ভোলায় ১ মাসে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১১৫৮ জন, ২ শিশুর মৃত্যু

মো. সাইফুল ইসলাম আকাশ, ভোলা প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯: ৫৯
Thumbnail image

ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গত এক মাসে ৬৩৫ জন ডায়রিয়ায় এবং ১ হাজার ১৫৮ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছে দুই শিশু। হাসপাতালে চিকিৎসকের সংকটে রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

জেলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১৯৯ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১৬৫ জন। এসব রোগী দুই মাস থেকে পাঁচ বছরের শিশু। তাঁদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত এক মাসে মোট ৬৩৫ জন ডায়রিয়ায় ও ১ হাজার ১৫৮ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। 

মারা যাওয়া শিশুরা হলো ৩ মাসের ফারিয়া ও দেড় বছর বয়সী তাহসিন। ফারিয়া ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সকাল ৯টার দিকে মারা যায়। তাহসিন ৩০ আগস্ট সকাল ৭টার দিকে ভর্তি হয়ে ৩১ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে মারা যায়। 

ফারিয়া দৌলতখান উপজেলার চরশুভি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফখরুল ইসলামের মেয়ে। তাহসিন জেলার সদর উপজেলার ধনীয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্লাল হোসেনের ছেলে। 

এদিকে ভোলা সদরসহ জেলার অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভিড় করছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী রোগী। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় অনেক রোগী মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে।  

জেলার সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিপাতের পর গরমের প্রকোপ বাড়ায় উপকূলীয় জ্বর, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগে শিশুদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সীরা আছেন। 

গত সোম ও মঙ্গলবার জেলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের ৫০ বেডের শিশু ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। অনেক শিশুকে বারান্দার মেঝে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বেডে দুই থেকে তিনজন শিশুকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

জেলার বোরহানউদ্দিন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর অভিভাবক রানু বলেন, ‘৬ দিন ধরে শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। জ্বর ভালো হচ্ছে না। খুব টেনশনে আছি।’ 

জ্বর ওঠায় দেড় মাস বয়সী সন্তান আবিরকে ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া এলাকা থেকে সদর হাসপাতালে এনেছেন মা-বাবা। আবিরের ঠাঁই হয়েছে শিশু ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে। আবিরের বাবা বলেন, ‘জ্বরে ছেলেটার শরীর যেন পুড়ে যাচ্ছে। আমার খুব খারাপ লাগতেছে আজকে কত দিন ধরে অসুস্থ। সুস্থতার কোনো হদিস দেখছি না।’ 

সদর উপজেলার বাসিন্দা কুসুম বেগম, ছালমা বেগম ও আব্দুর রহমান পরিবারের শিশুদের নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছেন ভোলা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে। কিন্তু চার থেকে পাঁচ দিন হয়ে গেল সুস্থ হচ্ছে না তারা। 

শিশু ওয়ার্ডে থাকা রোগীর স্বজনদের দাবি, শিশুদের জন্য হাসপাতাল থেকে কোনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। সেখানে খুব কষ্টে দিন পার করছেন তাঁরা। 

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু ওয়ার্ডের একাধিক রোগীর স্বজন জানান, তিন থেকে চার দিন ভর্তি হলেও রোগীদের দেখতে আসেন না কর্তব্যরত চিকিৎসক। সঠিক চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় সুস্থ হচ্ছে না তারা। টাকার অভাবে বেসরকারি হাসপাতালে ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, নার্সরা মাঝেমধ্যে এসে চিকিৎসা দেয়, এতে আমাগো সন্তান কীভাবে সুস্থ হবে যদি ডাক্তার না দেখে? 

সদর উপজেলার দক্ষিণ দীঘলদি ইউনিয়নের ১১ মাস বয়সী শিশু নুসাইবাকে নিয়ে হাসপাতালে যান মা রুজিনা বেগম। তাঁর মেয়ের শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে এবং মেয়ের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত দেখে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র না নিয়ে চলে যান বেসরকারি হাসপাতালে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবিকা বলেন, রোগী থাকার কথা ৫০ জনের, কিন্তু থাকছে ২০০-৩০০ জন। এত রোগীর চিকিৎসাসেবা কমসংখ্যক জনবল দিয়ে সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, শিশুদের ওয়ার্ডে খাবার বরাদ্দ নেই। 

হাসপাতালে চিকিৎসক, সেবিকা, শয্যা পর্যাপ্ত না থাকায় সেবা ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ আবু আহমেদ শাফী। তিনি বলেন, রোগীর চাপে ওষুধের সংকটও দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এসব সংকট কাটানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত সমাধান হয়ে হবে। 

তত্ত্বাবধায়ক আবু আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালে পদ রয়েছে ৬০ জন চিকিৎসকের। এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ২০ জন। ৮৬ জন নার্সের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ৪৫ জন। জনবলের সংকটের কারণে চিকিৎসা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’ 

ভোলা জেলা সিভিল সার্জন কে এম শফিকুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার কারণে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ বেশি, অভিভাবকদের আরও সচেতন এবং যত্নবান হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত