ছেড়া জাল বুনে সময় পার করছেন উপকূলের জেলেরা

সাইফুল ইসলাম আকাশ, বোরহানউদ্দিন (ভোলা)
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১২: ১৮
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ০৫

ভোলার বোরহানউদ্দিনের মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। এই সময়ে জেলেরা জাল বুনে সময় পার করছেন। 

গত ৪ অক্টোবর রোববার থেকে ২৫ অক্টোবর সোমবার পর্যন্ত দেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে বেশ কয়েক বছর ধরে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। এই সময়ে মাছ ধরা, বিপণন, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকে। নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হলে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। 

নিষেধাজ্ঞায় একরকম অবসর সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। তাই বলে বসে নেই উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ১০টি মাছঘাট এলাকার ১৮ হাজার জেলে। মাছঘাটসংলগ্ন সুবিধাজনক জায়গায় দল বেঁধে পুরাতন জাল মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। মাথার ওপর রঙিন শামিয়ানা টানিয়ে, সাউন্ডবক্সে সুরেলা গান বাজিয়ে দলবেঁধে মনের আনন্দে চলছে জাল মেরামত। 
 
উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মাছঘাট, খেলার মাঠ, বাজারের টংঘর এবং বিদ্যালয় ভবনের নিচের ফাঁকা জায়গায়ও জেলেদের জাল মেরামত করতে দেখা গেছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার পাড়ে মাছ ধরার নৌযানগুলো সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয়েছে। তবে জেলেদের ব্যস্তই দেখা গেছে, চলছে গল্প-স্মৃতিচারণও। এই জেলেদের অনেকে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সরকারি সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। 
 
গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ছেঁড়া জাল মেরামত করছিলেন জেলে আলমগীর, সিরাজ, মফিজ ও হাসেম মাঝি। জাল বোনার ফাঁকে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইলিশের ভরা মৌসুমে তাঁরা মাছ ধরতে পারছেন না। আয়-রোজগার নেই। অনেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। তবু সরকারি আদেশ অমান্য করছেন না। কেউ কেউ মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বোট ও জাল মেরামত করে ভবিষ্যতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

জাল মেরামত করছে জেলেরানিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ামাত্র তাঁরা নৌকা নিয়ে সাগরে বেরিয়ে পড়বেন। অন্যের জাল বুনে অনেকে উপার্জনও করছেন। জাল বুনলে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি দেন মাঝি। তা দিয়ে তো সংসার চলে না। এজন্য একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে মির্জাকালু মাছঘাট এলাকার জেলে দুলাল মিয়া বলেন, 'জাল তুনি কয়টা টিয়্যা পাই। এগিন দিয়েরে আমাগো ঘর নো চলে। এতল্লাই সুদি গরি টিয়া লই।' 

এদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আর মাত্র দুই দিন বাকি থাকায় অধিকাংশ ঘাটের জেলেরা জোরেশোরে শেষ সময়ে দ্বিগুণ শ্রমিক দিয়ে নৌকা মেরামতসহ জাল বোনার কাজ করছেন। অনেকে নৌকায় জাল ওঠানোর কাজে ব্যস্ত। এদিকে বন্ধ মাছের আড়তের গদিঘরগুলো ধোঁয়ামোছার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মালিকেরা। 

বোরহানউদ্দিন উপজেলা জেলে সমিতির সভাপতি জানান, মাছ ধরার অপেক্ষায় বোরহানউদ্দিনের প্রায় ১৮ হাজার জেলে। জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে মাছ শিকারে যাননি। এতে মা ইলিশ পর্যাপ্ত ডিম ছেড়েছে। আগামীতে প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে। 

বোরহানউদ্দিন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলী আহমেদ আখন্দ ২৩ অক্টোবর সকালে আজকের পত্রিকাকে জানান, ৪ অক্টোবর থেকে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত ৫০ জন জেলেকে নিষেধাজ্ঞা না মানায় বিভিন্ন মেয়াদে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারাদণ্ড এবং জরিমানা করা হয়েছে। 

মৎস্য কর্মকর্তা জানান, উপজেলার নিবন্ধনকৃত জেলেদের সরকারের পক্ষ থেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৫ই অক্টোবর সোমবার রাত ১২টায় শেষ হবে। নতুন করে সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলে এর পর থেকে জেলেরা নদ-নদীতে ইলিশ মাছ ধরতে পারবেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত