লেটিসিয়া ভ্যান ডেন অসসাম
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের জন্য সফলভাবেই লবিং করেছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে আরাকান আর্মির উত্থান বিবেচনায় নিতে হবে।
গত আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পূর্বতন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রশাসনের প্রধান হিসেবে এক বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা এবং তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘টেকসই প্রচেষ্টা’ চালানোর আহ্বান জানান।
নভেম্বরে তাঁর সরকারের দৃঢ় লবিংয়ের ফলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে, যেখানে আগামী বছর (২০২৫ সালে) একটি ‘উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’ আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, সম্মেলনটি ‘সমস্যাটির টেকসই সমাধানে বিস্তৃত, উদ্ভাবনী, নির্দিষ্ট ও সময়সীমাবদ্ধ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, যাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত থাকে।’
বাংলাদেশ ও কাতারকে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তারা আশা করে— এই সম্মেলন সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হবে এবং এপ্রিলের মধ্যে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ ১৯৭০-এর দশক থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যে বোঝা বহন করছে, তার প্রেক্ষিতে দ্রুত এবং কার্যকর প্রত্যাবাসনের দাবি খুবই বোধগম্য। জাতিসংঘের প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের মধ্যে রাখার জন্য দারুণ উদ্যোগ। এটি আরও উল্লেখযোগ্য এই কারণে যে, বর্তমানে সংকট নিয়ে কোনো বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক সংলাপ নেই। তবে, মিয়ানমারের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংলাপ আয়োজন সহজ কাজ হবে না। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের—যা আরাকান নামেও পরিচিত—একটি বড় অংশ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছ থেকে দখলে নিয়েছে। এই অঞ্চলেরই বেশিরভাগ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
গত এক দশকে আরাকান আর্মির উত্থান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ববর্তী বাংলাদেশ সরকার অনেকটাই উপেক্ষা করেছিল। তবে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে, বাংলাদেশের জনসমক্ষে এই বিষয়ে ক্রমশ আলোচনা শুরু হয়েছে, যা হাসিনার শাসনামলে প্রায় নিষিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা এখন বেশ জোরেশোরেই আলোচিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার নাকি এই গ্রুপের সঙ্গে আধা-আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপনের উপায় বিবেচনা করছে। আরেকটি উদাহরণ হলো— দুই অভিজ্ঞ কূটনীতিক বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শাহিদুল হক এবং মিয়ানমারের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নীতির পুনর্বিবেচনা এবং নির্দিষ্ট পরামর্শ প্রস্তাব করেছেন।
আগামী বছরের রোহিঙ্গা সম্মেলনের আয়োজকদের তাৎক্ষণিকভাবে দুটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। প্রথমত, কীভাবে সম্মেলনের পরিধি নির্ধারণ করা হবে? দ্বিতীয়ত, কীভাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির প্রকৃত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হবে?
রোহিঙ্গা সংকটে অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে হলে এর বিস্তৃত গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। অনেক সময় রোহিঙ্গা সংকটকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের একটি দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়।
‘বিহাইন্ড দ্য ওয়্যার’— শিরোনামে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে, বিশ্বব্যাপী ২৮ লাখ রোহিঙ্গা আছে, যার মধ্যে মাত্র ২৩ শতাংশ মিয়ানমারে অবস্থান করছে। এই বিষয়টি নির্যাতন ও বৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নির্মম বাস্তবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। মিয়ানমার ছাড়াও যেসব দেশে রোহিঙ্গাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠী রয়েছে—তার মধ্যে বাংলাদেশে আছে প্রায় ১১ লাখ, পাকিস্তানে ৪ লাখ, সৌদি আরবে ৩ লাখ ৪০ হাজার এবং মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ১০ হাজার।
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। উদাহরণস্বরূপ—সৌদি আরব এবং পাকিস্তানে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা কয়েক দশক আগে পাড়ি জমিয়েছে এবং তাদের সন্তানেরা কখনোই নিজভূমি দেখেনি। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস দেখেছে যে, গত পাঁচ বছরে পালিয়ে আসা ৭৬ শতাংশ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চেয়েছে। কিন্তু যারা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রবাসে রয়েছে তাদের মধ্যে এই ইচ্ছা মাত্র ২৮ শতাংশ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, সমাধানগুলো বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে হওয়া উচিত এবং ২০১৮ সালের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফিউজির যেসব লক্ষ্য আছে সেগুলোর আলোকে পরিচালিত হওয়া উচিত।
এর মধ্যে রয়েছে— আশ্রয়দাতা দেশগুলোর ওপর চাপ কমানো, শরণার্থীদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি, তৃতীয় দেশের সমাধানের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য মাতৃভূমিতে অবস্থার উন্নয়ন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এবং ২০১৬-১৭ সালে তাদের মিয়ানমার ছাড়ার বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের প্রাথমিক সমাধান হিসেবে ঢাকা রাখাইনে প্রত্যাবাসনের ওপর ফোকাস করাটাই যুক্তিযুক্ত। শরণার্থী প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ঢাকার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়াও বোধগম্য। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ ১৯৭০ এর দশক থেকে দেখা ‘রিভলভিং ডোর’ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পারে। যেখানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ থেকে ফিরে গেলেও আবার একই চক্র শুরু হয়েছে। যদি রোহিঙ্গা সংকটের মূলে থাকা কারণগুলো সমাধান করা না হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা অধরাই থেকে যাবে এবং পুরো অঞ্চলের জন্য এর প্রভাব বাড়তে থাকবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন এবং বিতর্ক রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ধরেই নেওয়া হয় যে, মিয়ানমারে একটি কেন্দ্রীয় সরকার তার সব রাষ্ট্রের সব উপাদানেই রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ও পরিচালনা করতে পারে। ‘মিয়ানমার’ শব্দটি একাধিকবার উল্লেখ করা হলেও এটি কেবল সামরিক সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে। তবে জান্তা সরকার দেশের অনেকাংশেরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। রাখাইনে তাদের কর্তৃত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক বড় পরাজয়ের পর, তাদের ক্ষমতা সীমিত হয়ে রয়েছে কেবল রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে, মুনাউং দ্বীপ এবং কায়াকপায়ু ও গওয়া টাউনশিপের কিছু ছোট অংশে এবং এসব এলাকাতেও নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে, আরাকান আর্মি বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আগেই এই রাষ্ট্রকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে চীন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য কয়েকবার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয় মূলত রোহিঙ্গা এবং রাখাইন— যারা রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী— তাদের বাদ দেওয়ার কারণে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রত্যাবাসন পুনরায় শুরুর চেষ্টা আরও কম সফল হয়। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরাকান আর্মির বাস্তবিক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ স্বীকার না করে, তাহলে প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য জরুরি বিষয়ে অগ্রগতি কল্পনাতীত থেকে যাবে।
রোহিঙ্গা সম্মেলন আয়োজকদের জন্য এর অর্থ হচ্ছে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। তবে বাংলাদেশ এখনো স্পষ্টতই একটি অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত, এমনকি আরাকান আর্মি বাস্তবিকভাবে রাখাইনের নিয়ন্ত্রক হওয়ার পরও।
একটি পক্ষ হিসেবে আরাকান আর্মিকে পূর্ণ স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা কিছুটা দূরের হলেও উভয় পক্ষের জন্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা লাভজনক। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে—রাখাইনে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য একটি মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠা, সীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুনরায় শুরু করা। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশী বিশেষত চীন এবং থাইল্যান্ডের অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলো তাদের নিজ নিজ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করে তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
রাখাইনে পুরোনো জান্তা শাসনব্যবস্থার জায়গায় কী ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠবে— তা এখনো পরিষ্কার নয়। আরাকান আর্মির নেতৃত্ব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থানকে মানে না। মাঝে মাঝে তারা একটি ফেডারেল বা সংযুক্ত রাষ্ট্র কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে, তবে অন্যান্য বিকল্পগুলোকেও বাদ দেয়নি। গত কয়েক বছর ধরে রাখাইনের কিছু অংশে প্রশাসনিক ও বিচারিক সেবা চালিয়ে আসছে আরাকান আর্মির বেসামরিক শাখা ইউনাইটেড লীগ অব আরাকান এবং আরও বেসামরিক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। তবে এটি বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন গড়ে তোলার জন্য কেবল যাত্রা মাত্র।
গত বছরটি রাখাইনের জন্য উদ্বেগজনক ছিল। যদিও আরাকান আর্মি প্রায় পুরো রাজ্যকে জান্তা সরকারের হাত থেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু দুটি ঘটনা তাদের সামরিক সাফল্যে কালিমা লেপন করেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সর্বশেষ সংঘর্ষ রাখাইনকে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাজ্যটিতে অবরোধ কঠোর করেছে। ফলে প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। মৌলিক পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। এমনকি আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এমনকি মুদ্রা সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও অন্যান্য সংস্থাগুলো গুরুতর খাদ্য সংকট এবং এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এছাড়া এই সংঘাত সাম্প্রদায়িক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জান্তাবাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হতে থাকলেও তারা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ তথা বিভাজনের মাধ্যমে শাসনের কৌশল ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বড় অংশকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। তাঁরা সরাসরি রোহিঙ্গাদের যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে এবং রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) অন্যতম। ২০২৪ সালের এপ্রিলে থেকে সব পক্ষই বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের এই অবনতি ২০২২ এবং ২০২৩ সালের পরিস্থিতির যে উন্নয়ন হয়েছিল, সেটির ওপর একটি বড় ধাক্কা। সে সময় রাখাইনে বিশেষ করে মধ্য রাখাইন অঞ্চলে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বসবাসের জন্য আরও বেশি প্রস্তুত বলে মনে হয়েছিল। অপ্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্য ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছিল এবং সেবার সুযোগও বাড়ছিল। ২০২২ সালে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো সিতওয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও সাম্প্রতিক সংঘর্ষ থেকে রেহাই পায়নি। কক্সবাজারে অবস্থিত আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অনেক তরুণকে জোরপূর্বক নিয়োগ দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁদের মিয়ানমারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং জান্তাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে লড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা যোদ্ধাকে অপহরণ বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের নথি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কয়েক মাসের তীব্র সংঘর্ষের পর আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু টাউনশিপে জান্তাবাহিনীর সর্বশেষ আউটপোস্ট দখল করে। এতে শত শত যুদ্ধবন্দি— যার মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা যোদ্ধাও অন্তর্ভুক্ত— তাদের হাতে পড়ে। আরাকান আর্মি বলছে, তারা ভবিষ্যতে সব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। তবে তারা জান্তাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করা রোহিঙ্গাদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে।
আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে পুনরায় স্থাপন করা যায়— তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পদক্ষেপ হিসেবে তারা হয়তো এপ্রিল-মে মাসে বুথিডং টাউনশিপে সংঘটিত গণ-সহিংসতার বিতর্কিত পরিস্থিতি নিয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের কথা ভাবতে পারে। এছাড়া সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের তাঁদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। তাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে থাকলে তা মেরামত বা পুনর্নির্মাণে সহায়তা প্রদান করতে পারে এবং আস্থা পুনরুদ্ধারের বাস্তবসম্মত উপায় হতে পারে।
আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উপায় নিয়েও ভাবতে হবে। কক্সবাজারে আশ্রয়শিবির থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ এবং তাদের মিয়ানমারে সীমান্ত পার করে রণক্ষেত্রে পাঠানোর বিষয়টি আরাকান আর্মিকে ক্ষুব্ধ করেছে। বাংলাদেশিসহ অনেক পর্যবেক্ষকই বিশ্বাস করতে চান না যে, এটি উচ্চপদস্থ বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের অজ্ঞাতে ঘটেছে।
রাখাইনকে যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে পুনর্গঠন করা বড় চ্যালেঞ্জ। এটি এমন এক চ্যালেঞ্জ, যার দ্রুত কোনো সমাধান নেই। এটি আগে থেকেই মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্যগুলোর একটি ছিল। উন্নয়নবঞ্চিত, আন্তঃসম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং বঞ্চনার শিকার এই রাজ্যে দারিদ্র্য, সুযোগের অভাব এবং বাস্তুচ্যুতির কারণে এখানকার সব সম্প্রদায়কেই আঘাত করেছে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে যখন জান্তাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সহিংসতা তীব্রতর হয়, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। রাখাইনে একটি ব্যাপক দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা এবং রোডম্যাপের প্রয়োজন, যাতে সামনে থাকা ব্যাপক কর্মযজ্ঞ— যার মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত— ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়।
সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো রাজ্যের বৈচিত্র্যময় জাতিগত এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর একীকরণ শক্তিশালী করা। বিশেষ করে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের আস্থায় আনার বিষয়টি সবচেয়ে কঠিন কাজ। দুই পক্ষই একে অপরের প্রতি গভীর ভয় ও বিদ্বেষ পোষণ করেছে। কিছু রাখাইনের মতে, রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ— যারা জান্তাবাহিনীর সঙ্গে মিলে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে— তাঁদের এই ভয়কে আরও গভীর করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও ভূমিকা পালন করতে হবে। রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায় কী ধরনের সমস্যা বা জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে— এটি স্বীকার করতে হবে আগে। গত কয়েক দশকে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তির খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী সব সম্প্রদায়কেই আরও বেশি অত্যাচার করতে শুরু করেছে— পেটানো, হত্যা করা এবং নির্যাতন করা, জীবন-জীবিকা ধ্বংস করা, ঘর, হাসপাতাল, স্কুল, বাজার ও উপাসনালয় পোড়ানো, মৌলিক পণ্যের পরিবহন বন্ধ করা এবং অত্যাবশ্যকীয় সেবা— যেমন বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং এবং যোগাযোগ বন্ধ করা। এখন রাখাইন রাজ্যের সব মানুষই অবরুদ্ধ অবস্থার শিকার।
তাহলে, বিশ্ব সম্প্রদায় সংকটের জন্য অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে চাইলে তবে তাঁদের কেবল রোহিঙ্গাদের দুর্দশা মোকাবিলা করেই নয়, রাখাইনের সব মানুষের জন্য একত্রে রাজ্য পুনর্গঠনেও সাহায্য করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস প্রোগ্রামের’ বা অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায্যতা নিশ্চিত কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। এর আওতায় প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার, সত্য, ন্যায়, ক্ষতিপূরণ ও স্মৃতি সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে নিজেদের সংগতি রাখতে পারবে। ২০১৭ সালের আগস্টে জাতিসংঘ সাবেক মহাসচিব কফি আনানের সভাপতিত্বে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিশন রাখাইনের উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য সমাধান প্রস্তাব করেছিল। এই প্রস্তাব সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের পথে একটি দিশা ছিল। তারপর যা কিছু ঘটেছে, তা সত্ত্বেও, অনেক সুপারিশ আজও প্রাসঙ্গিক। এখন রাখাইনের জনগণ ও তাঁদের নেতাদের ওপরই নির্ভর করছে যে, তারা কীভাবে এগুলোকে নতুন রাখাইন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
লেখক: থাইল্যান্ডে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত। তিনি ২০১৬ সাল থেকে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক জাতিসংঘের পরামর্শক কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
(মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান)
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের জন্য সফলভাবেই লবিং করেছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে আরাকান আর্মির উত্থান বিবেচনায় নিতে হবে।
গত আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পূর্বতন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রশাসনের প্রধান হিসেবে এক বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা এবং তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘টেকসই প্রচেষ্টা’ চালানোর আহ্বান জানান।
নভেম্বরে তাঁর সরকারের দৃঢ় লবিংয়ের ফলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে, যেখানে আগামী বছর (২০২৫ সালে) একটি ‘উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’ আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, সম্মেলনটি ‘সমস্যাটির টেকসই সমাধানে বিস্তৃত, উদ্ভাবনী, নির্দিষ্ট ও সময়সীমাবদ্ধ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, যাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত থাকে।’
বাংলাদেশ ও কাতারকে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার বলেছে, তারা আশা করে— এই সম্মেলন সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হবে এবং এপ্রিলের মধ্যে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ ১৯৭০-এর দশক থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যে বোঝা বহন করছে, তার প্রেক্ষিতে দ্রুত এবং কার্যকর প্রত্যাবাসনের দাবি খুবই বোধগম্য। জাতিসংঘের প্রস্তাবটি রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের মধ্যে রাখার জন্য দারুণ উদ্যোগ। এটি আরও উল্লেখযোগ্য এই কারণে যে, বর্তমানে সংকট নিয়ে কোনো বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক সংলাপ নেই। তবে, মিয়ানমারের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংলাপ আয়োজন সহজ কাজ হবে না। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের—যা আরাকান নামেও পরিচিত—একটি বড় অংশ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছ থেকে দখলে নিয়েছে। এই অঞ্চলেরই বেশিরভাগ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
গত এক দশকে আরাকান আর্মির উত্থান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ববর্তী বাংলাদেশ সরকার অনেকটাই উপেক্ষা করেছিল। তবে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে, বাংলাদেশের জনসমক্ষে এই বিষয়ে ক্রমশ আলোচনা শুরু হয়েছে, যা হাসিনার শাসনামলে প্রায় নিষিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা এখন বেশ জোরেশোরেই আলোচিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার নাকি এই গ্রুপের সঙ্গে আধা-আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপনের উপায় বিবেচনা করছে। আরেকটি উদাহরণ হলো— দুই অভিজ্ঞ কূটনীতিক বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শাহিদুল হক এবং মিয়ানমারের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নীতির পুনর্বিবেচনা এবং নির্দিষ্ট পরামর্শ প্রস্তাব করেছেন।
আগামী বছরের রোহিঙ্গা সম্মেলনের আয়োজকদের তাৎক্ষণিকভাবে দুটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। প্রথমত, কীভাবে সম্মেলনের পরিধি নির্ধারণ করা হবে? দ্বিতীয়ত, কীভাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির প্রকৃত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হবে?
রোহিঙ্গা সংকটে অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে হলে এর বিস্তৃত গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। অনেক সময় রোহিঙ্গা সংকটকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের একটি দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়।
‘বিহাইন্ড দ্য ওয়্যার’— শিরোনামে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে, বিশ্বব্যাপী ২৮ লাখ রোহিঙ্গা আছে, যার মধ্যে মাত্র ২৩ শতাংশ মিয়ানমারে অবস্থান করছে। এই বিষয়টি নির্যাতন ও বৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নির্মম বাস্তবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। মিয়ানমার ছাড়াও যেসব দেশে রোহিঙ্গাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠী রয়েছে—তার মধ্যে বাংলাদেশে আছে প্রায় ১১ লাখ, পাকিস্তানে ৪ লাখ, সৌদি আরবে ৩ লাখ ৪০ হাজার এবং মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ১০ হাজার।
রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। উদাহরণস্বরূপ—সৌদি আরব এবং পাকিস্তানে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা কয়েক দশক আগে পাড়ি জমিয়েছে এবং তাদের সন্তানেরা কখনোই নিজভূমি দেখেনি। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস দেখেছে যে, গত পাঁচ বছরে পালিয়ে আসা ৭৬ শতাংশ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চেয়েছে। কিন্তু যারা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রবাসে রয়েছে তাদের মধ্যে এই ইচ্ছা মাত্র ২৮ শতাংশ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, সমাধানগুলো বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে হওয়া উচিত এবং ২০১৮ সালের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফিউজির যেসব লক্ষ্য আছে সেগুলোর আলোকে পরিচালিত হওয়া উচিত।
এর মধ্যে রয়েছে— আশ্রয়দাতা দেশগুলোর ওপর চাপ কমানো, শরণার্থীদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি, তৃতীয় দেশের সমাধানের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য মাতৃভূমিতে অবস্থার উন্নয়ন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এবং ২০১৬-১৭ সালে তাদের মিয়ানমার ছাড়ার বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের প্রাথমিক সমাধান হিসেবে ঢাকা রাখাইনে প্রত্যাবাসনের ওপর ফোকাস করাটাই যুক্তিযুক্ত। শরণার্থী প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য ঢাকার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়াও বোধগম্য। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ ১৯৭০ এর দশক থেকে দেখা ‘রিভলভিং ডোর’ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পারে। যেখানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ থেকে ফিরে গেলেও আবার একই চক্র শুরু হয়েছে। যদি রোহিঙ্গা সংকটের মূলে থাকা কারণগুলো সমাধান করা না হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা অধরাই থেকে যাবে এবং পুরো অঞ্চলের জন্য এর প্রভাব বাড়তে থাকবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন এবং বিতর্ক রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ধরেই নেওয়া হয় যে, মিয়ানমারে একটি কেন্দ্রীয় সরকার তার সব রাষ্ট্রের সব উপাদানেই রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ও পরিচালনা করতে পারে। ‘মিয়ানমার’ শব্দটি একাধিকবার উল্লেখ করা হলেও এটি কেবল সামরিক সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে। তবে জান্তা সরকার দেশের অনেকাংশেরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। রাখাইনে তাদের কর্তৃত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক বড় পরাজয়ের পর, তাদের ক্ষমতা সীমিত হয়ে রয়েছে কেবল রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে, মুনাউং দ্বীপ এবং কায়াকপায়ু ও গওয়া টাউনশিপের কিছু ছোট অংশে এবং এসব এলাকাতেও নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে, আরাকান আর্মি বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আগেই এই রাষ্ট্রকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে চীন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য কয়েকবার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয় মূলত রোহিঙ্গা এবং রাখাইন— যারা রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী— তাদের বাদ দেওয়ার কারণে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রত্যাবাসন পুনরায় শুরুর চেষ্টা আরও কম সফল হয়। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরাকান আর্মির বাস্তবিক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ স্বীকার না করে, তাহলে প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য জরুরি বিষয়ে অগ্রগতি কল্পনাতীত থেকে যাবে।
রোহিঙ্গা সম্মেলন আয়োজকদের জন্য এর অর্থ হচ্ছে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। তবে বাংলাদেশ এখনো স্পষ্টতই একটি অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত, এমনকি আরাকান আর্মি বাস্তবিকভাবে রাখাইনের নিয়ন্ত্রক হওয়ার পরও।
একটি পক্ষ হিসেবে আরাকান আর্মিকে পূর্ণ স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা কিছুটা দূরের হলেও উভয় পক্ষের জন্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা লাভজনক। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে—রাখাইনে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য একটি মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠা, সীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুনরায় শুরু করা। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশী বিশেষত চীন এবং থাইল্যান্ডের অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলো তাদের নিজ নিজ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করে তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
রাখাইনে পুরোনো জান্তা শাসনব্যবস্থার জায়গায় কী ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠবে— তা এখনো পরিষ্কার নয়। আরাকান আর্মির নেতৃত্ব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থানকে মানে না। মাঝে মাঝে তারা একটি ফেডারেল বা সংযুক্ত রাষ্ট্র কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে, তবে অন্যান্য বিকল্পগুলোকেও বাদ দেয়নি। গত কয়েক বছর ধরে রাখাইনের কিছু অংশে প্রশাসনিক ও বিচারিক সেবা চালিয়ে আসছে আরাকান আর্মির বেসামরিক শাখা ইউনাইটেড লীগ অব আরাকান এবং আরও বেসামরিক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। তবে এটি বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন গড়ে তোলার জন্য কেবল যাত্রা মাত্র।
গত বছরটি রাখাইনের জন্য উদ্বেগজনক ছিল। যদিও আরাকান আর্মি প্রায় পুরো রাজ্যকে জান্তা সরকারের হাত থেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু দুটি ঘটনা তাদের সামরিক সাফল্যে কালিমা লেপন করেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সর্বশেষ সংঘর্ষ রাখাইনকে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাজ্যটিতে অবরোধ কঠোর করেছে। ফলে প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। মৌলিক পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। এমনকি আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এমনকি মুদ্রা সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও অন্যান্য সংস্থাগুলো গুরুতর খাদ্য সংকট এবং এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এছাড়া এই সংঘাত সাম্প্রদায়িক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জান্তাবাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হতে থাকলেও তারা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ তথা বিভাজনের মাধ্যমে শাসনের কৌশল ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বড় অংশকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। তাঁরা সরাসরি রোহিঙ্গাদের যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে এবং রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) অন্যতম। ২০২৪ সালের এপ্রিলে থেকে সব পক্ষই বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের এই অবনতি ২০২২ এবং ২০২৩ সালের পরিস্থিতির যে উন্নয়ন হয়েছিল, সেটির ওপর একটি বড় ধাক্কা। সে সময় রাখাইনে বিশেষ করে মধ্য রাখাইন অঞ্চলে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বসবাসের জন্য আরও বেশি প্রস্তুত বলে মনে হয়েছিল। অপ্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্য ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছিল এবং সেবার সুযোগও বাড়ছিল। ২০২২ সালে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো সিতওয়ে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও সাম্প্রতিক সংঘর্ষ থেকে রেহাই পায়নি। কক্সবাজারে অবস্থিত আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অনেক তরুণকে জোরপূর্বক নিয়োগ দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁদের মিয়ানমারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং জান্তাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে লড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা যোদ্ধাকে অপহরণ বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের নথি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কয়েক মাসের তীব্র সংঘর্ষের পর আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু টাউনশিপে জান্তাবাহিনীর সর্বশেষ আউটপোস্ট দখল করে। এতে শত শত যুদ্ধবন্দি— যার মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা যোদ্ধাও অন্তর্ভুক্ত— তাদের হাতে পড়ে। আরাকান আর্মি বলছে, তারা ভবিষ্যতে সব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। তবে তারা জান্তাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করা রোহিঙ্গাদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে।
আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে পুনরায় স্থাপন করা যায়— তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পদক্ষেপ হিসেবে তারা হয়তো এপ্রিল-মে মাসে বুথিডং টাউনশিপে সংঘটিত গণ-সহিংসতার বিতর্কিত পরিস্থিতি নিয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের কথা ভাবতে পারে। এছাড়া সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের তাঁদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। তাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে থাকলে তা মেরামত বা পুনর্নির্মাণে সহায়তা প্রদান করতে পারে এবং আস্থা পুনরুদ্ধারের বাস্তবসম্মত উপায় হতে পারে।
আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উপায় নিয়েও ভাবতে হবে। কক্সবাজারে আশ্রয়শিবির থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ এবং তাদের মিয়ানমারে সীমান্ত পার করে রণক্ষেত্রে পাঠানোর বিষয়টি আরাকান আর্মিকে ক্ষুব্ধ করেছে। বাংলাদেশিসহ অনেক পর্যবেক্ষকই বিশ্বাস করতে চান না যে, এটি উচ্চপদস্থ বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের অজ্ঞাতে ঘটেছে।
রাখাইনকে যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে পুনর্গঠন করা বড় চ্যালেঞ্জ। এটি এমন এক চ্যালেঞ্জ, যার দ্রুত কোনো সমাধান নেই। এটি আগে থেকেই মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্যগুলোর একটি ছিল। উন্নয়নবঞ্চিত, আন্তঃসম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং বঞ্চনার শিকার এই রাজ্যে দারিদ্র্য, সুযোগের অভাব এবং বাস্তুচ্যুতির কারণে এখানকার সব সম্প্রদায়কেই আঘাত করেছে। ২০১৮ সালের শেষের দিকে যখন জান্তাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সহিংসতা তীব্রতর হয়, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। রাখাইনে একটি ব্যাপক দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা এবং রোডম্যাপের প্রয়োজন, যাতে সামনে থাকা ব্যাপক কর্মযজ্ঞ— যার মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন অন্তর্ভুক্ত— ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়।
সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো রাজ্যের বৈচিত্র্যময় জাতিগত এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর একীকরণ শক্তিশালী করা। বিশেষ করে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের আস্থায় আনার বিষয়টি সবচেয়ে কঠিন কাজ। দুই পক্ষই একে অপরের প্রতি গভীর ভয় ও বিদ্বেষ পোষণ করেছে। কিছু রাখাইনের মতে, রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ— যারা জান্তাবাহিনীর সঙ্গে মিলে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে— তাঁদের এই ভয়কে আরও গভীর করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও ভূমিকা পালন করতে হবে। রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায় কী ধরনের সমস্যা বা জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে— এটি স্বীকার করতে হবে আগে। গত কয়েক দশকে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তির খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী সব সম্প্রদায়কেই আরও বেশি অত্যাচার করতে শুরু করেছে— পেটানো, হত্যা করা এবং নির্যাতন করা, জীবন-জীবিকা ধ্বংস করা, ঘর, হাসপাতাল, স্কুল, বাজার ও উপাসনালয় পোড়ানো, মৌলিক পণ্যের পরিবহন বন্ধ করা এবং অত্যাবশ্যকীয় সেবা— যেমন বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং এবং যোগাযোগ বন্ধ করা। এখন রাখাইন রাজ্যের সব মানুষই অবরুদ্ধ অবস্থার শিকার।
তাহলে, বিশ্ব সম্প্রদায় সংকটের জন্য অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে চাইলে তবে তাঁদের কেবল রোহিঙ্গাদের দুর্দশা মোকাবিলা করেই নয়, রাখাইনের সব মানুষের জন্য একত্রে রাজ্য পুনর্গঠনেও সাহায্য করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস প্রোগ্রামের’ বা অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায্যতা নিশ্চিত কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। এর আওতায় প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার, সত্য, ন্যায়, ক্ষতিপূরণ ও স্মৃতি সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে নিজেদের সংগতি রাখতে পারবে। ২০১৭ সালের আগস্টে জাতিসংঘ সাবেক মহাসচিব কফি আনানের সভাপতিত্বে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিশন রাখাইনের উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য সমাধান প্রস্তাব করেছিল। এই প্রস্তাব সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের পথে একটি দিশা ছিল। তারপর যা কিছু ঘটেছে, তা সত্ত্বেও, অনেক সুপারিশ আজও প্রাসঙ্গিক। এখন রাখাইনের জনগণ ও তাঁদের নেতাদের ওপরই নির্ভর করছে যে, তারা কীভাবে এগুলোকে নতুন রাখাইন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
লেখক: থাইল্যান্ডে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত। তিনি ২০১৬ সাল থেকে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক জাতিসংঘের পরামর্শক কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
(মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান)
পুতিন ও ট্রাম্প উভয়েই একধরনের ‘আদর্শহীন বাস্তবতাবাদী’ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। পুতিন মানবাধিকার ও পশ্চিমা উদারনৈতিক মূল্যবোধকে প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাম্পও প্রায় একই ধাঁচে আদর্শের চেয়ে ক্ষমতার গতিপ্রকৃতির বাস্তবতাকে বেশি প্রাধান্য দেন। পুতিন ট্রাম্পের এই বৈশিষ্ট্যকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যেখানে একটি..
৮ ঘণ্টা আগেভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ।
১৩ ঘণ্টা আগেগত বছরটি ছিল এমন এক বছর, যেখানে সারা বিশ্বে ক্ষমতাসীনেরা হয় নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন অথবা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রিপরিষদ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ আল গারজাভির একটি কথা গুরুত্বপূর্ণ, ‘সরকারের কাজ হলো এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করা, যা নাগরিকদের আশার আলো দেয়।’
৩ দিন আগেবাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় কী কী জরুরি তার ইঙ্গিত মিলবে ২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ড্যারন আসেমোগলোর নিবন্ধ থেকে। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান।
৪ দিন আগে