নিজেই অসুস্থ হাসপাতাল, ধসের আতঙ্ক নিয়ে চলছে সেবা

মো. সাইফুল ইসলাম, বোরহানউদ্দিন (ভোলা) 
প্রকাশ : ২২ মে ২০২২, ১৪: ৫১
আপডেট : ২২ মে ২০২২, ১৬: ৪৭

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসাসেবা। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা। চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক। সব সময়ই দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে হয় তাঁদের।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনের প্রথম ও দোতলায় ২০টির ওপরে কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষে জরুরি বিভাগ, ডেলিভারি কক্ষ ও নারী রোগীদের দুটি ওয়ার্ড, মালামালের গুদাম, ডিউটি অফিসার, স্বাস্থ্য সেবিকাদের কক্ষ, শিশুদের দেখার স্থান এবং বিভিন্ন কর্মকর্তার কার্যালয় রয়েছে।

আজ রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনটির প্রতিটা কক্ষেই পলেস্তারা, ইট-বালু, সুরকি খসে খসে পড়ছে। যেন রোগীদের চেয়ে হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, অফিস সহকারী ও পরিসংখ্যানবিদের কার্যালয়ে ছাদের একাধিক স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে। সেখান থেকে জং ধরা রড দেখা যাচ্ছে। একই অবস্থা ওই ভবনের আরও চার-পাঁচটি স্থানে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে অসুস্থ রোগীকে সেলাইসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক।

ওই চিকিৎসক বলেন, এ কক্ষের ছাদের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় এই অবস্থা। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে, সেটাই আশঙ্কা।

জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরছিলেন উপজেলার দেউলা গ্রামের বাসিন্দা মিরাজ হোসেন। মিরাজ বলেন, হাসপাতাল তো নিজেই অসুস্থ, ভাঙাচোরার আগে চিকিৎসা করানো দরকার।

এদিকে ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল সেটিরও বিভিন্ন কক্ষে ফাটল ধরা শুরু করেছে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানা যায়, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বসবাস যাঁদের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়।

পরে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ২০০৬ সালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।

ডেলিভারি কক্ষের দরজায়র ওপরে ধসে পড়েছে পলেস্তারা। যে কোনো মুহূর্তে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।২০০৮ সালের দিকে পুরোনো ভবনের পাশ ঘেঁষে আরেকটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন সময় পুরোনো ভবনটিতে কিছু সংস্কারকাজ হয়। কিন্তু সেগুলো বড় কোনো কাজ নয়। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি এড়াতে ভবনটিকে এখনই টেকসই পুনর্নির্মাণ করে রোগীদের চিকিৎসার উপযুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজন মনে করেন হাসপাতালে কর্মরত একাধিক চিকিৎসক।

নতুন ভবনে রোগী দেখার সময় কথা হয় দন্ত চিকিৎসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুরোনো ভবনের পাশাপাশি নতুন ভবনেও ফাটল ধরেছে এর সংস্কার করা জরুরি।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. তারেক বলেন, পুরোনো ভবনটি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। কিছুদিন আগেও এক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সময় ছাদ থেকে ইট-বালু খসে তাঁর মাথায় পড়ে আহত হয়েছেন। তা ছাড়া ভবনটির দরজা জানালাসহ সবকিছুই নড়বড়ে হয়ে গেছে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তপতী চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছি।’

তিনি জানান, প্রতিদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি ও বহির্বিভাগে প্রায় ৫০০ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ভবনটি পুনর্নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চিঠিও পাঠিয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত