জাহাঙ্গীর আলম
২০১৯ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। বছরের উষ্ণতম সপ্তাহের ভবিষ্যদ্বাণী করার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন অঙ্গরাজ্যের নিউইয়র্ক শহরজুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। গত দুই দশকে শহরের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সবকটি রেকর্ডই ঘটেছে তাপপ্রবাহের সময়। কারণ একটাই লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো চালু করে। নিউইয়র্কের ১ কোটির বেশি বাসিন্দাকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিতরণ সংস্থার ঘাম ছুটে যায়। তারা কোম্পানির সম্মেলন কক্ষকে জরুরি কমান্ড সেন্টার বানিয়ে ফেলে।
এসিতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খচর হয় সেটির একটি ধারণা পেতে আমরা নিউইয়র্ক সিটিকেই নমুনা হিসেবে নিতে পারি।
নিউইয়র্ক সিটি এবং ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টিজুড়ে ৬২টি পাওয়ার সাবস্টেশন এবং ১ লাখ ৩০ হাজার মাইলেরও বেশি পাওয়ার লাইন এবং তারের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা কন এডিসনের গ্রিড প্রতি সেকেন্ডে ১৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। সে হিসাবে এটি প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ অশ্বশক্তির সমতুল্য।
নিয়মিত দিনে, নিউইয়র্ক সিটির প্রতি সেকেন্ডে চাহিদা প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট। তাপপ্রবাহের সময় এই চাহিদা ১৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এই সরবরাহ কোম্পানির একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, একটা সাধারণ পাটিগণিত করে দেখুন। উচ্চ চাহিদা এবং চরম তাপমাত্রা দুই মিলে সিস্টেমের সরঞ্জামগুলোকে অতিরিক্ত গরম করে তোলে। এতে পুরো সিস্টেমই ফেইল করতে পারে। ফলে ব্ল্যাকআউট হয়। ২০০৬ সালে সরঞ্জাম অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণে কুইন্সে এক সপ্তাহের জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন ছিল। একটি তাপপ্রবাহে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
একটি উদাহরণ দিয়ে পরিস্থিতির বোঝানো যাক: ২০১৯ সালের ২১ জুলাই সন্ধ্যা নাগাদ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে। তখন প্রতি সেকেন্ডে চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। সরবরাহ কোম্পানি কন এডিসন ব্রুকলিন এবং কুইন্সের ৫০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ ২৪ ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন রাখতে বাধ্য হয়। কারণ কাছাকাছি গ্রিডে সিস্টেম অকেজো হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এটি না করলে হাজার হাজার মানুষ কয়েক দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। ওই সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা করতে অঙ্গরাজ্য প্রশাসনকে পুলিশ পাঠাতে হয়েছিল, আর কন এডিসনের কর্মীরা লোডশেডিংয়ে পড়া গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি ড্রাই আইস বিতরণ করেছিলেন যাতে তাঁরা ঘরবাড়ি ঠান্ডা রাখতে পারেন। বাংলাদেশে অবশ্য এমন সেবা অবাস্তব কল্পনা!
পৃথিবীর উষ্ণতা যতই বাড়বে, এ ধরনের দৃশ্য ক্রমেই সাধারণ হয়ে উঠবে। আর গরম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বেই এয়ার কন্ডিশনার কেনার প্রবণতা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভবত সবচেয়ে সাধারণ ও জনপ্রিয় একটি ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে এই এসির ব্যবহার।
অথচ এয়ার কন্ডিশনার একটি প্রায় অনন্য খরুচে যন্ত্র। এসির একটি ছোট ইউনিট একটি ঘর শীতল করতে পারে, অথচ এটিই গড়ে চারটি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ খরচ করে। আর যখন বাড়ি শীতল রাখতে একটি কেন্দ্রীয় ইউনিট ব্যবহার করা হয় তখন ১৫ টির বেশি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ একটাই খরচ করে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) বিশ্লেষক জন ডুলাক বলেন, ২০১৮ সালে বেইজিংয়ে তাপপ্রবাহের সময় উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশই ব্যবহার করেছিল এয়ার কন্ডিশনার বা এসি!
২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে তখন একটি ঘর ঠান্ডা রাখার মতো এসির ইউনিট ছিল ১০০ কোটির বেশি। সে হিসাবে পৃথিবীতে প্রতি সাতজনের বিপরীতে প্রায় একটি এসি। যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের মধ্যেও এসির শীতলতা কল্পনা করতে পারেন না।
এ নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ছোট ইউনিটের এসি থাকবে ৪৫০ কোটির বেশি। তার মানে বর্তমানের মোবাইল ফোনের মতো সর্বব্যাপী ভোক্তাপণ্য হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে প্রতি বছর শুধু এয়ার কন্ডিশনারের জন্য যতখানি বিদ্যুৎ খরচ করে তা যুক্তরাজ্যের মোট ব্যবহারের সমান!
আইইএর ধারণা মতে, বিশ্বের বাকি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থায় পৌঁছালে, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিদ্যুতের প্রায় ১৩ শতাংশ খরচ করবে। আর এসব যন্ত্র বছরে উৎপাদন করবে ২০০ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশ ভারতের সমান।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, চলতি শতকের শেষ নাগাদ শুধু এসি থেকে নির্গত গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে।
দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং এরই মধ্যেই বিপজ্জনক মাত্রার তাপ ও আর্দ্রতার কবলে পড়া দেশগুলো-ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রাজিলের মতো দেশের কোটি কোটি মানুষ শিগগিরই তাদের বাড়ির জন্য প্রথম এসি কিনবে।
সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া একটি বিপজ্জনক চক্রের জন্ম দিচ্ছে। উষ্ণতা বৃদ্ধি মানুষকে আরও বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যত বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে তত বাড়বে পরিবেশের উষ্ণতা। এই চক্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ওপর এই নির্ভরতা সভ্যতার এমন এক উপসর্গ যেটিকে চীনা শিল্প সমালোচক হাউ হ্যানরু ‘পরিকল্পনার-উত্তর যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন। সাধারণত পরিকল্পনা বলতে আমরা যা বুঝি—কেন্দ্রীভূত, পদ্ধতিগত, পূর্ববর্তী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা—এই ধারণা এখন প্রায় বিলুপ্ত। উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি এবং খাত নির্ধারণ করে দেয় বাজার। মানুষের (ভোক্তা) বেঁচে থাকার প্রয়োজন খোঁজা হয় পরে, তাও বিচ্ছিন্নভাবে।
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রকে এখন প্রায়শই একটি সাধারণ পছন্দ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। মানুষের আর্থিক উন্নয়নে পাশাপাশি জীবনকে উন্নত করার জন্য এটিকে একটি অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। যেমনটি জাপানি এসি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান দাইকিনের ভারতীয় শাখার একজন নির্বাহী বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘এসি এখন আর বিলাসবহুল পণ্য নয় বরং প্রয়োজন। এসি সবারই প্রাপ্য।’
জীবনযাপনে আমেরিকান হতে গিয়ে অনেকে দেশেই মানুষের জীবনে এসি যেন গেঁথে গেছে। এমন কোনো ক্ষেত্রে ভোক্তাদের পছন্দকেও উপেক্ষা করা হয়। যেমন: কোনো হোটেলে ব্যাপারটা এমন যে ‘আপনি এসি চালু করবেন কি না সেটি আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কিন্তু আপনি জানালা খুলতে পারবেন না!’
তাহলে, কীভাবে এসির ফাঁদ থেকে পৃথিবীর মানুষকে বের করা যাবে? জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে হলে যে অভ্যাস এবং প্রযুক্তিগুলো কমাতে বা ত্যাগ করতে হবে তার মধ্যে এসিও কিন্তু পড়ে। রেড মিট খাওয়ার অভ্যাস কমানোর চেয়ে এসি বিসর্জন দেওয়া কঠিন, তবে জীবাশ্ম-জ্বালানি চালিত অটোমোবাইল নির্মূল করার চেয়ে সহজ।
এ ছাড়া গবেষকেরা দেখিয়েছেন, গরম অঞ্চলের মানুষ ঘরে বেশি তাপমাত্রার মধ্যেও অনেক সময় আরাম বোধ করেন। তাঁরা দাবি করেন, মনের অবস্থা হোক বা জৈবিক সমন্বয় হোক, মানুষের আরাম আসলে অভিযোজনের ব্যাপার, এটা উদ্দেশ্যমূলক নয়। এ কারণে এসি ছাড়া যে অফিস চলবে না সাম্প্রতিককালের এমন ধারণার আসলে শক্ত ভিত্তি নেই। অর্থাৎ কাজ করার জন্য ‘আদর্শ’ তাপমাত্রার ধারণার সপক্ষে যুক্তি দুর্বল।
এসি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু অগ্রগতি হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল বড় ভবনগুলোর গ্রিস হাউস গ্যাস নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আইন করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস মেয়রের কার্যালয় ২০৫০ সালের নিট-জিরো কার্বন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
অন্যান্য শহর আরও সরাসরি পদক্ষেপ নিচ্ছে। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি, জেনেভার স্থানীয় সরকার বিশেষ অনুমতি ছাড়া এসি স্থাপন নিষিদ্ধ করে। যদিও এ শহরে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে উষ্ণ। এই পদ্ধতিটি সুইজারল্যান্ডজুড়ে বলতে গেলে স্বাভাবিক। এর ফলও পেয়েছে তারা। এখন মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ২ শতাংশেরও কম খরচ হয় এসিতে। সুইসরা যে এসি খুব মিস করে তেমন কিন্তু দেখা যায় না।
যেসব দেশে এসি এখনো তুলনামূলকভাবে নতুন, সেখানে বিকল্প বিকল্প খোঁজার সুযোগ বেশি। এসব দেশের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ‘পশ্চিমের সবচেয়ে খারাপ’ জিনিসগুলো এড়ানো। ভারত সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ শুরু করেছে।
অন্যান্য অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের মতো ভারতকেও তার বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যার জন্য তাপমাত্রা সহ্য ক্ষমতার মধ্যে রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্রিন হাউস গ্যাসে উচ্চ নির্গমন পরিস্থিতিতে ভারতের জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ ২১০০ সালের মধ্যে চরম তাপ ও আর্দ্রতার কারণ জীবন-হুমকির মুখে পড়বে। ২০১৭ সালে বিজ্ঞানের অগ্রগতি বিষয়ক একটি গবেষণায় এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে, এয়ার কন্ডিশনারগুলো ‘গ্লোবাল কুলিং প্রাইজ’ মান পূরণে প্রয়োজনীয় প্রবিধান প্রণয়ন করলে ভারতের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পেছনে খরচ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। সেই সঙ্গে দেশের গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন-হ্রাস লক্ষ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ হয়ে যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, বিশ্বব্যাপী চরম তাপপ্রবাহ ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ২ লাখ ৫৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে। নতুন প্রযুক্তির এয়ার কন্ডিশনার একা এই মৃত্যু ঠেকাতে পারবে না। এর জন্য অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে কাচ এবং কংক্রিটের চেয়ে ভালো নিরোধক উপকরণ দিয়ে ভবন নির্মাণ জরুরি।
বিপুলসংখ্যক এই নতুন গ্রাহকেরা যাতে আরও কার্যকর (পরিবেশবান্ধব অর্থে) এসি কিনতে পারে তা নিশ্চিত করতে গ্লোবাল কুলিং প্রাইজ চালু করা হয়েছে। কৌশলগতভাবে পুরস্কারটি আপাতত শুধু ভারতের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংগুলোতে ব্যবহৃত এক কক্ষের এসিগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এ রকম এসি ডিজাইন করা আটজন চূড়ান্ত প্রতিযোগীর জন্য ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আদর্শ হিসেবে বলা হয়, জীবনকালে প্রচলিত এসির পাঁচগুণ কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করবে। সেই সঙ্গে দাম প্রচলিতর এসির দ্বিগুণের বেশি কোনোভাবেই হবে না।
২০১৮ সালে প্রতিযোগিতাটি চালু হয়, পৃষ্ঠপোষক ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; রকি মাউন্টেন ইনস্টিটিউট (আরএমআই) ; ২৪টি দেশের একটি জোট এবং ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রিচার্ড ব্র্যানসন। ৩০ লাখ ডলারের উদ্যোগ এটি। আরএমআইয়ের ধারণা, এই ধরনের প্রযুক্তি জনপ্রিয় হলে ২০৫০ সালের মধ্যে ১০০ গিগাটন পর্যন্ত গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন রোধ করা যাবে। আশার কথা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে বৃহৎ এসি কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসছে। ২০২১ সালে পুরস্কার জিতেছে জাপানি কোম্পানি দাইকিন এবং চীনা কোম্পানি গ্রি।
রকি মাউনটেইন ইনস্টিটিউটের (আরএমআই) হিসাব করে দেখেছে, নতুন এয়ার কন্ডিশনার থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি ঠেকাতে হলে নতুন প্রযুক্তির এসি যা সাধারণ এসির পাঁচ গুণ কম বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঝুঁকি তৈরি করে, সেগুলোর দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২০২২ সালের মধ্যেই বাজারে আনা উচিত। আর ২০৪০ সালের মধ্যে বার্ষিক এসি বিক্রয়ের প্রায় ১০০ শতাংশ দখল করতে পারতে হবে।
তবে দাম কম রাখার প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র যে নতুন প্রযুক্তি দিয়ে সস্তা বিকল্পগুলোর স্থান দখল করা কঠিন হবে। বিশেষ করে ভারত এবং ব্রাজিলের মতো দেশে এটি একটি চ্যালেঞ্জ, যেখানে মানুষের আয় বাড়ছে এবং মানুষ দ্রুতই তাদের প্রথম এসিটি কেনার সামর্থ্য অর্জন করবে ৷
অবশ্য দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ কোনোভাবে এসি কেনার সামর্থ্য অর্জন করলেও এর ব্যয় বহন করার সামর্থ্য অর্জন করতে আরও সময় লাগবে।
আমরা এখন কীভাবে শীতল থাকার চেষ্টা করছি সেই চিত্র বদলে দেওয়ার দ্রুততম পথটি হবে-উদ্ভাবন, প্রতিযোগিতা এবং নিয়ন্ত্রণের সমন্বয়। এই অগ্রগতিতে আরও গতি অত্যাবশ্যক। কারণ বিশ্বকে শীতল রাখার দৌড় শুধু উদ্ভাবন আর বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা নয়, এটা আমাদের বেঁচে থাকার প্রশ্ন!
২০১৯ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। বছরের উষ্ণতম সপ্তাহের ভবিষ্যদ্বাণী করার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন অঙ্গরাজ্যের নিউইয়র্ক শহরজুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। গত দুই দশকে শহরের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সবকটি রেকর্ডই ঘটেছে তাপপ্রবাহের সময়। কারণ একটাই লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো চালু করে। নিউইয়র্কের ১ কোটির বেশি বাসিন্দাকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিতরণ সংস্থার ঘাম ছুটে যায়। তারা কোম্পানির সম্মেলন কক্ষকে জরুরি কমান্ড সেন্টার বানিয়ে ফেলে।
এসিতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খচর হয় সেটির একটি ধারণা পেতে আমরা নিউইয়র্ক সিটিকেই নমুনা হিসেবে নিতে পারি।
নিউইয়র্ক সিটি এবং ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টিজুড়ে ৬২টি পাওয়ার সাবস্টেশন এবং ১ লাখ ৩০ হাজার মাইলেরও বেশি পাওয়ার লাইন এবং তারের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা কন এডিসনের গ্রিড প্রতি সেকেন্ডে ১৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। সে হিসাবে এটি প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ অশ্বশক্তির সমতুল্য।
নিয়মিত দিনে, নিউইয়র্ক সিটির প্রতি সেকেন্ডে চাহিদা প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট। তাপপ্রবাহের সময় এই চাহিদা ১৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এই সরবরাহ কোম্পানির একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, একটা সাধারণ পাটিগণিত করে দেখুন। উচ্চ চাহিদা এবং চরম তাপমাত্রা দুই মিলে সিস্টেমের সরঞ্জামগুলোকে অতিরিক্ত গরম করে তোলে। এতে পুরো সিস্টেমই ফেইল করতে পারে। ফলে ব্ল্যাকআউট হয়। ২০০৬ সালে সরঞ্জাম অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণে কুইন্সে এক সপ্তাহের জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন ছিল। একটি তাপপ্রবাহে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
একটি উদাহরণ দিয়ে পরিস্থিতির বোঝানো যাক: ২০১৯ সালের ২১ জুলাই সন্ধ্যা নাগাদ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে। তখন প্রতি সেকেন্ডে চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। সরবরাহ কোম্পানি কন এডিসন ব্রুকলিন এবং কুইন্সের ৫০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ ২৪ ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন রাখতে বাধ্য হয়। কারণ কাছাকাছি গ্রিডে সিস্টেম অকেজো হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এটি না করলে হাজার হাজার মানুষ কয়েক দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। ওই সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা করতে অঙ্গরাজ্য প্রশাসনকে পুলিশ পাঠাতে হয়েছিল, আর কন এডিসনের কর্মীরা লোডশেডিংয়ে পড়া গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি ড্রাই আইস বিতরণ করেছিলেন যাতে তাঁরা ঘরবাড়ি ঠান্ডা রাখতে পারেন। বাংলাদেশে অবশ্য এমন সেবা অবাস্তব কল্পনা!
পৃথিবীর উষ্ণতা যতই বাড়বে, এ ধরনের দৃশ্য ক্রমেই সাধারণ হয়ে উঠবে। আর গরম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বেই এয়ার কন্ডিশনার কেনার প্রবণতা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভবত সবচেয়ে সাধারণ ও জনপ্রিয় একটি ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে এই এসির ব্যবহার।
অথচ এয়ার কন্ডিশনার একটি প্রায় অনন্য খরুচে যন্ত্র। এসির একটি ছোট ইউনিট একটি ঘর শীতল করতে পারে, অথচ এটিই গড়ে চারটি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ খরচ করে। আর যখন বাড়ি শীতল রাখতে একটি কেন্দ্রীয় ইউনিট ব্যবহার করা হয় তখন ১৫ টির বেশি ফ্রিজের সমান বিদ্যুৎ একটাই খরচ করে।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) বিশ্লেষক জন ডুলাক বলেন, ২০১৮ সালে বেইজিংয়ে তাপপ্রবাহের সময় উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশই ব্যবহার করেছিল এয়ার কন্ডিশনার বা এসি!
২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে তখন একটি ঘর ঠান্ডা রাখার মতো এসির ইউনিট ছিল ১০০ কোটির বেশি। সে হিসাবে পৃথিবীতে প্রতি সাতজনের বিপরীতে প্রায় একটি এসি। যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চরম তাপপ্রবাহের মধ্যেও এসির শীতলতা কল্পনা করতে পারেন না।
এ নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ছোট ইউনিটের এসি থাকবে ৪৫০ কোটির বেশি। তার মানে বর্তমানের মোবাইল ফোনের মতো সর্বব্যাপী ভোক্তাপণ্য হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে প্রতি বছর শুধু এয়ার কন্ডিশনারের জন্য যতখানি বিদ্যুৎ খরচ করে তা যুক্তরাজ্যের মোট ব্যবহারের সমান!
আইইএর ধারণা মতে, বিশ্বের বাকি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থায় পৌঁছালে, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিদ্যুতের প্রায় ১৩ শতাংশ খরচ করবে। আর এসব যন্ত্র বছরে উৎপাদন করবে ২০০ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড, যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশ ভারতের সমান।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, চলতি শতকের শেষ নাগাদ শুধু এসি থেকে নির্গত গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে।
দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং এরই মধ্যেই বিপজ্জনক মাত্রার তাপ ও আর্দ্রতার কবলে পড়া দেশগুলো-ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রাজিলের মতো দেশের কোটি কোটি মানুষ শিগগিরই তাদের বাড়ির জন্য প্রথম এসি কিনবে।
সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া একটি বিপজ্জনক চক্রের জন্ম দিচ্ছে। উষ্ণতা বৃদ্ধি মানুষকে আরও বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যত বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে তত বাড়বে পরিবেশের উষ্ণতা। এই চক্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ওপর এই নির্ভরতা সভ্যতার এমন এক উপসর্গ যেটিকে চীনা শিল্প সমালোচক হাউ হ্যানরু ‘পরিকল্পনার-উত্তর যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন। সাধারণত পরিকল্পনা বলতে আমরা যা বুঝি—কেন্দ্রীভূত, পদ্ধতিগত, পূর্ববর্তী উন্নয়নের ধারাবাহিকতা—এই ধারণা এখন প্রায় বিলুপ্ত। উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি এবং খাত নির্ধারণ করে দেয় বাজার। মানুষের (ভোক্তা) বেঁচে থাকার প্রয়োজন খোঁজা হয় পরে, তাও বিচ্ছিন্নভাবে।
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রকে এখন প্রায়শই একটি সাধারণ পছন্দ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। মানুষের আর্থিক উন্নয়নে পাশাপাশি জীবনকে উন্নত করার জন্য এটিকে একটি অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। যেমনটি জাপানি এসি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান দাইকিনের ভারতীয় শাখার একজন নির্বাহী বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘এসি এখন আর বিলাসবহুল পণ্য নয় বরং প্রয়োজন। এসি সবারই প্রাপ্য।’
জীবনযাপনে আমেরিকান হতে গিয়ে অনেকে দেশেই মানুষের জীবনে এসি যেন গেঁথে গেছে। এমন কোনো ক্ষেত্রে ভোক্তাদের পছন্দকেও উপেক্ষা করা হয়। যেমন: কোনো হোটেলে ব্যাপারটা এমন যে ‘আপনি এসি চালু করবেন কি না সেটি আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কিন্তু আপনি জানালা খুলতে পারবেন না!’
তাহলে, কীভাবে এসির ফাঁদ থেকে পৃথিবীর মানুষকে বের করা যাবে? জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে হলে যে অভ্যাস এবং প্রযুক্তিগুলো কমাতে বা ত্যাগ করতে হবে তার মধ্যে এসিও কিন্তু পড়ে। রেড মিট খাওয়ার অভ্যাস কমানোর চেয়ে এসি বিসর্জন দেওয়া কঠিন, তবে জীবাশ্ম-জ্বালানি চালিত অটোমোবাইল নির্মূল করার চেয়ে সহজ।
এ ছাড়া গবেষকেরা দেখিয়েছেন, গরম অঞ্চলের মানুষ ঘরে বেশি তাপমাত্রার মধ্যেও অনেক সময় আরাম বোধ করেন। তাঁরা দাবি করেন, মনের অবস্থা হোক বা জৈবিক সমন্বয় হোক, মানুষের আরাম আসলে অভিযোজনের ব্যাপার, এটা উদ্দেশ্যমূলক নয়। এ কারণে এসি ছাড়া যে অফিস চলবে না সাম্প্রতিককালের এমন ধারণার আসলে শক্ত ভিত্তি নেই। অর্থাৎ কাজ করার জন্য ‘আদর্শ’ তাপমাত্রার ধারণার সপক্ষে যুক্তি দুর্বল।
এসি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু অগ্রগতি হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল বড় ভবনগুলোর গ্রিস হাউস গ্যাস নিঃসরণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আইন করেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস মেয়রের কার্যালয় ২০৫০ সালের নিট-জিরো কার্বন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
অন্যান্য শহর আরও সরাসরি পদক্ষেপ নিচ্ছে। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি, জেনেভার স্থানীয় সরকার বিশেষ অনুমতি ছাড়া এসি স্থাপন নিষিদ্ধ করে। যদিও এ শহরে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে উষ্ণ। এই পদ্ধতিটি সুইজারল্যান্ডজুড়ে বলতে গেলে স্বাভাবিক। এর ফলও পেয়েছে তারা। এখন মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ২ শতাংশেরও কম খরচ হয় এসিতে। সুইসরা যে এসি খুব মিস করে তেমন কিন্তু দেখা যায় না।
যেসব দেশে এসি এখনো তুলনামূলকভাবে নতুন, সেখানে বিকল্প বিকল্প খোঁজার সুযোগ বেশি। এসব দেশের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ‘পশ্চিমের সবচেয়ে খারাপ’ জিনিসগুলো এড়ানো। ভারত সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ শুরু করেছে।
অন্যান্য অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের মতো ভারতকেও তার বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যার জন্য তাপমাত্রা সহ্য ক্ষমতার মধ্যে রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্রিন হাউস গ্যাসে উচ্চ নির্গমন পরিস্থিতিতে ভারতের জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ ২১০০ সালের মধ্যে চরম তাপ ও আর্দ্রতার কারণ জীবন-হুমকির মুখে পড়বে। ২০১৭ সালে বিজ্ঞানের অগ্রগতি বিষয়ক একটি গবেষণায় এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে, এয়ার কন্ডিশনারগুলো ‘গ্লোবাল কুলিং প্রাইজ’ মান পূরণে প্রয়োজনীয় প্রবিধান প্রণয়ন করলে ভারতের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পেছনে খরচ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। সেই সঙ্গে দেশের গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন-হ্রাস লক্ষ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ পূরণ হয়ে যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, বিশ্বব্যাপী চরম তাপপ্রবাহ ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ২ লাখ ৫৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে। নতুন প্রযুক্তির এয়ার কন্ডিশনার একা এই মৃত্যু ঠেকাতে পারবে না। এর জন্য অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে কাচ এবং কংক্রিটের চেয়ে ভালো নিরোধক উপকরণ দিয়ে ভবন নির্মাণ জরুরি।
বিপুলসংখ্যক এই নতুন গ্রাহকেরা যাতে আরও কার্যকর (পরিবেশবান্ধব অর্থে) এসি কিনতে পারে তা নিশ্চিত করতে গ্লোবাল কুলিং প্রাইজ চালু করা হয়েছে। কৌশলগতভাবে পুরস্কারটি আপাতত শুধু ভারতের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংগুলোতে ব্যবহৃত এক কক্ষের এসিগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এ রকম এসি ডিজাইন করা আটজন চূড়ান্ত প্রতিযোগীর জন্য ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আদর্শ হিসেবে বলা হয়, জীবনকালে প্রচলিত এসির পাঁচগুণ কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করবে। সেই সঙ্গে দাম প্রচলিতর এসির দ্বিগুণের বেশি কোনোভাবেই হবে না।
২০১৮ সালে প্রতিযোগিতাটি চালু হয়, পৃষ্ঠপোষক ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; রকি মাউন্টেন ইনস্টিটিউট (আরএমআই) ; ২৪টি দেশের একটি জোট এবং ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রিচার্ড ব্র্যানসন। ৩০ লাখ ডলারের উদ্যোগ এটি। আরএমআইয়ের ধারণা, এই ধরনের প্রযুক্তি জনপ্রিয় হলে ২০৫০ সালের মধ্যে ১০০ গিগাটন পর্যন্ত গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন রোধ করা যাবে। আশার কথা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে বৃহৎ এসি কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসছে। ২০২১ সালে পুরস্কার জিতেছে জাপানি কোম্পানি দাইকিন এবং চীনা কোম্পানি গ্রি।
রকি মাউনটেইন ইনস্টিটিউটের (আরএমআই) হিসাব করে দেখেছে, নতুন এয়ার কন্ডিশনার থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি ঠেকাতে হলে নতুন প্রযুক্তির এসি যা সাধারণ এসির পাঁচ গুণ কম বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঝুঁকি তৈরি করে, সেগুলোর দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২০২২ সালের মধ্যেই বাজারে আনা উচিত। আর ২০৪০ সালের মধ্যে বার্ষিক এসি বিক্রয়ের প্রায় ১০০ শতাংশ দখল করতে পারতে হবে।
তবে দাম কম রাখার প্রতিযোগিতা এতটাই তীব্র যে নতুন প্রযুক্তি দিয়ে সস্তা বিকল্পগুলোর স্থান দখল করা কঠিন হবে। বিশেষ করে ভারত এবং ব্রাজিলের মতো দেশে এটি একটি চ্যালেঞ্জ, যেখানে মানুষের আয় বাড়ছে এবং মানুষ দ্রুতই তাদের প্রথম এসিটি কেনার সামর্থ্য অর্জন করবে ৷
অবশ্য দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ কোনোভাবে এসি কেনার সামর্থ্য অর্জন করলেও এর ব্যয় বহন করার সামর্থ্য অর্জন করতে আরও সময় লাগবে।
আমরা এখন কীভাবে শীতল থাকার চেষ্টা করছি সেই চিত্র বদলে দেওয়ার দ্রুততম পথটি হবে-উদ্ভাবন, প্রতিযোগিতা এবং নিয়ন্ত্রণের সমন্বয়। এই অগ্রগতিতে আরও গতি অত্যাবশ্যক। কারণ বিশ্বকে শীতল রাখার দৌড় শুধু উদ্ভাবন আর বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা নয়, এটা আমাদের বেঁচে থাকার প্রশ্ন!
সম্প্রতি ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলার-নির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৯ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে