অনলাইন ডেস্ক
ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পরপরই ভূখণ্ডটি ঘিরে সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। পেলোসির সফরকে উসকানিমূলক আখ্যা দিয়ে এই মহড়া শুরু করে বেইজিং। বিশ্লেষকদের ধারণা, তাইওয়ান সংকটের কারণে ক্ষতির আশঙ্কা তাইওয়ান এবং তার পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই বেশি। ২০১৮ সালে মার্কিন কংগ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্ধারণমূলক সামরিক পরাজয়’ বরণ করবে। কেন যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়বে?
প্রযুক্তিগত ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে চীন এবং এই এগিয়ে যাওয়ার কারণেই মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ সমরক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ইউনিটের প্রধান মাইকেল ব্রাউন মনে করেন, ‘এই লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে যদি মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতারা অস্ত্র নির্মাতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।’
মার্কিন যৌথ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান অ্যান্ড্রেসেন হোরোভিটসের ক্যাথরিন বয়েলের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর টপ-ফ্লাইট প্রোগ্রামারের অভাব রয়েছে। সিলিকন ভ্যালিতে সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে ভালো করলেও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে তারা অতীতে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
বর্তমানে চলমান ইউক্রেন ও তাইওয়ান সংকটের পর মার্কিন প্রযুক্তি খাতের রাঘব বোয়ালেরাও সমর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাদের নৈতিক অবস্থানের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে প্রযুক্তি দারুণভাবে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলে দিচ্ছে। ফলে ছোট-বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নজর মার্কিন ও মিত্র দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বাজেটের ওপর। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ১৪০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের প্রযুক্তি পণ্য ক্রয় বাজেট ও মার্কিন মিত্র দেশগুলোর সম্মিলিত সামরিক বাজেট নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য একটি বড় বাজার হিসেবে ধরা দেবে।
এরই মধ্যে মাইক্রোসফট, আমাজনের মতো টেক জায়ান্টগুলো মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রযুক্তি খাতের বিষয়ে চুক্তি করতে মাঠে নেমেছে। মার্কিন অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগ ২০১৯ সালে থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিনগুণ বেড়েছে। সব মিলিয়ে বেড়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন। চলতি বছরের প্রথমার্ধেই এই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার।
তবে বর্তমানে এই বিনিয়োগ ক্রমশ বাড়লেও অতীতে ভিয়েতনাম যুদ্ধ তৎকালীন মার্কিন প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোকে যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেছিল। এই মনোভাব দীর্ঘদিন বজায় ছিল। সর্বশেষ গুগলের কর্মীরা ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে পেন্টাগনের ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তি থেকে সরে আসতে বাধ্য করেছিল। তবে বর্তমানে পরিবর্তিত ভূরাজনীতির সময়ে সে অবস্থা বদলে গেছে অনেকটাই।
দুটি কারণে সিলিকন ভ্যালি ও পেন্টাগন পরস্পরের কাছে আসছে। প্রথমটি হলো—ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর আগেও পশ্চিমাদের মনে ভয় ছিল, যেকোনো সময় বড় যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এই ভয়ে পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিবছর প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে বিশ্বের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি।
বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংকের অনুমান, আগামী দিনে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর মোট জিডিপির ২ শতাংশ ন্যাটোর সামরিক বাজেটের জন্যই ব্যয় করা হবে। এই বাজেটের বড় অংশ প্রতিরক্ষা খাতের প্রযুক্তির অংশে ব্যয় করা হবে, যা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস বলে বিবেচিত হবে। অ্যান্টি-ড্রোন এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান অ্যান্ডুরিলের প্রধান চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট ক্রিশ্চিয়ান ব্রস বলেছেন, আগামী দিনে তাঁর প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে মার্কিন মিত্রদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।
দ্বিতীয় কারণটি হলো প্রযুক্তি নিজেই। উন্নত কম্পিউটার প্রযুক্তি, বিভিন্ন অস্ত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং সেগুলোর কমান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারকে পরস্পর সংযুক্ত করার পথ খুঁজছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নিজেদের চাহিদা পূরণে পেন্টাগন নিয়মিত সরবরাহকারীদের বাইরেও সিলিকন ভ্যালিতে নজর দিচ্ছে। রেথিয়ন বা লকহিড মার্টিনের মতো প্রতিরক্ষা পণ্যে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে এআই ব্যবহার করছে, তার সক্ষমতা খুবই কম। এবং এ কারণেই সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশ কার্টার ২০১৫ সালে ‘প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ইউনিট’ শুরু করেছিলেন। এসব টেক জায়ান্টের পণ্যের মান কম হওয়ার কারণ হিসেবে মাইকেল ব্রাউন বলেছেন, ‘পেন্টাগনের যে প্রযুক্তি প্রয়োজন, তার খুব কমসংখ্যকই অভ্যন্তরীণ। এর বেশির ভাগই বাণিজ্যিক এবং সামরিক-বেসামরিক—উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়।’
বর্তমানে যুদ্ধবিমান, ট্যাংক বা অন্য উন্নত ওয়ার সিস্টেমের মতো বিচ্ছিন্ন যুদ্ধাস্ত্রের পরিবর্তে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ তুলনামূলক কম খরচে ওয়ার ইউনিটের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায়। গত বছর ইসরায়েল গাজায় ঝাঁক ঝাঁক ড্রোন মোতায়েনের মাধ্যমে নজরদারির একটি কার্যকর উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল। পেন্টাগনও তার জয়েন্ট অল-ডোমেন কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম (জেএডিসিসি) থেকেও এমন কিছুই প্রত্যাশা করে। এই সিস্টেম রিয়েল টাইমে সেন্সর হিসেবে কাজ করে যুদ্ধ ইউনিটগুলির মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানে সক্ষম। সমরাস্ত্র নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান শিল্ড ক্যাপিটালের রাজ শাহ বলেছেন, ‘পেন্টাগনের এই সিস্টেমটিই নির্দেশ করছে, তারা কীভাবে প্রযুক্তিকে বিবেচনা করে।’ মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্যালান্টির-এর সেথ রবিনসন মনে করেন, আগামী দিনে যুদ্ধের ভবিষ্যৎ হলো ‘সফটওয়্যার ফার্স্ট’। অর্থাৎ, আগামী দিনের যুদ্ধে সফটওয়্যারই প্রাধান্য পাবে।
বিষয়টি সফটওয়্যার বিক্রেতাদের জন্য ইতিবাচক। বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ক্লাউড স্টোরেজ, ডেটাবেইস, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ সরবরাহ, প্রশাসনিক বিভিন্ন সহায়তা উপকরণ সরবরাহসহ নানাভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি যুদ্ধের ময়দানেও নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চাইছে। অ্যালফাবেট, আমাজন, মাইক্রোসফট এবং ওরাকলসহ বিভিন্ন বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী পাঁচ বছরে পেন্টাগনের জয়েন্ট ওয়ার ফাইটিং ক্লাউড (জেডব্লিউসিসি) পরিচালনার চুক্তি বাগিয়ে অন্তত ৯ বিলিয়ন ডলার মুনাফার আশা করছে।
ভবিষ্যতের কথা তো গেল। বর্তমানেও টেক জায়ান্টগুলো প্রচুর মুনাফা করছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের কাছ থেকে। গত বছরই মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীকে হলোলেন্স অগমেন্টেড–রিয়্যালিটি হেডসেট সরবরাহের জন্য মাইক্রোসফট ও পেন্টাগনের মধ্যে ২২ বিলিয়ন ডলারের ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন বিমানবাহিনীর ‘ব্যাটল-ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ উন্নয়নের কাজও পেয়েছে। এই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য একীভূত করে তা বিশ্লেষণের একটি পদ্ধতি তৈরি করা হবে। এ ছাড়া চলতি বছরের জুনেই অ্যালফাবেট সম্পূর্ণ নতুন একটি ইউনিট চালু করেছে। যা মূলত মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ‘ব্যাটল-নেটওয়ার্কস’ সিস্টেমের চুক্তি বাগিয়ে নিতে বিশ্বের অন্যান্য প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা চালাবে। তবে এই বিষয়ে গুগলের ভেতরেই বিতর্ক রয়েছে। গুগল ক্লাউডের সাবেক প্রধান থমাস কুরিয়ান জেডব্লিউসিসি প্রোগ্রামে কাজ না করার পক্ষপাতি ছিলেন এবং তিনি এ নিয়ে পদত্যাগও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা জেডব্লিউসিসির মতো কোনো প্রোগ্রামে কাজ করতে চাই না।’
বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি কাজ করা সুযোগ রয়েছে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোরও। বিশেষ করে গুপ্তচরবৃত্তি-সংক্রান্ত প্রযুক্তির বিষয়ে। গত জানুয়ারিতেই অ্যান্ডুরিল ১০ বছর মেয়াদে ড্রোনবিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি পেয়েছে। পরের মাসেই স্কাইডিও আরেকটি প্রতিষ্ঠান মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ড্রোন বিক্রি করেছে। প্যালান্টির পেয়েছে জয়েন্ট অল-ডোমেইন কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল (জেএডিসি২) প্রোগ্রামের চুক্তি। জুলাইয়ে চুক্তি পেয়েছে সি৩ ডটএআই নামের একটি সফটওয়্যার নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি দূরপাল্লায় নির্ভুল লক্ষ্যভেদের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে। কেবল পেন্টাগনই নয়, বিখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা স্টিভ ওয়াকার বলেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানও এমন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার কথা ভাবছে।
সামরিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের মিশ্র ফলাফল রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এই খাতে কাজ করেছে এবং তার ফলাফল ধোঁয়াশাপূর্ণ। ২০১৫ সালে অ্যাপল যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা সংবলিত ইউনিফর্ম তৈরির কাজ পেয়েছিল। কিন্তু পেন্টাগন সেই প্রকল্প থেকে খুব একটা লাভবান হতে পারেনি। বর্তমানের জেডব্লিউসিসি প্রোগ্রামও জেইডিআই নামে আগের একটি প্রোগ্রামের পুনরুজ্জীবন। মামলার কারণে আমাজন ওই প্রোগ্রামটি বাতিল করেছিল। পরে সেই চুক্তি গিয়েছিল মাইক্রোসফটের কাছে। প্রতিষ্ঠানটির হলোলেন্স প্রকল্পটিও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। অনেকেই এই প্রকল্পকে অপচয় বলে আখ্যা দিয়েছেন। ভালোভাবে কাজ করতে পারেনি প্যালান্টিরও।
এ ক্ষেত্রে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যতিক্রম। তারা সফলতার সঙ্গেই কাজ করছে এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের বড় বড় চুক্তি বাগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষা বাজেটের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ছোট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠাগুলো পেয়েছে। ক্রমশ এই পরিমাণ বাড়ছে। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অনেকেই এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর লবিস্টরা নতুনদের এগিয়ে আসাকে ভালো চোখে দেখছেন না। এই বাধা দ্রুত উতরে যাওয়াই পেন্টাগনের জন্য মঙ্গলকর হবে।
যা হোক, সমর ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। ২০২০ সালেও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ কৌশলের ক্ষেত্রে চীনকে পেছনে ফেলেছিল কেবল প্রযুক্তির কারণেই। সব মিলিয়ে আগামী দিনে সামরিক বাজেটের বড় একটি অংশ এবং প্রযুক্তিই কোনো একটি বাহিনীকে রণক্ষেত্রে এবং সামরিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রযুক্তি ও সমর কৌশলকে একীভূত করে ভাবতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পরপরই ভূখণ্ডটি ঘিরে সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। পেলোসির সফরকে উসকানিমূলক আখ্যা দিয়ে এই মহড়া শুরু করে বেইজিং। বিশ্লেষকদের ধারণা, তাইওয়ান সংকটের কারণে ক্ষতির আশঙ্কা তাইওয়ান এবং তার পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই বেশি। ২০১৮ সালে মার্কিন কংগ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্ধারণমূলক সামরিক পরাজয়’ বরণ করবে। কেন যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়বে?
প্রযুক্তিগত ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে চীন এবং এই এগিয়ে যাওয়ার কারণেই মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ সমরক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ইউনিটের প্রধান মাইকেল ব্রাউন মনে করেন, ‘এই লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে যদি মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতারা অস্ত্র নির্মাতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।’
মার্কিন যৌথ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান অ্যান্ড্রেসেন হোরোভিটসের ক্যাথরিন বয়েলের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর টপ-ফ্লাইট প্রোগ্রামারের অভাব রয়েছে। সিলিকন ভ্যালিতে সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে ভালো করলেও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়ে তারা অতীতে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
বর্তমানে চলমান ইউক্রেন ও তাইওয়ান সংকটের পর মার্কিন প্রযুক্তি খাতের রাঘব বোয়ালেরাও সমর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাদের নৈতিক অবস্থানের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানে প্রযুক্তি দারুণভাবে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলে দিচ্ছে। ফলে ছোট-বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নজর মার্কিন ও মিত্র দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বাজেটের ওপর। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ১৪০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের প্রযুক্তি পণ্য ক্রয় বাজেট ও মার্কিন মিত্র দেশগুলোর সম্মিলিত সামরিক বাজেট নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য একটি বড় বাজার হিসেবে ধরা দেবে।
এরই মধ্যে মাইক্রোসফট, আমাজনের মতো টেক জায়ান্টগুলো মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রযুক্তি খাতের বিষয়ে চুক্তি করতে মাঠে নেমেছে। মার্কিন অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগ ২০১৯ সালে থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিনগুণ বেড়েছে। সব মিলিয়ে বেড়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন। চলতি বছরের প্রথমার্ধেই এই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার।
তবে বর্তমানে এই বিনিয়োগ ক্রমশ বাড়লেও অতীতে ভিয়েতনাম যুদ্ধ তৎকালীন মার্কিন প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোকে যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেছিল। এই মনোভাব দীর্ঘদিন বজায় ছিল। সর্বশেষ গুগলের কর্মীরা ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে পেন্টাগনের ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তি থেকে সরে আসতে বাধ্য করেছিল। তবে বর্তমানে পরিবর্তিত ভূরাজনীতির সময়ে সে অবস্থা বদলে গেছে অনেকটাই।
দুটি কারণে সিলিকন ভ্যালি ও পেন্টাগন পরস্পরের কাছে আসছে। প্রথমটি হলো—ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর আগেও পশ্চিমাদের মনে ভয় ছিল, যেকোনো সময় বড় যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এই ভয়ে পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিবছর প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে বিশ্বের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি।
বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংকের অনুমান, আগামী দিনে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর মোট জিডিপির ২ শতাংশ ন্যাটোর সামরিক বাজেটের জন্যই ব্যয় করা হবে। এই বাজেটের বড় অংশ প্রতিরক্ষা খাতের প্রযুক্তির অংশে ব্যয় করা হবে, যা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস বলে বিবেচিত হবে। অ্যান্টি-ড্রোন এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান অ্যান্ডুরিলের প্রধান চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট ক্রিশ্চিয়ান ব্রস বলেছেন, আগামী দিনে তাঁর প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে মার্কিন মিত্রদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।
দ্বিতীয় কারণটি হলো প্রযুক্তি নিজেই। উন্নত কম্পিউটার প্রযুক্তি, বিভিন্ন অস্ত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং সেগুলোর কমান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারকে পরস্পর সংযুক্ত করার পথ খুঁজছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নিজেদের চাহিদা পূরণে পেন্টাগন নিয়মিত সরবরাহকারীদের বাইরেও সিলিকন ভ্যালিতে নজর দিচ্ছে। রেথিয়ন বা লকহিড মার্টিনের মতো প্রতিরক্ষা পণ্যে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে এআই ব্যবহার করছে, তার সক্ষমতা খুবই কম। এবং এ কারণেই সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশ কার্টার ২০১৫ সালে ‘প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ইউনিট’ শুরু করেছিলেন। এসব টেক জায়ান্টের পণ্যের মান কম হওয়ার কারণ হিসেবে মাইকেল ব্রাউন বলেছেন, ‘পেন্টাগনের যে প্রযুক্তি প্রয়োজন, তার খুব কমসংখ্যকই অভ্যন্তরীণ। এর বেশির ভাগই বাণিজ্যিক এবং সামরিক-বেসামরিক—উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়।’
বর্তমানে যুদ্ধবিমান, ট্যাংক বা অন্য উন্নত ওয়ার সিস্টেমের মতো বিচ্ছিন্ন যুদ্ধাস্ত্রের পরিবর্তে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ তুলনামূলক কম খরচে ওয়ার ইউনিটের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায়। গত বছর ইসরায়েল গাজায় ঝাঁক ঝাঁক ড্রোন মোতায়েনের মাধ্যমে নজরদারির একটি কার্যকর উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল। পেন্টাগনও তার জয়েন্ট অল-ডোমেন কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম (জেএডিসিসি) থেকেও এমন কিছুই প্রত্যাশা করে। এই সিস্টেম রিয়েল টাইমে সেন্সর হিসেবে কাজ করে যুদ্ধ ইউনিটগুলির মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানে সক্ষম। সমরাস্ত্র নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান শিল্ড ক্যাপিটালের রাজ শাহ বলেছেন, ‘পেন্টাগনের এই সিস্টেমটিই নির্দেশ করছে, তারা কীভাবে প্রযুক্তিকে বিবেচনা করে।’ মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্যালান্টির-এর সেথ রবিনসন মনে করেন, আগামী দিনে যুদ্ধের ভবিষ্যৎ হলো ‘সফটওয়্যার ফার্স্ট’। অর্থাৎ, আগামী দিনের যুদ্ধে সফটওয়্যারই প্রাধান্য পাবে।
বিষয়টি সফটওয়্যার বিক্রেতাদের জন্য ইতিবাচক। বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ক্লাউড স্টোরেজ, ডেটাবেইস, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ সরবরাহ, প্রশাসনিক বিভিন্ন সহায়তা উপকরণ সরবরাহসহ নানাভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি যুদ্ধের ময়দানেও নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চাইছে। অ্যালফাবেট, আমাজন, মাইক্রোসফট এবং ওরাকলসহ বিভিন্ন বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী পাঁচ বছরে পেন্টাগনের জয়েন্ট ওয়ার ফাইটিং ক্লাউড (জেডব্লিউসিসি) পরিচালনার চুক্তি বাগিয়ে অন্তত ৯ বিলিয়ন ডলার মুনাফার আশা করছে।
ভবিষ্যতের কথা তো গেল। বর্তমানেও টেক জায়ান্টগুলো প্রচুর মুনাফা করছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের কাছ থেকে। গত বছরই মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীকে হলোলেন্স অগমেন্টেড–রিয়্যালিটি হেডসেট সরবরাহের জন্য মাইক্রোসফট ও পেন্টাগনের মধ্যে ২২ বিলিয়ন ডলারের ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন বিমানবাহিনীর ‘ব্যাটল-ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ উন্নয়নের কাজও পেয়েছে। এই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য একীভূত করে তা বিশ্লেষণের একটি পদ্ধতি তৈরি করা হবে। এ ছাড়া চলতি বছরের জুনেই অ্যালফাবেট সম্পূর্ণ নতুন একটি ইউনিট চালু করেছে। যা মূলত মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ‘ব্যাটল-নেটওয়ার্কস’ সিস্টেমের চুক্তি বাগিয়ে নিতে বিশ্বের অন্যান্য প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা চালাবে। তবে এই বিষয়ে গুগলের ভেতরেই বিতর্ক রয়েছে। গুগল ক্লাউডের সাবেক প্রধান থমাস কুরিয়ান জেডব্লিউসিসি প্রোগ্রামে কাজ না করার পক্ষপাতি ছিলেন এবং তিনি এ নিয়ে পদত্যাগও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা জেডব্লিউসিসির মতো কোনো প্রোগ্রামে কাজ করতে চাই না।’
বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি কাজ করা সুযোগ রয়েছে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোরও। বিশেষ করে গুপ্তচরবৃত্তি-সংক্রান্ত প্রযুক্তির বিষয়ে। গত জানুয়ারিতেই অ্যান্ডুরিল ১০ বছর মেয়াদে ড্রোনবিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি পেয়েছে। পরের মাসেই স্কাইডিও আরেকটি প্রতিষ্ঠান মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ড্রোন বিক্রি করেছে। প্যালান্টির পেয়েছে জয়েন্ট অল-ডোমেইন কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল (জেএডিসি২) প্রোগ্রামের চুক্তি। জুলাইয়ে চুক্তি পেয়েছে সি৩ ডটএআই নামের একটি সফটওয়্যার নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি দূরপাল্লায় নির্ভুল লক্ষ্যভেদের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে। কেবল পেন্টাগনই নয়, বিখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা স্টিভ ওয়াকার বলেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানও এমন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার কথা ভাবছে।
সামরিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের মিশ্র ফলাফল রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এই খাতে কাজ করেছে এবং তার ফলাফল ধোঁয়াশাপূর্ণ। ২০১৫ সালে অ্যাপল যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা সংবলিত ইউনিফর্ম তৈরির কাজ পেয়েছিল। কিন্তু পেন্টাগন সেই প্রকল্প থেকে খুব একটা লাভবান হতে পারেনি। বর্তমানের জেডব্লিউসিসি প্রোগ্রামও জেইডিআই নামে আগের একটি প্রোগ্রামের পুনরুজ্জীবন। মামলার কারণে আমাজন ওই প্রোগ্রামটি বাতিল করেছিল। পরে সেই চুক্তি গিয়েছিল মাইক্রোসফটের কাছে। প্রতিষ্ঠানটির হলোলেন্স প্রকল্পটিও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। অনেকেই এই প্রকল্পকে অপচয় বলে আখ্যা দিয়েছেন। ভালোভাবে কাজ করতে পারেনি প্যালান্টিরও।
এ ক্ষেত্রে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যতিক্রম। তারা সফলতার সঙ্গেই কাজ করছে এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের বড় বড় চুক্তি বাগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষা বাজেটের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ছোট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠাগুলো পেয়েছে। ক্রমশ এই পরিমাণ বাড়ছে। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অনেকেই এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর লবিস্টরা নতুনদের এগিয়ে আসাকে ভালো চোখে দেখছেন না। এই বাধা দ্রুত উতরে যাওয়াই পেন্টাগনের জন্য মঙ্গলকর হবে।
যা হোক, সমর ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। ২০২০ সালেও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ কৌশলের ক্ষেত্রে চীনকে পেছনে ফেলেছিল কেবল প্রযুক্তির কারণেই। সব মিলিয়ে আগামী দিনে সামরিক বাজেটের বড় একটি অংশ এবং প্রযুক্তিই কোনো একটি বাহিনীকে রণক্ষেত্রে এবং সামরিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রযুক্তি ও সমর কৌশলকে একীভূত করে ভাবতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১১ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১৯ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে