একটি ভাঙা জাহাজ ঘিরে যে অবশ্যম্ভাবী পরিণতির দিকে যাচ্ছে ফিলিপাইন ও চীন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ২৩: ০৬
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ২৩: ২৮

দক্ষিণ চীন সাগরে নিমজ্জিত শোল বা প্রবাল প্রাচীর নিয়ে ফিলিপাইন ও চীনের মধ্যে গত কয়েক দশক ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। সর্বশেষ গত রোববারও দেশ দুটির দুই জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের সেকেন্ড থমাস শোলের কাছে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, চীনের কোস্টগার্ড ফিলিপাইনের একটি নৌযানকে বাধা দিতে গেলে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। 

চীন ও ফিলিপাইনের মধ্যে ঘটনা প্রবাহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়—সেকেন্ড থমাস শোলে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া সিয়েরা মাদ্রে নামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন একটি জাহাজ আছে ফিলিপাইনের। এই জাহাজটিকে সেনা চৌকি হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। 

গত রোববার সেখানে অবস্থানরত সেনাদের জন্যই রসদ পাঠিয়েছিল ফিলিপাইন। পরে সেই জাহাজটিকে আটকে দিয়ে চীনা কোস্টগার্ড দাবি করে, ওই জাহাজে অবৈধ সরঞ্জাম পরিবহন করা হচ্ছে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ চীন সাগরের ইস্যুতে ফিলিপাইন ও চীনের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব একটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতির দিকে যাচ্ছে। এই পরিণতি দুই দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। 

 ১৯৯০-এর দশকে ‘বিআরপি সিয়েরা মাদ্রে’ নামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জাহাজটি ইচ্ছাকৃতভাবে দক্ষিণ চীন সাগরের সেকেন্ড থামাস শোল প্রবাল প্রাচীরে এনে বসিয়ে দিয়েছিল ফিলিপাইন। ওই অঞ্চলে চীনা আগ্রাসনের ওপর নজরদারি করতেই এমনটি করেছিল দেশটি। জাহাজটিকে তখন থেকেই একটি অস্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। তবে শুরু থেকেই চীন এটি সরিয়ে নিতে ফিলিপাইনের ওপর চাপ দিয়ে আসছে। 

বেশির ভাগ বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন, যখন বেইজিং এবং ম্যানিলার মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল তখন চীনের কোস্টগার্ড সিয়েরা মাদ্রে জাহাজে ফিলিপাইনের সরবরাহ চালু রাখার অনুমতি দিয়েছে। আবার যখনই সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গেছে, সরবরাহকারী জাহাজগুলোকে বাধা দিতে শুরু করেছে চীন। 

বেইজিংয়ের বক্তব্য হলো, সিয়েরা মাদ্রে চিরকাল স্থায়ী হতে পারে না এবং জাহাজটি সমুদ্রে ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিলিপাইনের মেরিন সেনাদের সরিয়ে নিতে হবে। এই বিষয়ে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের সম্মতি থাকলেও গত বছর ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ক্ষমতায় আসার পর দেশটির পররাষ্ট্রনীতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। 

প্রেসিডেন্ট মার্কোস দুতার্তের চীন বিষয়ক নীতি শুধু উল্টেই দেননি, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি পরিপূর্ণ মিত্রতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এবং ম্যানিলার ২০০ নটিক্যাল মাইলের ইকোনমিক জোনে চীনা অনুপ্রবেশের বিষয়ে উচ্চ স্বরে আওয়াজ তুলছেন। 

বিভিন্ন সূত্রের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ফিলিপাইন সরকার বর্তমানে সিয়েরা মাদ্রে জাহাজটির স্থায়িত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। রসদ সরবরাহের আড়ালে তারা সিমেন্টসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী সেখানে নিয়ে যাচ্ছে। মরিচা পড়া জাহাজটিকে নতুন রূপ দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। 

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জাহাজটির স্থায়িত্ব বাড়ানোর প্রক্রিয়া খুব কঠিন। সিয়েরা মাদ্রে ধ্বংসের প্রায় কাছাকাছি। এটি খুব শিগগিরই ভেঙে পড়তে পারে। এ বিষয়ে চীনও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, সিয়েরা মাদ্রে টিকে থাকবে না। 

কথা হলো—সিয়েরা মাদ্রে যদি শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ চীন সাগরের পানিতে ভেঙে পড়ে, তাহলে কী হবে? বেইজিং কি ঝাঁপিয়ে পড়বে প্রাচীরের নিয়ন্ত্রণ দখল করার জন্য? নাকি ম্যানিলা আরেকটি জাহাজ স্থাপনের চেষ্টা করবে? আর যুক্তরাষ্ট্রই বা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে? 

এই বিষয়গুলোর উত্তর কেউ না জানলেও—দিনটি খুব শিগগির ঘনিয়ে আসছে, খুব তাড়াতাড়ি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত