আব্দুর রহমান
দ্বিতীয় মেয়াদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ইমানুয়েল মাখোঁ। ২৪ এপ্রিলের নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মারি লো পেনকে অল্প ব্যবধানে হারিয়ে এলিসি প্রাসাদে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারলেও এই মেয়াদ তাঁর জন্য হানিমুন হতে যাচ্ছে না, এটা নিশ্চিত। মাখোঁ নিজে, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা এবং বিশ্লেষকেরাও সে দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
জ্বালানি খাত, সামাজিক নিরাপত্তা এবং মতাদর্শগত বিভাজনের মতো বেশ কিছু মাখোঁকে সামলাতে হবে। বিশেষ করে, নির্বাচন জয়ের পর মাখোঁ নিজেই প্রতিজ্ঞা করেছেন—ফরাসি সমাজের মধ্যকার যে বিভাজন ও সন্দেহপূর্ণ মনোভাব রয়েছে তা তিনি দূর করতে কাজ করবেন। মাখোঁর এই কথা বলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন বলেন যে—অনেকেই আমাকে ভোট দিয়েছেন আমার আদর্শের কারণে নয়, বরং অতি-ডানপন্থীরা যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারেন সে জন্য। আমাদের উদার ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আমাদের দেশ অনেক সন্দেহে, অনেক বিভাজনে পরিপূর্ণ।’
ফ্রান্সের মতো একটি দেশের প্রেসিডেন্ট যখন এমন বিভাজনের কথা বলেন তখন তা আমলে না নিয়ে উপায় থাকে না। বিশেষ করে মুসলিম ইস্যুতে ফ্রান্সের অতি-ডানপন্থীদের যে মনোভাব তা ফরাসি ঐতিহ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় মুসলিম নারীদের হিজাবের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। মাখোঁ প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফলে যে সেই ইস্যুগুলো চাপা পড়ে যাবে তা নয়। বরং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে এই বিষয়গুলো শক্তভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে রক্ষণশীল ফরাসি দৈনিক লে ফিগারো সোমবার (২৫ এপ্রিল) তাদের প্রধান সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘মাখোঁ এটি ভালো করেই জানেন যে—তাঁর জয় অনেকটা সেই পাথুরে শিল্পকর্মের মতো যার দুই পা কাদামাটির তৈরি—তিনি তাঁর বর্ধিত মেয়াদ থেকে সেভাবে উপকৃত হতে পারবেন না।’
বিপদের এখানেই শেষ নয়, মাখোঁ এবং তাঁর দলকে বিভেদ ও সন্দেহপূর্ণ ফরাসি সমাজের আরও বিভাজিত হওয়া রুখতে হলে আগামী ১২ ও ১৯ জুন অনুষ্ঠেয় দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনেও প্রাধান্য বজায় রাখতে হবে। ফ্রান্সের ইতিহাস বলে, সাধারণত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভকারী দলই পার্লামেন্ট নির্বাচনেও জয় পান। কিন্তু বিরোধীরা এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনকে খুব সহজে ছাড় দেবেন এমনটা নয়। সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কট্টর-বামপন্থী প্রার্থী জঁ লুক মেলেনশোঁ—যিনি প্রথম রাউন্ডে তৃতীয় স্থানে ছিলেন—জুনে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে ‘তৃতীয় রাউন্ড’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী হয়ে মাঁখোর বর্ধিত মেয়াদকে কণ্টকশয্যা করে তুলবেন। মারি লো পেন হেরে গেলেও আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে আটকে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
ইমানুয়েল মাখোঁ এবং তাঁর দল যদি সংসদে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেন অথবা কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো কোয়ালিশনও গঠন করতে সক্ষম হন তবুও সম্ভবত তাঁর বিপদ দূর হচ্ছে না। তাঁর সংস্কার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁকে প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে তাঁর বহুল প্রতিশ্রুত পেনশন সংস্কার কর্মসূচি যেখানে তিনি চাকরি থেকে অবসরের ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫-এ উন্নীত করতে চান। মাখোঁ যেখানে ২০১৭ সালের নির্বাচনে সর্বশেষ নির্বাচনের তুলনায় বেশি ভোট পেয়েও পেনশন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারেননি সেখানে আগের চেয়ে কম ভোট পেয়ে এবার কীভাবে করবেন তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকেরা।
এ প্রসঙ্গে ড্যানিশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্যাক্সো ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টোফার ডেম্বিক রয়টার্সকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তাঁর স্বাভাবিক বিষয় ছিল। তবে তিনি যদি পেনশনের মতো সংবেদনশীল সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চান তবে তাঁকে বড় ধরনের সামাজিক অসন্তোষের মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি তাকে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি নিতে হতে পারে।’
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই মাখোঁকে যে বিষয়টি সবার আগে মোকাবিলা করতে হবে তা হলো আকাশচুম্বী জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণ। যদিও তাঁর সরকার বিদ্যুতের মাসুল হ্রাস করেছে, তেলের দামে ভর্তুকি দিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—তিনি যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণই তাঁর জনগণকে রক্ষা করবেন। কিন্তু তিনি কত দিন এই ব্যবস্থা চালিয়ে নিতে পারবেন তা বড় প্রশ্ন হিসেবে হাজির হয়েছে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে—ব্যয়বহুল এই ভর্তুকি ব্যবস্থাকে একপর্যায়ে তুলে দিতেই হবে। দীর্ঘদিন কোনোভাবেই চালিয়ে নেওয়া যাবে না।
এদিকে, খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সাধারণ নাগরিকেরা। ফলে খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানির মূল্য হ্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মাখোঁ নিশ্চয়ই চাইবেন না তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালের ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হোক। কিন্তু তাঁর হাতে কি এমন পরিস্থিতি আগেভাগেই সামাল দেওয়ার মতো কোনো অস্ত্র রয়েছে। তা জানার জন্য অবশ্যই পার্লামেন্ট নির্বাচন অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
মাখোঁর জয়ে তাঁর সমর্থকেরা উচ্ছ্বসিত হলেও বেজার হওয়ার মতো মানুষেরও অভাব নেই। মাখোঁর পেনশন কর্মসূচিসহ ব্যবসায়িক নীতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি পড়তে হতে পারে। এমনকি তাঁর প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই তাঁকে বাধা দেবেন। এ প্রসঙ্গে ৬৩ বছর বয়সী ফরাসি প্রশাসনের কর্মী কোলেত সিয়েরা বলেন, ‘তিনি (মাখোঁ) একই রকম নীতি নিয়ে আরও পাঁচ বছর পার করতে যাচ্ছেন না, এটি পরিষ্কার। আমরা তাঁকে এটি করতে দেব না। আমি মনে করি, জনগণের জন্য যদি সঠিক জোট সরকার গঠিত না হয় তাহলে জনগণ রাস্তায় নামতে প্রস্তুত।’ তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে, অনেক ভোটারই রয়েছেন যারা মাখোঁর জয়ে সত্যিকার অর্থেই খুশি। ৬৫ বছর বয়সী লরি চালক লুসিয়েন সোজিনহো বলেন, ‘আমি ফলাফল নিয়ে খুবই খুশি। কারণ, আমাদের এই প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশ পরিচালনা করেছেন।’
ঘরের বাইরেও বিভিন্ন ইস্যুতে মাখোঁকে নতুন করে ভাবতে হতে হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর, রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক কেমন হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো জোটের বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করবেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর জ্বালানির মূল্যের বিষয়টি কীভাবে সামাল দেবেন তা নতুন করে ভাবতে হবে তাঁকে। এসবের অনেকটাই নির্ভর করছে আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনের ওপর। সেখানে কতটা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন কিংবা আদৌ পাবেন কি না সে বিষয়ের ওপরই মাখোঁর দেশীয় এবং পররাষ্ট্র নীতির বাস্তবায়ন নির্ভর করছে।
তবে, সব মিলিয়ে মাখোঁ জন্য ঘরে-বাইরে বিপদ যে ফনা তুলে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে দ্বিতীয় মেয়াদ মাখোঁর হানিমুন নয়, তাঁর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে কণ্টকশয্যা।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:
দ্বিতীয় মেয়াদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ইমানুয়েল মাখোঁ। ২৪ এপ্রিলের নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মারি লো পেনকে অল্প ব্যবধানে হারিয়ে এলিসি প্রাসাদে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারলেও এই মেয়াদ তাঁর জন্য হানিমুন হতে যাচ্ছে না, এটা নিশ্চিত। মাখোঁ নিজে, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা এবং বিশ্লেষকেরাও সে দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
জ্বালানি খাত, সামাজিক নিরাপত্তা এবং মতাদর্শগত বিভাজনের মতো বেশ কিছু মাখোঁকে সামলাতে হবে। বিশেষ করে, নির্বাচন জয়ের পর মাখোঁ নিজেই প্রতিজ্ঞা করেছেন—ফরাসি সমাজের মধ্যকার যে বিভাজন ও সন্দেহপূর্ণ মনোভাব রয়েছে তা তিনি দূর করতে কাজ করবেন। মাখোঁর এই কথা বলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন বলেন যে—অনেকেই আমাকে ভোট দিয়েছেন আমার আদর্শের কারণে নয়, বরং অতি-ডানপন্থীরা যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারেন সে জন্য। আমাদের উদার ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আমাদের দেশ অনেক সন্দেহে, অনেক বিভাজনে পরিপূর্ণ।’
ফ্রান্সের মতো একটি দেশের প্রেসিডেন্ট যখন এমন বিভাজনের কথা বলেন তখন তা আমলে না নিয়ে উপায় থাকে না। বিশেষ করে মুসলিম ইস্যুতে ফ্রান্সের অতি-ডানপন্থীদের যে মনোভাব তা ফরাসি ঐতিহ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় মুসলিম নারীদের হিজাবের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। মাখোঁ প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফলে যে সেই ইস্যুগুলো চাপা পড়ে যাবে তা নয়। বরং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে এই বিষয়গুলো শক্তভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে রক্ষণশীল ফরাসি দৈনিক লে ফিগারো সোমবার (২৫ এপ্রিল) তাদের প্রধান সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘মাখোঁ এটি ভালো করেই জানেন যে—তাঁর জয় অনেকটা সেই পাথুরে শিল্পকর্মের মতো যার দুই পা কাদামাটির তৈরি—তিনি তাঁর বর্ধিত মেয়াদ থেকে সেভাবে উপকৃত হতে পারবেন না।’
বিপদের এখানেই শেষ নয়, মাখোঁ এবং তাঁর দলকে বিভেদ ও সন্দেহপূর্ণ ফরাসি সমাজের আরও বিভাজিত হওয়া রুখতে হলে আগামী ১২ ও ১৯ জুন অনুষ্ঠেয় দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনেও প্রাধান্য বজায় রাখতে হবে। ফ্রান্সের ইতিহাস বলে, সাধারণত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভকারী দলই পার্লামেন্ট নির্বাচনেও জয় পান। কিন্তু বিরোধীরা এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনকে খুব সহজে ছাড় দেবেন এমনটা নয়। সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কট্টর-বামপন্থী প্রার্থী জঁ লুক মেলেনশোঁ—যিনি প্রথম রাউন্ডে তৃতীয় স্থানে ছিলেন—জুনে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে ‘তৃতীয় রাউন্ড’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী হয়ে মাঁখোর বর্ধিত মেয়াদকে কণ্টকশয্যা করে তুলবেন। মারি লো পেন হেরে গেলেও আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে আটকে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
ইমানুয়েল মাখোঁ এবং তাঁর দল যদি সংসদে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেন অথবা কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো কোয়ালিশনও গঠন করতে সক্ষম হন তবুও সম্ভবত তাঁর বিপদ দূর হচ্ছে না। তাঁর সংস্কার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁকে প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে তাঁর বহুল প্রতিশ্রুত পেনশন সংস্কার কর্মসূচি যেখানে তিনি চাকরি থেকে অবসরের ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫-এ উন্নীত করতে চান। মাখোঁ যেখানে ২০১৭ সালের নির্বাচনে সর্বশেষ নির্বাচনের তুলনায় বেশি ভোট পেয়েও পেনশন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারেননি সেখানে আগের চেয়ে কম ভোট পেয়ে এবার কীভাবে করবেন তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকেরা।
এ প্রসঙ্গে ড্যানিশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্যাক্সো ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টোফার ডেম্বিক রয়টার্সকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তাঁর স্বাভাবিক বিষয় ছিল। তবে তিনি যদি পেনশনের মতো সংবেদনশীল সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চান তবে তাঁকে বড় ধরনের সামাজিক অসন্তোষের মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি তাকে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি নিতে হতে পারে।’
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই মাখোঁকে যে বিষয়টি সবার আগে মোকাবিলা করতে হবে তা হলো আকাশচুম্বী জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণ। যদিও তাঁর সরকার বিদ্যুতের মাসুল হ্রাস করেছে, তেলের দামে ভর্তুকি দিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—তিনি যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণই তাঁর জনগণকে রক্ষা করবেন। কিন্তু তিনি কত দিন এই ব্যবস্থা চালিয়ে নিতে পারবেন তা বড় প্রশ্ন হিসেবে হাজির হয়েছে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে—ব্যয়বহুল এই ভর্তুকি ব্যবস্থাকে একপর্যায়ে তুলে দিতেই হবে। দীর্ঘদিন কোনোভাবেই চালিয়ে নেওয়া যাবে না।
এদিকে, খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সাধারণ নাগরিকেরা। ফলে খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানির মূল্য হ্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মাখোঁ নিশ্চয়ই চাইবেন না তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালের ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হোক। কিন্তু তাঁর হাতে কি এমন পরিস্থিতি আগেভাগেই সামাল দেওয়ার মতো কোনো অস্ত্র রয়েছে। তা জানার জন্য অবশ্যই পার্লামেন্ট নির্বাচন অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
মাখোঁর জয়ে তাঁর সমর্থকেরা উচ্ছ্বসিত হলেও বেজার হওয়ার মতো মানুষেরও অভাব নেই। মাখোঁর পেনশন কর্মসূচিসহ ব্যবসায়িক নীতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি পড়তে হতে পারে। এমনকি তাঁর প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই তাঁকে বাধা দেবেন। এ প্রসঙ্গে ৬৩ বছর বয়সী ফরাসি প্রশাসনের কর্মী কোলেত সিয়েরা বলেন, ‘তিনি (মাখোঁ) একই রকম নীতি নিয়ে আরও পাঁচ বছর পার করতে যাচ্ছেন না, এটি পরিষ্কার। আমরা তাঁকে এটি করতে দেব না। আমি মনে করি, জনগণের জন্য যদি সঠিক জোট সরকার গঠিত না হয় তাহলে জনগণ রাস্তায় নামতে প্রস্তুত।’ তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে, অনেক ভোটারই রয়েছেন যারা মাখোঁর জয়ে সত্যিকার অর্থেই খুশি। ৬৫ বছর বয়সী লরি চালক লুসিয়েন সোজিনহো বলেন, ‘আমি ফলাফল নিয়ে খুবই খুশি। কারণ, আমাদের এই প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশ পরিচালনা করেছেন।’
ঘরের বাইরেও বিভিন্ন ইস্যুতে মাখোঁকে নতুন করে ভাবতে হতে হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর, রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক কেমন হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো জোটের বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করবেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর জ্বালানির মূল্যের বিষয়টি কীভাবে সামাল দেবেন তা নতুন করে ভাবতে হবে তাঁকে। এসবের অনেকটাই নির্ভর করছে আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনের ওপর। সেখানে কতটা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন কিংবা আদৌ পাবেন কি না সে বিষয়ের ওপরই মাখোঁর দেশীয় এবং পররাষ্ট্র নীতির বাস্তবায়ন নির্ভর করছে।
তবে, সব মিলিয়ে মাখোঁ জন্য ঘরে-বাইরে বিপদ যে ফনা তুলে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে দ্বিতীয় মেয়াদ মাখোঁর হানিমুন নয়, তাঁর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে কণ্টকশয্যা।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:
সম্প্রতি ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলার-নির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
২৬ মিনিট আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৮ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে