যুক্তরাষ্ট্র-ভারত দীর্ঘদিন ধরেই পরস্পরের কাছে আসছে। ওয়াশিংটন ভারতকে ক্রমবর্ধমানভাবে আত্মপ্রত্যয়ী চীনের মোকাবিলায় এক গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে দেখে। বিপরীতে, ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র একদিকে যেমন বৈদেশিক বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান উৎস, তেমনি বাণিজ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারও।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হোয়াইট হাউস সফরের পর, উভয় দেশই বাণিজ্য, জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছে।
তবে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর নতুন বাণিজ্য নীতি ও অভিবাসনসংক্রান্ত কড়াকড়ির হাত থেকে ভারতও রেহাই পাচ্ছে না। ট্রাম্প মোদির কাছে অতীতের মার্কিন প্রশাসনের তুলনায় অনেক বেশি দাবি জানাচ্ছেন। তিনি চান, ভারত যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক কমায়, মার্কিন অস্ত্র বেশি কেনে এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আরও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে ফিরিয়ে নেয়।
ভারত কি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র?
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত গত দুই দশক ধরে কৌশলগত অংশীদার। অর্থাৎ, দেশ দুটো কৌশলগত ও সামরিক ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে, যদিও ওয়াশিংটন-দিল্লি আনুষ্ঠানিক বা চুক্তিবদ্ধ সামরিক জোটভুক্ত নয়। উভয় দেশেই বড় এবং বৈচিত্র্যময় গণতন্ত্র চালু। তবে এত কিছু মিল থাকার পরও নয়া দিল্লি অনেক সময় নিজ স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
উদাহরণস্বরূপ, ভারত রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা করেনি, আবার গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনও দেয়নি। বাইডেন প্রশাসন ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও, নয়া দিল্লিকে দূরে ঠেলে দেওয়ার ভয়ে কঠোর চাপ প্রয়োগ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের অন্যতম স্তম্ভ হলো, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উভয় দেশের অভিন্ন উদ্বেগ। ওয়াশিংটন বরাবরই ভারতকে বেইজিংয়ের উত্থানের মোকাবিলায় একটি ভারসাম্যকারী শক্তি হিসেবে দেখতে চেয়েছে। এ লক্ষ্যে ভারত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গঠিত ‘কোয়াড’ নামের অনানুষ্ঠানিক জোটের সদস্য। এই জোটের মূল লক্ষ্য চীনের উত্থান নিয়ন্ত্রণে রাখা। যদিও জোটটি এই কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে না।
ট্রাম্পের নীতিতে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক কীভাবে প্রভাবিত হবে?
ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য মোদির ওপর চাপ বৃদ্ধি করছেন। তিনি বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, মার্কিন পণ্যের ওপর ভারত আরোপিত শুল্কহার খুব বেশি, যা মার্কিন ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর। ফলে, ট্রাম্পের ‘রিসিপ্রোক্যাল’ বা পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পক্ষে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর যে হারে শুল্ক আরোপ করবে, তারাও যেন একই হারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক বসায়—এই নীতিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু এই নীতি ভারতের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
দুটি কারণে ভারত এতে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে। প্রথমত, ভারতের আমদানি শুল্ক বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চের মধ্যে একটি। ২০২২ সালে ভারতের মার্কিন পণ্যের ওপর গড় শুল্কহার ছিল ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে ৮৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ট্রাম্প কমাতে চান।
তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক নীতি কার্যকর হতে অন্তত এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগবে। ফলে মোদির জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর সুযোগ থাকছে। ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য কমাতে চান না, বরং আরও বাড়াতে চান। দুই নেতা ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন, যা ২০২৩ সালে ছিল মাত্র ১২৭ বিলিয়ন ডলার।
এই লক্ষ্যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে পারে। ট্রাম্প চান, ভারত যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি জ্বালানি কেনে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি ক্রয় ১৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ভারতীয় রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে মার্কিন অপরিশোধিত তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ট্রাম্প ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে কী প্রভাব ফেলবেন?
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষা খাতে অংশীদার। ট্রাম্প চান, ভারত যেন মার্কিন অস্ত্র বেশি কেনে, বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার জেট। তবে, ভারতের জন্য এটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। একদিকে, এর উচ্চ মূল্য, অন্যদিকে, নয়াদিল্লির রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন যে, রাশিয়া হয়তো এই প্রযুক্তির গোপন তথ্য পেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়ার অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। বর্তমানে মোদি সরকার ১০ বছরের ২৫০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক আধুনিকায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, যেখানে মার্কিন অস্ত্র কেনার প্রবণতা বেড়েছে এবং বাড়ছে। গত বছর, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের অ্যাটাক ড্রোন, হেলফায়ার মিসাইল এবং লেজার-গাইডেড বোমা বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।
ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক কেমন?
স্নায়ুযুদ্ধের সময় ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে নিরপেক্ষ থাকলেও, মস্কোর সঙ্গে তার সম্পর্ক সব সময় উষ্ণ ছিল এবং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কিছুটা সন্দেহ ছিল। আজও ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক দৃঢ়, যদিও ট্রাম্প চান, ভারত যেন আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র ও জ্বালানি কেনে।
ভারত ও চীনের সম্পর্ক কেমন?
ভারত ও চীনের সম্পর্ক বহু বছর ধরেই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্র এতে ভারতের পাশে থেকেছে। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত কয়েক দশকের পুরোনো, যা ১৯৬২ সালে এক যুদ্ধেও রূপ নিয়েছিল।
২০২০ সালে চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। যার ফলে ভারত চীনা মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ করে এবং চীনের বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে, ২০২৪ সালে রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে সি চিন পিং ও মোদির সাক্ষাতের পর কিছুটা বরফ গলতে শুরু করে। পরে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন, যা পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম।
তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত দীর্ঘদিন ধরেই পরস্পরের কাছে আসছে। ওয়াশিংটন ভারতকে ক্রমবর্ধমানভাবে আত্মপ্রত্যয়ী চীনের মোকাবিলায় এক গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে দেখে। বিপরীতে, ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্র একদিকে যেমন বৈদেশিক বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান উৎস, তেমনি বাণিজ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারও।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হোয়াইট হাউস সফরের পর, উভয় দেশই বাণিজ্য, জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছে।
তবে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর নতুন বাণিজ্য নীতি ও অভিবাসনসংক্রান্ত কড়াকড়ির হাত থেকে ভারতও রেহাই পাচ্ছে না। ট্রাম্প মোদির কাছে অতীতের মার্কিন প্রশাসনের তুলনায় অনেক বেশি দাবি জানাচ্ছেন। তিনি চান, ভারত যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক কমায়, মার্কিন অস্ত্র বেশি কেনে এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আরও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে ফিরিয়ে নেয়।
ভারত কি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র?
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত গত দুই দশক ধরে কৌশলগত অংশীদার। অর্থাৎ, দেশ দুটো কৌশলগত ও সামরিক ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে, যদিও ওয়াশিংটন-দিল্লি আনুষ্ঠানিক বা চুক্তিবদ্ধ সামরিক জোটভুক্ত নয়। উভয় দেশেই বড় এবং বৈচিত্র্যময় গণতন্ত্র চালু। তবে এত কিছু মিল থাকার পরও নয়া দিল্লি অনেক সময় নিজ স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
উদাহরণস্বরূপ, ভারত রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা করেনি, আবার গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনও দেয়নি। বাইডেন প্রশাসন ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও, নয়া দিল্লিকে দূরে ঠেলে দেওয়ার ভয়ে কঠোর চাপ প্রয়োগ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের অন্যতম স্তম্ভ হলো, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উভয় দেশের অভিন্ন উদ্বেগ। ওয়াশিংটন বরাবরই ভারতকে বেইজিংয়ের উত্থানের মোকাবিলায় একটি ভারসাম্যকারী শক্তি হিসেবে দেখতে চেয়েছে। এ লক্ষ্যে ভারত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গঠিত ‘কোয়াড’ নামের অনানুষ্ঠানিক জোটের সদস্য। এই জোটের মূল লক্ষ্য চীনের উত্থান নিয়ন্ত্রণে রাখা। যদিও জোটটি এই কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে না।
ট্রাম্পের নীতিতে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক কীভাবে প্রভাবিত হবে?
ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য মোদির ওপর চাপ বৃদ্ধি করছেন। তিনি বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, মার্কিন পণ্যের ওপর ভারত আরোপিত শুল্কহার খুব বেশি, যা মার্কিন ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর। ফলে, ট্রাম্পের ‘রিসিপ্রোক্যাল’ বা পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পক্ষে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর যে হারে শুল্ক আরোপ করবে, তারাও যেন একই হারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক বসায়—এই নীতিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু এই নীতি ভারতের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
দুটি কারণে ভারত এতে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে। প্রথমত, ভারতের আমদানি শুল্ক বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চের মধ্যে একটি। ২০২২ সালে ভারতের মার্কিন পণ্যের ওপর গড় শুল্কহার ছিল ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে ৮৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ট্রাম্প কমাতে চান।
তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক নীতি কার্যকর হতে অন্তত এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগবে। ফলে মোদির জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর সুযোগ থাকছে। ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য কমাতে চান না, বরং আরও বাড়াতে চান। দুই নেতা ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন, যা ২০২৩ সালে ছিল মাত্র ১২৭ বিলিয়ন ডলার।
এই লক্ষ্যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে পারে। ট্রাম্প চান, ভারত যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি জ্বালানি কেনে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি ক্রয় ১৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ভারতীয় রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে মার্কিন অপরিশোধিত তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ট্রাম্প ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে কী প্রভাব ফেলবেন?
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষা খাতে অংশীদার। ট্রাম্প চান, ভারত যেন মার্কিন অস্ত্র বেশি কেনে, বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার জেট। তবে, ভারতের জন্য এটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। একদিকে, এর উচ্চ মূল্য, অন্যদিকে, নয়াদিল্লির রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন যে, রাশিয়া হয়তো এই প্রযুক্তির গোপন তথ্য পেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়ার অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। বর্তমানে মোদি সরকার ১০ বছরের ২৫০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক আধুনিকায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, যেখানে মার্কিন অস্ত্র কেনার প্রবণতা বেড়েছে এবং বাড়ছে। গত বছর, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের অ্যাটাক ড্রোন, হেলফায়ার মিসাইল এবং লেজার-গাইডেড বোমা বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।
ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক কেমন?
স্নায়ুযুদ্ধের সময় ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে নিরপেক্ষ থাকলেও, মস্কোর সঙ্গে তার সম্পর্ক সব সময় উষ্ণ ছিল এবং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কিছুটা সন্দেহ ছিল। আজও ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক দৃঢ়, যদিও ট্রাম্প চান, ভারত যেন আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র ও জ্বালানি কেনে।
ভারত ও চীনের সম্পর্ক কেমন?
ভারত ও চীনের সম্পর্ক বহু বছর ধরেই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্র এতে ভারতের পাশে থেকেছে। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত কয়েক দশকের পুরোনো, যা ১৯৬২ সালে এক যুদ্ধেও রূপ নিয়েছিল।
২০২০ সালে চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। যার ফলে ভারত চীনা মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ করে এবং চীনের বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে, ২০২৪ সালে রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে সি চিন পিং ও মোদির সাক্ষাতের পর কিছুটা বরফ গলতে শুরু করে। পরে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন, যা পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম।
তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক, রাশিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুমকি, চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য এবং ইলন মাস্কের গ্রোক—এই চতুর্মুখী চাপে ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।
১ দিন আগেবাংলাদেশ যদি সঠিকভাবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে, তবে দেশটি কেবল পরিবর্তিত বাণিজ্য কাঠামোর সুবিধাভোগী হিসেবেই নয়, তৈরি পোশাক শিল্পের একটি প্রভাবশালী অংশীদার হিসেবে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পারবে।
২ দিন আগেনেপালে রাজতন্ত্র পুনর্বহাল ও হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। কাঠমান্ডুতে রাজতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হলেও, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতির কারণে জনগণের একাংশ রাজতন্ত্র ফি
৪ দিন আগেভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত অত্যধিক কঠোরহস্ত হয়ে উঠেছে, চীন যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বা সাধারণ মূল্যবোধ ও পরিচয়ের অনুভূতি প্রচারে সফল হয়নি, ভারতের
৪ দিন আগে