্বার্থের একটি দল।’
তারকা প্রার্থী
উত্তর ভারতের হিমাচল রাজ্যের মান্ডি লোকসভা আসনে কংগ্রেসের দুর্গ ভাঙতে বিজেপি বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতকে বেছে নিয়েছে। কঙ্গনার বিপরীতে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ছেন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের ছেলে বিক্রমাদিত্য সিং। এই আসনের বর্তমান এমপি প্রতিভা সিং, বিক্রমের মা।
বলিউডে মোটামুটি জায়গা করে নেওয়া কঙ্গনা রনৌত রাজনীতিতে একেবারেই নতুন। যদিও তিনি নিজেকে ‘গর্বিত ডানপন্থী’ রাজনীতিবিদ বলেই উল্লেখ করে বেশির ভাগ সময়। নিকট অতীতে তিনি বলিউডে বেশ কিছু জাতীয়তাবাদী ঘরানার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। রাজনীতিতে নবীন হলেও এই এই অভিনেত্রীর ওপর বিজেপির নেক নজর আছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে অন্তত ৫ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী লড়ছেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ জন। যাই হোক, মান্ডিতে কে জিতবেন এমন পূর্বাভাস দিয়ে কোনো জরিপ এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে রাজনীতিতে নতুন কঙ্গনার পক্ষে ভোট পড়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।
অঞ্জনা নেগি নামে এক প্রাক—প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা জানালেন, তিনি কঙ্গনাকেই ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। তাঁর মতে, কঙ্গনার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও মোদি-সমর্থিত নতুন মুখকে ক্ষমতায় এনে এলাকার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্টের ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মিলন বৈষ্ণব বলেন, তারকাদের মাঠে নামানো এবং বিনোদন জগতের তারকাদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো বিজেপির জন্য তুলনামূলক নতুন। বিজেপি তৃণমূলে কর্মীভিত্তিক রাজনীতিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।
নিজের প্রার্থিতার ব্যাপারে রয়টার্সের সঙ্গে কঙ্গনা কথা না বললেও বিজেপির মুখপাত্র শাহজাদ পূনওয়ালা বলেছেন, ‘তিনি (কঙ্গনা) বলিউডে পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সফলভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন। একই কাজ তিনি এখন রাজনীতিতেও করে যাচ্ছেন।’
তবে বিক্রমাদিত্য সিং বিজেপির নেতাদের পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে তাঁকে রাজনীতির বিষয়ে গভীর বোঝাপড়া দিয়েছে। আর তাই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ এখানে হালে পানি পাবে না।
উল্লেখ্য, কঙ্গনা রনৌত ছাড়াও বলিউড থেকে বিজেপির টিকিটে এবার লড়ছেন—হেমা মালিনি, অরুন গোভিল, রবি কিষান এবং মনোজ তিওয়ারি।
লোকসভা আসন পুনঃনির্ধারণের ফায়দা
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রায় প্রতি নির্বাচনের আগেই লোকসভা আসনের সীমানা জনসংখ্যার ভিত্তিতে পুনঃ নির্ধারণ করে থাকে। আর তার ওপর ভিত্তি করেই দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাজির দান জিততে চায় বিজেপি। যেমন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলছেন, এবারের নির্বাচনে তাঁর দল রাজ্যের ১৪ লোকসভা আসনের ১৩ টিতেই জিতবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল ৯ আসনে।
আসামে এত ভালো ফলাফলের প্রত্যাশার পেছনের কারণ হলো, আসন সীমানা পুনর্বণ্টন। ভারতের নির্বাচন কমিশন জনমিতির পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য নিয়মিত আসনের সীমানা পুনঃ নির্ধারণ করে। এমনটা করা হয় যেন, কোনো রাজনৈতিক দল জনমিতির কারণে অযাচিত সুবিধা লাভ করতে না পারে।
তবে খোদ এনডিএ এবং বিরোধী দলের ৭ নেতার মতে, নিকট অতীতে আসাম ও জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনের পর থেকে কিছু কিছু অঞ্চলে আসনগুলোর—বিশেষ করে যেগুলোকে বিজেপি টার্গেট করেছে জেতার জন্য—সীমানা এমনভাবে বণ্টন করা হয়েছে যে, সেগুলোতে মুসলিম ভোটারের প্রাধান্য কমে গেছে।
আসামে এনডিএ জোট বারপেতা লোকসভা আসন জয়ের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী। সেখানে জোটের প্রার্থী ফনীভূষণ চৌধুরী জানিয়েছেন, নতুন সীমানায় বেশ কয়েকটি গ্রাম ও শহর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলোর বেশির ভাগই হিন্দু অধ্যুষিত। তিনি বলেন, ‘আগে বারপেতায় মুসলিম প্রাধান্য থাকলেও বর্তমানে এই আসনে হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এই পরিবর্তন আমার অনুকূলে কাজ করেছে।’
ফনীভূষণ চৌধুরীর অনুমান, বর্তমানে বারপেতা আসনে প্রায় ১২ লাখ হিন্দু ভোটার আছে এবং তাঁর লক্ষ্য হলো—উন্নয়নের প্রচারণা এবং আদি আসাবাসীর অধিকার রক্ষা করা। উল্লেখ্য, রাজ্যটিতে আদি আসামবাসী বলতে হিন্দুদেরই বোঝানো হয়।
বারপেতা আসনে বিজেপির বিপরীতে লড়ছেন কংগ্রেসের দীপ বয়ন। তিনি বলেন, বারপেতায় হিন্দু জনসংখ্যার হার ৩০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশে উঠে গেছে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি এখানে প্রকৃত সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন-মেরুকরণ তৈরি করছে।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের পাঁচটি লোকসভা আসনই মুসলিম অধ্যুষিত। তবে তারপরও বিজেপি অন্তত একটি—অনন্তনাগ-রাজৌরি—আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ, ভারত সরকারের সর্বশেষ হিসাব বলছে, আসনটিতে ভোটার সংখ্যা গত নির্বাচনের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। যাদের অধিকাংশই হিন্দু বা অন্যান্য আঞ্চলিক গোত্রের। যা বিজেপিকে নির্বাচনে সুবিধা দেবে বলেই আশাবাদী দলটির আঞ্চলিক প্রধান রবিন্দর রায়না।
তবে আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি তুলনামূলক গরিব ও হিন্দু অধ্যুষিত উত্তর ভারতে বিজেপিকে সুবিধা দিলেও দক্ষিণের ধনী ও সেক্যুলার রাজ্যগুলোতে তা হিতে বিপরীতই হতে পারে বলেই মনে করেন কার্নেগি এনডাউমেন্টের মিলন বৈষ্ণব।
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
গত সেপ্টেম্বরে ভ্লাদিভস্টকের একটি অর্থনৈতিক ফোরামে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। এ বিষয়ে পরে তিনি একটি উপহাসমূলক হাসি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
৩ ঘণ্টা আগেআব্রাহাম অ্যাকর্ডস মূলত একটি চটকদার বিষয়। এতে বাস্তব, স্থায়ী আঞ্চলিক শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছুই এতে ছিল না। যেসব রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেছে তারা তা করেছে—কারণ, তারা ইসরায়েলকে ওয়াশিংটনে প্রভাব বিস্তারের পথ হিসেবে দেখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ইসরায়েলের ওপর মার
৮ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেখেয়ালি, সেটা আগা থেকেই সবার জানা। তবে দেশটির নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এসেও তিনি অসংলগ্ন, অশ্লীল, স্বৈরতান্ত্রিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ থেকে অন্তত একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে একটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
৯ দিন আগেএবারের আইএমইএক্স মহড়ায়ও কিছু দেশ আছে যারা আগেরবারও অংশগ্রহণ করেছিল। এসব দেশের নাম আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই মহড়ার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—ইরান ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে এমন দেশগুলোর কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত
৯ দিন আগে