অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে উচ্চাভিলাষী প্রতিরক্ষা চুক্তির যে আশা ছিল, সৌদি আরব তা ত্যাগ করেছে এবং এখন আরও সীমিত সামরিক সহযোগিতা চুক্তির দিকে এগোচ্ছে। সৌদি আরব এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। তবে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে বিষয়টি কোন দিকে যাবে এবং রিয়াদ কোন পথে হাঁটবে তা মূলত নির্ভর করছে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ওপর। সৌদি আরব ও পশ্চিমা বিশ্বের চার কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
চলতি বছরের শুরুতে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি অর্জনের প্রচেষ্টায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে তাদের অবস্থান নমনীয় করে। রিয়াদ ওয়াশিংটনকে জানায়, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে দুই রাষ্ট্র সমাধানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।
তবে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তীব্র জনরোষের কারণে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আবারও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরায়েলের বাস্তব পদক্ষেপকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টিকে শর্ত হিসেবে সামনে রেখেছেন। দুটি সৌদি ও তিনটি পশ্চিমা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বলেছেন, এটি আরব বিশ্বে ইসরায়েলের বিস্তৃত গ্রহণযোগ্যতার একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হবে। তবে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিনিদের ছাড় দেওয়ার বিষয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের মুখোমুখি তিনি। নেতানিয়াহু জানেন, রাষ্ট্র গঠনের দিকে যেকোনো পদক্ষেপ তাঁর জোট সরকারকে ভেঙে দিতে পারে।
এই অবস্থায় সৌদি আরব ও ইসরায়েল উভয় দেশের শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার। রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের আশা, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে একটি সীমিত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। তবে এই চুক্তি কার্যকর করতে হলে এটিকে মার্কিন সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হবে। আর সৌদি আরব ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দিলে এটি অসম্ভব বলে জানিয়েছে ছয়টি সূত্র।
বর্তমানে যে চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা চলছে তা মূলত ইরানের আঞ্চলিক হুমকি মোকাবিলায় যৌথ সামরিক মহড়া ও অনুশীলন বাড়ানোর বিষয়ে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি প্রতিরক্ষা কোম্পানির মধ্যে অংশীদারত্বকে উৎসাহিত করা হবে এবং চীনের সঙ্গে সহযোগিতা ঠেকানোর জন্য সুরক্ষাব্যবস্থা থাকবে। এই চুক্তি ড্রোন প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তিতে সৌদি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। যুক্তরাষ্ট্র রিয়াদে প্রশিক্ষণ, লজিস্টিকস এবং সাইবার নিরাপত্তা সহায়তা বাড়াবে এবং সম্ভবত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করবে। তবে এটি এমন কোনো বাধ্যতামূলক পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে না, যার ফলে বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশকে বিদেশি হামলার ক্ষেত্রে মার্কিন বাহিনী সুরক্ষা দেবে।
আরব বিশ্বের থিংক ট্যাংক গালফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান আবদেল আজিজ আল-সাঘের বলেন, ‘সৌদি আরব একটি নিরাপত্তা চুক্তি পাবে, যা আরও সামরিক সহযোগিতা এবং মার্কিন অস্ত্র বিক্রয়ের সুযোগ দেবে। তবে এটি জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে না, যেমনাটা সৌদি আরব শুরুতে চেয়েছিল।’
তবে ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে আসতে যাওয়ায় পুরো বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বা সার্বভৌমত্বের কোনো উল্লেখ নেই। তবে তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের—যিনি এমবিএস নামেও পরিচিত—ঘনিষ্ঠ মিত্র। ফিলিস্তিনি ও আরব কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, ট্রাম্প ও তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার, যিনি ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরির’ মূল কারিগর এবং যুবরাজের এমবিএসের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তাঁকে (এমবিএসকে) এই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে রাজি করাতে পারেন।
অর্থাৎ, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ছাড়াই সৌদি আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তির বিষয়ে এমবিএসকে রাজি করাতে পারেন। সৌদি আরব এই অবস্থায় দেশটির যেসব বিষয় অগ্রাধিকারমূলক সেগুলোর সঙ্গে এই পরিবর্তিত কূটনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে পরিচালিত করবেন, তা যুবরাজের এমবিএসের নেতৃত্ব এবং শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে মনে করেন কূটনীতিকেরা।
এদিকে, জো বাইডেনের নেতৃত্বে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে চুক্তির আশা পুরোপুরি ছাড়েনি। তবে বেশ কিছু বাধা রয়ে গেছে। এই আলোচনার সঙ্গে জড়িত এ মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তির জন্য পর্যাপ্ত সময় আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানেন যে, সৌদি আরব এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি চায়, বিশেষ করে উন্নত অস্ত্রের প্রাপ্তির জন্য। তবে এটি বাইডেনের অধীনে সম্পন্ন হবে, নাকি দেশটি ট্রাম্পের জন্য অপেক্ষা করবে, তা নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং অনেকগুলো দিক নিয়ে কাজ করছি।’
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয়ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সম্পর্কে সৌদি আরবের অবস্থান নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সৌদি আরবকে সামরিক সুরক্ষা দিতে এবং ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে একটি মার্কিন প্রতিরক্ষা চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিতে পারে। এর ফলে, এই অঞ্চলের দুই ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ দীর্ঘদিন পর একত্র করবে। এবং যখন চীন এই অঞ্চলে নিজের প্রভাব বাড়াচ্ছে, ঠিক তখনই এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শক্তি আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে।
এই সৌদি আরবে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ইরান ও ইয়েমেনের হুতি মিত্রদের হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা করবে। এ ছাড়া, ২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হুতিদের যে হামলা হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সাহায্য করবে এই চুক্তি। এই হামলার জন্য রিয়াদ ও ওয়াশিংটন তেহরানকে দায়ী করেছিল। তেহরান অবশ্য কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
এদিকে, সংক্ষিপ্ত সামরিক চুক্তির বিষয়ে এক শীর্ষ সৌদি কর্মকর্তা বলেছেন, চুক্তির ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে এটি সম্ভব নয় বলে রিয়াদ বিকল্প চুক্তি নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি আকারে ছোট একটি সহযোগিতা চুক্তি হয়, তবে এটি বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই সম্পন্ন হতে পারে বলে দুই সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আরও বাধার সম্মুখীন হয়েছে। যেমন, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। কারণ সৌদি আরব তথাকথিত ১২৩ চুক্তিতে সই করতে অস্বীকার করেছে, যা তাদের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণের অধিকার অস্বীকার করে। মানবাধিকার সম্পর্কিত কিছু ধারা নিয়েও সৌদি আরবের আপত্তি ছিল।
সৌদি আরবের নেতৃত্ব দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নিলেও, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে প্রস্তাবিত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সমাধানের পরিকল্পনা পুনরুজ্জীবিত করলে এমবিএস কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন—তা এখনো অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকেরা। কারণ, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। এটি ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্যে সংহতি প্রকাশ করে এবং ভূমির বিনিময়ে শান্তি—কাঠামো থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।
এই পরিকল্পনা ইসরায়েলকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে থাকা ইসরায়েলি বসতি এবং জর্ডান উপত্যকা তেল আবিবের সঙ্গে সংযুক্ত করার অনুমতি দেয়। এটি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে দাবি করার ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা এবং জাতিসংঘের রেজোলিউশন অনুযায়ী তাদের অধিকার কার্যত অস্বীকার করা হয়।
ইসরায়েলি সংযুক্তিকরণকে বৈধতা দেওয়ায় এই মার্কিন পরিকল্পনা অনেকের কাছে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য একটি বড় ধাক্কা এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশার ওপর গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সৌদি কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
তারা বলেন, এটি ছাড়া সহিংসতার চক্র স্বাভাবিক সম্পর্ককে বারবার বিপন্ন করবে। এক সৌদি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে আমরা কীভাবে একটি সংহত অঞ্চল কল্পনা করতে পারি? ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অস্বীকার করা যাবে না।’
চলতি মাসে রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব ও ইসলামিক বিশ্বের শীর্ষ সম্মেলনে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ। তবে, এরপরও গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এবং সম্ভবত অন্য কোনো ইসরায়েলি সরকারের অধীনে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা পুনরায় আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ফাওয়াজ গারগেস বলেন, ‘সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ট্রাম্প সম্ভাব্য সব পথ ব্যবহার করবেন। ট্রাম্পের জন্য সৌদি আরবই প্রধান লক্ষ্য।’
গারগেস বলেন, ‘যদিও সৌদি নেতারা বারবার বলেছেন যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বাস্তব পথ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবেন না, তবুও ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে সমর্থনের একটি সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারেন, এমনকি ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো বাস্তব ছাড় দিতে বাধ্য না করেই।’
রয়টার্স থেকে অনূদিত
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে উচ্চাভিলাষী প্রতিরক্ষা চুক্তির যে আশা ছিল, সৌদি আরব তা ত্যাগ করেছে এবং এখন আরও সীমিত সামরিক সহযোগিতা চুক্তির দিকে এগোচ্ছে। সৌদি আরব এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। তবে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে বিষয়টি কোন দিকে যাবে এবং রিয়াদ কোন পথে হাঁটবে তা মূলত নির্ভর করছে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ওপর। সৌদি আরব ও পশ্চিমা বিশ্বের চার কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
চলতি বছরের শুরুতে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি অর্জনের প্রচেষ্টায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে তাদের অবস্থান নমনীয় করে। রিয়াদ ওয়াশিংটনকে জানায়, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে দুই রাষ্ট্র সমাধানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।
তবে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তীব্র জনরোষের কারণে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আবারও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরায়েলের বাস্তব পদক্ষেপকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টিকে শর্ত হিসেবে সামনে রেখেছেন। দুটি সৌদি ও তিনটি পশ্চিমা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বলেছেন, এটি আরব বিশ্বে ইসরায়েলের বিস্তৃত গ্রহণযোগ্যতার একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হবে। তবে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিনিদের ছাড় দেওয়ার বিষয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের মুখোমুখি তিনি। নেতানিয়াহু জানেন, রাষ্ট্র গঠনের দিকে যেকোনো পদক্ষেপ তাঁর জোট সরকারকে ভেঙে দিতে পারে।
এই অবস্থায় সৌদি আরব ও ইসরায়েল উভয় দেশের শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার। রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের আশা, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে একটি সীমিত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। তবে এই চুক্তি কার্যকর করতে হলে এটিকে মার্কিন সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হবে। আর সৌদি আরব ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দিলে এটি অসম্ভব বলে জানিয়েছে ছয়টি সূত্র।
বর্তমানে যে চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা চলছে তা মূলত ইরানের আঞ্চলিক হুমকি মোকাবিলায় যৌথ সামরিক মহড়া ও অনুশীলন বাড়ানোর বিষয়ে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি প্রতিরক্ষা কোম্পানির মধ্যে অংশীদারত্বকে উৎসাহিত করা হবে এবং চীনের সঙ্গে সহযোগিতা ঠেকানোর জন্য সুরক্ষাব্যবস্থা থাকবে। এই চুক্তি ড্রোন প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তিতে সৌদি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। যুক্তরাষ্ট্র রিয়াদে প্রশিক্ষণ, লজিস্টিকস এবং সাইবার নিরাপত্তা সহায়তা বাড়াবে এবং সম্ভবত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করবে। তবে এটি এমন কোনো বাধ্যতামূলক পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে না, যার ফলে বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশকে বিদেশি হামলার ক্ষেত্রে মার্কিন বাহিনী সুরক্ষা দেবে।
আরব বিশ্বের থিংক ট্যাংক গালফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান আবদেল আজিজ আল-সাঘের বলেন, ‘সৌদি আরব একটি নিরাপত্তা চুক্তি পাবে, যা আরও সামরিক সহযোগিতা এবং মার্কিন অস্ত্র বিক্রয়ের সুযোগ দেবে। তবে এটি জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে না, যেমনাটা সৌদি আরব শুরুতে চেয়েছিল।’
তবে ট্রাম্প আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে আসতে যাওয়ায় পুরো বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বা সার্বভৌমত্বের কোনো উল্লেখ নেই। তবে তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের—যিনি এমবিএস নামেও পরিচিত—ঘনিষ্ঠ মিত্র। ফিলিস্তিনি ও আরব কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, ট্রাম্প ও তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার, যিনি ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরির’ মূল কারিগর এবং যুবরাজের এমবিএসের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তাঁকে (এমবিএসকে) এই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে রাজি করাতে পারেন।
অর্থাৎ, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ছাড়াই সৌদি আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তির বিষয়ে এমবিএসকে রাজি করাতে পারেন। সৌদি আরব এই অবস্থায় দেশটির যেসব বিষয় অগ্রাধিকারমূলক সেগুলোর সঙ্গে এই পরিবর্তিত কূটনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে পরিচালিত করবেন, তা যুবরাজের এমবিএসের নেতৃত্ব এবং শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে মনে করেন কূটনীতিকেরা।
এদিকে, জো বাইডেনের নেতৃত্বে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে চুক্তির আশা পুরোপুরি ছাড়েনি। তবে বেশ কিছু বাধা রয়ে গেছে। এই আলোচনার সঙ্গে জড়িত এ মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তির জন্য পর্যাপ্ত সময় আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানেন যে, সৌদি আরব এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি চায়, বিশেষ করে উন্নত অস্ত্রের প্রাপ্তির জন্য। তবে এটি বাইডেনের অধীনে সম্পন্ন হবে, নাকি দেশটি ট্রাম্পের জন্য অপেক্ষা করবে, তা নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং অনেকগুলো দিক নিয়ে কাজ করছি।’
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয়ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সম্পর্কে সৌদি আরবের অবস্থান নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সৌদি আরবকে সামরিক সুরক্ষা দিতে এবং ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে একটি মার্কিন প্রতিরক্ষা চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিতে পারে। এর ফলে, এই অঞ্চলের দুই ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ দীর্ঘদিন পর একত্র করবে। এবং যখন চীন এই অঞ্চলে নিজের প্রভাব বাড়াচ্ছে, ঠিক তখনই এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শক্তি আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে।
এই সৌদি আরবে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ইরান ও ইয়েমেনের হুতি মিত্রদের হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা করবে। এ ছাড়া, ২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হুতিদের যে হামলা হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সাহায্য করবে এই চুক্তি। এই হামলার জন্য রিয়াদ ও ওয়াশিংটন তেহরানকে দায়ী করেছিল। তেহরান অবশ্য কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
এদিকে, সংক্ষিপ্ত সামরিক চুক্তির বিষয়ে এক শীর্ষ সৌদি কর্মকর্তা বলেছেন, চুক্তির ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে এটি সম্ভব নয় বলে রিয়াদ বিকল্প চুক্তি নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি আকারে ছোট একটি সহযোগিতা চুক্তি হয়, তবে এটি বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই সম্পন্ন হতে পারে বলে দুই সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আরও বাধার সম্মুখীন হয়েছে। যেমন, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। কারণ সৌদি আরব তথাকথিত ১২৩ চুক্তিতে সই করতে অস্বীকার করেছে, যা তাদের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণের অধিকার অস্বীকার করে। মানবাধিকার সম্পর্কিত কিছু ধারা নিয়েও সৌদি আরবের আপত্তি ছিল।
সৌদি আরবের নেতৃত্ব দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নিলেও, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে প্রস্তাবিত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সমাধানের পরিকল্পনা পুনরুজ্জীবিত করলে এমবিএস কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন—তা এখনো অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকেরা। কারণ, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। এটি ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্যে সংহতি প্রকাশ করে এবং ভূমির বিনিময়ে শান্তি—কাঠামো থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।
এই পরিকল্পনা ইসরায়েলকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে থাকা ইসরায়েলি বসতি এবং জর্ডান উপত্যকা তেল আবিবের সঙ্গে সংযুক্ত করার অনুমতি দেয়। এটি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে দাবি করার ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা এবং জাতিসংঘের রেজোলিউশন অনুযায়ী তাদের অধিকার কার্যত অস্বীকার করা হয়।
ইসরায়েলি সংযুক্তিকরণকে বৈধতা দেওয়ায় এই মার্কিন পরিকল্পনা অনেকের কাছে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য একটি বড় ধাক্কা এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশার ওপর গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সৌদি কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
তারা বলেন, এটি ছাড়া সহিংসতার চক্র স্বাভাবিক সম্পর্ককে বারবার বিপন্ন করবে। এক সৌদি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে আমরা কীভাবে একটি সংহত অঞ্চল কল্পনা করতে পারি? ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অস্বীকার করা যাবে না।’
চলতি মাসে রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব ও ইসলামিক বিশ্বের শীর্ষ সম্মেলনে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ। তবে, এরপরও গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এবং সম্ভবত অন্য কোনো ইসরায়েলি সরকারের অধীনে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা পুনরায় আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ফাওয়াজ গারগেস বলেন, ‘সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ট্রাম্প সম্ভাব্য সব পথ ব্যবহার করবেন। ট্রাম্পের জন্য সৌদি আরবই প্রধান লক্ষ্য।’
গারগেস বলেন, ‘যদিও সৌদি নেতারা বারবার বলেছেন যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বাস্তব পথ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবেন না, তবুও ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে সমর্থনের একটি সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারেন, এমনকি ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো বাস্তব ছাড় দিতে বাধ্য না করেই।’
রয়টার্স থেকে অনূদিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ধনকুবের ইলন মাস্কের সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে। সমালোচকেরা বলছেন, বিভিন্ন সংবাদে মাস্ককে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্প এক ঘোষণায় মাস্ককে এমন একটি কমিশনের সহ-প্রধান নিযুক্ত করেছেন, যে কমিশনের কার্যত কোনো ক্ষম
১৭ ঘণ্টা আগেইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
৬ দিন আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
৬ দিন আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৭ দিন আগে