হলে গিয়ে অন্য বিষয়ের প্রশ্নপত্র পেল দাখিল পরীক্ষার্থীরা, অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে মানববন্ধন

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

বরগুনার আমতলী বন্দর হোসাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইউনুচ আলী চতুর্থ বিষয় কৃষি শিক্ষার পরিবর্তে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয় দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করায় বিপাকে পড়েছেন মাদ্রাসার ৫৫ জন দাখিল পরীক্ষার্থী। এ ঘটনায় অধ্যক্ষের শাস্তি দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে মাদ্রাসার সামনের সড়কে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে তারা দ্রুত অধ্যক্ষের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।   

জানা গেছে, উপজেলার আমতলী বন্দর হোসাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এ বছর ৫৫ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এসব পরীক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশনে চতুর্থ বিষয় হিসেবে কৃষি শিক্ষা নির্বাচন করে। ওই অনুসারে তারা গত দুই বছর লেখাপড়া করেছে। গতকাল বুধবার ছিল তাদের চতুর্থ বিষয় অর্থাৎ কৃষি শিক্ষা পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষার হলে তাঁদের কৃষি শিক্ষার পরিবর্তে দেওয়া হয় বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ের প্রশ্নপত্র। 

এতে প্রশ্নপত্র দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। তখন তারা জানতে পারে অধ্যক্ষ চতুর্থ বিষয়ে কৃষি শিক্ষার পরিবর্তে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয় দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এতে বিপাকে পড়ে ওই মাদ্রাসার ৫৫ জন পরীক্ষার্থী। পরে তারা পরীক্ষা দেবে না বলে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পড়ে। পরে পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির অনুরোধে তারা ওই বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেন। 

পরীক্ষার্থী তাসনিম, ফাতেমা, মহিউদ্দিন ও আশরাফুল অভিযোগ করে বলে, ‘‘অধ্যক্ষ ইউনুস আলী ইচ্ছা করেই আমাদের চতুর্থ বিষয়ে কৃষি শিক্ষার পরিবর্তে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয় রেখে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। অধ্যক্ষ তাদের শিক্ষা জীবনকে নষ্ট করতে গত দুই বছর লুকোচুরি করেছেন যাতে আমরা ভালো ফলাফল করতে না পারি। অধ্যক্ষ জেনেই তাদের চতুর্থ বিষয়ে এমন কর্মকাণ্ড করেছেন। 

 আমতলীতে বন্দর হোসাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইউনুচ আলীর বিরুদ্ধে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন তারা আরও বলে, ‘ফরম পূরণের সময় অধ্যক্ষের কাছে রেজিস্ট্রেশন কার্ড চেয়েছিলাম কিন্তু অধ্যক্ষ কার্ড না দিয়ে খারাপ আচরণ করে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছেন।’

পরীক্ষার্থী হাবিল্লাহ বলে, ‘কৃষি শিক্ষা (৪র্থ) বিষয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসি। কিন্তু কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের প্রশ্নপত্র দেয়। তাৎক্ষণিক এ বিষয়টি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটিকে জানাই। তারা বলেন, এ বিষয়টি তাদের দেখার নয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ যেভাবে রেজিস্ট্রেশন করেছে সেই ভাবেই প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।’

পরীক্ষার্থী আয়শা, তানহা ও আবিদা বলেন, ‘দশ বছরের সাধনা এক নিমেষেই শেষ হয়ে গেল। অধ্যক্ষর গাফিলতির জন্য আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। পরীক্ষার খাতায় শুধুই নাম লিখে এসেছি। এতে আমরা ভালো ফলাফল করতে পারব না। আমরা অধ্যক্ষের শাস্তি দাবি করছি।’

পরীক্ষার্থী মাহমুদ, হাবিল্লাহ ও আবু তাহের বলেন, ‘মাদ্রাসার অধ্যক্ষের গাফিলতিতে আমরা ও পরিবার খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। অধ্যক্ষের এমন ঘটনায় কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’ 

মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ইউছুফ আলী ভুল স্বীকার করে বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের জন্য দোয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।’ 

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইউনুচ আলীর মুঠোফোনে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পছন্দ মতোই নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের সময় চতুর্থ বিষয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় দেওয়া হয়েছে। সে অনুসারে গত দুই বছর পাঠদান করানো হয়। এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছে। এখানে আমার কোনো ভুল ও দায় নেই।’ 

আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক মিলন বলেন, ‘অধ্যক্ষের দূরদর্শিতার কারণে ৫৫ জন পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনে অন্ধকার নেমে এল। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘পরীক্ষার্থীরা আমার কাছে এসেছিল। তারা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত