আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে ৩টি গ্রাম

বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২২, ১৭: ২৪

আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার তিনটি গ্রাম বিলীন হতে বসেছে। উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের সিংহেরকাঠী, লোহালিয়া গ্রাম ও চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদী গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া চাঁদপাশা ইউনিয়নের আরজি কালিকাপুর ও ভবানীপুর গ্রামসহ প্রায় ৫ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। পূর্ণিমার জোয়ারের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।  

গত বছর রহমতপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ছোট মীরগঞ্জ বাজার নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় পার্শ্ববর্তী এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ বছর আবার বাজারটি ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। জোয়ারের পানি নামা ও নদীর স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বুধবার থেকে প্রবল ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে ছোট মীরগঞ্জ বাজারটি আবারও ঝুঁকিতে পড়েছে। এসব এলাকার লোকজন এখন আর ত্রাণ চান না। ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান। 

আজ সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সিংহেরকাঠি গ্রামের নদী পারের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। গত ৪ দিনের ভাঙনে কয়েকটি দোকান,৭ / ৮ টি ঘরবাড়ি ও কয়েক একর জমি বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে ২৬টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, পানের বরজ, ফসলি জমি ও বসতভিটাহারা মানুষেরা দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন। 

ছোট মীরগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী রফিয়াদি গ্রামের শামীম জানান, নদী ভাঙনের কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠান চারবার বদল করতে হয়েছে। এবার ভাঙনের কবলে পড়ায় দোকানটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। গ্রামবাসী অস্তিত্ব সংকটে পড়তে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। 

আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিলীনের পথে তিনটি গ্রাম। ছবি: আজকের পত্রিকানদী ভাঙনে ৭ বার ক্ষতিগ্রস্ত শিপন ঘরামী বলেন, ‘বিগত দিনে ৭ বার নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি হারিয়েছি। এবার আবার নদী ভাঙনে কবলে পড়েছি। এ ছাড়া গত ৪ দিনে এই এলাকার কয়েকটি পরিবার ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ ২ কেজি চাল দিয়ে সাহায্য করেনি। আমাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। আমরা সরকারি সাহায্য চাই না, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই।’ 

রহমতপুর ইউনিয়নের সিংহেরকাঠী এলাকার ইউপি সদস্য জামাল হোসেন পুতুল বলেন, প্রতি বছরই নদী ভাঙনে এলাকা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। ২০২০ সালে ছোট মীরগঞ্জ বাজার সম্পূর্ণটা ভেঙে গেলে বাজারটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এক বছর পার না হতেই আবার ভাঙনের কবলে পরেছে। এরই মধ্যে বাজারটির ৪টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, স মিল, মসজিদ, বসতঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই এলাকার বেড়িবাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় জোয়ারের পানিতে প্রায় ৩ শত একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তারা কোনো খোঁজ নেয়নি। 

চাঁদপাশা ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের রফিয়াদি গ্রামসহ ৩টি গ্রামের শতাধিক পরিবার এরই মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চাঁদপাশা ও রহমতপুর ইউনিয়নের মানচিত্র হুমকির মুখে পড়বে।’ 

ত্রাণ সহায়তা নয় ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ জামান মিলন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

এ বিষয়ে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মুশফিকুর রহমান বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদী ভাঙন রোধে বরাদ্দ চেয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত ওই এলাকার ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত