অনলাইন ডেস্ক
লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলা বন্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরেই হুতিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবু এ পথে যাতায়াতকারী জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া বন্ধ করেনি হুতিরা, যেন তারা মার্কিন হুমকিকেই পাত্তাই দিচ্ছিল না। এর মধ্যে গত শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) ভোররাতে ইয়েমেনে হামলা করে বসল যুক্তরাষ্ট্র।
নিছক ভয় দেখানোর জন্য হামলা হয়েছে-এমনটি ভাবা কি যুক্তিসঙ্গত হবে? কারণ ইয়েমেনে দুই দিনে টানা তিনবার হামলা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে কি হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?
এই হামলাকে ‘মার্কিনিদের জন্য হুতিদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া’ হিসেবেও দেখছেন অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রকে বিস্তৃত যুদ্ধে টেনে আনার ফাঁদ।
ইয়েমেনে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেরাল্ড ফিয়ারস্টাইনও তাই মনে করেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ঠিক তাই করেছে, যা হুতিরা চেয়েছে। ফিয়ারস্টাইন বলেন, ‘অবশ্যই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রকে উসকানি দিচ্ছিল। তাঁরা আত্মবিশ্বাসী ছিল, আমরা যে পদক্ষেপই নেই, তারা সেটার বিরুদ্ধে লড়তে পারবে। তারা দেখেছে, তারা অন্যদেরও সমর্থন পায়।’
এই হামলায় যে হুতিরা ভয় পায়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র যে বিস্তৃত যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করেছে, তার প্রমাণও এরই মধ্যে দিয়েছে হুতিরা। লোহিত সাগরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থান নেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
মার্কিন হামলার দুদিনের মাথায় গত রোববার ইউএসএস লাবুন নামে আর্লে বার্ক ক্লাসের ডেস্ট্রয়ারকে লক্ষ্য করে জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বলে মার্কিন সেনা নিয়ন্ত্রণ কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। তবে আঘাত হানার আগেই মার্কিন ফাইটার জেট সেটাকে ধ্বংস করেছে।
গাজায় ইসরায়েলের হামলার জের ধরে কয়েক সপ্তাহ ধরে লোহিত সাগরের পণ্যবাহী জাহাজে হামলা করে আসছিল ইয়েমেনি বিদ্রোহীরা। একাধিকবার হুঁশিয়ারির পর লক্ষ্য করে তাদের উপর গত শুক্রবার পাল্টা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা। এরপর পাল্টায় প্রথম আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করল মার্কিন বাহিনী।
প্রায় এক দশক ধরেই ইয়েমেনের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে হুতিরা। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে হুতি বিদ্রোহীরা। গাজায় হামলা বন্ধ না করলে লোহিত সাগর হয়ে ইসরায়েল অভিমুখী যেকোনো জাহাজে তারা হামলা চালাবে বলে গত নভেম্বরে ঘোষণা দেয় গোষ্ঠীটি। তারপর থেকে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে এই গোষ্ঠী।
হুতিদের হামলার ভয়ে ওই রুটে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অনেক দেশই বিকল্প পথ খোঁজা শুরু করে। নিরাপত্তার অভাবে বিশ্বের শীর্ষ নৌপরিবহন কোম্পানিগুলো এ পথ এড়ানো শুরু করে।
এসব দেশকে আশ্বস্ত করতে লোহিত সাগরের ওই পথে যৌথবাহিনী মোতায়েন করে করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ। এরপরও ইসরায়েল অভিমুখী জাহাজ সন্দেহে হামলা বন্ধ করেনি হুতি বিদ্রোহীরা।
গত শুক্রবার ভোর রাতে হুতিদের দমনে ইয়েমেনের বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা করেছে ইঙ্গ–মার্কিন জোটখ্যাত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। রাজধানী সানার পাশাপাশি সাদা, দামার শহর এবং হোদেইদাহ গভর্নরেটে হামলা চালিয়েছে মার্কিন–ইসরায়েল–ব্রিটিশ চক্র।
হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, প্রয়োজনে আরও হামলা চালানো হবে। ঠিক তাই করেন বাইডেন।
শুক্রবারের পর শনিবার ভোররাতেও ইয়েমেনে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মূলত হুতিদের একটি রাডার সাইটকে লক্ষ্য করে এই হামলা হয়। এরপর ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হুদায়দা বন্দরে তৃতীয় দফায় হামলা করে মার্কিন সেনারা। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট বাঁধলেও পরের হামলাগুলোতে অংশ নেয়নি যুক্তরাজ্য।
ইঙ্গ–মার্কিন জোটের প্রথম হামলার পরই হুতিদের আল–মাসিরাহ টিভিতে সম্প্রচারিত এক ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, রাজধানী সানায় লাখো মানুষ ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে তিরস্কার করে স্লোগান দিচ্ছে। ইয়েমেনের অন্য শহরেও সমবেত হয় হাজার হাজার মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুতিদের এ আত্মবিশ্বাসের প্রধান উৎস হলো-তাঁরা বহু বছর ধরে সৌদি আরবের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বজায় রাখতে পেরেছে। তবে, মার্কিন নেতৃত্বে হামলা একইভাবে ঠেকানো হয়তো সহজ হবে না।
গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে যৌথ বাহিনীর পরিচালক ও মার্কিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডগলাস সিমস সাংবাদিকদের বলেন, হামলায় ইয়েমেনের ২৮টি স্থানে ১৫০ টিরও বেশি গোলাবারুদ দিয়ে আঘাত হানা হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি দেখে মনে হচ্ছে, হুতিরা এ ধরনের ধ্বংসলীলা আশা করেনি।
সিমস বলেন, ‘আমার ধারণা এর আগের রাতে যদি আপনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা পরিচালনায় ব্যস্ত থাকেন তবে অবশ্যই আপনি এ মুহূর্তে হামলা আশা করছেন না। আমি আশা করছি তারা চায়নি, আমরা হামলা করি।’
আল–হুতির নেতৃত্বে ইরানের মদদপুষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিতে ২০ হাজারের মতো সেনা আছে। হুতিদের বিশাল অস্ত্রাগারে রয়েছে সশস্ত্র ড্রোন আর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এর বেশিরভাগই সরবরাহ করেছে ইরান।
প্রথম হামলার পর সিমস ও অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন হুতিরা এর প্রতিশোধ বেশ ভালোভাবেই নেবে। শুক্রবারই লোহিত সাগরে জাহাজকে লক্ষ্য করে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে হুতি গোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার উপযুক্ত জবাব দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এ গোষ্ঠী।
এ সংঘাতের জেরে গত শুক্রবারই অশোধিত তেলের দাম এক শতাংশ বেড়ে যায়। বাণিজ্যিক জাহাজ ট্র্যাক করার ডেটা অনুসারে, অন্তত ৯টি তেলের ট্যাংকার লোহিত সাগরের পথটি এড়িয়ে গেছে।
ইয়েমেনে দায়িত্বহীন হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। এমনকি এ হামলাকে কেন্দ্র করে দেশটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকেরও আহ্বান জানায়। নিরাপত্তা পরিষদে ইয়েমেন হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সাফাই দিলেও বেশির ভাগ দেশই এর নিন্দা জানিয়েছে। চীন ও রাশিয়ার মতে, দুটি দেশ মিলে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে ইরান ও তুরস্ক। এর প্রভাব সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, এসব হামলা চালিয়ে লোহিত সাগরকে রক্তের সাগরে পরিণত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য়।
হুতিদের ওপর মার্কিন হামলার সঙ্গে জো বাইডেনের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক সংঘাত কমানোর ঘোষণাকে মেলাতে পারছেন না বিশ্লেষকরা। গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে যতটুকু প্রভাব ফেলেছে, তাতে যুদ্ধ বন্ধের কথা সবাই বলেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে ইয়েমেনে হামলা আঞ্চলিক সংঘাত বিস্তৃত রূপ নিতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সিইও পল সালেম এই হামলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ২০২৪ সাল নাগাদ গাজায় সংঘাত কমানোর আশা প্রকাশ করে আসছিল বাইডেন প্রশাসনের। যদিও বাস্তবে তা সম্ভব কিনা তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন। কারণ কয়েক মাস ধরে গাজায় বড় ধরনের অভিযান চলছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে লেবানন এবং ইরানের হয়ে মিত্ররাও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমতাবস্থায় ইয়েমেনে হুতিদের ওপর হামলায় সংঘাত কমানোর ক্ষীণ আশাও ফিকে হবে।
সব দেশের আশঙ্কা একটাই-এ হামলার রেশ এখানেই শেষ হবে না, এটি ছড়িয়ে পড়বে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে। ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। এই যুদ্ধে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় দাতার ভূমিকা পালন করে বাইডেন এমনিই প্রশ্নের মুখে আছে।
এর মধ্যে গাজা–ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বিশ্ব আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট হওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব ব্যাপক। এমন সময়ে ইসরায়েল আবার লেবাননে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়ছে। এ সংঘর্ষ যে কোনো মুহূর্তে বড় আকারে রূপ নিতে পারে।
যেসব জায়গায় কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে সমাধানের চেষ্টা করা যেত, সেসব জায়গায় অস্ত্রের আশ্রয় নিতেই যেন মুখিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। সে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে বিস্তৃত যুদ্ধে টেনে আনার ফাঁদই যেন পেতেছে হুতিরা। আর তাতে অসাবধানে পা দেওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টানার সুযোগ নেই।
কেন যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের ওপর হামলা চালাল। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট গোপন কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা তার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে একের পর এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সংঘাত কমাবে সেটাই বড় প্রশ্ন।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও মিডল ইস্ট ইন্সটিটিউট
লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হামলা বন্ধে কয়েক সপ্তাহ ধরেই হুতিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবু এ পথে যাতায়াতকারী জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া বন্ধ করেনি হুতিরা, যেন তারা মার্কিন হুমকিকেই পাত্তাই দিচ্ছিল না। এর মধ্যে গত শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) ভোররাতে ইয়েমেনে হামলা করে বসল যুক্তরাষ্ট্র।
নিছক ভয় দেখানোর জন্য হামলা হয়েছে-এমনটি ভাবা কি যুক্তিসঙ্গত হবে? কারণ ইয়েমেনে দুই দিনে টানা তিনবার হামলা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে কি হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?
এই হামলাকে ‘মার্কিনিদের জন্য হুতিদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া’ হিসেবেও দেখছেন অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রকে বিস্তৃত যুদ্ধে টেনে আনার ফাঁদ।
ইয়েমেনে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেরাল্ড ফিয়ারস্টাইনও তাই মনে করেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ঠিক তাই করেছে, যা হুতিরা চেয়েছে। ফিয়ারস্টাইন বলেন, ‘অবশ্যই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রকে উসকানি দিচ্ছিল। তাঁরা আত্মবিশ্বাসী ছিল, আমরা যে পদক্ষেপই নেই, তারা সেটার বিরুদ্ধে লড়তে পারবে। তারা দেখেছে, তারা অন্যদেরও সমর্থন পায়।’
এই হামলায় যে হুতিরা ভয় পায়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র যে বিস্তৃত যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করেছে, তার প্রমাণও এরই মধ্যে দিয়েছে হুতিরা। লোহিত সাগরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থান নেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
মার্কিন হামলার দুদিনের মাথায় গত রোববার ইউএসএস লাবুন নামে আর্লে বার্ক ক্লাসের ডেস্ট্রয়ারকে লক্ষ্য করে জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বলে মার্কিন সেনা নিয়ন্ত্রণ কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। তবে আঘাত হানার আগেই মার্কিন ফাইটার জেট সেটাকে ধ্বংস করেছে।
গাজায় ইসরায়েলের হামলার জের ধরে কয়েক সপ্তাহ ধরে লোহিত সাগরের পণ্যবাহী জাহাজে হামলা করে আসছিল ইয়েমেনি বিদ্রোহীরা। একাধিকবার হুঁশিয়ারির পর লক্ষ্য করে তাদের উপর গত শুক্রবার পাল্টা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা। এরপর পাল্টায় প্রথম আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করল মার্কিন বাহিনী।
প্রায় এক দশক ধরেই ইয়েমেনের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে হুতিরা। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে হুতি বিদ্রোহীরা। গাজায় হামলা বন্ধ না করলে লোহিত সাগর হয়ে ইসরায়েল অভিমুখী যেকোনো জাহাজে তারা হামলা চালাবে বলে গত নভেম্বরে ঘোষণা দেয় গোষ্ঠীটি। তারপর থেকে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে এই গোষ্ঠী।
হুতিদের হামলার ভয়ে ওই রুটে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অনেক দেশই বিকল্প পথ খোঁজা শুরু করে। নিরাপত্তার অভাবে বিশ্বের শীর্ষ নৌপরিবহন কোম্পানিগুলো এ পথ এড়ানো শুরু করে।
এসব দেশকে আশ্বস্ত করতে লোহিত সাগরের ওই পথে যৌথবাহিনী মোতায়েন করে করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ। এরপরও ইসরায়েল অভিমুখী জাহাজ সন্দেহে হামলা বন্ধ করেনি হুতি বিদ্রোহীরা।
গত শুক্রবার ভোর রাতে হুতিদের দমনে ইয়েমেনের বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা করেছে ইঙ্গ–মার্কিন জোটখ্যাত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। রাজধানী সানার পাশাপাশি সাদা, দামার শহর এবং হোদেইদাহ গভর্নরেটে হামলা চালিয়েছে মার্কিন–ইসরায়েল–ব্রিটিশ চক্র।
হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, প্রয়োজনে আরও হামলা চালানো হবে। ঠিক তাই করেন বাইডেন।
শুক্রবারের পর শনিবার ভোররাতেও ইয়েমেনে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মূলত হুতিদের একটি রাডার সাইটকে লক্ষ্য করে এই হামলা হয়। এরপর ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হুদায়দা বন্দরে তৃতীয় দফায় হামলা করে মার্কিন সেনারা। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট বাঁধলেও পরের হামলাগুলোতে অংশ নেয়নি যুক্তরাজ্য।
ইঙ্গ–মার্কিন জোটের প্রথম হামলার পরই হুতিদের আল–মাসিরাহ টিভিতে সম্প্রচারিত এক ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, রাজধানী সানায় লাখো মানুষ ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে তিরস্কার করে স্লোগান দিচ্ছে। ইয়েমেনের অন্য শহরেও সমবেত হয় হাজার হাজার মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুতিদের এ আত্মবিশ্বাসের প্রধান উৎস হলো-তাঁরা বহু বছর ধরে সৌদি আরবের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বজায় রাখতে পেরেছে। তবে, মার্কিন নেতৃত্বে হামলা একইভাবে ঠেকানো হয়তো সহজ হবে না।
গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে যৌথ বাহিনীর পরিচালক ও মার্কিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডগলাস সিমস সাংবাদিকদের বলেন, হামলায় ইয়েমেনের ২৮টি স্থানে ১৫০ টিরও বেশি গোলাবারুদ দিয়ে আঘাত হানা হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি দেখে মনে হচ্ছে, হুতিরা এ ধরনের ধ্বংসলীলা আশা করেনি।
সিমস বলেন, ‘আমার ধারণা এর আগের রাতে যদি আপনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা পরিচালনায় ব্যস্ত থাকেন তবে অবশ্যই আপনি এ মুহূর্তে হামলা আশা করছেন না। আমি আশা করছি তারা চায়নি, আমরা হামলা করি।’
আল–হুতির নেতৃত্বে ইরানের মদদপুষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিতে ২০ হাজারের মতো সেনা আছে। হুতিদের বিশাল অস্ত্রাগারে রয়েছে সশস্ত্র ড্রোন আর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এর বেশিরভাগই সরবরাহ করেছে ইরান।
প্রথম হামলার পর সিমস ও অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন হুতিরা এর প্রতিশোধ বেশ ভালোভাবেই নেবে। শুক্রবারই লোহিত সাগরে জাহাজকে লক্ষ্য করে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে হুতি গোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার উপযুক্ত জবাব দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এ গোষ্ঠী।
এ সংঘাতের জেরে গত শুক্রবারই অশোধিত তেলের দাম এক শতাংশ বেড়ে যায়। বাণিজ্যিক জাহাজ ট্র্যাক করার ডেটা অনুসারে, অন্তত ৯টি তেলের ট্যাংকার লোহিত সাগরের পথটি এড়িয়ে গেছে।
ইয়েমেনে দায়িত্বহীন হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। এমনকি এ হামলাকে কেন্দ্র করে দেশটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকেরও আহ্বান জানায়। নিরাপত্তা পরিষদে ইয়েমেন হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সাফাই দিলেও বেশির ভাগ দেশই এর নিন্দা জানিয়েছে। চীন ও রাশিয়ার মতে, দুটি দেশ মিলে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে ইরান ও তুরস্ক। এর প্রভাব সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, এসব হামলা চালিয়ে লোহিত সাগরকে রক্তের সাগরে পরিণত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য়।
হুতিদের ওপর মার্কিন হামলার সঙ্গে জো বাইডেনের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক সংঘাত কমানোর ঘোষণাকে মেলাতে পারছেন না বিশ্লেষকরা। গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে যতটুকু প্রভাব ফেলেছে, তাতে যুদ্ধ বন্ধের কথা সবাই বলেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে ইয়েমেনে হামলা আঞ্চলিক সংঘাত বিস্তৃত রূপ নিতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সিইও পল সালেম এই হামলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ২০২৪ সাল নাগাদ গাজায় সংঘাত কমানোর আশা প্রকাশ করে আসছিল বাইডেন প্রশাসনের। যদিও বাস্তবে তা সম্ভব কিনা তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন। কারণ কয়েক মাস ধরে গাজায় বড় ধরনের অভিযান চলছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে লেবানন এবং ইরানের হয়ে মিত্ররাও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমতাবস্থায় ইয়েমেনে হুতিদের ওপর হামলায় সংঘাত কমানোর ক্ষীণ আশাও ফিকে হবে।
সব দেশের আশঙ্কা একটাই-এ হামলার রেশ এখানেই শেষ হবে না, এটি ছড়িয়ে পড়বে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে। ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। এই যুদ্ধে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় দাতার ভূমিকা পালন করে বাইডেন এমনিই প্রশ্নের মুখে আছে।
এর মধ্যে গাজা–ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বিশ্ব আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট হওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব ব্যাপক। এমন সময়ে ইসরায়েল আবার লেবাননে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়ছে। এ সংঘর্ষ যে কোনো মুহূর্তে বড় আকারে রূপ নিতে পারে।
যেসব জায়গায় কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে সমাধানের চেষ্টা করা যেত, সেসব জায়গায় অস্ত্রের আশ্রয় নিতেই যেন মুখিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। সে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে বিস্তৃত যুদ্ধে টেনে আনার ফাঁদই যেন পেতেছে হুতিরা। আর তাতে অসাবধানে পা দেওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টানার সুযোগ নেই।
কেন যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের ওপর হামলা চালাল। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট গোপন কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা তার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে একের পর এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সংঘাত কমাবে সেটাই বড় প্রশ্ন।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও মিডল ইস্ট ইন্সটিটিউট
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৫ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১৩ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে