অনলাইন ডেস্ক
ইউক্রেন যুদ্ধ বদলে দিচ্ছে জ্বালানি তেলের বাজার। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় নিজেরাই বেশ সংকটে পড়েছে। আফ্রিকার তেল সমৃদ্ধ দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে রপ্তানি বাজার ঠিক রাখতে এশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে রাশিয়া।
তবে এশিয়ায় রপ্তানি করতে গিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে রাশিয়া। ইউরোপের মতো এ অঞ্চলে সরাসরি সঞ্চালন পাইপলাইন না থাকায় সমুদ্রে জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর করতে হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের বাজারের এই পট পরিবর্তন কয়েক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শেল বিপ্লবের (যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে তেল এবং গ্যাসের উত্তোলন পদ্ধতি এবং পরিমাণ বদলে গিয়েছিল) ফলে জ্বালানির বাজার যে আকার নিয়েছিল তা বদলে দিয়েছে। এই পরিবর্তন এটিই নির্দেশ করে যে—রাশিয়া চীন এবং এশিয়ার দেশগুলোতে জ্বালানি তেল রপ্তানির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ধকল হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞাই মূলত রাশিয়াকে ইউরোপের বাইরে নজর দিতে উৎসাহিত করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে রাশিয়াকে বেশ কিছু ছাড় দিতে হয়েছে। এশিয়ায় চীন এবং ভারতের কাছে তেল বিক্রি করলেও তেলের মূল্যে বেশ ছাড় দিতে হয়েছে বলেই জানিয়েছে রয়টার্স।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর খুব বেশি দিন লাগেনি রাশিয়ার তার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে। প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য বলছে, যুদ্ধ শুরুর আগে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল রাশিয়া ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করত এপ্রিল নাগাদই আবার সেই মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলে। তবে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানি ট্র্যাকে ফিরলেও মার্চ নাগাদই বিশ্ব তেলের বাজার বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রতি ব্যারেল ১৩৪ ডলারে পৌঁছায়। অথচ যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১১১ ডলার।
এমনকি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি সামগ্রিকভাবে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় (৩১ মে আংশিক দিয়েছে) তারপরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানি যে পরিমাণ হ্রাস পাবে এশিয়ার চাহিদা দিয়ে তা পূরণ হয়ে যাবে। বেসরকারি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান জুলিয়াস বেয়ারের বিশেষজ্ঞ নরবার্ট রকার বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত এশিয়ার দেশগুলোর ওপর পশ্চিমারা কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ না করছে ততক্ষণ অবধি রাশিয়ার তেল সরবরাহ কমার এবং তেলের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেন সরকারের দেওয়া জোড়াতালি মার্কা নিষেধাজ্ঞার ফলে হয়তো রাশিয়ার তেলবাহী জাহাজগুলো বন্দরে ভিড়তে পারছে না, কিন্তু সমুদ্রেই জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তরের মাধ্যমে সেই নিষেধাজ্ঞাও পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। যদিও এতে সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। তবে এই পদ্ধতিতে এরই মধ্যে এশিয়ার বাজারে রাশিয়ার তেল রপ্তানি বিপুলভাবে বেড়েছে। রয়টার্সের তথ্য বলছে, জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তরের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল রপ্তানি এক বছরে মধ্যেই প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
তেলবাহী ট্যাংকারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রো–লজিস্টিকসের প্রেসিডেন্ট মার্ক গার্বার রয়টার্সকে বলেছেন, ‘রাশিয়ার তেলবাহী জাহাজগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা আর ইউরোপীয় জলসীমায় জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর করছে না। এর পরিবর্তে এখন ভূমধ্যসাগরে এই স্থানান্তর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’ গার্বার বলেছেন, ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার জাহাজগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪ লাখ ব্যারেল তেল অন্য দেশগুলোর জাহাজে স্থানান্তর করা হচ্ছে। যার বেশির ভাগই যাচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোতে এবং এসব দেশে সরাসরি প্রতিদিন ২৩ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করছে রাশিয়া। অথচ, ইউক্রেনে আক্রমণের আগে রাশিয়া থেকে এশিয়ার দেশগুলোতে যাওয়া অপরিশোধিত তেলের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫ লাখ ব্যারেল।
জাহাজে রপ্তানিকৃত তেল রাশিয়ার সামগ্রিক তেল রপ্তানির একটি অংশ মাত্র। বিভিন্ন পাইপলাইন এবং জাহাজের মাধ্যমে রাশিয়া এখনো প্রতিদিন ৮০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে থাকে। যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাশিয়ার রপ্তানিকৃত তেলের পরিমাণের সমান।
এ তো গেল, রাশিয়ার তেল এবং বিশ্ব বাজারের হিসাব। তবে এখন বাজারে নতুন অংশীদার হিসেবে হাজির হয়েছে আফ্রিকার অপরিশোধিত তেল। ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ঘাটতি পূরণে আফ্রিকার দেশগুলোর দিকে ঝুঁকেছে। বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকায়। পেট্রো–লজিস্টিকসের উপাত্ত অনুযায়ী, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউরোপে যে পরিমাণ তেল রপ্তানি করা হয়েছে, ২০২২ সালের এপ্রিল নাগাদ রপ্তানি তার চেয়ে ১৭ শতাংশরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উন্মুক্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ সফটওয়্যার এইকনের তথ্য অনুসারে, আফ্রিকা থেকে ইউরোপে তেল রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মে মাসে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তর–পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছেছে। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ হলো—নাইজেরিয়া। এ ছাড়া রয়েছে, ক্যামেরুন এবং অ্যাঙ্গোলা।
বিপরীতে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ভারতে তেল রপ্তানি প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। পেট্রো–লজিস্টিকসের প্রেসিডেন্ট মার্ক গার্বার বলছেন, ভারত আফ্রিকার দেশগুলোর পরিবর্তে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির দিকে ঝুঁকেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ভারত আফ্রিকার দেশগুলো থেকে যেখানে প্রতিদিন ৫ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করত সেখানে গত এপ্রিল নাগাদ প্রতিদিন আমদানি করেছে মাত্র ২ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল।
তবে, আফ্রিকার তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউরোপকে বেশি দাম দিতে হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউরোপের চাহিদা তুঙ্গে থাকায় এবং নাইজেরিয়ার অপরিশোধিত ‘ব্রেন্ট’-এর গুণগত মান ভালো হওয়ায় ব্যারেল প্রতি দাম কমপক্ষে ৭ ডলার দাম বেশি হাঁকছে তারা।
পেট্রো–লজিস্টিকস বলছে, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকেও ইউরোপে তেল রপ্তানি অন্তত ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে গত মার্চ নাগাদ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব থেকে ইউরোপে তেল রপ্তানিও প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চে যা ছিল মে মাসে এসে তার দ্বিগুণ—প্রতিদিন ৪ লাখ ব্যারেল ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ইউরোপে তেল রপ্তানি বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেল আমদানি–রপ্তানি উপাত্ত বিশ্লেষক সংস্থা কেপলার জানিয়েছে, ইউরোপীয় অপরিশোধিত তেলে আমদানিকারকেরা মে মাসে গত মার্চের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্তত ১৫ শতাংশ তেল আমদানি বাড়িয়েছে। ইউরোপ এই সময়ে প্রায় প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে।
ফলে এটা স্পষ্ট যে—বিশ্বের পেট্রোলিয়াম বাজারের প্রকৃতি প্রায় পুরোটাই পাল্টে গেছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে জ্বালানি তেলের বাজারের এই নতুন প্রবণতা স্থায়ী রূপ নেওয়ার পাশাপাশি ভূরাজনীতিকেও নতুন রূপ দিতে পারে।
রয়টার্স থেকে ভাষান্তর আব্দুর রহমান
ইউক্রেন যুদ্ধ বদলে দিচ্ছে জ্বালানি তেলের বাজার। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় নিজেরাই বেশ সংকটে পড়েছে। আফ্রিকার তেল সমৃদ্ধ দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে রপ্তানি বাজার ঠিক রাখতে এশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে রাশিয়া।
তবে এশিয়ায় রপ্তানি করতে গিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে রাশিয়া। ইউরোপের মতো এ অঞ্চলে সরাসরি সঞ্চালন পাইপলাইন না থাকায় সমুদ্রে জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর করতে হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের বাজারের এই পট পরিবর্তন কয়েক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শেল বিপ্লবের (যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে তেল এবং গ্যাসের উত্তোলন পদ্ধতি এবং পরিমাণ বদলে গিয়েছিল) ফলে জ্বালানির বাজার যে আকার নিয়েছিল তা বদলে দিয়েছে। এই পরিবর্তন এটিই নির্দেশ করে যে—রাশিয়া চীন এবং এশিয়ার দেশগুলোতে জ্বালানি তেল রপ্তানির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ধকল হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞাই মূলত রাশিয়াকে ইউরোপের বাইরে নজর দিতে উৎসাহিত করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে রাশিয়াকে বেশ কিছু ছাড় দিতে হয়েছে। এশিয়ায় চীন এবং ভারতের কাছে তেল বিক্রি করলেও তেলের মূল্যে বেশ ছাড় দিতে হয়েছে বলেই জানিয়েছে রয়টার্স।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর খুব বেশি দিন লাগেনি রাশিয়ার তার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে। প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য বলছে, যুদ্ধ শুরুর আগে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল রাশিয়া ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করত এপ্রিল নাগাদই আবার সেই মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলে। তবে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানি ট্র্যাকে ফিরলেও মার্চ নাগাদই বিশ্ব তেলের বাজার বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রতি ব্যারেল ১৩৪ ডলারে পৌঁছায়। অথচ যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১১১ ডলার।
এমনকি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি সামগ্রিকভাবে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় (৩১ মে আংশিক দিয়েছে) তারপরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানি যে পরিমাণ হ্রাস পাবে এশিয়ার চাহিদা দিয়ে তা পূরণ হয়ে যাবে। বেসরকারি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান জুলিয়াস বেয়ারের বিশেষজ্ঞ নরবার্ট রকার বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত এশিয়ার দেশগুলোর ওপর পশ্চিমারা কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ না করছে ততক্ষণ অবধি রাশিয়ার তেল সরবরাহ কমার এবং তেলের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেন সরকারের দেওয়া জোড়াতালি মার্কা নিষেধাজ্ঞার ফলে হয়তো রাশিয়ার তেলবাহী জাহাজগুলো বন্দরে ভিড়তে পারছে না, কিন্তু সমুদ্রেই জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তরের মাধ্যমে সেই নিষেধাজ্ঞাও পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। যদিও এতে সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। তবে এই পদ্ধতিতে এরই মধ্যে এশিয়ার বাজারে রাশিয়ার তেল রপ্তানি বিপুলভাবে বেড়েছে। রয়টার্সের তথ্য বলছে, জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তরের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল রপ্তানি এক বছরে মধ্যেই প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
তেলবাহী ট্যাংকারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রো–লজিস্টিকসের প্রেসিডেন্ট মার্ক গার্বার রয়টার্সকে বলেছেন, ‘রাশিয়ার তেলবাহী জাহাজগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা আর ইউরোপীয় জলসীমায় জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর করছে না। এর পরিবর্তে এখন ভূমধ্যসাগরে এই স্থানান্তর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’ গার্বার বলেছেন, ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার জাহাজগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪ লাখ ব্যারেল তেল অন্য দেশগুলোর জাহাজে স্থানান্তর করা হচ্ছে। যার বেশির ভাগই যাচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোতে এবং এসব দেশে সরাসরি প্রতিদিন ২৩ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করছে রাশিয়া। অথচ, ইউক্রেনে আক্রমণের আগে রাশিয়া থেকে এশিয়ার দেশগুলোতে যাওয়া অপরিশোধিত তেলের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫ লাখ ব্যারেল।
জাহাজে রপ্তানিকৃত তেল রাশিয়ার সামগ্রিক তেল রপ্তানির একটি অংশ মাত্র। বিভিন্ন পাইপলাইন এবং জাহাজের মাধ্যমে রাশিয়া এখনো প্রতিদিন ৮০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করে থাকে। যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাশিয়ার রপ্তানিকৃত তেলের পরিমাণের সমান।
এ তো গেল, রাশিয়ার তেল এবং বিশ্ব বাজারের হিসাব। তবে এখন বাজারে নতুন অংশীদার হিসেবে হাজির হয়েছে আফ্রিকার অপরিশোধিত তেল। ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ঘাটতি পূরণে আফ্রিকার দেশগুলোর দিকে ঝুঁকেছে। বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকায়। পেট্রো–লজিস্টিকসের উপাত্ত অনুযায়ী, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউরোপে যে পরিমাণ তেল রপ্তানি করা হয়েছে, ২০২২ সালের এপ্রিল নাগাদ রপ্তানি তার চেয়ে ১৭ শতাংশরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উন্মুক্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ সফটওয়্যার এইকনের তথ্য অনুসারে, আফ্রিকা থেকে ইউরোপে তেল রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মে মাসে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তর–পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছেছে। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ হলো—নাইজেরিয়া। এ ছাড়া রয়েছে, ক্যামেরুন এবং অ্যাঙ্গোলা।
বিপরীতে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ভারতে তেল রপ্তানি প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। পেট্রো–লজিস্টিকসের প্রেসিডেন্ট মার্ক গার্বার বলছেন, ভারত আফ্রিকার দেশগুলোর পরিবর্তে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির দিকে ঝুঁকেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ভারত আফ্রিকার দেশগুলো থেকে যেখানে প্রতিদিন ৫ লাখ ১০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করত সেখানে গত এপ্রিল নাগাদ প্রতিদিন আমদানি করেছে মাত্র ২ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল।
তবে, আফ্রিকার তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউরোপকে বেশি দাম দিতে হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউরোপের চাহিদা তুঙ্গে থাকায় এবং নাইজেরিয়ার অপরিশোধিত ‘ব্রেন্ট’-এর গুণগত মান ভালো হওয়ায় ব্যারেল প্রতি দাম কমপক্ষে ৭ ডলার দাম বেশি হাঁকছে তারা।
পেট্রো–লজিস্টিকস বলছে, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকেও ইউরোপে তেল রপ্তানি অন্তত ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে গত মার্চ নাগাদ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব থেকে ইউরোপে তেল রপ্তানিও প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চে যা ছিল মে মাসে এসে তার দ্বিগুণ—প্রতিদিন ৪ লাখ ব্যারেল ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ইউরোপে তেল রপ্তানি বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেল আমদানি–রপ্তানি উপাত্ত বিশ্লেষক সংস্থা কেপলার জানিয়েছে, ইউরোপীয় অপরিশোধিত তেলে আমদানিকারকেরা মে মাসে গত মার্চের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্তত ১৫ শতাংশ তেল আমদানি বাড়িয়েছে। ইউরোপ এই সময়ে প্রায় প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে।
ফলে এটা স্পষ্ট যে—বিশ্বের পেট্রোলিয়াম বাজারের প্রকৃতি প্রায় পুরোটাই পাল্টে গেছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে জ্বালানি তেলের বাজারের এই নতুন প্রবণতা স্থায়ী রূপ নেওয়ার পাশাপাশি ভূরাজনীতিকেও নতুন রূপ দিতে পারে।
রয়টার্স থেকে ভাষান্তর আব্দুর রহমান
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৬ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে