অনলাইন ডেস্ক
পশ্চিম ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুরা স্পিড বোটে করে যখন বাংলাদেশি জাহাজ আবদুল্লাহকে ধাওয়া করেছিল নাবিকেরা তখন জরুরি সতর্ক সংকেত পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সময়মতো তাঁদের কাছে কেউ পৌঁছায়নি। ফলে জলদস্যুরা আবদুল্লাহর ওপরে উঠে পড়ে ফাঁকা গুলি চালায় এবং ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে।
জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান জাহাজ মালিকদের কাছে একটি অডিও বার্তায় এমনটাই জানিয়েছিলেন।
আবদুল্লাহ জাহাজের মালিক কোম্পানি এসআর শিপিং ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে রেকর্ডিংটি শেয়ার করেছে। জলদস্যুরা নাবিকদের ফোন নিয়ে যাওয়ার আগে রেকর্ড করা বার্তায় আতিক উল্লাহ খান বলেছিলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি।’
এর এক সপ্তাহ পরে জলদস্যুতার সর্বশেষ শিকার জাহাজ আবদুল্লাহ সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করা হয়। এই ঘটনা শিপিং কোম্পানিগুলোর ঝুঁকি এবং পরিবহণ খরচ বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া লোহিত সাগর এবং আশেপাশের জলরাশিতে ইয়েমেনের হুথিরা বারবার ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে।
বৃহৎ পাঁচটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মতে, নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২০ টিরও বেশি জাহাজ ছিনতাইচেষ্টার কারণে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী এবং বীমার দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে মুক্তিপণের ভীতিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দুই সোমালি জলদস্যু গ্যাং সদস্য রয়টার্সকে বলেছেন, তাঁরা প্রায় এক দশক ধরে সুপ্ত থাকার পরে জলদস্যুতায় ফেরার জন্য কয়েকশ নটিক্যাল মাইল উত্তরে হুথি হামলার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে।
সোমালিয়া জলদস্যুদের অর্থায়নকারী ইসমাইল ইসের (ছদ্মনাম) সঙ্গে কথা হয়েছে রয়টার্সের। ইসমাইল গত বছরের ডিসেম্বরে অন্য একটি বাল্ক ক্যারিয়ারের হাইজ্যাকিংয়ে অর্থায়ন করেছিলেন। ইসমাইল রয়টার্সকে বলেন, ‘হুথিদের হামলা সামলাতে গিয়ে আন্তর্জাতিক নৌ-বাহিনী সোমালিয়ার উপকূলে কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে। আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।’
ইসমাইল সোমালিয়ার আধা-স্বায়ত্তশাসিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পুন্টল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চল হুল আনোদ থেকে মোবাইল ফোনে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন। ওই এলাকাতেই ছিনতাই হওয়া ভারতীয় জাহাজ রুয়েনকে কয়েক সপ্তাহ ধরে নোঙর করে রাখা হয়েছিল।
এবারের জলদ্যসুদের উত্থান ২০০৮-২০১৪ সালের মতো গুরুতর না হলেও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সোর্সেরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তঁদের ধারণা, সমস্যাটি আরও সংকটময় পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে।
সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ গত মাসে তাঁর আর্ট ডেকো প্যালেসে রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘যদি আমরা এটি এখনই বন্ধ না করি তবে আগের মতোই ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।’
ছিনতাইয়ের এক সপ্তাহ পর মাল্টার পতাকাবাহী রুয়েনকে মুক্ত করে ভারতীয় নৌবাহিনী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলদস্যুতা বিরোধী মিশন ইউনাভফোর আটলান্টা বলেছে, জলদস্যুরা হয়ত জাহাজ আবদুল্লাহকে আক্রমণ করার জন্য রুয়েনকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, রুয়েনে থাকা ৩৫ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে এবং ১৭ জিম্মিকে অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের অপরাধ বিরোধী শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর সাইরাস মোডি বলেছেন, লোহিত সাগরের পূর্বে ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্তত এক ডজন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। এটি জলদস্যুদের ঘায়েল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সর্বশেষ অভিযানে স্পষ্ট যে, জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালনার লাভ ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি। আশা করি, নতুন কোনো জাহাজ ছিনতাইয়ে যাওয়ার আগে এটি তাঁদের (জলদস্যু) কয়েকবার ভাবতে বাধ্য করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, সরকার আবদুল্লাহকে মুক্ত করতে কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে নয়। ঘটনা সোমালি উপকূলের কাছাকাছি হওয়ায় জলদস্যুরা পরিস্থিতি নিজেদের অনূকুলে রাখতে পারছে বলেও জানান তিনি।
বিশ্ব বাণিজ্যর পরিবহন খরচ বৃদ্ধি
বিশ্বের ব্যস্ততম শিপিং লেনগুলোর কয়েকটি সোমালিয়ার জলপথের মধ্যে রয়েছে। প্রতিবছর আনুমানিক ২০ হাজার জাহাজ আসবাবপত্র-পোশাক থেকে শুরু করে শস্য এবং জ্বালানিসিহ নানা পণ্য নিয়ে এই রুটে চলাচল করে। জাহাজগুলো এডেন উপসাগর দিয়ে লোহিত সাগর এবং সুয়েজ খাল হয়ে ইউরোপ এবং এশিয়ায় যায়।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো জানিয়েছে, সোমালিয়া জলদস্যুদের উৎপাত মাথায় চড়েছিল ২০১১ সালে। ওই বছর সোমালি জলদস্যুরা ২৩৭টি জাহাজে হামলা চালায় এবং শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে। সেই বছর ওসেনস বিয়ন্ড পাইরেসি মনিটরিং গ্রুপ অনুমান করেছিল, জলদস্যুতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দিতে হয়েছিল জলদস্যুদের।
সামুদ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপক এবং বীমাকারীরা বলেছেন, কম টহলযুক্ত জলরাশিতে বর্তমানে ছোট জাহাজকে লক্ষ্য করে জলদস্যুদের আক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ইউনাভফোরের তথ্যও বলছে একই কথা। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, নভেম্বর থেকে জলদস্যুরা সফলভাবে কমপক্ষে দুটি পণ্যবাহী জাহাজ এবং ১২টি মাছ ধরার জাহাজ ছিনতাই করেছে।
ইউনাভফোর মিশনের তথ্যমতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডেন উপসাগর এবং সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের পাঁচটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এই তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, এই মাসে বর্ষাকাল শেষ হওয়ার পর জলদস্যুরা আরও দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে দস্যুতা চালাতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্যের বীমা শিল্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, জলদস্যুদের অভিযান চালানো এলাকা এখন আগের চেয়ে বড় হয়েছে। বীমাকারীরা ওই এলাকায় জাহাজে চলাচলের ওপর অতিরিক্ত যুদ্ধের ঝুঁকি আরোপ করেছে। ফলে অ্যাডেন উপসাগর এবং লোহিত সাগরে সমুদ্রযাত্রা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। এখন সাত দিনের সমুদ্রযাত্রার জন্য কয়েক হাজার ডলার অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে।
ব্যক্তিগত সশস্ত্র রক্ষীদের চাহিদা বাড়ায় এই খাতেও খরচ বাড়ছে। মেরিটাইম সিকিউরিটি সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে তিন দিনের জন্য একটি সশস্ত্র রক্ষী টিম নিয়োগের খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এখন এমন একটি নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী রাখতে ৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার গুনতে হচ্ছে। হুথি ক্ষেপণাস্ত্র এবং সশস্ত্র ড্রোনের বিরুদ্ধে এসব নিরাপত্তা রক্ষীরা কাজে না আসলেও জলদস্যুদের আক্রমণ ঠেকাতে বেশ কার্যকর প্রমাণ হয়েছে।
এদিকে জলদস্যুদের এই নয়া উত্থানের পর্বে এখন পর্যন্ত কোনো মুক্তিপণ দেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে জলদস্যুদের অর্থায়নকারী ইসমাইল ইসসে ও বিষয়টির সঙ্গে জড়িত আরেকটি সূত্র দাবি করেছে, রুয়েনের মুক্তির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাহাজটি পরিচালনাকারী বুলগেরিয়ান কোম্পানি নাভিবুলগারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা এখন মুক্তিপণ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছে না। তবে নাবিকদের মুক্ত করার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ।
বাংলাদেশি জাহাজ আবদুল্লাহর মালিক এসআর শিপিংয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, জলদস্যুরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কোম্পানিটি কোনো মুক্তিপণের প্রস্তাব পায়নি।
সমাধান কিসে
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুথি এবং সোমালি জলদস্যুদের মধ্যে সরাসরি সম্পর্কের কোনো প্রমাণ নেই। তবে ইসমাইল বলেছেন, হুথি বিদ্রোহীদের আক্রমণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই দস্যুতায় নেমেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
এক দশক আগে জলদস্যুদের প্রতিরোধে শিপিং কোম্পানিগুলো জাহাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছিল। ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী জলদস্যু নির্মুল অভিযানে যোগ দিয়েছিল। ১৪টি দেশের ২০ টির মতো যুদ্ধজাহাজ এডেন উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের জাহাজ চলাচলের রুটগুলোতে টহল দিত। কখনো কখনো ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরেও এই টহল চলত।
জাতিসংঘের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সোমালিয়া শাখার কাউন্টার-পাইরেসি ইউনিটের সাবেক প্রধান জন স্টিড বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো জলদস্যুদের আক্রমণ নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল। ধীরে ধীরে জলদস্যুদের হুমকি কমে গেলে দেশগুলো টহলরত যুদ্ধজাহাজের সংখ্যাও কমিয়ে দেয়। টহলের জাহাজগুলো বিভিন্ন মিশনে গিয়ে ডুবে যায় এবং জাতীয় কমান্ডে ফিরে যায়।’
ইউনাভফোর, ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ব্রিটিশ নৌবাহিনী বলেছে, তাঁরা সোমালিয়াকে জলদস্যুতা মোকাবিলায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে টহল কমে যাওয়া ও অতিরিক্ত সংস্থান করবে কি না সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।
স্টিড বলেছেন, আরেকটি সমস্যা হল ২০২২ সালে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের ব্যত্যয়। যার ফলে বিদেশি জাহাজগুলো সোমালিয়ার জলসীমায় টহল দেওয়ার অনুমতি পায়।
সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহামুদ বলেছেন, আগেরবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পেছনে বড় কারণ ছিল জলে এবং স্থলে কঠোরভাবে সোমালিয়ার আইন প্রয়োগ, অসংখ্য আন্তর্জাতিক জাহাজ পাঠানো নয়।
সোমালিয়া সরকারের তথ্য অনুযায়ী, কোস্টগার্ডের ৭২০ জন প্রশিক্ষিত সদস্য রয়েছে। কিন্তু বাহিনীটির চারটি নৌযানের মধ্যে মাত্র একটি কার্যকরী। রাজধানী মোগাদিশু, পুন্টল্যান্ড এবং বিচ্ছিন্ন সোমালিল্যান্ড অঞ্চলেও সীমিত অস্ত্রসহ সামুদ্রিক পুলিশ বাহিনী রয়েছে।
পশ্চিম ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুরা স্পিড বোটে করে যখন বাংলাদেশি জাহাজ আবদুল্লাহকে ধাওয়া করেছিল নাবিকেরা তখন জরুরি সতর্ক সংকেত পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সময়মতো তাঁদের কাছে কেউ পৌঁছায়নি। ফলে জলদস্যুরা আবদুল্লাহর ওপরে উঠে পড়ে ফাঁকা গুলি চালায় এবং ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে।
জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান জাহাজ মালিকদের কাছে একটি অডিও বার্তায় এমনটাই জানিয়েছিলেন।
আবদুল্লাহ জাহাজের মালিক কোম্পানি এসআর শিপিং ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে রেকর্ডিংটি শেয়ার করেছে। জলদস্যুরা নাবিকদের ফোন নিয়ে যাওয়ার আগে রেকর্ড করা বার্তায় আতিক উল্লাহ খান বলেছিলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি।’
এর এক সপ্তাহ পরে জলদস্যুতার সর্বশেষ শিকার জাহাজ আবদুল্লাহ সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করা হয়। এই ঘটনা শিপিং কোম্পানিগুলোর ঝুঁকি এবং পরিবহণ খরচ বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া লোহিত সাগর এবং আশেপাশের জলরাশিতে ইয়েমেনের হুথিরা বারবার ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে।
বৃহৎ পাঁচটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মতে, নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২০ টিরও বেশি জাহাজ ছিনতাইচেষ্টার কারণে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী এবং বীমার দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে মুক্তিপণের ভীতিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দুই সোমালি জলদস্যু গ্যাং সদস্য রয়টার্সকে বলেছেন, তাঁরা প্রায় এক দশক ধরে সুপ্ত থাকার পরে জলদস্যুতায় ফেরার জন্য কয়েকশ নটিক্যাল মাইল উত্তরে হুথি হামলার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে।
সোমালিয়া জলদস্যুদের অর্থায়নকারী ইসমাইল ইসের (ছদ্মনাম) সঙ্গে কথা হয়েছে রয়টার্সের। ইসমাইল গত বছরের ডিসেম্বরে অন্য একটি বাল্ক ক্যারিয়ারের হাইজ্যাকিংয়ে অর্থায়ন করেছিলেন। ইসমাইল রয়টার্সকে বলেন, ‘হুথিদের হামলা সামলাতে গিয়ে আন্তর্জাতিক নৌ-বাহিনী সোমালিয়ার উপকূলে কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে। আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।’
ইসমাইল সোমালিয়ার আধা-স্বায়ত্তশাসিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পুন্টল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চল হুল আনোদ থেকে মোবাইল ফোনে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন। ওই এলাকাতেই ছিনতাই হওয়া ভারতীয় জাহাজ রুয়েনকে কয়েক সপ্তাহ ধরে নোঙর করে রাখা হয়েছিল।
এবারের জলদ্যসুদের উত্থান ২০০৮-২০১৪ সালের মতো গুরুতর না হলেও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সোর্সেরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তঁদের ধারণা, সমস্যাটি আরও সংকটময় পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে।
সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ গত মাসে তাঁর আর্ট ডেকো প্যালেসে রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘যদি আমরা এটি এখনই বন্ধ না করি তবে আগের মতোই ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।’
ছিনতাইয়ের এক সপ্তাহ পর মাল্টার পতাকাবাহী রুয়েনকে মুক্ত করে ভারতীয় নৌবাহিনী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলদস্যুতা বিরোধী মিশন ইউনাভফোর আটলান্টা বলেছে, জলদস্যুরা হয়ত জাহাজ আবদুল্লাহকে আক্রমণ করার জন্য রুয়েনকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, রুয়েনে থাকা ৩৫ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে এবং ১৭ জিম্মিকে অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের অপরাধ বিরোধী শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর সাইরাস মোডি বলেছেন, লোহিত সাগরের পূর্বে ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্তত এক ডজন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। এটি জলদস্যুদের ঘায়েল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সর্বশেষ অভিযানে স্পষ্ট যে, জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালনার লাভ ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি। আশা করি, নতুন কোনো জাহাজ ছিনতাইয়ে যাওয়ার আগে এটি তাঁদের (জলদস্যু) কয়েকবার ভাবতে বাধ্য করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, সরকার আবদুল্লাহকে মুক্ত করতে কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে নয়। ঘটনা সোমালি উপকূলের কাছাকাছি হওয়ায় জলদস্যুরা পরিস্থিতি নিজেদের অনূকুলে রাখতে পারছে বলেও জানান তিনি।
বিশ্ব বাণিজ্যর পরিবহন খরচ বৃদ্ধি
বিশ্বের ব্যস্ততম শিপিং লেনগুলোর কয়েকটি সোমালিয়ার জলপথের মধ্যে রয়েছে। প্রতিবছর আনুমানিক ২০ হাজার জাহাজ আসবাবপত্র-পোশাক থেকে শুরু করে শস্য এবং জ্বালানিসিহ নানা পণ্য নিয়ে এই রুটে চলাচল করে। জাহাজগুলো এডেন উপসাগর দিয়ে লোহিত সাগর এবং সুয়েজ খাল হয়ে ইউরোপ এবং এশিয়ায় যায়।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো জানিয়েছে, সোমালিয়া জলদস্যুদের উৎপাত মাথায় চড়েছিল ২০১১ সালে। ওই বছর সোমালি জলদস্যুরা ২৩৭টি জাহাজে হামলা চালায় এবং শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে। সেই বছর ওসেনস বিয়ন্ড পাইরেসি মনিটরিং গ্রুপ অনুমান করেছিল, জলদস্যুতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দিতে হয়েছিল জলদস্যুদের।
সামুদ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপক এবং বীমাকারীরা বলেছেন, কম টহলযুক্ত জলরাশিতে বর্তমানে ছোট জাহাজকে লক্ষ্য করে জলদস্যুদের আক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ইউনাভফোরের তথ্যও বলছে একই কথা। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, নভেম্বর থেকে জলদস্যুরা সফলভাবে কমপক্ষে দুটি পণ্যবাহী জাহাজ এবং ১২টি মাছ ধরার জাহাজ ছিনতাই করেছে।
ইউনাভফোর মিশনের তথ্যমতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডেন উপসাগর এবং সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের পাঁচটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এই তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, এই মাসে বর্ষাকাল শেষ হওয়ার পর জলদস্যুরা আরও দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে দস্যুতা চালাতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্যের বীমা শিল্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, জলদস্যুদের অভিযান চালানো এলাকা এখন আগের চেয়ে বড় হয়েছে। বীমাকারীরা ওই এলাকায় জাহাজে চলাচলের ওপর অতিরিক্ত যুদ্ধের ঝুঁকি আরোপ করেছে। ফলে অ্যাডেন উপসাগর এবং লোহিত সাগরে সমুদ্রযাত্রা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। এখন সাত দিনের সমুদ্রযাত্রার জন্য কয়েক হাজার ডলার অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে।
ব্যক্তিগত সশস্ত্র রক্ষীদের চাহিদা বাড়ায় এই খাতেও খরচ বাড়ছে। মেরিটাইম সিকিউরিটি সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসে তিন দিনের জন্য একটি সশস্ত্র রক্ষী টিম নিয়োগের খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এখন এমন একটি নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী রাখতে ৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার গুনতে হচ্ছে। হুথি ক্ষেপণাস্ত্র এবং সশস্ত্র ড্রোনের বিরুদ্ধে এসব নিরাপত্তা রক্ষীরা কাজে না আসলেও জলদস্যুদের আক্রমণ ঠেকাতে বেশ কার্যকর প্রমাণ হয়েছে।
এদিকে জলদস্যুদের এই নয়া উত্থানের পর্বে এখন পর্যন্ত কোনো মুক্তিপণ দেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে জলদস্যুদের অর্থায়নকারী ইসমাইল ইসসে ও বিষয়টির সঙ্গে জড়িত আরেকটি সূত্র দাবি করেছে, রুয়েনের মুক্তির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাহাজটি পরিচালনাকারী বুলগেরিয়ান কোম্পানি নাভিবুলগারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা এখন মুক্তিপণ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছে না। তবে নাবিকদের মুক্ত করার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ।
বাংলাদেশি জাহাজ আবদুল্লাহর মালিক এসআর শিপিংয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, জলদস্যুরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কোম্পানিটি কোনো মুক্তিপণের প্রস্তাব পায়নি।
সমাধান কিসে
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুথি এবং সোমালি জলদস্যুদের মধ্যে সরাসরি সম্পর্কের কোনো প্রমাণ নেই। তবে ইসমাইল বলেছেন, হুথি বিদ্রোহীদের আক্রমণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই দস্যুতায় নেমেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
এক দশক আগে জলদস্যুদের প্রতিরোধে শিপিং কোম্পানিগুলো জাহাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছিল। ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী জলদস্যু নির্মুল অভিযানে যোগ দিয়েছিল। ১৪টি দেশের ২০ টির মতো যুদ্ধজাহাজ এডেন উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের জাহাজ চলাচলের রুটগুলোতে টহল দিত। কখনো কখনো ভূমধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরেও এই টহল চলত।
জাতিসংঘের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সোমালিয়া শাখার কাউন্টার-পাইরেসি ইউনিটের সাবেক প্রধান জন স্টিড বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো জলদস্যুদের আক্রমণ নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল। ধীরে ধীরে জলদস্যুদের হুমকি কমে গেলে দেশগুলো টহলরত যুদ্ধজাহাজের সংখ্যাও কমিয়ে দেয়। টহলের জাহাজগুলো বিভিন্ন মিশনে গিয়ে ডুবে যায় এবং জাতীয় কমান্ডে ফিরে যায়।’
ইউনাভফোর, ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ব্রিটিশ নৌবাহিনী বলেছে, তাঁরা সোমালিয়াকে জলদস্যুতা মোকাবিলায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে টহল কমে যাওয়া ও অতিরিক্ত সংস্থান করবে কি না সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।
স্টিড বলেছেন, আরেকটি সমস্যা হল ২০২২ সালে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের ব্যত্যয়। যার ফলে বিদেশি জাহাজগুলো সোমালিয়ার জলসীমায় টহল দেওয়ার অনুমতি পায়।
সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহামুদ বলেছেন, আগেরবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পেছনে বড় কারণ ছিল জলে এবং স্থলে কঠোরভাবে সোমালিয়ার আইন প্রয়োগ, অসংখ্য আন্তর্জাতিক জাহাজ পাঠানো নয়।
সোমালিয়া সরকারের তথ্য অনুযায়ী, কোস্টগার্ডের ৭২০ জন প্রশিক্ষিত সদস্য রয়েছে। কিন্তু বাহিনীটির চারটি নৌযানের মধ্যে মাত্র একটি কার্যকরী। রাজধানী মোগাদিশু, পুন্টল্যান্ড এবং বিচ্ছিন্ন সোমালিল্যান্ড অঞ্চলেও সীমিত অস্ত্রসহ সামুদ্রিক পুলিশ বাহিনী রয়েছে।
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
২ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে