অনলাইন ডেস্ক
দক্ষিণ চীন সাগরের দুই পাড়ে দুই দেশ। একটি এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং উদীয়মান সুপারপাওয়ার। অপর পাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। আঞ্চলিক স্বার্থ ও বিরোধী নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ভারসাম্য রক্ষা করেই চলতে হয়। ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে প্রায়ই দুই কূল রক্ষা করে চলার ঝুঁকি নেয় অস্ট্রেলিয়া। ব্যবসা–বাণিজ্যে চীনও অস্ট্রেলিয়ার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ফলে রাজনৈতিক কারণে একে অপরকে অপছন্দ করলেও মুখ দেখাদেখি কখনো বন্ধ হয় না। উত্তেজনার মধ্যেও ব্যবসা নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে তাদের আপত্তি থাকে না।
আজ শনিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ চীন সফরে গেছেন। সাত বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম চীন সফর এটি।
তিন দিনের এই সফরের প্রেক্ষাপটে থাকছে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমাবনতি। বিশেষ করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ক্যানবেরার ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্ক বেইজিং ভালো চোখে দেখছে না।।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ট্রেলিয়া এবং চীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে অভিযুক্ত করে আসছে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য পরস্পরকে তারা হুমকি মনে করছে। অন্য দিকে জনসাধারণের মধ্যে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি নেতিবাচক ধারণা প্রবল।
কিন্তু যখন বাণিজ্যের প্রসঙ্গ আসে, তখন কোনো পক্ষই কাউকে উপেক্ষা করতে পারে না। ২০২০ সালে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল তুঙ্গে। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রায় অর্ধেক রপ্তানিই গেছে চীনে। সে তুলনায়, প্রায় একই সময়ে মোট মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৯ শতাংশ এবং ব্রিটিশ রপ্তানির মাত্র ৫ শতাংশ গেছে চীনে।
চীনকে অস্ট্রেলিয়ার দরকার
বাণিজ্যে নির্ভরশীলতাকে আলোচনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে যে কোনো দেশ। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে চীন সেটিই করতে চায়।
২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া যখন করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল তখন চীনের প্রতিক্রিয়া তেমনই ছিল।
ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) অর্থনীতিবিদ জেন গোলি বলেন, ‘এটি চীনা সরকারের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর ছিল। এর কিছুক্ষণ পরে, এখানে (চীনা) রাষ্ট্রদূত একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, অস্ট্রেলিয়ার কিছু শিল্প এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
নিশ্চিতভাবেই, আনুমানিক ২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ট্রেলিয়ার পণ্যের ওপর চীনা শুল্ক এবং বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। চীনা বিধিনিষেধের খড়্গে পড়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— বার্লি, গরুর মাংস, ওয়াইন, কয়লা, কাঠ এবং গলদা চিংড়ি।
অধ্যাপক গোলি বলেন, ‘মূলত চীন সরকার একটি বার্তা পাঠাচ্ছিল। তারা অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল এবং সেই বিষয়টিকে বোঝানোর জন্য অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’
তবে অস্ট্রেলিয়া ও চীন শিগগিরই পুরোনো ক্ষত সারাতে নতুন উপায় বের করার দিকে নজর দিয়েছে। ওই সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদারের কাছ থেকে এমন কঠোর পদক্ষেপ অনেকের কাছে বিস্ময়কর ছিল। পরে চীন ঠিকই অনেক বিধিনিষেধ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুল্ক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তটি অন্তত আংশিকভাবে হলেও নবনির্বাচিত অস্ট্রেলিয়া সরকারকে কৌশল পরিবর্তনে উৎসাহিত করে।
গত বছর বালিতে জি–২০ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট নেতা সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কিছুক্ষণ পরে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বলেছিলেন, ‘আমরা যখন সংলাপ করব এবং গঠনমূলক এবং পারস্পরিক সম্মানের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হব, তখন আমরা সব দিক থেকেই ভালো থাকব।’
তিনি অস্ট্রেলিয়ানদের মনে করিয়ে দেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার চেয়ে বেশি মূল্যবান। স্পষ্টতই, তিনি যাকে ‘দুটি উচ্চ পরিপূরক অর্থনীতি’ বলেছেন, সেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করাকেই তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার ঠিক করেছেন।
চীনের তথাকথিত অর্থনৈতিক চাপ সফল হয়েছে কিনা সন্দেহ। অস্ট্রেলিয়া এখনো বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে বেইজিংয়ের প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে— তবে চীনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা এবং শ্রমিকেরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অধ্যাপক গোলি বলেন, ‘আমরা তাদের (বেইজিং) ছাড়া বাঁচতে পারি না। আমি মনে করি, আলবানিজ সরকার স্পষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমাদের অর্থনৈতিক সংযোগগুলো বলিদান খুবই বিপজ্জনক হবে এবং আমাদের কূটনীতির উন্নতির জন্যই তিনি বেইজিং গেছেন।’
চীনেরও অস্ট্রেলিয়াকে দরকার
চীনের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের হাতিয়ার অস্ট্রেলিয়ার কাছেও রয়েছে। বিশেষত প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের নির্ভরশীলতা ক্যানবেরার জন্য দর-কষাকষির বড় ক্ষেত্র।
এএনইউ–এর ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের রিসার্চ ফেলো বেঞ্জামিন হারসকোভিচ বলেন, ‘চীন ও অস্ট্রেলিয়া গভীরভাবে অর্থনৈতিকভাবে পরস্পর নির্ভরশীল।’
সাধারণত, চীন তার বিশাল এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে বেগবান করতে কাঁচামালের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। অস্ট্রেলিয়ার বিপুল পরিমাণ আকরিক লোহা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস চীনে যায়। ঘটনাক্রমে, এই পণ্যগুলোর কোনটিতেই নিষেধাজ্ঞা দেয়নি চীন।
চীনাদের মুখে অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইন এবং গলদা চিংড়ি ছাড়া অন্যকিছু রোচে না। এ ছাড়া চীন তার কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত ইস্পাত এবং জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম নয়। বেইজিং জানে, অস্ট্রেলিয়াকে একতরফা চাপে ফেলার মতো শক্তিশালী অবস্থানে তারা নেই।
কিছু বিশ্লেষক যুক্তি দেন, চীনের বাণিজ্য বিধিনিষেধ ক্যানবেরাকে বেইজিংয়ের কাছাকাছি আসতে বাধ্য করছে না— বরং বিপরীত প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনা সরকার বুঝতে শুরু করেছে, তার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ অস্ট্রেলিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্তটির পেছনে একমাত্র লক্ষ্য ক্যানবেরাকে ওয়াশিংটন থেকে দূরে সরানো।
এ ছাড়া এর একটি উদ্দেশ্য হতে পারে যে, ট্রান্স–প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (সিপিটিপিপি) জন্য ব্যাপক এবং পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার চুক্তিতে প্রবেশের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন আদায় করা চীনের প্রয়োজন।
চীনা হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা
প্রায় অচল ট্রান্স–প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (টিপিপি) উত্তরসূরি সিপিটিপিপি। এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ এতে চীনের যোগদান প্রচেষ্টায় বাধা দিয়ে যাচ্ছে।
অধ্যাপক গোলি বলছেন, ‘সরল কথা হলো, বিশ্বে চীনের এত বন্ধু নেই। আমরা (চীন–অস্ট্রেলিয়া) এক ছিলাম, কিন্তু আর নেই। এর বাইরে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি মিত্রের সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকাটা লাভজনক।’
সুবিধা আদায়
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে চীন নিজের কাছ থেকে আমেরিকার মিত্রদের বিচ্ছিন্ন করতে চায় না। ওয়াশিংটন শুধু উন্নত কম্পিউটার চিপ এবং সবুজ জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি বিনিময় থেকে চীনকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে না, তারা মিত্রদেরও একই কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের অর্ধেক লিথিয়াম আছে অস্ট্রেলিয়ায়। চীনা কোম্পানিগুলো এমন ধাতুগুলো কবজায় রাখতে চায়। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের জন্য এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে চীন এখনো বিশ্ব সেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্কের অর্থ, এটি অনিবার্যভাবে পরাশক্তির লড়াইয়ে আমেরিকার দিকেই ঝুঁকে থাকবে।
কিন্তু যে দেশের অর্থনৈতিক নীতিগুলো সক্রিয়ভাবে চীনের ক্ষতির কারণ হয়, সেই দেশের কোনো পক্ষ অবলম্বন কেবল সম্পর্কের ওপর আরও চাপ বাড়াবে এবং উভয় দেশকে একটি স্থবিরতা দিকে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে ফেলবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
দক্ষিণ চীন সাগরের দুই পাড়ে দুই দেশ। একটি এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং উদীয়মান সুপারপাওয়ার। অপর পাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। আঞ্চলিক স্বার্থ ও বিরোধী নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ভারসাম্য রক্ষা করেই চলতে হয়। ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে প্রায়ই দুই কূল রক্ষা করে চলার ঝুঁকি নেয় অস্ট্রেলিয়া। ব্যবসা–বাণিজ্যে চীনও অস্ট্রেলিয়ার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ফলে রাজনৈতিক কারণে একে অপরকে অপছন্দ করলেও মুখ দেখাদেখি কখনো বন্ধ হয় না। উত্তেজনার মধ্যেও ব্যবসা নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে তাদের আপত্তি থাকে না।
আজ শনিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ চীন সফরে গেছেন। সাত বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম চীন সফর এটি।
তিন দিনের এই সফরের প্রেক্ষাপটে থাকছে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমাবনতি। বিশেষ করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ক্যানবেরার ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্ক বেইজিং ভালো চোখে দেখছে না।।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ট্রেলিয়া এবং চীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে অভিযুক্ত করে আসছে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য পরস্পরকে তারা হুমকি মনে করছে। অন্য দিকে জনসাধারণের মধ্যে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি নেতিবাচক ধারণা প্রবল।
কিন্তু যখন বাণিজ্যের প্রসঙ্গ আসে, তখন কোনো পক্ষই কাউকে উপেক্ষা করতে পারে না। ২০২০ সালে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল তুঙ্গে। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রায় অর্ধেক রপ্তানিই গেছে চীনে। সে তুলনায়, প্রায় একই সময়ে মোট মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৯ শতাংশ এবং ব্রিটিশ রপ্তানির মাত্র ৫ শতাংশ গেছে চীনে।
চীনকে অস্ট্রেলিয়ার দরকার
বাণিজ্যে নির্ভরশীলতাকে আলোচনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে যে কোনো দেশ। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে চীন সেটিই করতে চায়।
২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া যখন করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল তখন চীনের প্রতিক্রিয়া তেমনই ছিল।
ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) অর্থনীতিবিদ জেন গোলি বলেন, ‘এটি চীনা সরকারের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর ছিল। এর কিছুক্ষণ পরে, এখানে (চীনা) রাষ্ট্রদূত একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, অস্ট্রেলিয়ার কিছু শিল্প এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
নিশ্চিতভাবেই, আনুমানিক ২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ট্রেলিয়ার পণ্যের ওপর চীনা শুল্ক এবং বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। চীনা বিধিনিষেধের খড়্গে পড়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— বার্লি, গরুর মাংস, ওয়াইন, কয়লা, কাঠ এবং গলদা চিংড়ি।
অধ্যাপক গোলি বলেন, ‘মূলত চীন সরকার একটি বার্তা পাঠাচ্ছিল। তারা অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল এবং সেই বিষয়টিকে বোঝানোর জন্য অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’
তবে অস্ট্রেলিয়া ও চীন শিগগিরই পুরোনো ক্ষত সারাতে নতুন উপায় বের করার দিকে নজর দিয়েছে। ওই সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদারের কাছ থেকে এমন কঠোর পদক্ষেপ অনেকের কাছে বিস্ময়কর ছিল। পরে চীন ঠিকই অনেক বিধিনিষেধ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শুল্ক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তটি অন্তত আংশিকভাবে হলেও নবনির্বাচিত অস্ট্রেলিয়া সরকারকে কৌশল পরিবর্তনে উৎসাহিত করে।
গত বছর বালিতে জি–২০ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট নেতা সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কিছুক্ষণ পরে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বলেছিলেন, ‘আমরা যখন সংলাপ করব এবং গঠনমূলক এবং পারস্পরিক সম্মানের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হব, তখন আমরা সব দিক থেকেই ভালো থাকব।’
তিনি অস্ট্রেলিয়ানদের মনে করিয়ে দেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার চেয়ে বেশি মূল্যবান। স্পষ্টতই, তিনি যাকে ‘দুটি উচ্চ পরিপূরক অর্থনীতি’ বলেছেন, সেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করাকেই তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার ঠিক করেছেন।
চীনের তথাকথিত অর্থনৈতিক চাপ সফল হয়েছে কিনা সন্দেহ। অস্ট্রেলিয়া এখনো বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে বেইজিংয়ের প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে— তবে চীনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা এবং শ্রমিকেরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অধ্যাপক গোলি বলেন, ‘আমরা তাদের (বেইজিং) ছাড়া বাঁচতে পারি না। আমি মনে করি, আলবানিজ সরকার স্পষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমাদের অর্থনৈতিক সংযোগগুলো বলিদান খুবই বিপজ্জনক হবে এবং আমাদের কূটনীতির উন্নতির জন্যই তিনি বেইজিং গেছেন।’
চীনেরও অস্ট্রেলিয়াকে দরকার
চীনের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের হাতিয়ার অস্ট্রেলিয়ার কাছেও রয়েছে। বিশেষত প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের নির্ভরশীলতা ক্যানবেরার জন্য দর-কষাকষির বড় ক্ষেত্র।
এএনইউ–এর ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের রিসার্চ ফেলো বেঞ্জামিন হারসকোভিচ বলেন, ‘চীন ও অস্ট্রেলিয়া গভীরভাবে অর্থনৈতিকভাবে পরস্পর নির্ভরশীল।’
সাধারণত, চীন তার বিশাল এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে বেগবান করতে কাঁচামালের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। অস্ট্রেলিয়ার বিপুল পরিমাণ আকরিক লোহা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস চীনে যায়। ঘটনাক্রমে, এই পণ্যগুলোর কোনটিতেই নিষেধাজ্ঞা দেয়নি চীন।
চীনাদের মুখে অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইন এবং গলদা চিংড়ি ছাড়া অন্যকিছু রোচে না। এ ছাড়া চীন তার কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত ইস্পাত এবং জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম নয়। বেইজিং জানে, অস্ট্রেলিয়াকে একতরফা চাপে ফেলার মতো শক্তিশালী অবস্থানে তারা নেই।
কিছু বিশ্লেষক যুক্তি দেন, চীনের বাণিজ্য বিধিনিষেধ ক্যানবেরাকে বেইজিংয়ের কাছাকাছি আসতে বাধ্য করছে না— বরং বিপরীত প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনা সরকার বুঝতে শুরু করেছে, তার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ অস্ট্রেলিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্তটির পেছনে একমাত্র লক্ষ্য ক্যানবেরাকে ওয়াশিংটন থেকে দূরে সরানো।
এ ছাড়া এর একটি উদ্দেশ্য হতে পারে যে, ট্রান্স–প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (সিপিটিপিপি) জন্য ব্যাপক এবং পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার চুক্তিতে প্রবেশের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন আদায় করা চীনের প্রয়োজন।
চীনা হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা
প্রায় অচল ট্রান্স–প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (টিপিপি) উত্তরসূরি সিপিটিপিপি। এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ এতে চীনের যোগদান প্রচেষ্টায় বাধা দিয়ে যাচ্ছে।
অধ্যাপক গোলি বলছেন, ‘সরল কথা হলো, বিশ্বে চীনের এত বন্ধু নেই। আমরা (চীন–অস্ট্রেলিয়া) এক ছিলাম, কিন্তু আর নেই। এর বাইরে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি মিত্রের সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকাটা লাভজনক।’
সুবিধা আদায়
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে চীন নিজের কাছ থেকে আমেরিকার মিত্রদের বিচ্ছিন্ন করতে চায় না। ওয়াশিংটন শুধু উন্নত কম্পিউটার চিপ এবং সবুজ জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি বিনিময় থেকে চীনকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে না, তারা মিত্রদেরও একই কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের অর্ধেক লিথিয়াম আছে অস্ট্রেলিয়ায়। চীনা কোম্পানিগুলো এমন ধাতুগুলো কবজায় রাখতে চায়। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের জন্য এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে চীন এখনো বিশ্ব সেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্কের অর্থ, এটি অনিবার্যভাবে পরাশক্তির লড়াইয়ে আমেরিকার দিকেই ঝুঁকে থাকবে।
কিন্তু যে দেশের অর্থনৈতিক নীতিগুলো সক্রিয়ভাবে চীনের ক্ষতির কারণ হয়, সেই দেশের কোনো পক্ষ অবলম্বন কেবল সম্পর্কের ওপর আরও চাপ বাড়াবে এবং উভয় দেশকে একটি স্থবিরতা দিকে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে ফেলবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
ড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
১৮ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
২ দিন আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
২ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
৩ দিন আগে