অনলাইন ডেস্ক
তিন দিকে ভারত ও চতুর্থ দিকে বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঘেরা দেশটির নাম বাংলাদেশ। এটি বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। উন্নয়নের ‘মডেল’ ও আঞ্চলিক অর্থনীতি- দুই দিক থেকেই বহুল প্রশংসিত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ। ১৯৭১ সালে নৃশংস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।
একসময় এশিয়ার বৃহত্তম একাধিক নদীবিধৌত ‘বিলিয়ার্ড টেবিলের’ মতো দেখতে সমভূমির এই দেশ দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশটিতে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা এখন ইতিহাস। এর কারণ অসংখ্য আশ্রয়কেন্দ্র ও জোরদার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, ব্যাপক খাদ্যঘাটতিও অতীতের ঘটনা। শিশুমৃত্যু রোধে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এখানে শিশুমৃত্যু বৈশ্বিক গড় হারের চেয়ে কিছুটা কম এবং পাকিস্তানের অর্ধেক। এই দেশে নারী সাক্ষরতার হার ৭৩ শতাংশ। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের চাকরিক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। সেটি বেড়ে এখন ৩৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। আর এসব অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি প্রশংসার দাবিদার তৈরি পোশাকশিল্প।
অভূতপূর্ব মহামারী কোভিড-১৯ আঘাত হানার আগের পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গড় বার্ষিক হার চীনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তখন অর্থনীতির আকার বেড়েছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ হারে। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, যা প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে বেশি। ২০২৬ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে (এলডিসি) উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে বহু কষ্টার্জিত এসব আশাবাদ এখন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হোঁচট খেয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। গেল শীতে জরাজীর্ণ চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমানো মানুষে সয়লাব ছিল রাজধানী ঢাকার ফুটপাত। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তথৈবচ। আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু, ফলাফল কি হবে তা নিয়ে মারাত্মক কোনো সংশয় নেই। ক্রমশ একনায়কতান্ত্রিক হতে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে দমনের সম্ভাব্য কোনো চেষ্টা বাকি রেখেছেন বলে মনে হয় না। তারপরও রাজনীতির প্রতি তাঁর যে মনোভাব তা ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’- এই বাংলা প্রবাদের সমার্থক। আর তাই, স্বভাবতই ভোট সামনে রেখে রাজনৈতিক উত্তেজনা সহিংসতায় রূপ নেওয়ার শঙ্কা ঘনিয়ে আসছে। বিরোধী দল বিএনপি এর মধ্যেই নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। দেশে দুর্নীতির দূষণ ঢাকার দূষিত বাতাসের মতোই তীব্র। সব মিলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে পদক্ষেপ দূরের বিষয়, গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র বিবেচনায় বাংলাদেশ দিশা হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
ঢাকার ও বাইরের কারখানা ও শপিং মলগুলোতে বাংলাদেশিদের শক্তি ও উদ্দীপনার দেখা এখনও মেলে। স্বাধীনতার পর পরই অনেক মেধাবী মানুষ বিদেশ থেকে বাংলাদেশের ফিরে আসেন। দেশের উন্নয়নে তারা ভূমিকা রাখেন। উদাহরণ হিসেবে ফজলে হাসান আবেদের নাম বলা যায়। তিনি দেশে ফিরে ‘ব্র্যাক’ নামের দাতব্য সংস্থা চালু করেন। নারী ও শিশুস্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। ব্র্যাক এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও। লিঙ্গ সমতায় বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে ব্র্যাক।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার দুই-পঞ্চমাংশ এখনো কৃষক। তারা জমিতে নানা ধরনের ফসল ফলায়। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা নিয়ে গ্রামে অনেক সড়ক নির্মাণ করেছে সরকার। এতে গ্রাম ও শহরের মধ্যে দূরত্ব কমে এসেছে। গ্রামের কৃষক ও খামারিদের পণ্যের বাজার শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। ঢাকার আশপাশে অনেক পোশাক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, যেগুলোর অনেক বিশ্বমানের। শুল্ক তুলে দিয়ে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ শ্রম আইন বাতিল করে সরকার এই খাতকে সহায়তা করেছে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চেয়েছেন। কিন্তু এখন প্রায়ই বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা যাচ্ছে। রাজধানীতে যানজট ও বায়ু দূষণের মাত্রা লাগামহীন হয়েছে।
বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু গত বছর খুলে দেওয়া হয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতির ভূগোলকে বদল দেবে বলে আশাবাদী অর্থনীতিবিদেরা। এছাড়া ঢাকায় বড় আকারে নতুন বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে। জাপানের অর্থ সহায়তায় মেট্রোরেল অর্ধেকটা চালু হয়ে গেছে। বাকি অংশের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। অসংখ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। অবশ্য এসব ঢাকার যানজটকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এত দৃশ্যমান অগ্রগতির পরেও বিদেশি কূটনীতিকেরা, বিশ্লেষকেরা, এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তুলনামূলক সংবেদনশীল নেতারাও পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি এক অপরের হাত ধরাধরি করে চলে। একটি ভারসাম্য হারালে অপরটিও ভারসাম্য হারায়। অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতার একটি বড় কারণ অতি মাত্রায় গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বিপর্যয় ঠেকাতে গত বছর সরকার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফ ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়। তবুও স্থানীয় মুদ্রা ‘টাকা’ এখনো টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
গার্মেন্টস শিল্প যে সঙ্কটের মুখে পড়েছে, সেখান থেকে কবে উঠতে পারবে, তা কেউ বলতে পারছে না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা। গার্মেন্টস শিল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বাংলাদেশ এলডিসি স্ট্যাটাসে (স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে) প্রবেশ করলে গার্মেন্ট খাতে শুল্প ছাড়ের সুবিধা হারাবে।
বাংলাদেশের সম্ভামনাময় খাত ওষুধ ও ইলেকট্রনিক্স। কিন্তু ভয়ঙ্কর আমলাতন্ত্র ও অসম শুল্ক হারের কারণে খাতগুলো বিকশিত হতে পারছে না। দ্য ইকোনমিস্টের জরিপে দেখা গেছে, ব্যবসার উপযোগী পরিবেশ বিবেচনায় এশিয়ার ১৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম।
ধনী ও দুর্নীতিবাজরা অর্থপাচারকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কানাডার টরন্টো ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের শহরগুলোতে তারা বাড়ি-গাড়ি করছেন বলেও অভিযোগ আছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্থ পাচার করে বিদেশে গড়া বাংলাদেশিদের এসব আবাসন এলাকা ‘বেগম পাড়া’ হিসেবে পরিচিত। তবে একটি কথা স্বীকার করতেই হবে। সেটি হচ্ছে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত সেনা সদস্যরা বৈদেশিক মুদ্রা না পাঠালে দেশের অর্থনীতি ভারসাম্য ঝুঁকির মুখে পড়তো।
বাংলাদেশে এখন ব্যবসা ও রাজনীতি মিলেমিশে একাকার। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শোধ করেন না। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই। রাষ্ট্রের মাথায় পচন ধরেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, তিনি দুর্নীতি দমন করছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তাঁর আমলে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে। পুলিশ ও আদালত আওয়ামী লীগের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। ভিন্নমতাবলম্বীরা কারাগারে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। স্নাতক প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁকে হলে আসন পেতে ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতাদের কাছে যেতে হয়েছে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বলেছেন, তাঁরা দেশে থাকতে চান না; বিদেশে যেতে চান।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে ১৯৭৫ সালে প্রায় সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথা অনেক আগেই বিলুপ্ত করেছেন। ফলে আওয়ামী লীগ খুব সহজেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
শেখ হাসিনা তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াকে প্রায় গৃহবন্দী করে রেখেছেন। তাঁর দল বিএনপির অবস্থা নাজুক। যদিও দলটি এখন রাজপথে গণবিক্ষোভ করে নিজেদের জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে। এতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিভাজন বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এটি একটিমাত্র আশঙ্কা। এ ছাড়া আরও আশঙ্কা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় রয়েছে। যেমন শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭৫। তিনি তাঁর কোনো উত্তরসূরী এখনো তৈরি করেননি। তাঁর পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব নেওয়ার অভিজ্ঞতার অভাব অথবা ইচ্ছার অভাবের কারণে এটি এখনো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকালই যদি কোনো কারণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব চালিয়ে যেতে অপারগ হন, সে ক্ষেত্রে পুরো দেশ বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে।
বাংলাদেশ এখন একমাত্র আশার আলো দেখছে তরুণদের মধ্যে। তারা নিরলসভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে। একজন বিশ্লেষক বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ মূল কাজের বাইরেও নানা কাজ নিয়ে কর্মব্যস্ত থাকে। অসংখ্য মানুষ ঘরে বসে ই-কমার্স ব্যবসা চালায়। রাজধানীতে যিনি সাংবাদিক, তিনি গ্রামে এক ডজন মহিষ পালেন এবং শহরে সুপারশপে পনির সরবরাহ করে থাকেন। এমন জায়গাগুলোতে রাতের খাবারের পর মানুষ ভালো কিছুর আশা নিয়ে কথা বলেন; স্বপ্ন দেখেন এমন বাংলাদেশের, যা সুযোগ কেড়ে না নিয়ে বরং নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই মুহূর্তে অনেক কষ্টের মুখে পড়ে বলা হলেও ‘প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সুযোগ নষ্টের কারখানা’ কথাটি সেই অনাগত ভবিষ্যতের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম
তিন দিকে ভারত ও চতুর্থ দিকে বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঘেরা দেশটির নাম বাংলাদেশ। এটি বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। উন্নয়নের ‘মডেল’ ও আঞ্চলিক অর্থনীতি- দুই দিক থেকেই বহুল প্রশংসিত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ। ১৯৭১ সালে নৃশংস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।
একসময় এশিয়ার বৃহত্তম একাধিক নদীবিধৌত ‘বিলিয়ার্ড টেবিলের’ মতো দেখতে সমভূমির এই দেশ দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশটিতে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা এখন ইতিহাস। এর কারণ অসংখ্য আশ্রয়কেন্দ্র ও জোরদার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, ব্যাপক খাদ্যঘাটতিও অতীতের ঘটনা। শিশুমৃত্যু রোধে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এখানে শিশুমৃত্যু বৈশ্বিক গড় হারের চেয়ে কিছুটা কম এবং পাকিস্তানের অর্ধেক। এই দেশে নারী সাক্ষরতার হার ৭৩ শতাংশ। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের চাকরিক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। সেটি বেড়ে এখন ৩৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। আর এসব অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি প্রশংসার দাবিদার তৈরি পোশাকশিল্প।
অভূতপূর্ব মহামারী কোভিড-১৯ আঘাত হানার আগের পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গড় বার্ষিক হার চীনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তখন অর্থনীতির আকার বেড়েছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ হারে। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, যা প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে বেশি। ২০২৬ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে (এলডিসি) উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে বহু কষ্টার্জিত এসব আশাবাদ এখন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হোঁচট খেয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। গেল শীতে জরাজীর্ণ চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমানো মানুষে সয়লাব ছিল রাজধানী ঢাকার ফুটপাত। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তথৈবচ। আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু, ফলাফল কি হবে তা নিয়ে মারাত্মক কোনো সংশয় নেই। ক্রমশ একনায়কতান্ত্রিক হতে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে দমনের সম্ভাব্য কোনো চেষ্টা বাকি রেখেছেন বলে মনে হয় না। তারপরও রাজনীতির প্রতি তাঁর যে মনোভাব তা ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’- এই বাংলা প্রবাদের সমার্থক। আর তাই, স্বভাবতই ভোট সামনে রেখে রাজনৈতিক উত্তেজনা সহিংসতায় রূপ নেওয়ার শঙ্কা ঘনিয়ে আসছে। বিরোধী দল বিএনপি এর মধ্যেই নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। দেশে দুর্নীতির দূষণ ঢাকার দূষিত বাতাসের মতোই তীব্র। সব মিলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে পদক্ষেপ দূরের বিষয়, গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র বিবেচনায় বাংলাদেশ দিশা হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
ঢাকার ও বাইরের কারখানা ও শপিং মলগুলোতে বাংলাদেশিদের শক্তি ও উদ্দীপনার দেখা এখনও মেলে। স্বাধীনতার পর পরই অনেক মেধাবী মানুষ বিদেশ থেকে বাংলাদেশের ফিরে আসেন। দেশের উন্নয়নে তারা ভূমিকা রাখেন। উদাহরণ হিসেবে ফজলে হাসান আবেদের নাম বলা যায়। তিনি দেশে ফিরে ‘ব্র্যাক’ নামের দাতব্য সংস্থা চালু করেন। নারী ও শিশুস্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। ব্র্যাক এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও। লিঙ্গ সমতায় বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে ব্র্যাক।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার দুই-পঞ্চমাংশ এখনো কৃষক। তারা জমিতে নানা ধরনের ফসল ফলায়। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা নিয়ে গ্রামে অনেক সড়ক নির্মাণ করেছে সরকার। এতে গ্রাম ও শহরের মধ্যে দূরত্ব কমে এসেছে। গ্রামের কৃষক ও খামারিদের পণ্যের বাজার শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। ঢাকার আশপাশে অনেক পোশাক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, যেগুলোর অনেক বিশ্বমানের। শুল্ক তুলে দিয়ে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ শ্রম আইন বাতিল করে সরকার এই খাতকে সহায়তা করেছে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চেয়েছেন। কিন্তু এখন প্রায়ই বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা যাচ্ছে। রাজধানীতে যানজট ও বায়ু দূষণের মাত্রা লাগামহীন হয়েছে।
বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু গত বছর খুলে দেওয়া হয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতির ভূগোলকে বদল দেবে বলে আশাবাদী অর্থনীতিবিদেরা। এছাড়া ঢাকায় বড় আকারে নতুন বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে। জাপানের অর্থ সহায়তায় মেট্রোরেল অর্ধেকটা চালু হয়ে গেছে। বাকি অংশের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। অসংখ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। অবশ্য এসব ঢাকার যানজটকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এত দৃশ্যমান অগ্রগতির পরেও বিদেশি কূটনীতিকেরা, বিশ্লেষকেরা, এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তুলনামূলক সংবেদনশীল নেতারাও পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি এক অপরের হাত ধরাধরি করে চলে। একটি ভারসাম্য হারালে অপরটিও ভারসাম্য হারায়। অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতার একটি বড় কারণ অতি মাত্রায় গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বিপর্যয় ঠেকাতে গত বছর সরকার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফ ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়। তবুও স্থানীয় মুদ্রা ‘টাকা’ এখনো টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
গার্মেন্টস শিল্প যে সঙ্কটের মুখে পড়েছে, সেখান থেকে কবে উঠতে পারবে, তা কেউ বলতে পারছে না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা। গার্মেন্টস শিল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বাংলাদেশ এলডিসি স্ট্যাটাসে (স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে) প্রবেশ করলে গার্মেন্ট খাতে শুল্প ছাড়ের সুবিধা হারাবে।
বাংলাদেশের সম্ভামনাময় খাত ওষুধ ও ইলেকট্রনিক্স। কিন্তু ভয়ঙ্কর আমলাতন্ত্র ও অসম শুল্ক হারের কারণে খাতগুলো বিকশিত হতে পারছে না। দ্য ইকোনমিস্টের জরিপে দেখা গেছে, ব্যবসার উপযোগী পরিবেশ বিবেচনায় এশিয়ার ১৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম।
ধনী ও দুর্নীতিবাজরা অর্থপাচারকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কানাডার টরন্টো ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের শহরগুলোতে তারা বাড়ি-গাড়ি করছেন বলেও অভিযোগ আছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্থ পাচার করে বিদেশে গড়া বাংলাদেশিদের এসব আবাসন এলাকা ‘বেগম পাড়া’ হিসেবে পরিচিত। তবে একটি কথা স্বীকার করতেই হবে। সেটি হচ্ছে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত সেনা সদস্যরা বৈদেশিক মুদ্রা না পাঠালে দেশের অর্থনীতি ভারসাম্য ঝুঁকির মুখে পড়তো।
বাংলাদেশে এখন ব্যবসা ও রাজনীতি মিলেমিশে একাকার। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের ঋণ নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শোধ করেন না। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই। রাষ্ট্রের মাথায় পচন ধরেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, তিনি দুর্নীতি দমন করছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তাঁর আমলে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে। পুলিশ ও আদালত আওয়ামী লীগের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। ভিন্নমতাবলম্বীরা কারাগারে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। স্নাতক প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁকে হলে আসন পেতে ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতাদের কাছে যেতে হয়েছে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বলেছেন, তাঁরা দেশে থাকতে চান না; বিদেশে যেতে চান।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে ১৯৭৫ সালে প্রায় সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথা অনেক আগেই বিলুপ্ত করেছেন। ফলে আওয়ামী লীগ খুব সহজেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
শেখ হাসিনা তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াকে প্রায় গৃহবন্দী করে রেখেছেন। তাঁর দল বিএনপির অবস্থা নাজুক। যদিও দলটি এখন রাজপথে গণবিক্ষোভ করে নিজেদের জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে। এতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিভাজন বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এটি একটিমাত্র আশঙ্কা। এ ছাড়া আরও আশঙ্কা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় রয়েছে। যেমন শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭৫। তিনি তাঁর কোনো উত্তরসূরী এখনো তৈরি করেননি। তাঁর পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব নেওয়ার অভিজ্ঞতার অভাব অথবা ইচ্ছার অভাবের কারণে এটি এখনো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আগামীকালই যদি কোনো কারণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব চালিয়ে যেতে অপারগ হন, সে ক্ষেত্রে পুরো দেশ বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে।
বাংলাদেশ এখন একমাত্র আশার আলো দেখছে তরুণদের মধ্যে। তারা নিরলসভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে। একজন বিশ্লেষক বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ মূল কাজের বাইরেও নানা কাজ নিয়ে কর্মব্যস্ত থাকে। অসংখ্য মানুষ ঘরে বসে ই-কমার্স ব্যবসা চালায়। রাজধানীতে যিনি সাংবাদিক, তিনি গ্রামে এক ডজন মহিষ পালেন এবং শহরে সুপারশপে পনির সরবরাহ করে থাকেন। এমন জায়গাগুলোতে রাতের খাবারের পর মানুষ ভালো কিছুর আশা নিয়ে কথা বলেন; স্বপ্ন দেখেন এমন বাংলাদেশের, যা সুযোগ কেড়ে না নিয়ে বরং নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই মুহূর্তে অনেক কষ্টের মুখে পড়ে বলা হলেও ‘প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সুযোগ নষ্টের কারখানা’ কথাটি সেই অনাগত ভবিষ্যতের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম
ড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৬ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১ দিন আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
৩ দিন আগে