কাং বিয়োং ইউং
[১৬ সেপ্টেম্বর আইওয়া সিটি লাইব্রেরির মেইন গ্যালারিতে একটি প্যানেল আলোচনা হবে, বিষয় সাহিত্যিকদের পেশাজীবিতা। মানে, সৃজনশীল লেখালেখি যখন পেশায় পরিণত হয়, তখন সাহিত্যিকদের কী অবস্থা হয়। ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম ২০২২-এর ফল সেশনে অংশগ্রহণকারী ৩১টি দেশের ৩২ জন কবি, কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকারের মধ্যে তিনজন থাকবেন আলোচক বা বক্তা; অন্যরা থাকবেন শ্রোতার আসনে। শ্রোতাদের মধ্যে আরও থাকবেন আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, কয়েকজন শিক্ষক এবং সাহিত্যানুরাগী সাধারণ মানুষ। আলোচকদের বক্তব্য শেষ হলে শ্রোতারা প্রশ্ন করবেন, আলোচকরা জবাব দেবেন।
তিন আলোচকের একজন কোরিয়ান কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্যের অধ্যাপক কাং বিয়োং ইউং। তিনি স্লোভেনিয়ার লুবলিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান সাহিত্য পড়ান, সেই সুবাদে স্ত্রী-কন্যাসহ লুবলিয়ানা শহরে বাস করেন। ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে জন্মগ্রহণকারী কাং বিয়োং ইউং কোরিয়ায় ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে প্রথমে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তারপর কোরিয়ান সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন এবং তারপর রাশিয়া গিয়ে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে রুশ সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন পাঁচ বছর ধরে; রুশ ভাষা তিনি বেশ ভালো জানেন।
স্লোভেনিয়ার লুবলিয়ানা থেকে কাং আর বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া সিটিতে পৌঁছি একই দিনে (২২ আগস্ট ২০২২); ঘটনাক্রমে বিমানবন্দরের ভেতরেই আমাদের দেখা হয়ে যায় এবং ইংরেজিতে সম্ভাষণ ও কুশলবিনিময়ের পরই আমাদের কথা বলা শুরু হয় রুশ ভাষায়। তারপর পরস্পরকে জানতে-বুঝতে এবং বন্ধুত্ব দানা বাঁধতে বেশি সময় লাগে না। ১৬ সেপ্টেম্বরের প্যানেল আলোচনায় তিনি কী বলবেন, এ নিয়ে মহাচিন্তায় পড়ে গেছেন, এরকম কথা তিনি আমাকে বলতে শুরু করেন দশ-বারো দিন আগে থেকে। আলোচনার দিন যতই কাছে আসে ততই তাঁর মুশকিল বাড়তে থাকে।
আলোচনার বিষয়বস্তু তাঁর ঠিক পছন্দ হয়নি (যদিও তিনি নিজেই বিষয়টি বেছে নিয়েছেন এখানে আসার মাসখানেক আগে), এ বিষয়ে কী বলা যায় তা ভেবেও পাচ্ছিলেন না, কারণ তাঁর পেশা সাহিত্য লেখা নয়, অধ্যাপনা করা। অর্থাৎ সৃজনশীল লেখালেখির প্রফেশনালাইজেশন তাঁর নিজের সমস্যা নয়, এ বিষয়ে তিনি যা-ই বলেন না কেন, তা হবে তাত্ত্বিক কথাবার্তা; কিন্তু অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও তত্ত্বের ব্যাপারে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই।
আমাকে এসব কথা বলে বলে তিনি দিন পার করতে থাকলেন। তারপর প্যানেল আলোচনার দিন ইংরেজিতে লেখা যে জিনিস নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হলেন এবং পড়ে শোনালেন, সেটা আমি বাংলায় অনুবাদ করলাম।]
২০০৩ সালে আমি আমার বরকে বিয়ে করি। পরিচয়ের সময় সে আমাকে বলেছিল সে একজন ঔপন্যাসিক; কিন্তু আমার বিশ্বাস হয়নি। আমি তাকে বলি যে সে উপন্যাস লেখে ঠিক আছে, কিন্তু সে সেই অর্থে ঔপন্যাসিক নয়, কারণ তাঁর কোনো প্রকাশিত উপন্যাস নেই। আমি এই কথা বলার পর সে বদলে যায়। ৩৪ দিন ধরে প্রতি রাতে ডিনারের পর ৯:২৭ থেকে ১২:০৬ মিনিট পর্যন্ত সে নিজের ঘরে কী যেন লেখে (দুই দিন পরপর সে আমার সঙ্গে সঙ্গম করারও চেষ্টা চালায়। আমাদের সঙ্গম চলে সাধারণত ১২:২৭ থেকে ১২:৩১ মিনিট পর্যন্ত)।
২০০৫ সালে আমার বরের প্রথম উপন্যাস বের হয়। সে উপন্যাসে ১৭টি অধ্যায় ছিল; ৩৪ দিন ধরে সে প্রতি দুই দিনে একটা করে অধ্যায় লিখেছিল। বইটার নাম কল্পনাপ্রসূত লোকজনের কাহিনি (টেলস অব ইমাজিনারি পিপল)। আর ২০০৬ সালে ছাপা হয় তার পর্নোগ্রাফিক ছোটগল্পের একটি সংকলন। সে বলে যে বইটা আমাদের যৌনজীবন নিয়ে; কিন্তু আমি বলব বইটা এত নোংরা আর এতই উরাধুরা যে সেটা আমাদের যৌনজীবনের গল্প হতেই পারে না। এই বইয়ের নাম অফুরন্ত (ইনএগজোটেবল)।
২০১২ সালে আমার বর একটা গল্প লেখে এক কোরিয়ান মধ্যবয়সী দুঃখী চাচাকে নিয়ে, যাকে তার বউ কয়েদ করে রেখেছে। কিন্তু তার সম্পাদক বলে যে গল্পটার সুর ‘মজার-কিন্তু-সত্যি সত্যি-মজার’ নয়; তাই সেটাকে বই করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে আমি চাচ্ছিলাম আমার বর একটা বাস্তবধর্মী গল্প লিখুক। তাই ইচ্ছে না থাকলেও তাকে আমার আটকে রাখতে হয়। আমি তাকে একটা গোসিওনে আটকে রাখি তিন মাস। গোসিওন হলো খুব একটা ছোট্ট ঘর, কোরিয়ার ছাত্রছাত্রীরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এ রকম ঘরে থাকে। তো আমি আমার হাজবেন্ডকে যে গোসিওনে আটকে রাখলাম, সেটার আয়তন ছিল প্রায় ৩.৫ বর্গমিটার (৩৭ বর্গফুট)। এটা একটা গড়পড়তা আমেরিকান বাথরুমের সমান। আমার বর ১০০ দিন ধরে সেই গোসিওনে ছিল, একবারও বাড়ি আসেনি। ওল্ডবয় নামের কোরিয়ান ফিল্মের মূল চরিত্র ওহ ডায়ে-সু প্রাইভেট জেলে যেভাবে শুধু চায়নিজ ডাম্পলিং খেয়ে বেঁচে ছিল, আমার হাজবেন্ডও তার গোসিওনে ঠিক সে রকম শুধু চায়নিজ খাবার জাজাংমিয়োন খেয়ে থাকত। সেখানে সে যে বইটা লিখেছে, সেটার নাম মিস্টার ওয়াইয়ের অণ্ডকোষ অপসারণ সম্পর্কে সংগৃহীত নথিপত্র (অ্যাসোরটেড রেকর্ডস অব দ্য ক্যাস্ট্রেশন অব মিস্টার ওয়াই)।
২০১৩ সালে আমার বর কোনো বই পড়েনি, শুধু সংবাদপত্র পড়েছে, নিবন্ধ ইত্যাদি পড়েছে আর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের নামে খিস্তি করেছে; সেই প্রেসিডেন্টের ডাকনাম ছিল ‘মিস্তার র্যাত’। আমি তাকে এসব করতে মানা করি, বলি যে একটা উপন্যাস লেখো, যেটা ঔপন্যাসিকের কাজ। সে বলে যে সে প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করে একটা উপন্যাস লিখবে; কিন্তু যে উপন্যাসটা লিখেছে, সেটার একটা বাক্যও নিজে লেখেনি। সেই উপন্যাসের প্রত্যেকটা বাক্য সে নিয়েছে বা কপি করেছে বিভিন্ন সংবাদপত্রের আর্টিকেল থেকে। সে বলে তার উপন্যাসটা হলো কম্পিউটারের মাউস দিয়ে লেখা একটা ফিকশন, কোনো কি-বোর্ড ব্যবহার করেনি। এই বইটার নাম হলো, আপনারা জানেন এগুলো সব মিছা কথা, ঠিক আছে? (ইউ নো দিজ অল আর লাইজ, রাইট?) বইটার প্রচ্ছদে ছিল প্রেসিডেন্টের মতো দেখতে একটা ইঁদুরের ছবি।
২০১৮ সালে আমার বর আমাকে বলে যে তাকে যদি মাত্র একটা সপ্তাহ সময় দেওয়া হতো, তাহলে সে একটা উপন্যাস লিখে ফেলত। আমি বলি, চেষ্টা করে দ্যাখো। সে গিয়ে তার ডিপার্টমেন্টের অফিসারকে বলে তার পেটব্যথা; এ কথা বলে সে এক সপ্তাহ কাজে গেল না (অবাক কথা হলো, তার পেশা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা)। কাজে না গিয়ে সে গিয়ে ঢুকল একটা ঘরে, তারপর ভেতর থেকে দরজা লক করে দিল। সেখানে একমাত্র যে কাজটা সে করত তা হলো উপন্যাস লেখা। সত্যি বলতে, আমি জানি না পুরো একটা সপ্তাহ ধরে সে কী খেয়ে ছিল, কোথায় প্রস্রাব-পায়খানা করেছিল। এক সপ্তাহ পর সে কথামতো বেরিয়ে এল একটা উপন্যাস হাতে নিয়ে, আর ঘরের ভেতরটায় রইল আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধ। সে এই বইটার নাম দিয়েছে আমার চুলকানিপ্রবণ মধ্যমা (মাই ইচি মিডলফিংগার)।
২০২২ সালে আমার বর ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামের (আইডব্লিউপি) হ্যাট মাথায় পরে আমাকে বলে যে সে আইওয়া সিটি লাইব্রেরিতে ‘পেশাজীবিতার ভূত’ (স্পেকটর অব প্রফেশনালাইজেশন) নিয়ে বক্তৃতা দেবে। এ কথা শুনে, সত্যি বলছি, আমি চিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু সে বলে চিন্তার কিছু নাই। কারণ, সে মনে করে সে একটা ডিলিজেন্ট জিনিয়াস, মানে, শিল্পদেবী তাকে চুমু দিয়েছে। কিন্তু আমি হানড্রেড পারসেন্ট নিশ্চিত যে সে একটা অলস, একটা মাথামোটা নির্বোধ। ‘শিল্পীর পেশাজীবিতা’ কী জিনিস তা কোনোভাবেই তার জানার কথা নয়।
তার সম্পর্কে আমি যেটুকু জানি, সে নিছকই একজন লেখক, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসে। সাহিত্যে পৌঁছতে নিজের রাস্তাটা খুঁজে পাওয়ার জন্য সে কখনো এটা-সেটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, কখনো নিজেই পরীক্ষার বিষয়বস্তু হয়। সে একটা ডানপিটে, যে সাহিত্য ভালোবাসে।
কিন্তু সত্যি বলছি, তার ‘সাহিত্য’ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমি তাকে এ জন্য বিয়ে করিনি যে সে একজন ভালো লেখক। বিয়ে করেছিলাম সে দেখতে হ্যান্ডসাম ছিল বলে।
মূল: কাং বিয়োং ইউং
ভূমিকা ও অনুবাদ: মশিউল আলম
[১৬ সেপ্টেম্বর আইওয়া সিটি লাইব্রেরির মেইন গ্যালারিতে একটি প্যানেল আলোচনা হবে, বিষয় সাহিত্যিকদের পেশাজীবিতা। মানে, সৃজনশীল লেখালেখি যখন পেশায় পরিণত হয়, তখন সাহিত্যিকদের কী অবস্থা হয়। ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম ২০২২-এর ফল সেশনে অংশগ্রহণকারী ৩১টি দেশের ৩২ জন কবি, কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকারের মধ্যে তিনজন থাকবেন আলোচক বা বক্তা; অন্যরা থাকবেন শ্রোতার আসনে। শ্রোতাদের মধ্যে আরও থাকবেন আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, কয়েকজন শিক্ষক এবং সাহিত্যানুরাগী সাধারণ মানুষ। আলোচকদের বক্তব্য শেষ হলে শ্রোতারা প্রশ্ন করবেন, আলোচকরা জবাব দেবেন।
তিন আলোচকের একজন কোরিয়ান কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্যের অধ্যাপক কাং বিয়োং ইউং। তিনি স্লোভেনিয়ার লুবলিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান সাহিত্য পড়ান, সেই সুবাদে স্ত্রী-কন্যাসহ লুবলিয়ানা শহরে বাস করেন। ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে জন্মগ্রহণকারী কাং বিয়োং ইউং কোরিয়ায় ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে প্রথমে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তারপর কোরিয়ান সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন এবং তারপর রাশিয়া গিয়ে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে রুশ সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন পাঁচ বছর ধরে; রুশ ভাষা তিনি বেশ ভালো জানেন।
স্লোভেনিয়ার লুবলিয়ানা থেকে কাং আর বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া সিটিতে পৌঁছি একই দিনে (২২ আগস্ট ২০২২); ঘটনাক্রমে বিমানবন্দরের ভেতরেই আমাদের দেখা হয়ে যায় এবং ইংরেজিতে সম্ভাষণ ও কুশলবিনিময়ের পরই আমাদের কথা বলা শুরু হয় রুশ ভাষায়। তারপর পরস্পরকে জানতে-বুঝতে এবং বন্ধুত্ব দানা বাঁধতে বেশি সময় লাগে না। ১৬ সেপ্টেম্বরের প্যানেল আলোচনায় তিনি কী বলবেন, এ নিয়ে মহাচিন্তায় পড়ে গেছেন, এরকম কথা তিনি আমাকে বলতে শুরু করেন দশ-বারো দিন আগে থেকে। আলোচনার দিন যতই কাছে আসে ততই তাঁর মুশকিল বাড়তে থাকে।
আলোচনার বিষয়বস্তু তাঁর ঠিক পছন্দ হয়নি (যদিও তিনি নিজেই বিষয়টি বেছে নিয়েছেন এখানে আসার মাসখানেক আগে), এ বিষয়ে কী বলা যায় তা ভেবেও পাচ্ছিলেন না, কারণ তাঁর পেশা সাহিত্য লেখা নয়, অধ্যাপনা করা। অর্থাৎ সৃজনশীল লেখালেখির প্রফেশনালাইজেশন তাঁর নিজের সমস্যা নয়, এ বিষয়ে তিনি যা-ই বলেন না কেন, তা হবে তাত্ত্বিক কথাবার্তা; কিন্তু অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও তত্ত্বের ব্যাপারে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই।
আমাকে এসব কথা বলে বলে তিনি দিন পার করতে থাকলেন। তারপর প্যানেল আলোচনার দিন ইংরেজিতে লেখা যে জিনিস নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হলেন এবং পড়ে শোনালেন, সেটা আমি বাংলায় অনুবাদ করলাম।]
২০০৩ সালে আমি আমার বরকে বিয়ে করি। পরিচয়ের সময় সে আমাকে বলেছিল সে একজন ঔপন্যাসিক; কিন্তু আমার বিশ্বাস হয়নি। আমি তাকে বলি যে সে উপন্যাস লেখে ঠিক আছে, কিন্তু সে সেই অর্থে ঔপন্যাসিক নয়, কারণ তাঁর কোনো প্রকাশিত উপন্যাস নেই। আমি এই কথা বলার পর সে বদলে যায়। ৩৪ দিন ধরে প্রতি রাতে ডিনারের পর ৯:২৭ থেকে ১২:০৬ মিনিট পর্যন্ত সে নিজের ঘরে কী যেন লেখে (দুই দিন পরপর সে আমার সঙ্গে সঙ্গম করারও চেষ্টা চালায়। আমাদের সঙ্গম চলে সাধারণত ১২:২৭ থেকে ১২:৩১ মিনিট পর্যন্ত)।
২০০৫ সালে আমার বরের প্রথম উপন্যাস বের হয়। সে উপন্যাসে ১৭টি অধ্যায় ছিল; ৩৪ দিন ধরে সে প্রতি দুই দিনে একটা করে অধ্যায় লিখেছিল। বইটার নাম কল্পনাপ্রসূত লোকজনের কাহিনি (টেলস অব ইমাজিনারি পিপল)। আর ২০০৬ সালে ছাপা হয় তার পর্নোগ্রাফিক ছোটগল্পের একটি সংকলন। সে বলে যে বইটা আমাদের যৌনজীবন নিয়ে; কিন্তু আমি বলব বইটা এত নোংরা আর এতই উরাধুরা যে সেটা আমাদের যৌনজীবনের গল্প হতেই পারে না। এই বইয়ের নাম অফুরন্ত (ইনএগজোটেবল)।
২০১২ সালে আমার বর একটা গল্প লেখে এক কোরিয়ান মধ্যবয়সী দুঃখী চাচাকে নিয়ে, যাকে তার বউ কয়েদ করে রেখেছে। কিন্তু তার সম্পাদক বলে যে গল্পটার সুর ‘মজার-কিন্তু-সত্যি সত্যি-মজার’ নয়; তাই সেটাকে বই করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে আমি চাচ্ছিলাম আমার বর একটা বাস্তবধর্মী গল্প লিখুক। তাই ইচ্ছে না থাকলেও তাকে আমার আটকে রাখতে হয়। আমি তাকে একটা গোসিওনে আটকে রাখি তিন মাস। গোসিওন হলো খুব একটা ছোট্ট ঘর, কোরিয়ার ছাত্রছাত্রীরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এ রকম ঘরে থাকে। তো আমি আমার হাজবেন্ডকে যে গোসিওনে আটকে রাখলাম, সেটার আয়তন ছিল প্রায় ৩.৫ বর্গমিটার (৩৭ বর্গফুট)। এটা একটা গড়পড়তা আমেরিকান বাথরুমের সমান। আমার বর ১০০ দিন ধরে সেই গোসিওনে ছিল, একবারও বাড়ি আসেনি। ওল্ডবয় নামের কোরিয়ান ফিল্মের মূল চরিত্র ওহ ডায়ে-সু প্রাইভেট জেলে যেভাবে শুধু চায়নিজ ডাম্পলিং খেয়ে বেঁচে ছিল, আমার হাজবেন্ডও তার গোসিওনে ঠিক সে রকম শুধু চায়নিজ খাবার জাজাংমিয়োন খেয়ে থাকত। সেখানে সে যে বইটা লিখেছে, সেটার নাম মিস্টার ওয়াইয়ের অণ্ডকোষ অপসারণ সম্পর্কে সংগৃহীত নথিপত্র (অ্যাসোরটেড রেকর্ডস অব দ্য ক্যাস্ট্রেশন অব মিস্টার ওয়াই)।
২০১৩ সালে আমার বর কোনো বই পড়েনি, শুধু সংবাদপত্র পড়েছে, নিবন্ধ ইত্যাদি পড়েছে আর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের নামে খিস্তি করেছে; সেই প্রেসিডেন্টের ডাকনাম ছিল ‘মিস্তার র্যাত’। আমি তাকে এসব করতে মানা করি, বলি যে একটা উপন্যাস লেখো, যেটা ঔপন্যাসিকের কাজ। সে বলে যে সে প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করে একটা উপন্যাস লিখবে; কিন্তু যে উপন্যাসটা লিখেছে, সেটার একটা বাক্যও নিজে লেখেনি। সেই উপন্যাসের প্রত্যেকটা বাক্য সে নিয়েছে বা কপি করেছে বিভিন্ন সংবাদপত্রের আর্টিকেল থেকে। সে বলে তার উপন্যাসটা হলো কম্পিউটারের মাউস দিয়ে লেখা একটা ফিকশন, কোনো কি-বোর্ড ব্যবহার করেনি। এই বইটার নাম হলো, আপনারা জানেন এগুলো সব মিছা কথা, ঠিক আছে? (ইউ নো দিজ অল আর লাইজ, রাইট?) বইটার প্রচ্ছদে ছিল প্রেসিডেন্টের মতো দেখতে একটা ইঁদুরের ছবি।
২০১৮ সালে আমার বর আমাকে বলে যে তাকে যদি মাত্র একটা সপ্তাহ সময় দেওয়া হতো, তাহলে সে একটা উপন্যাস লিখে ফেলত। আমি বলি, চেষ্টা করে দ্যাখো। সে গিয়ে তার ডিপার্টমেন্টের অফিসারকে বলে তার পেটব্যথা; এ কথা বলে সে এক সপ্তাহ কাজে গেল না (অবাক কথা হলো, তার পেশা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা)। কাজে না গিয়ে সে গিয়ে ঢুকল একটা ঘরে, তারপর ভেতর থেকে দরজা লক করে দিল। সেখানে একমাত্র যে কাজটা সে করত তা হলো উপন্যাস লেখা। সত্যি বলতে, আমি জানি না পুরো একটা সপ্তাহ ধরে সে কী খেয়ে ছিল, কোথায় প্রস্রাব-পায়খানা করেছিল। এক সপ্তাহ পর সে কথামতো বেরিয়ে এল একটা উপন্যাস হাতে নিয়ে, আর ঘরের ভেতরটায় রইল আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধ। সে এই বইটার নাম দিয়েছে আমার চুলকানিপ্রবণ মধ্যমা (মাই ইচি মিডলফিংগার)।
২০২২ সালে আমার বর ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামের (আইডব্লিউপি) হ্যাট মাথায় পরে আমাকে বলে যে সে আইওয়া সিটি লাইব্রেরিতে ‘পেশাজীবিতার ভূত’ (স্পেকটর অব প্রফেশনালাইজেশন) নিয়ে বক্তৃতা দেবে। এ কথা শুনে, সত্যি বলছি, আমি চিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু সে বলে চিন্তার কিছু নাই। কারণ, সে মনে করে সে একটা ডিলিজেন্ট জিনিয়াস, মানে, শিল্পদেবী তাকে চুমু দিয়েছে। কিন্তু আমি হানড্রেড পারসেন্ট নিশ্চিত যে সে একটা অলস, একটা মাথামোটা নির্বোধ। ‘শিল্পীর পেশাজীবিতা’ কী জিনিস তা কোনোভাবেই তার জানার কথা নয়।
তার সম্পর্কে আমি যেটুকু জানি, সে নিছকই একজন লেখক, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসে। সাহিত্যে পৌঁছতে নিজের রাস্তাটা খুঁজে পাওয়ার জন্য সে কখনো এটা-সেটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, কখনো নিজেই পরীক্ষার বিষয়বস্তু হয়। সে একটা ডানপিটে, যে সাহিত্য ভালোবাসে।
কিন্তু সত্যি বলছি, তার ‘সাহিত্য’ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমি তাকে এ জন্য বিয়ে করিনি যে সে একজন ভালো লেখক। বিয়ে করেছিলাম সে দেখতে হ্যান্ডসাম ছিল বলে।
মূল: কাং বিয়োং ইউং
ভূমিকা ও অনুবাদ: মশিউল আলম
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে