বরিশালের গৌরনদীতে স্কুলের আলমারিতে ব্যালট পেপার ও ২০০ ব্যালটের মুড়ি পাওয়ার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। আজ সোমবার এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

 ১৮ মাস পরে স্কুল খুললে গতকাল রোববার উপজেলায় বাঘমারা বড় দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলমারিতে কলম খুঁজতে গিয়ে ব্যালট পেপার ও দুই শত ব্যালটের মুড়ি পাওয়া যায়। আড়াই মাস আগে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের এ মুড়ি পাওয়াকে নির্বাচনে কারচুপির অংশ বলে দাবি করছেন প্রতিপক্ষের প্রার্থীরা। এ ঘটনা তদন্তে গৌরনদী উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মিজানুর রহমান তালুকদারকে আহ্বায়ক, গৌরনদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জলিলকে সদস্যসচিব ও গৌরনদী উপজেলা মৎস্য অফিসারকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, করোনার জন্য দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকার পরে রোববার স্কুল খোলা হলে ওই স্কুলের দপ্তরি কাম নাইটগার্ড ও প্রধান শিক্ষক স্টিলের আলমারি খুলে সদ্য সমাপ্ত প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনের কিছু ব্যালট পেপার ও ২০০ ব্যালটের মুড়ি পান। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ বিষয় ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এবং ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনসহ দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সোমবার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও গৌরনদী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান তালুকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে সদস্যসচিব ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার কথা শুনেছি কিন্তু এখনো কোন চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে প্রাথমিকভাবে খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলব। 

দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ খান জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার স্কুলে পাঠদান শুরু হয়। দুপুরে স্কুলের আলমারিতে কলম খুঁজতে গিয়ে বিদ্যালয়ের স্টিল আলমারি খোলা হয়। এ সময় আলমারির ভেতরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কিছু ব্যালট পেপার ও ২০০ ব্যালটের মুড়ি পাওয়া যায়। 

তিনি আরও বলেন, সদ্য সমাপ্ত বার্থী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ স্কুলে কেন্দ্র ছিল। নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাকে নির্বাচনের আগের দিন আলমারির চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রিসাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করে চাবি হস্তান্তর করে যান কিন্তু করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এত দিন আলমারি খোলা হয়নি। স্কুল খোলার পরে এসব ব্যালট ও ব্যালটের মুড়ি পাওয়া গেছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসকে জানানো হয়। 

• স্কুল খুলেই আলমারিতে মিলল ২০০ ব্যালট

বার্থী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী খায়রুল আহসান অভিযোগ করেন, গত নির্বাচনে ব্যাপক দুর্নীতির করে আমাকে পরাজিত করার অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন তা আমলে নেয়নি। এখন স্কুলের আলমারি থেকে ব্যালট পেপার ও ব্যালট মুড়ি পাওয়ায় নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি পরিষ্কার হলো। 

তিনি আরও বলেন, তাদের ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসারের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই ২০০ ব্যালটের ভোট কারচুপি করে গোপনে বাক্সে ঢুকিয়ে আমার প্রতিপক্ষ সোবাহান হাওলাদারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। 

একই অভিযোগ করেন পরাজিত সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থী শিপ্রা রানী বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহানাজ বেগমকে নির্বাচিত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।

তবে প্রার্থীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউল ইসলাম।