নওশাদ জামিল
ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; কুয়াশারাশি ঢাকার ওপর প্রবল ক্রোধে, কিংবা ক্ষোভে আছড়ে পড়েছিল। ভোরের হিমরাশি ঠেলে কুয়াশার ভেতর থেকে, ঘুমের ভেতর থেকে, স্বপ্নের ভেতর থেকে উঠে আসে শায়লা। অস্ফুট সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। উত্তর পাবে না জেনেও বলে, ‘তোমার মেয়েটার কী নাম রেখেছ? দেখতে কার মতো হয়েছে? তোমার মতো, নাকি তরীর মতো?’
শীতের আলস্য দূরে ঠেলে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর বোঝার চেষ্টা করি—ঘটনাটি কি স্মৃতির, নাকি বিস্মৃতির? নাকি স্বপ্নের? বোধহয় স্মৃতি নয়, বিস্মৃতিও নয়। ছায়াই হবে মনে হয়। শায়লা তো আমার কাছে ছায়া হয়েই আছে দূরে। অনেক অনেক দূরে ওড়াউড়ি করে ছায়াগুলো। মাঝেমধ্যে অন্ধকার নামলে জেগে ওঠে, আবার মিলিয়েও যায়। ছায়া নয়, ভুল বললাম; শায়লা আমার কাছে আছে স্মৃতি হয়ে। স্মৃতির কাছে তো জবাব দেওয়ার কিছু নেই। শায়লাকে উত্তর দিই না।
কম্বলের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে চারপাশ দেখি—ভোরের একটা মিহি সরু আলোর রেখা ঢুকেছে আমার ঘরে। পর্দা গলে ওই আলোর স্ফুরণ আমাকে স্পর্শ করে। শীতস্পর্শে মুখ থিরথির করে। আমি আবার মুখ ঢুকিয়ে নিই লেপের ভেতরে। বউকে হালকা করে জড়িয়ে ধরি। তারপর বউয়ের বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের অতলে ডুবে যাই।
শায়লার কথা আমার বউ জানে না যে ঠিক তা নয়। তরীর সঙ্গে বিয়ের অনেক আগেই সব বলেছিলাম। তরী সব শুনে, সব জেনে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল; ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘সময় সবকিছুকে ম্লান করে দেয়।’
তরীর কথাই ঠিক। সময় ম্লান করে দিয়েছিল শায়লাকে, আমাকে ভুলিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ কেন শায়লার কথা মনে বাজল? মনের ভেতর খচখচ করে উঠল, কেঁপে উঠল হৃদয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই মায়াহরিণ।
বছর দুয়েক আগে নিঝুম দ্বীপ বেড়াতে গিয়ে কেওড়াবনের ফাঁকে ফাঁকে অনেক হরিণ দেখেছিলাম, অনেক কাছ থেকে হরিণের চোখ দেখেছিলাম, তখন শায়লার কথা মনে পড়েছিল। তার হরিণী চোখ মনে পড়েছিল। আমি শায়লার প্রেমে পড়েছিলাম তার গভীর ঘনকালো, নিবিড় চোখ দেখেই। মেয়েদের চোখ যে এত সুন্দর, এত আকর্ষণীয়, এত মোহময় হতে পারে—আমি আগে তা বুঝিনি। একদিন, সম্ভবত সেদিন কী একটা আবৃত্তি উৎসব ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সেজেগুজে চোখে কাজল দিয়ে এসেছিল সে। শাড়ি পরেছিল। খোঁপায় ফুল ছিল কি না মনে নেই। উপলক্ষ ছাড়াই মাঝেমধ্যেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দিত, যত্ন করে পরিপাটি হয়ে সাজত। সাধারণত যেসব মেয়ে খুব পরিপাটি করে সাজে, তারা কথা বলে মেপে মেপে, ধীরে ধীরে। শায়লা তেমন নয়। কথা বলতে বলতে হাসে, হাসতে হাসতে কথা বলে। কথায় রাখঢাকের ব্যাপার নেই। ফলে অল্পতেই তার সঙ্গে আমার ভাব জমে গিয়েছিল, গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
শায়লার কথা যখন ভাবি, মনে করি, তখন কীভাবে যেন আমার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়; তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর কেন এমন হয়, বুঝতে পারি না। তবে এলোমেলো ভাব কেটেও যায় দ্রুত। তারপর ফিরে আসি নিজের জগতে। ফিরে আসি ঘরে, সংসারে। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি তরী ড্রয়িংরুমে বসে একমনে টিভি দেখছে। ইংরেজি একটা মুভি দেখছে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে তার পাশে বসি। তারপর তরীকে জড়িয়ে ধরে চুমো দিয়ে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’
‘হঠাৎ এত পিরিত উঠল কেন?’
‘হঠাৎ হবে কেন?’
সে বলে, ‘প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন না। আগে উত্তর, পরে প্রশ্ন।’
বউয়ের কথায় আমার খানিকটা অভিমান হয়। অভিমানের সুরে বলি, ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না!’ এ কথা শুনে বউ হাসে মৃদু মৃদু। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আহা! আমি তোমাকে তো রাগানোর জন্য বলেছিলাম!’
‘রাগ না, ছাই! তিয়ার জন্মের পর তুমি আমাকে ভুলেই গেছ!’
‘তোমাকে ভুলব কেন! আজব কথা বলো! ঘুমাচ্ছিলা তো, তাই তোমাকে ডাকিনি।’
আমাদের দুই বছরের কন্যা তিয়া। হেলেদুলে, টলমল করে হাঁটতে পারে ও। যখন হাঁটে, কিংবা যখন ওর দুই হাত ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করি, তখন ওকে আমার পুতুলই মনে হয়। ঠিক যেন জাপানি পুতুল। আমার বুকটা ভরে ওঠে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে। তিয়ার জন্মের পর থেকে তরী সারাক্ষণ বাচ্চাকে নিয়ে মেতে থাকে। তিয়াকে নিয়ে ডুবে থাকে। যত্ন করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করায়, লোশন মাখিয়ে দেয় ওর কোমল ত্বকে। মাঝেমধ্যে গান শোনায়। ও কিছু বোঝে কি না কে জানে। তবে হাততালি দিয়ে, খুশিতে আবোল-তাবোল শব্দ করে। এতেই তরী খুব খুশি হয়। তখন চুকচুক করে চুমো দেয় তিয়ার মখমল গালে। আমার খুব ভালো লাগে মা-মেয়ের এই চিরন্তন ভালোবাসায়।
সকালে নাশতা করে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করি কিছুক্ষণ। তিয়াকে আদর করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে শায়লার কথা। শায়লাও কি তবে আমার মেয়ের মা হতে চেয়েছিল?
ছুটির দিন থাকায় আমি ঘুম থেকে উঠি বেলা করে। তারপর কিছুক্ষণ তরীর সঙ্গে সাংসারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। জানতে চাই, ঘরে বাজার আছে কি না। বাজারের কথা শুনে তরী খুশি হয়। কেননা সাধারণত সকালে আমি সংসার কিংবা বাজারবিষয়ক কোনো কথা বলি না। সাংসারিক কথায় খুশি হয়ে সে বলে, ‘বাজারে যেতে হবে না।’ বউয়ের কথায় আমিও খুশি হই খুব।
খুশি প্রকাশ করে তাকে বলি, ‘দুপুরে কী রান্না করবে? গরুর মাংস-খিচুড়ি হবে নাকি?’
‘নিশ্চয় হবে। ফ্রিজে মাংস আছে। তবে রান্নাটা করতে হবে তোমাকেই।’
‘মানে?’
‘মানে আর কী, তুমি রান্না করবে।’
‘আমি একা রান্না করতে পারব না। তুমি যদি হেল্প করো, তাহলে রান্না করতে পারি।’
শেষমেশ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। আমি গরুর মাংস রান্না করব, খিচুড়ি রান্না করবে তরী। রান্না করার বিষয়ে তরী খুব উদাসীন। রান্নাটা এনজয় করে না সে। তবুও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝেমধ্যে রান্না করে। আমাদের অলিখিত চুক্তি এই যে ছুটির দিনে আমরা দুপুরে রান্না করব। একে অপরকে হেল্প করব। দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমি আর তরী পত্রিকা পড়তে পড়তে গল্প করি। সমসাময়িক রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আলাপ করি। তারপর এক ফাঁকে তরীকে বলি শায়লার কথা। বলি রাতের ঘটনা। আমার কথা শুনে থ হয়ে গেল সে। কিছুটা রাগত স্বরে বলে, ‘শায়লার সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাকে আগে বলোনি কেন?’
‘তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘না, তোমার ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়! আমাকে মিথ্যা কথা বলতেছ!’
‘তোমাকে মিথ্যা বলব কেন! আমি তো মিথ্যা বলি না, এটা তো তুমি জানোই। এখন মনে পড়ল তাই সঙ্গে সঙ্গে বললাম।’
শায়লার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, কোথায় দেখা হয়েছিল, কবে দেখা হয়েছিল—তরীর চোখে কোনো কৌতূহল নেই। কিছুই বলে না সে। মুখ অন্ধকার করে টিভি দেখতে বসে, কিছুক্ষণ পরে সিনেমায় ডুব মারে। দুপুরের রান্নার কথাও ওঠায় না। কারণটা যে শায়লা তা আর বোঝার বাকি নেই। পরিস্থিতি মাঝারি পর্যায়ের, অভিমানের দিকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে গলা উঁচু করে চিল্লাচিল্লি করবে। ১০ মিনিটের একটা ঝড় বইবে। তারপর সব স্বাভাবিক। আপাতত আবহ চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই। মাঝারি পর্যায়েই থাকবে।
তরীর সঙ্গে আমার তেমন একটা ঝগড়া হয় না, কথা-কাটাকাটিও হয় না। তবে কখনো যদি সে আমার ওপর রাগ করে, তখন মুখের ওপর চিল্লাচিল্লি করে। এখন ওই অবস্থা হবে কি না বুঝতে পারি না। ফলে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু কিছুই বলি না। কেননা আমি এখন কিছু বলতে গেলেই ঝড় ওঠার পূর্বাভাব মিলবে। বিপদসংকেত বাড়বে। তাই চুপচাপ হয়ে আমি তরীর সঙ্গে টিভি দেখি কিছুক্ষণ। তারপর আমাদের রুমে ঢুকে তিয়াকে আদর করি। বুয়া ওকে দুধ গরম করে দিয়েছে। দুধ খেতে খেতে রাজকন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়েটিকে ডেকে বলি কফি বানাতে। কফির কথা বলে আমার রুমে ঢুকে আমি কী করব ভাবি। খাটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো পড়ে থাকি, ঠিক যেন তখনই আমার চোখে ভেসে ওঠে শায়লার হাসি। কতদিন পর দেখলাম শায়লাকে, কতদিন পর! আমার ভেতরটা হাহাকার করে, মনটা কেমন করে। বুঝতে পারি না কেন এমন করে। শায়লাকে তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় আট বছর আগের স্মৃতি কেন মনে পড়ল? কোথাও কি দেখেছি শায়লাকে, নাকি শায়লার মতো কাউকে দেখেছিলাম!
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। যানজটে গাড়ি থেমে ছিল অনেকক্ষণ, পান্থপথ সিগন্যালে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ি অন্যমনস্ক হয়ে। হঠাৎ লক্ষ করি, চমকে উঠি—শায়লা দাঁড়িয়ে পথের পাশে। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, আমার সামনে দিয়ে, গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল সে। শায়লা বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম। দুই-একবার ডাক দিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাকে ফিরেও তাকায়নি। ব্যস, এইটুকু। মেয়েটি শায়লাই ছিল নাকি কে জানে। নাকি শায়লার মতো অন্য কেউ? শায়লার কথা যত ভাবি, মন তত উথালপাথাল করে।
কাজের মেয়ে কফি দিয়ে যায়। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবি, শায়লাকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে হবে। কিন্তু কীভাবে লিখব, কোন জায়গা থেকে শুরু করব—বুঝতে পারি না। মাথাটা হঠাৎ জট পাকিয়ে ওঠে, দুমড়েমুচড়ে জেগে ওঠে স্মৃতিগুলো।
‘তুমি এখনো শুয়ে আছ! আমি তো খিচুড়ি রান্না করছি, মাংস রান্না করবা কখন?’—বউয়ের কথা শুনে যেন জ্ঞান ফেরে আমার। বউকে বলি, ‘ঠিক আছে। রান্না করব।’
আলস্য ঝেড়ে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করতে হবে। মাংস অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আমি ঝটপট উঠি বিছানা থেকে। ডিপফ্রিজের ডানা খুলতেই আমার চোখের পাতায় যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎচমক খেলল সারা শরীরে। তোলপাড় করে অচেনা এক কালো সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ল মনের বালুকাবেলায়। কয়েকটি বড় বড় মাংসের পোঁটলা। তাতে হালকা কুয়াশা জড়িয়ে। ফ্রিজের ডানা খুলতেই কুয়াশারা জেগে উঠল, চোখের পাতা নড়েচড়ে উঠল। পোঁটলাগুলোর একটিতে পড়ে আছে হরিণের মাংস, যেন ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার চোখ যেন ছানাবড়া। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি—মাংসগুলো সতেজ, হিমশীতল বরফে ঢাকা।
সপ্তাহখানেক আগে খুলনা থেকে বেড়াতে এসেছিল আমার বন্ধু সজীব। সে একবার কথাচ্ছলে বলেছিল, ‘হরিণের মাংস আর রেড ওয়াইন দারুণ হবে দোস্ত!’
একদিন সজীব প্রায় পাঁচ কেজি মাংস নিয়ে উপস্থিত হয় বাসায়। বন্ধুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই কাজ করে সে। কিন্তু সারপ্রাইজ তো দূরের কথা, হরিণের মাংস শুনেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তরী। বন্ধুর সামনেই খেপে যায়। রেগে গিয়ে তরী বলে, ‘আমি এই মাংস খাব না। তোমরাও খেতে পারবে না!’ অগত্যা মাংসগুলোর স্থান হয় ডিপফ্রিজের এক কোনায়। মাংস বের করতে দেরি হচ্ছে দেখে তরী বলে, ‘ওইগুলো হরিণের মাংস, গরুর মাংস ওপরের তাকে।’ তরীর কথায় আমি যেন চমকে উঠি, বিহ্বল হয়ে পড়ি।
সজীব যেদিন এসেছিল, মাংস দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল। দারুণ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। কেন? হরিণের মাংস তো আমার পছন্দ না। একবার ভুল করে খেতে গিয়ে পরে খারাপই লেগেছিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে নয়, পশুপ্রেমের জন্যও নয়, অন্য কিছু হতে পারে বোধহয়। সজীব দুই দিন থেকে আবার ফিরে গেছে খুলনায়, তার কর্মস্থলে। বাসায় আমরা জম্পেশ আড্ডা দিয়েছি। প্রাণখুলে হেসেছি, অনেক গল্প করেছি। আড্ডা দিতে দিতে, ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে সজীব বলে, ‘দোস্ত! শায়লার কী খবর!’ শায়লার কথা শুনে যেন লাফ দিয়ে উঠি। ভাগ্য ভালো যে তখন তরী ছিল না আমাদের আড্ডায়। নেশাতুর কণ্ঠে আমি বলি, ‘শায়লা! আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই দোস্ত!’
আড্ডায় শায়লাকে নিয়ে আমাদের কথা আর এগোয়নি। আমরা আবার নতুন পেগ শুরু করি। কয়েক চুমুক দিয়েই আনন্দে সজীব গান শুরু করে, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি!’
তরী মাংস রান্না করার সব মসলা প্রস্তুত করে রেখেছে। আমার কাজ শুধু পরিমাণমতো মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে উনুনে বসিয়ে দেয়া। যখন চুলায় মাংস বসিয়েছি, বউ তখন পাশে দাঁড়িয়ে। আগুনের লেলিহান শিখায়, মসলার রসায়নে একটু পরই লাল হয়ে ওঠে মাংস। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলতেই ওঠে ধূমায়িত সুঘ্রাণ। ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ঢেকে রাখো!’
ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; কুয়াশারাশি ঢাকার ওপর প্রবল ক্রোধে, কিংবা ক্ষোভে আছড়ে পড়েছিল। ভোরের হিমরাশি ঠেলে কুয়াশার ভেতর থেকে, ঘুমের ভেতর থেকে, স্বপ্নের ভেতর থেকে উঠে আসে শায়লা। অস্ফুট সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। উত্তর পাবে না জেনেও বলে, ‘তোমার মেয়েটার কী নাম রেখেছ? দেখতে কার মতো হয়েছে? তোমার মতো, নাকি তরীর মতো?’
শীতের আলস্য দূরে ঠেলে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর বোঝার চেষ্টা করি—ঘটনাটি কি স্মৃতির, নাকি বিস্মৃতির? নাকি স্বপ্নের? বোধহয় স্মৃতি নয়, বিস্মৃতিও নয়। ছায়াই হবে মনে হয়। শায়লা তো আমার কাছে ছায়া হয়েই আছে দূরে। অনেক অনেক দূরে ওড়াউড়ি করে ছায়াগুলো। মাঝেমধ্যে অন্ধকার নামলে জেগে ওঠে, আবার মিলিয়েও যায়। ছায়া নয়, ভুল বললাম; শায়লা আমার কাছে আছে স্মৃতি হয়ে। স্মৃতির কাছে তো জবাব দেওয়ার কিছু নেই। শায়লাকে উত্তর দিই না।
কম্বলের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে চারপাশ দেখি—ভোরের একটা মিহি সরু আলোর রেখা ঢুকেছে আমার ঘরে। পর্দা গলে ওই আলোর স্ফুরণ আমাকে স্পর্শ করে। শীতস্পর্শে মুখ থিরথির করে। আমি আবার মুখ ঢুকিয়ে নিই লেপের ভেতরে। বউকে হালকা করে জড়িয়ে ধরি। তারপর বউয়ের বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের অতলে ডুবে যাই।
শায়লার কথা আমার বউ জানে না যে ঠিক তা নয়। তরীর সঙ্গে বিয়ের অনেক আগেই সব বলেছিলাম। তরী সব শুনে, সব জেনে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল; ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘সময় সবকিছুকে ম্লান করে দেয়।’
তরীর কথাই ঠিক। সময় ম্লান করে দিয়েছিল শায়লাকে, আমাকে ভুলিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ কেন শায়লার কথা মনে বাজল? মনের ভেতর খচখচ করে উঠল, কেঁপে উঠল হৃদয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই মায়াহরিণ।
বছর দুয়েক আগে নিঝুম দ্বীপ বেড়াতে গিয়ে কেওড়াবনের ফাঁকে ফাঁকে অনেক হরিণ দেখেছিলাম, অনেক কাছ থেকে হরিণের চোখ দেখেছিলাম, তখন শায়লার কথা মনে পড়েছিল। তার হরিণী চোখ মনে পড়েছিল। আমি শায়লার প্রেমে পড়েছিলাম তার গভীর ঘনকালো, নিবিড় চোখ দেখেই। মেয়েদের চোখ যে এত সুন্দর, এত আকর্ষণীয়, এত মোহময় হতে পারে—আমি আগে তা বুঝিনি। একদিন, সম্ভবত সেদিন কী একটা আবৃত্তি উৎসব ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সেজেগুজে চোখে কাজল দিয়ে এসেছিল সে। শাড়ি পরেছিল। খোঁপায় ফুল ছিল কি না মনে নেই। উপলক্ষ ছাড়াই মাঝেমধ্যেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দিত, যত্ন করে পরিপাটি হয়ে সাজত। সাধারণত যেসব মেয়ে খুব পরিপাটি করে সাজে, তারা কথা বলে মেপে মেপে, ধীরে ধীরে। শায়লা তেমন নয়। কথা বলতে বলতে হাসে, হাসতে হাসতে কথা বলে। কথায় রাখঢাকের ব্যাপার নেই। ফলে অল্পতেই তার সঙ্গে আমার ভাব জমে গিয়েছিল, গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
শায়লার কথা যখন ভাবি, মনে করি, তখন কীভাবে যেন আমার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়; তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর কেন এমন হয়, বুঝতে পারি না। তবে এলোমেলো ভাব কেটেও যায় দ্রুত। তারপর ফিরে আসি নিজের জগতে। ফিরে আসি ঘরে, সংসারে। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি তরী ড্রয়িংরুমে বসে একমনে টিভি দেখছে। ইংরেজি একটা মুভি দেখছে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে তার পাশে বসি। তারপর তরীকে জড়িয়ে ধরে চুমো দিয়ে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’
‘হঠাৎ এত পিরিত উঠল কেন?’
‘হঠাৎ হবে কেন?’
সে বলে, ‘প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন না। আগে উত্তর, পরে প্রশ্ন।’
বউয়ের কথায় আমার খানিকটা অভিমান হয়। অভিমানের সুরে বলি, ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না!’ এ কথা শুনে বউ হাসে মৃদু মৃদু। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আহা! আমি তোমাকে তো রাগানোর জন্য বলেছিলাম!’
‘রাগ না, ছাই! তিয়ার জন্মের পর তুমি আমাকে ভুলেই গেছ!’
‘তোমাকে ভুলব কেন! আজব কথা বলো! ঘুমাচ্ছিলা তো, তাই তোমাকে ডাকিনি।’
আমাদের দুই বছরের কন্যা তিয়া। হেলেদুলে, টলমল করে হাঁটতে পারে ও। যখন হাঁটে, কিংবা যখন ওর দুই হাত ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করি, তখন ওকে আমার পুতুলই মনে হয়। ঠিক যেন জাপানি পুতুল। আমার বুকটা ভরে ওঠে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে। তিয়ার জন্মের পর থেকে তরী সারাক্ষণ বাচ্চাকে নিয়ে মেতে থাকে। তিয়াকে নিয়ে ডুবে থাকে। যত্ন করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করায়, লোশন মাখিয়ে দেয় ওর কোমল ত্বকে। মাঝেমধ্যে গান শোনায়। ও কিছু বোঝে কি না কে জানে। তবে হাততালি দিয়ে, খুশিতে আবোল-তাবোল শব্দ করে। এতেই তরী খুব খুশি হয়। তখন চুকচুক করে চুমো দেয় তিয়ার মখমল গালে। আমার খুব ভালো লাগে মা-মেয়ের এই চিরন্তন ভালোবাসায়।
সকালে নাশতা করে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করি কিছুক্ষণ। তিয়াকে আদর করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে শায়লার কথা। শায়লাও কি তবে আমার মেয়ের মা হতে চেয়েছিল?
ছুটির দিন থাকায় আমি ঘুম থেকে উঠি বেলা করে। তারপর কিছুক্ষণ তরীর সঙ্গে সাংসারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। জানতে চাই, ঘরে বাজার আছে কি না। বাজারের কথা শুনে তরী খুশি হয়। কেননা সাধারণত সকালে আমি সংসার কিংবা বাজারবিষয়ক কোনো কথা বলি না। সাংসারিক কথায় খুশি হয়ে সে বলে, ‘বাজারে যেতে হবে না।’ বউয়ের কথায় আমিও খুশি হই খুব।
খুশি প্রকাশ করে তাকে বলি, ‘দুপুরে কী রান্না করবে? গরুর মাংস-খিচুড়ি হবে নাকি?’
‘নিশ্চয় হবে। ফ্রিজে মাংস আছে। তবে রান্নাটা করতে হবে তোমাকেই।’
‘মানে?’
‘মানে আর কী, তুমি রান্না করবে।’
‘আমি একা রান্না করতে পারব না। তুমি যদি হেল্প করো, তাহলে রান্না করতে পারি।’
শেষমেশ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। আমি গরুর মাংস রান্না করব, খিচুড়ি রান্না করবে তরী। রান্না করার বিষয়ে তরী খুব উদাসীন। রান্নাটা এনজয় করে না সে। তবুও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝেমধ্যে রান্না করে। আমাদের অলিখিত চুক্তি এই যে ছুটির দিনে আমরা দুপুরে রান্না করব। একে অপরকে হেল্প করব। দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমি আর তরী পত্রিকা পড়তে পড়তে গল্প করি। সমসাময়িক রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আলাপ করি। তারপর এক ফাঁকে তরীকে বলি শায়লার কথা। বলি রাতের ঘটনা। আমার কথা শুনে থ হয়ে গেল সে। কিছুটা রাগত স্বরে বলে, ‘শায়লার সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাকে আগে বলোনি কেন?’
‘তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘না, তোমার ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়! আমাকে মিথ্যা কথা বলতেছ!’
‘তোমাকে মিথ্যা বলব কেন! আমি তো মিথ্যা বলি না, এটা তো তুমি জানোই। এখন মনে পড়ল তাই সঙ্গে সঙ্গে বললাম।’
শায়লার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, কোথায় দেখা হয়েছিল, কবে দেখা হয়েছিল—তরীর চোখে কোনো কৌতূহল নেই। কিছুই বলে না সে। মুখ অন্ধকার করে টিভি দেখতে বসে, কিছুক্ষণ পরে সিনেমায় ডুব মারে। দুপুরের রান্নার কথাও ওঠায় না। কারণটা যে শায়লা তা আর বোঝার বাকি নেই। পরিস্থিতি মাঝারি পর্যায়ের, অভিমানের দিকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে গলা উঁচু করে চিল্লাচিল্লি করবে। ১০ মিনিটের একটা ঝড় বইবে। তারপর সব স্বাভাবিক। আপাতত আবহ চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই। মাঝারি পর্যায়েই থাকবে।
তরীর সঙ্গে আমার তেমন একটা ঝগড়া হয় না, কথা-কাটাকাটিও হয় না। তবে কখনো যদি সে আমার ওপর রাগ করে, তখন মুখের ওপর চিল্লাচিল্লি করে। এখন ওই অবস্থা হবে কি না বুঝতে পারি না। ফলে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু কিছুই বলি না। কেননা আমি এখন কিছু বলতে গেলেই ঝড় ওঠার পূর্বাভাব মিলবে। বিপদসংকেত বাড়বে। তাই চুপচাপ হয়ে আমি তরীর সঙ্গে টিভি দেখি কিছুক্ষণ। তারপর আমাদের রুমে ঢুকে তিয়াকে আদর করি। বুয়া ওকে দুধ গরম করে দিয়েছে। দুধ খেতে খেতে রাজকন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়েটিকে ডেকে বলি কফি বানাতে। কফির কথা বলে আমার রুমে ঢুকে আমি কী করব ভাবি। খাটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো পড়ে থাকি, ঠিক যেন তখনই আমার চোখে ভেসে ওঠে শায়লার হাসি। কতদিন পর দেখলাম শায়লাকে, কতদিন পর! আমার ভেতরটা হাহাকার করে, মনটা কেমন করে। বুঝতে পারি না কেন এমন করে। শায়লাকে তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় আট বছর আগের স্মৃতি কেন মনে পড়ল? কোথাও কি দেখেছি শায়লাকে, নাকি শায়লার মতো কাউকে দেখেছিলাম!
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। যানজটে গাড়ি থেমে ছিল অনেকক্ষণ, পান্থপথ সিগন্যালে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ি অন্যমনস্ক হয়ে। হঠাৎ লক্ষ করি, চমকে উঠি—শায়লা দাঁড়িয়ে পথের পাশে। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, আমার সামনে দিয়ে, গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল সে। শায়লা বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম। দুই-একবার ডাক দিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাকে ফিরেও তাকায়নি। ব্যস, এইটুকু। মেয়েটি শায়লাই ছিল নাকি কে জানে। নাকি শায়লার মতো অন্য কেউ? শায়লার কথা যত ভাবি, মন তত উথালপাথাল করে।
কাজের মেয়ে কফি দিয়ে যায়। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবি, শায়লাকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে হবে। কিন্তু কীভাবে লিখব, কোন জায়গা থেকে শুরু করব—বুঝতে পারি না। মাথাটা হঠাৎ জট পাকিয়ে ওঠে, দুমড়েমুচড়ে জেগে ওঠে স্মৃতিগুলো।
‘তুমি এখনো শুয়ে আছ! আমি তো খিচুড়ি রান্না করছি, মাংস রান্না করবা কখন?’—বউয়ের কথা শুনে যেন জ্ঞান ফেরে আমার। বউকে বলি, ‘ঠিক আছে। রান্না করব।’
আলস্য ঝেড়ে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করতে হবে। মাংস অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আমি ঝটপট উঠি বিছানা থেকে। ডিপফ্রিজের ডানা খুলতেই আমার চোখের পাতায় যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎচমক খেলল সারা শরীরে। তোলপাড় করে অচেনা এক কালো সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ল মনের বালুকাবেলায়। কয়েকটি বড় বড় মাংসের পোঁটলা। তাতে হালকা কুয়াশা জড়িয়ে। ফ্রিজের ডানা খুলতেই কুয়াশারা জেগে উঠল, চোখের পাতা নড়েচড়ে উঠল। পোঁটলাগুলোর একটিতে পড়ে আছে হরিণের মাংস, যেন ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার চোখ যেন ছানাবড়া। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি—মাংসগুলো সতেজ, হিমশীতল বরফে ঢাকা।
সপ্তাহখানেক আগে খুলনা থেকে বেড়াতে এসেছিল আমার বন্ধু সজীব। সে একবার কথাচ্ছলে বলেছিল, ‘হরিণের মাংস আর রেড ওয়াইন দারুণ হবে দোস্ত!’
একদিন সজীব প্রায় পাঁচ কেজি মাংস নিয়ে উপস্থিত হয় বাসায়। বন্ধুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই কাজ করে সে। কিন্তু সারপ্রাইজ তো দূরের কথা, হরিণের মাংস শুনেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তরী। বন্ধুর সামনেই খেপে যায়। রেগে গিয়ে তরী বলে, ‘আমি এই মাংস খাব না। তোমরাও খেতে পারবে না!’ অগত্যা মাংসগুলোর স্থান হয় ডিপফ্রিজের এক কোনায়। মাংস বের করতে দেরি হচ্ছে দেখে তরী বলে, ‘ওইগুলো হরিণের মাংস, গরুর মাংস ওপরের তাকে।’ তরীর কথায় আমি যেন চমকে উঠি, বিহ্বল হয়ে পড়ি।
সজীব যেদিন এসেছিল, মাংস দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল। দারুণ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। কেন? হরিণের মাংস তো আমার পছন্দ না। একবার ভুল করে খেতে গিয়ে পরে খারাপই লেগেছিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে নয়, পশুপ্রেমের জন্যও নয়, অন্য কিছু হতে পারে বোধহয়। সজীব দুই দিন থেকে আবার ফিরে গেছে খুলনায়, তার কর্মস্থলে। বাসায় আমরা জম্পেশ আড্ডা দিয়েছি। প্রাণখুলে হেসেছি, অনেক গল্প করেছি। আড্ডা দিতে দিতে, ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে সজীব বলে, ‘দোস্ত! শায়লার কী খবর!’ শায়লার কথা শুনে যেন লাফ দিয়ে উঠি। ভাগ্য ভালো যে তখন তরী ছিল না আমাদের আড্ডায়। নেশাতুর কণ্ঠে আমি বলি, ‘শায়লা! আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই দোস্ত!’
আড্ডায় শায়লাকে নিয়ে আমাদের কথা আর এগোয়নি। আমরা আবার নতুন পেগ শুরু করি। কয়েক চুমুক দিয়েই আনন্দে সজীব গান শুরু করে, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি!’
তরী মাংস রান্না করার সব মসলা প্রস্তুত করে রেখেছে। আমার কাজ শুধু পরিমাণমতো মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে উনুনে বসিয়ে দেয়া। যখন চুলায় মাংস বসিয়েছি, বউ তখন পাশে দাঁড়িয়ে। আগুনের লেলিহান শিখায়, মসলার রসায়নে একটু পরই লাল হয়ে ওঠে মাংস। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলতেই ওঠে ধূমায়িত সুঘ্রাণ। ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ঢেকে রাখো!’
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে