আধা কিমিতে ৪ ইটভাটায় নষ্ট কৃষিজমি, স্বাস্থ্যঝুঁকি

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি 
Thumbnail image
বরগুনার আমতলীতে একটি ইটভাটায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার আমতলীতে একটি গ্রামে আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইট পোড়ানো হচ্ছে চারটি ভাটায়। উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামে তিন ফসলি কৃষিজমিতে ইটভাটাগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। লোকালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংলগ্ন এলাকায় এভাবে ইট পোড়ানোয় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

ভাটামালিকদের দাবি, তাঁরা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে অনুমোদনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়বালা গ্রামে ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা বিবিসি নামের ইটভাটা নির্মাণ করেন। ২০১৮ সালে ওই ভাটার ৩০০ গজ দূরত্বে শানু হাওলাদার ফাইভস্টার, ২০১৯ সালে ওই দুই ইটভাটার পাশাপাশি মাহবুবুল আলম মৃধা এমএমবি এবং ২০২১ সালে একই স্থানে নুর জামান এডিবি নামের ইটভাটা নির্মাণ করেন।

স্থানীয় কৃষকেরা অভিযোগ করেন, ইটভাটা নির্মাণ করার পর ওই জমির উর্বরতা শক্তি হারিয়েছে। জমিতে এখন আর আগের মতো ফসল ফলছে না। এ ছাড়া ওই ইটভাটা চারটির ৫০০ গজের মধ্যে রয়েছে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, চারটি ইটভাটার পাশেই ঘরবাড়ি, গাছপালা ও তিন ফসলি জমি রয়েছে। ভাটাগুলোতে দেদারসে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে।

ায়বালা গ্রামের কৃষক শাহজাহান আকন বলেন, আধা কিলোমিটারের মধ্যে চারটি ইটভাটা নির্মাণ করায় ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এখন আর আগের মতো জমিতে ফসল ফলছে না। তিনি আরও বলেন, ইটভাটার কারণে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নাসির সিকদার বলেন, কালো ধোঁয়া এবং ধুলা-ময়লায় পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে।

রায়বালা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, ‘ইটভাটাগুলোর কারণে ওই এলাকার অন্তত ৫০০ একর ফসলি জমি, জীববৈচিত্র্য, গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হচ্ছে এবং পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। ওই গ্রামের কৃষিজমি ও মানুষকে স্বাস্থ্যঝুঁকির হাত থেকে রক্ষায় ইটভাটাগুলো বন্ধের দাবি জানাই।’

রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনুর বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের কয়েক গজের মধ্যেই তিনটি ইটভাটা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রভাব খাটিয়ে ভাটামালিকেরা কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা নির্মাণ করছেন। এতে এই এলাকার অন্তত ৫০০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে।

বিবিসি ইটভাটার মালিক মো. হান্নান মৃধা বলেন, ‘আমার এ ইটভাটাতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সব দপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন।’ তবে লোকালয়ে প্রশাসন কীভাবে ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি দিল, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এম এম এস ইটভাটার পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম মৃধা বলেন, ‘সব আইনকানুন মেনেই ইটভাটা নির্মাণ করেছি।’

এডিবি ইটভাটার মালিক মো. নুর জামাল বলেন, ‘প্রশাসনের সব দপ্তরের অনুমতি নিয়েই ইটভাটা নির্মাণ করেছি।’ প্রশাসন কীভাবে লোকালয়ে ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি দিল, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঈশা ইকবাল বলেন, রায়বালা এলাকার কোনো ইটভাটা স্থাপনে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করলে একদিকে আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ইটভাটা এলাকার জমির ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হয়।

বরগুনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, ‘পরিবেশ নষ্ট হয় এমন জায়গায় ইটভাটা স্থাপন করতে পারবে না। রায়বালা গ্রামে কোনো ইটভাটা স্থাপন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে ওই ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, সরকারি নিয়মবহির্ভূত কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা হলে, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ইটভাটাগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা ফিরে আসছে কি?

সদা প্রস্তুত থাকতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সেনাপ্রধানের আহ্বান

ভিসা জটিলতায় ভ্রমণকর হারাচ্ছে সরকার

বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন পাকিস্তানের আইএসআই প্রধান, দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের

মাস্কের চাপেই ডিওজিই থেকে রামাস্বামীর পদত্যাগ, শুরুতেই ট্রাম্প প্রশাসনে অন্তর্দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত