জাহাঙ্গীর আলম

প্রবাদ আছে, টাকা বানাতে চাইলে আগে অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে ব্যবসা শুরু করতে হলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা খরচ করতেই হবে। কিন্তু দেশ ভেদে এই অর্থের পরিমাণটা উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিররাতে ব্যবসা শুরু করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল। তবে রুয়ান্ডায় একবারে কপর্দকশূন্য হাতেই শুরু করা যায় ব্যবসা।
তবে সাধারণ মত হচ্ছে, ব্যবসার শুরুতেই যদি বেশি পয়সা খরচ হয়ে যায়, তাহলে পণ্যের গুণ–মানে মনোযোগ দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ব্যবসার শুরুটা অবশ্যই সুলভ হওয়া চাই। কারণ, একটি ব্যবসায় সফল হওয়া মানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। সরকারকে একটা মোটা অঙ্কের কর দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। তার মানে, সব পক্ষই লাভবান হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—উদ্যোক্তা মাগনা হওয়া যায় না। অন্তত বিশ্বের সব অঞ্চলে এমন সুযোগ নেই।
বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। উপযুক্ত অনুমোদন, লাইসেন্স ইত্যাদির জন্য নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এর জন্য কিছু অর্থও চলে যায়। সেই সঙ্গে খরচ হয় মূল্যবান সময়ও।
এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। বিশ্ব ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বিজনেস ফাইনান্সিং ডট কো ডট ইউকে চমৎকার ও সহজবোধ্য একটি মানচিত্র তৈরি করেছে। এই মানচিত্রে দেশ ভেদে ব্যবসা শুরুর খরচের পার্থক্যটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর আগে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক—
তুলনার সুবিধার্থে, ব্যবসায় খরচের হিসাবটা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়েছে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের পর তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই দেশে উদ্যোক্তার বাজারে আসার আগেই পকেট থেকে চলে যাবে ৭ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৫১ ডলার। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল দেশ হলো আফ্রিকার রুয়ান্ডা। এই দেশে আক্ষরিক অর্থেই ব্যবসার প্রথম দুই বছর এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। আর ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন অনুমোদনের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। খালি ৮ হাজার ৯০০ ডলার পুঁজি থাকলেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
অবশ্য এই সাধারণ হিসাবের ভিত্তিতে সব দেশের তুলনা করা একেবারে ঠিক হবে না। এই টাকার অঙ্কগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের জীবনমানের সঙ্গেও তুলনা করা দরকার। কারণ, এই জীবনমানই সেই দেশের মানুষের আপেক্ষিক আর্থিক সামর্থ্য নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কাজাখস্তানে একটি দোকান দেওয়ার খরচ মাত্র ১২ ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সেই দেশের মানুষের মাসিক আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু কঙ্গোতে একই ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ১ হাজার ২৩২ ডলার। এটি কঙ্গোবাসীর বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণের বেশি।
এ ক্ষেত্রে ইউরোপে খুব বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা শুরু করা যায়—এমন দেশগুলোর মধ্যে ১২টিতে ১০০ ডলারেরও কম খরচ হয়। আর বেশি খরচের দেশগুলোতে লাগে হাজার ডলারের বেশি। একমাত্র স্লোভেনিয়া বাদে, ব্যবসা শুরুর বা সূচনা ব্যয়ের দিক থেকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যুক্তরাজ্য। এমনকি বেলারুশে যেখানে খরচ হয় গড়ে ১৮ দশমিক ১৮ ডলার, সেখানে যুক্তরাজ্যে মাত্র ১২ পাউন্ড বা ১৭ ডলারে কোম্পানিজ হাউসে নিবন্ধন করেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করে দিতে পারে।

আর ইউরোপের মধ্যে যে দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেটি হলো ইতালি। ইতালিতে যেকোনো আজিয়েন্দা বা ব্যবসা খুলতে চাইলে শুরুতেই শুধু নানা অনুমোদন, নিবন্ধন ইত্যাদি বাবদ ৪ হাজার ৮৯৫ ডলার পকেট থেকে নেমে যাবে। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের মাসিক গড় আয়ের (২,৪০৩ ডলার) দ্বিগুণের বেশি।
আর উত্তর আমেরিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হলো ঐতিহাসিকভাবেই উদ্যোক্তাদের জন্য এক স্বপ্নের দেশ। এই দেশে ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ৭২৫ ডলার। যেখানে মেক্সিকোতে লাগে ১ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৮১ ডলার। তবে কানাডাতে ব্যবসা করা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। যুক্তরাষ্ট্রের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয় এ দেশে। কানাডাতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাত্র ১৬৬ দশমিক ১৯ ডলার।
আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সূচনা ব্যয়টি বেশি মনে হলেও নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কিন্তু বেশ কম। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী এ দেশের নাগরিকদের মাসিক আয় ৪ হাজার ৪৫৮ ডলার। সে হিসাবে দেশটিতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাসিক আয়ের ১৬ শতাংশ। মেক্সিকোতে কোম্পানির মালিক হতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে তুলনায় এটি অনেক কম। সে দেশে ব্যবসার সূচনায় ব্যয় নাগরিকদের মাসিক আয়ের আড়াই গুণ।

উত্তর আমেরিকায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো বেলিজ। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৯৯ দশমিক ৩১ ডলার, যা সে দেশের মাসিক আয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণ হিসাব করলে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ বাহামা। সেখানে খরচ হয় ১ হাজার ৮১০ দশমিক ৯২ ডলার। আর হাইতিতে খরচ হয় ৯৩২ দশমিক ৮০ ডলার। এটি হাইতির চারজন নাগরিকের মাসিক আয়ের সমান। দেশটির নাগরিকদের গড় মাসিক আয় ৬৭ ডলার।
নাগরিকদের সামর্থ্য বিচারে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। সুরিনাম, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও উরুগুয়েতে ব্যবসার সূচনা খরচ অনেক বেশি। তবে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও চিলি দারুণ সাশ্রয়ী।
ব্যবসার শুরুর করার ক্ষেত্রে সুরিনাম সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় ৩ হাজার ৩০ ডলার, যা দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের ১১ গুণের বেশি। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় নোটারি সার্ভিসের জন্য ৮ শতাংশ সেবামূল্য।

অথচ ভেনেজুয়েলাতে খরচ হয় মাত্র ২১ ডলার। কোম্পানির নাম সংরক্ষণ, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সেটি প্রকাশ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ এ অর্থ খরচ হয়। দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের (১ হাজার ২৩২ ডলার) মাত্র এক শতাংশ বা তারও কম। এরপরও কিন্তু ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম। এর মানে দাঁড়ায়, দেশটিতে নতুন উদ্যোগ শুরু ও ব্যবসা পরিচালনার সামনে আরও অনেক বাধা আছে। কমিউনিস্ট দেশটিতে সবকিছুতে রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এর একটি অন্যতম কারণ।
আফ্রিকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শান দেওয়া আছে দুইধারী তলোয়ার। এ মহাদেশে সস্তায় কায়িক শ্রম পেতে কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারও সেটি উৎসাহিত করে। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কোম্পানির মালিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন করে রাখা হয়েছে। অনেক দেশেই এই বাধাগুলো প্রায় স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসেছে। তবে ইদানীং কিছু দেশ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
ব্যবসা শুরুর জন্য আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ হলো ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। এই দেশে খরচ হয় ২ হাজার ৩২২ ডলার। অর্থাৎ, ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা করতেই নাগরিকদের গড়ে ৭ দশমিক ২ মাসের আয় পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশী কঙ্গোতেও অস্বাভাবিক ব্যয় করতে হয়। তুলনামূলকভাবে সে দেশে ব্যবসা শুরুর খরচ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ব্যবসার সূচনা ব্যয় একজন নাগরিকের সাড়ে ২৫ মাসের বেতনের সমান।
তবে কঙ্গো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে আবার ব্যবসার সূচনার খরচ বেশ কম, মাত্র ৮০ ডলার। আফ্রিকায় যে কয়টা দেশে ১০০ ডলারে কম খরচ করেই ব্যবসা শুরু করা যায়, তার মধ্যে এই দেশ অন্যতম। এর মধ্যে মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশও আছে, যাদের আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস বলা হয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলো রয়েছে প্রথমটিতেই। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ মধ্য এশিয়ায়। শুরুতেই বলা হয়েছে, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু নাগরিকদের সামর্থ্যের বিচারে তাকে কিন্তু সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলা যাবে না। এখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা বাবদ যে খরচ হয়, তা নাগরিকদের গড়ে ২ দশমিক ২৫ মাসের উপার্জনের সমান।

আর প্রতিবেশী কাতার ও সৌদি আরবও কিন্তু সাশ্রয়ী নয়। দেশ দুটিতে খরচ হয় যথাক্রমে ৩ হাজার ৯৫১ দশমিক ৯৪ ও ১ হাজার ২৬৬ দশমিক ৫৭ ডলার। তবে বাহরাইনে খরচ হয় মাত্র ২৩০ দশমিক ৭৮ ডলার। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এ বাবদ খরচ হয় ৮০৭ দশমিক ৭৯ ডলার।
মধ্য এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ কিরগিজস্তান। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ ডলার। এই দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও খরচ বেশ কম। আফগানিস্তানেও ব্যবসা শুরুর খরচ বেশ কম। অবশ্য গৃহযুদ্ধের মধ্যে সেখানে নিশ্চয় কেউ নতুন ব্যবসা খুলতে চাইবেন না!
নিচের দেশগুলোর একটিতেও ব্যবসার সূচনা ব্যয় চার অঙ্কের নয় এবং তুলনামূলক ব্যয় কম হলেও এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয় সাশ্রয়ী ও সামর্থ্যের মধ্যেই আছে।
কম্বোডিয়া ব্যবসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সেখানেও ব্যবসা শুরুর জন্য গড়ে ৭৪৬ ডলার খরচ করতে হয়। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের প্রায় সাড়ে সাত মাসের উপার্জনের সমান। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ এটি। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো পূর্ব তিমুর। দেশটিতে খরচ হয় মাত্র ১০ ডলার। তবে এরপরও নাগরিকদের মাসিক আয়ের ৯ শতাংশ।
সবদিক বিবেচনায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। দেশটিতে আনুষ্ঠানিকতা বাবদ খরচ হয় মাত্র ৪৩ দশমিক ৪৮ ডলার। এটি মাসিক আয়ের (২ হাজার ৮৩৮ ডলার) মাত্র ২ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণে এবং সামর্থ্য—দুদিক থেকেই উদ্যোক্তাবান্ধব দেশ এটি। ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার বিবেচনায় তালিকায় এক নম্বরে নিউজিল্যান্ডকে রেখেছে বিশ্ব ব্যাংক। এখানে একটি মাত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যবসা শুরু যায়, যেখানে সময় লাগে এক দিনেরও কম।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১। আর ব্যবসা পরিচালনার সহজসাধ্যতার সূচকে অবস্থান ১৬৮।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বাংলাদেশে ব্যবসার বাধা হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো—দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো, সরকারি আমলাদের দুর্বলতা, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নীতি, করহার, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, করব্যবস্থার জটিলতা, অপরাধ, উদ্ভাবনী দক্ষতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
ঘুষ ও দুর্নীতি, ক্রয় প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিচার বিভাগে দীর্ঘসূত্রতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, কপিরাইটের অপব্যবহার ও পাইরেসির ছড়াছড়ি, মেধাস্বত্ব অধিকারের প্রয়োগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল—এসবও বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ ছাড়া সাধারণত অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পুঁজির ভাসমান দোকানের ব্যবসাগুলোতে যেসব পক্ষ থেকে বাধা আসে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যেমন, ফুটপাতের দোকানে দিতে হলে পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। এতে দেখা যায়, লাভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চাঁদার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানি তো তাঁদের নিত্যসঙ্গীই।
ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় যে ১৪৯ দশমিক ২৫ ডলার বলা হচ্ছে, তা আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হলেও তা আসলে কম নয়। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। গত মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। এই হিসাবকে বিবেচনায় নিলে এটি মাথাপিছু আয়ের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। মাস হিসেবে এটি গড় মাসিক আয়ের চেয়ে কম। সে হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় কমই বলতে হবে। কিন্তু এই কম ব্যয়ের কারণে ব্যবসা শুরু করাটা যে এখানে সহজ, সে কথা বলা যাবে না। তার কারণগুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রবাদ আছে, টাকা বানাতে চাইলে আগে অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে ব্যবসা শুরু করতে হলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা খরচ করতেই হবে। কিন্তু দেশ ভেদে এই অর্থের পরিমাণটা উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিররাতে ব্যবসা শুরু করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল। তবে রুয়ান্ডায় একবারে কপর্দকশূন্য হাতেই শুরু করা যায় ব্যবসা।
তবে সাধারণ মত হচ্ছে, ব্যবসার শুরুতেই যদি বেশি পয়সা খরচ হয়ে যায়, তাহলে পণ্যের গুণ–মানে মনোযোগ দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ব্যবসার শুরুটা অবশ্যই সুলভ হওয়া চাই। কারণ, একটি ব্যবসায় সফল হওয়া মানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। সরকারকে একটা মোটা অঙ্কের কর দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। তার মানে, সব পক্ষই লাভবান হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—উদ্যোক্তা মাগনা হওয়া যায় না। অন্তত বিশ্বের সব অঞ্চলে এমন সুযোগ নেই।
বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। উপযুক্ত অনুমোদন, লাইসেন্স ইত্যাদির জন্য নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এর জন্য কিছু অর্থও চলে যায়। সেই সঙ্গে খরচ হয় মূল্যবান সময়ও।
এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। বিশ্ব ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বিজনেস ফাইনান্সিং ডট কো ডট ইউকে চমৎকার ও সহজবোধ্য একটি মানচিত্র তৈরি করেছে। এই মানচিত্রে দেশ ভেদে ব্যবসা শুরুর খরচের পার্থক্যটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর আগে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক—
তুলনার সুবিধার্থে, ব্যবসায় খরচের হিসাবটা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়েছে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের পর তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই দেশে উদ্যোক্তার বাজারে আসার আগেই পকেট থেকে চলে যাবে ৭ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৫১ ডলার। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল দেশ হলো আফ্রিকার রুয়ান্ডা। এই দেশে আক্ষরিক অর্থেই ব্যবসার প্রথম দুই বছর এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। আর ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন অনুমোদনের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। খালি ৮ হাজার ৯০০ ডলার পুঁজি থাকলেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
অবশ্য এই সাধারণ হিসাবের ভিত্তিতে সব দেশের তুলনা করা একেবারে ঠিক হবে না। এই টাকার অঙ্কগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের জীবনমানের সঙ্গেও তুলনা করা দরকার। কারণ, এই জীবনমানই সেই দেশের মানুষের আপেক্ষিক আর্থিক সামর্থ্য নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কাজাখস্তানে একটি দোকান দেওয়ার খরচ মাত্র ১২ ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সেই দেশের মানুষের মাসিক আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু কঙ্গোতে একই ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ১ হাজার ২৩২ ডলার। এটি কঙ্গোবাসীর বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণের বেশি।
এ ক্ষেত্রে ইউরোপে খুব বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা শুরু করা যায়—এমন দেশগুলোর মধ্যে ১২টিতে ১০০ ডলারেরও কম খরচ হয়। আর বেশি খরচের দেশগুলোতে লাগে হাজার ডলারের বেশি। একমাত্র স্লোভেনিয়া বাদে, ব্যবসা শুরুর বা সূচনা ব্যয়ের দিক থেকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যুক্তরাজ্য। এমনকি বেলারুশে যেখানে খরচ হয় গড়ে ১৮ দশমিক ১৮ ডলার, সেখানে যুক্তরাজ্যে মাত্র ১২ পাউন্ড বা ১৭ ডলারে কোম্পানিজ হাউসে নিবন্ধন করেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করে দিতে পারে।

আর ইউরোপের মধ্যে যে দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেটি হলো ইতালি। ইতালিতে যেকোনো আজিয়েন্দা বা ব্যবসা খুলতে চাইলে শুরুতেই শুধু নানা অনুমোদন, নিবন্ধন ইত্যাদি বাবদ ৪ হাজার ৮৯৫ ডলার পকেট থেকে নেমে যাবে। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের মাসিক গড় আয়ের (২,৪০৩ ডলার) দ্বিগুণের বেশি।
আর উত্তর আমেরিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হলো ঐতিহাসিকভাবেই উদ্যোক্তাদের জন্য এক স্বপ্নের দেশ। এই দেশে ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ৭২৫ ডলার। যেখানে মেক্সিকোতে লাগে ১ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৮১ ডলার। তবে কানাডাতে ব্যবসা করা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। যুক্তরাষ্ট্রের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয় এ দেশে। কানাডাতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাত্র ১৬৬ দশমিক ১৯ ডলার।
আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সূচনা ব্যয়টি বেশি মনে হলেও নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কিন্তু বেশ কম। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী এ দেশের নাগরিকদের মাসিক আয় ৪ হাজার ৪৫৮ ডলার। সে হিসাবে দেশটিতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাসিক আয়ের ১৬ শতাংশ। মেক্সিকোতে কোম্পানির মালিক হতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে তুলনায় এটি অনেক কম। সে দেশে ব্যবসার সূচনায় ব্যয় নাগরিকদের মাসিক আয়ের আড়াই গুণ।

উত্তর আমেরিকায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো বেলিজ। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৯৯ দশমিক ৩১ ডলার, যা সে দেশের মাসিক আয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণ হিসাব করলে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ বাহামা। সেখানে খরচ হয় ১ হাজার ৮১০ দশমিক ৯২ ডলার। আর হাইতিতে খরচ হয় ৯৩২ দশমিক ৮০ ডলার। এটি হাইতির চারজন নাগরিকের মাসিক আয়ের সমান। দেশটির নাগরিকদের গড় মাসিক আয় ৬৭ ডলার।
নাগরিকদের সামর্থ্য বিচারে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। সুরিনাম, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও উরুগুয়েতে ব্যবসার সূচনা খরচ অনেক বেশি। তবে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও চিলি দারুণ সাশ্রয়ী।
ব্যবসার শুরুর করার ক্ষেত্রে সুরিনাম সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় ৩ হাজার ৩০ ডলার, যা দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের ১১ গুণের বেশি। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় নোটারি সার্ভিসের জন্য ৮ শতাংশ সেবামূল্য।

অথচ ভেনেজুয়েলাতে খরচ হয় মাত্র ২১ ডলার। কোম্পানির নাম সংরক্ষণ, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সেটি প্রকাশ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ এ অর্থ খরচ হয়। দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের (১ হাজার ২৩২ ডলার) মাত্র এক শতাংশ বা তারও কম। এরপরও কিন্তু ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম। এর মানে দাঁড়ায়, দেশটিতে নতুন উদ্যোগ শুরু ও ব্যবসা পরিচালনার সামনে আরও অনেক বাধা আছে। কমিউনিস্ট দেশটিতে সবকিছুতে রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এর একটি অন্যতম কারণ।
আফ্রিকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শান দেওয়া আছে দুইধারী তলোয়ার। এ মহাদেশে সস্তায় কায়িক শ্রম পেতে কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারও সেটি উৎসাহিত করে। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কোম্পানির মালিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন করে রাখা হয়েছে। অনেক দেশেই এই বাধাগুলো প্রায় স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসেছে। তবে ইদানীং কিছু দেশ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
ব্যবসা শুরুর জন্য আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ হলো ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। এই দেশে খরচ হয় ২ হাজার ৩২২ ডলার। অর্থাৎ, ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা করতেই নাগরিকদের গড়ে ৭ দশমিক ২ মাসের আয় পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশী কঙ্গোতেও অস্বাভাবিক ব্যয় করতে হয়। তুলনামূলকভাবে সে দেশে ব্যবসা শুরুর খরচ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ব্যবসার সূচনা ব্যয় একজন নাগরিকের সাড়ে ২৫ মাসের বেতনের সমান।
তবে কঙ্গো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে আবার ব্যবসার সূচনার খরচ বেশ কম, মাত্র ৮০ ডলার। আফ্রিকায় যে কয়টা দেশে ১০০ ডলারে কম খরচ করেই ব্যবসা শুরু করা যায়, তার মধ্যে এই দেশ অন্যতম। এর মধ্যে মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশও আছে, যাদের আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস বলা হয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলো রয়েছে প্রথমটিতেই। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ মধ্য এশিয়ায়। শুরুতেই বলা হয়েছে, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু নাগরিকদের সামর্থ্যের বিচারে তাকে কিন্তু সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলা যাবে না। এখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা বাবদ যে খরচ হয়, তা নাগরিকদের গড়ে ২ দশমিক ২৫ মাসের উপার্জনের সমান।

আর প্রতিবেশী কাতার ও সৌদি আরবও কিন্তু সাশ্রয়ী নয়। দেশ দুটিতে খরচ হয় যথাক্রমে ৩ হাজার ৯৫১ দশমিক ৯৪ ও ১ হাজার ২৬৬ দশমিক ৫৭ ডলার। তবে বাহরাইনে খরচ হয় মাত্র ২৩০ দশমিক ৭৮ ডলার। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এ বাবদ খরচ হয় ৮০৭ দশমিক ৭৯ ডলার।
মধ্য এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ কিরগিজস্তান। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ ডলার। এই দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও খরচ বেশ কম। আফগানিস্তানেও ব্যবসা শুরুর খরচ বেশ কম। অবশ্য গৃহযুদ্ধের মধ্যে সেখানে নিশ্চয় কেউ নতুন ব্যবসা খুলতে চাইবেন না!
নিচের দেশগুলোর একটিতেও ব্যবসার সূচনা ব্যয় চার অঙ্কের নয় এবং তুলনামূলক ব্যয় কম হলেও এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয় সাশ্রয়ী ও সামর্থ্যের মধ্যেই আছে।
কম্বোডিয়া ব্যবসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সেখানেও ব্যবসা শুরুর জন্য গড়ে ৭৪৬ ডলার খরচ করতে হয়। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের প্রায় সাড়ে সাত মাসের উপার্জনের সমান। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ এটি। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো পূর্ব তিমুর। দেশটিতে খরচ হয় মাত্র ১০ ডলার। তবে এরপরও নাগরিকদের মাসিক আয়ের ৯ শতাংশ।
সবদিক বিবেচনায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। দেশটিতে আনুষ্ঠানিকতা বাবদ খরচ হয় মাত্র ৪৩ দশমিক ৪৮ ডলার। এটি মাসিক আয়ের (২ হাজার ৮৩৮ ডলার) মাত্র ২ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণে এবং সামর্থ্য—দুদিক থেকেই উদ্যোক্তাবান্ধব দেশ এটি। ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার বিবেচনায় তালিকায় এক নম্বরে নিউজিল্যান্ডকে রেখেছে বিশ্ব ব্যাংক। এখানে একটি মাত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যবসা শুরু যায়, যেখানে সময় লাগে এক দিনেরও কম।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১। আর ব্যবসা পরিচালনার সহজসাধ্যতার সূচকে অবস্থান ১৬৮।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বাংলাদেশে ব্যবসার বাধা হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো—দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো, সরকারি আমলাদের দুর্বলতা, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নীতি, করহার, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, করব্যবস্থার জটিলতা, অপরাধ, উদ্ভাবনী দক্ষতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
ঘুষ ও দুর্নীতি, ক্রয় প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিচার বিভাগে দীর্ঘসূত্রতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, কপিরাইটের অপব্যবহার ও পাইরেসির ছড়াছড়ি, মেধাস্বত্ব অধিকারের প্রয়োগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল—এসবও বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ ছাড়া সাধারণত অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পুঁজির ভাসমান দোকানের ব্যবসাগুলোতে যেসব পক্ষ থেকে বাধা আসে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যেমন, ফুটপাতের দোকানে দিতে হলে পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। এতে দেখা যায়, লাভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চাঁদার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানি তো তাঁদের নিত্যসঙ্গীই।
ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় যে ১৪৯ দশমিক ২৫ ডলার বলা হচ্ছে, তা আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হলেও তা আসলে কম নয়। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। গত মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। এই হিসাবকে বিবেচনায় নিলে এটি মাথাপিছু আয়ের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। মাস হিসেবে এটি গড় মাসিক আয়ের চেয়ে কম। সে হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় কমই বলতে হবে। কিন্তু এই কম ব্যয়ের কারণে ব্যবসা শুরু করাটা যে এখানে সহজ, সে কথা বলা যাবে না। তার কারণগুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৯ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই।
২৪ জুলাই ২০২১
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৯ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই।
২৪ জুলাই ২০২১
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই।
২৪ জুলাই ২০২১
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৯ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই।
২৪ জুলাই ২০২১
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৯ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে