মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ, বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫: ২৪
Thumbnail image
নিহত ইউপি সদস্য আক্তার শিকদার। ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ভাদুরী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ইউপি সদস্য ও তাঁর ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ১০ জন আহত হয়েছেন।

আজ শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন—কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের ভাদুর এলাকার মতিন শিকদারের ছেলে ইউপি সদস্য আতাউর রহমান আক্তার শিকদার (৪৮) ও তাঁর ছেলে মারুফ শিকদার (২০)। নিহত অপরজন হলেন আক্তার শিকদারের কর্মী পার্শ্ববর্তী খুনেরচরের রশিদ চৌকিদারের ছেলে সিরাজুল ইসলাম চৌকিদার (৩৫)।

পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আক্তার শিকদারের বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মামলায় দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া ছিলেন ইউপি সদস্য আক্তার শিকদারসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোরে আক্তার শিকদারের ঘরে আগুন লাগে। তিনি ও তাঁর ছেলে মারুফ শিকদার এ খবর শুনে লোকজন নিয়ে আজ ভোরে এলাকায় আসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্তারের ওপর হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।

সংঘর্ষের সময় আক্তার শিকদার ও তাঁর ছেলে মারুফ শিকদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আক্তারের কর্মী সিরাজুল ইসলাম চৌকিদার (৩৫) গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান।

এ ছাড়া এ ঘটনায় আরও ১০ জন আহত হন। আহত জব্বার, জুয়েলসহ অন্যরা কালকিনির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকি আহতদের পরিচয় জানা যায়নি।

আক্তার শিকদার কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী।

এদিকে ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।

নিহত ইউপি সদস্য আক্তার শিকদারের বাবা মতিন শিকদার বলেন, ‘আমার ছেলে ও নাতিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে চেয়ারম্যান সুমন ও তার লোকজন। এ ঘটনায় আমাদের আরও এক কর্মী মারা গেছে। এর বিচার চাই। সুমন ও তার লোকজনের কঠিন বিচার চাই। আমার ছেলে ও নাতিকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যার বিচার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে কালকিনির বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। শুনেছি এলাকার অন্য দুটি পক্ষ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমিও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার চাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, ইউপি সদস্য আক্তার শিকদারের নামে হত্যা ও সংঘর্ষের একাধিক মামলা চলমান। সেসব মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আক্তার শিকদারের নেতৃত্বে আক্তার বাহিনী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।

কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ঘটনার পর এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে হচ্ছে। পুলিশের একাধিক টিম অপরাধীদের ধরতে কাজ করছে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ঘটনায় এখনো কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে, ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে, নাম সংগ্রহ করছে একাধিক টিম। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত