বরগুনার পাথরঘাটার জালিয়াঘাটা এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ দখল করে সপরিবারে বসবাস করছেন প্রধান শিক্ষক মো. ফেরদৌস। ছয় বছর ধরে তিনি বিদ্যালয়ে সংসার পেতে বসলেও শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তিনি সেখানে বসবাস করছেন। 

আজ সোমবার সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলায় দুটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে প্রধান শিক্ষক ফিরদৌস তাঁর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। শ্রেণিকক্ষের কয়েকটি বেঞ্চ ব্যবহার করে খাটিয়ার মতো তৈরি করেছেন। ছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য টয়লেটও দখলে নিয়েছেন তিনি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ব্যানার দিয়ে রান্নাঘরের বেড়া দিয়েছেন। 

বিদ্যলয়ের কক্ষ থেকে বের হয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস। তিনি বলেন, এটা হেডমাস্টারের স্পেশাল রুম, সরকার এটাকে করছেই এই জন্য। শিক্ষকেরা রান্না করবে, শিক্ষকেরা থাকবে এই জন্য। বিদ্যালয়ে কাজ চলছে, নির্মাণ শ্রমিকদের খাওয়ানোর জন্য রান্না করতে হয়। আমি বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত কক্ষে বসবাস করি। এটা সবাই জানে। আপনি শিক্ষা অফিসারকে জিজ্ঞাস করেন। 

প্রশ্নের মুখে একপর্যায়ে ক্ষেপে যান ফেরদৌস। অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেন। উচ্চস্বরে বলেন, আমি এইহানে থাকি, আপনাদের সমস্যা কী, আপনারা যা পারেন করেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একাধিক অভিভাবক জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘবছর ধরে বিদ্যালয় কক্ষ দখল করে বসবাস করছেন প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে তাঁকে কেউ কিছু বলার সাহস পান না। কারণ, তিনি প্রধান শিক্ষক। 

ওই এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় কক্ষে সপরিবারে থাকছেন। আসলে আলাদা করে তাঁর জন্য বাসভবনের ব্যবস্থা নেই। তবে বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটিকে জানিয়ে অনুমতি নিয়ে নেওয়া উচিত। কিন্তু আমার জানামতে তিনি সেটি না করেই ওই কক্ষ দুটি ব্যবহার করছেন। 

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জালাল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিদ্যলয়টিতে বর্তমানে ব্যবস্থাপনা কমিটি নেই। এডহক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চলছে। প্রধান শিক্ষকের বসবাসের জন্য বিদ্যালয়ে কোনো কক্ষ বরাদ্দ নেই। ওই শিক্ষক ছয় বছর আগে একবার বিদ্যলয়ে বসবাস শুরু করেছিলেন। পরে আমরা তাকে নেমে যেতে বলার পর কক্ষ ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর আবার উঠেছেন বলে শুনেছি। 

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পাথরঘাটা উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মুহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি তিনি পরিবার নিয়ে কক্ষ দখল করে বসবাস করে থাকেন তবে বিষয়টি আমরা দেখব। 

এ ব্যাপারে জেলার ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, আমার জানামতে প্রধান শিক্ষক নিজস্ব বাসা নিয়ে থাকেন। শ্রেণিকক্ষ দখল করে থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

বিষয়টি জানতেন না পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলে জানান তিনি।