স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে কবর সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৫৩

কুমিল্লা সদরের ধনুয়াখলা এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে নিজের দেওয়া জমি থেকে দাতার কবরস্থান সরিয়ে ফেলার অভিযোগে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল বুধবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে মৃতের পরিবার। এর আগে ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয় তারা। 

অভিযোগে জানা গেছে, সদর উপজেলার কালিরবাজারের ধনুয়াখলা গ্রামে ওয়াক্ফ করা জায়গায় সামাজিকভাবে নির্মিত মসজিদের গেটে প্রভাব খাঁটিয়ে ‘প্রতিষ্ঠাতা’ নাম লেখা ও মসজিদের মাঠ সংস্কারের নামে ওয়াক্ফ দাতা ব্যক্তির কবরস্থান ভেঙে ফেলা হয়। 

এ নিয়ে মৃত ব্যক্তির ছেলে ইতালিপ্রবাসী সফিকুল ইসলাম স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। 

অভিযোগে সফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তাঁর বাবা আবদুল গণি মিয়া ও চাচা আব্দুর রহমান ১২ শতাংশ জমি মসজিদের জন্য ওয়াক্ফ করেন এবং ধনুয়াখলা পশ্চিমপাড়া মদিনা মসজিদ নির্মাণ করেন। ওই সময়ের টিন ও বেড়ার নির্মিত মসজিদটি এলাকার প্রবাসীদের অনুদান ও গ্রামবাসীর সহযোগিতায় বর্তমানে দোতলা মসজিদে রূপান্তর হয়েছে। শুরুতে তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে মসজিদটি নির্মাণ হলেও পরে সামাজিকভাবে মসজিদটি উন্নয়ন করা হয়। 

কিন্তু গ্রামবাসীর সহযোগিতায় নির্মিত মসজিদের গেটে প্রভাব খাঁটিয়ে সুলতান আহাম্মদ মাস্টারের নাম ‘প্রতিষ্ঠাতা’ লিখে দেন তাঁর ছেলে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মাকসুর রহমান টিটু। মসজিদের জমির দাতা তাঁরা (আবদুল গণি মিয়া) অথচ প্রতিষ্ঠাতা দাবি করছেন টিটু। 

সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা প্রায় ৩০ বছর আগে মারা যান। বাবার ওসিয়ত অনুসারে তখন তার ওয়াক্ফ করা জায়গায় মসজিদে পাশে তাকে কবর দেন গ্রামবাসী। গত কয়েক দিন আগে মসজিদের মাঠ সংস্কারের নামে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা টিটু ও যুবলীগ কর্মী জাকির হোসেনের নেতৃত্বে পাকা কবর ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমাদের না জানিয়ে সেখান থেকে কবরটি সরিয়ে ফেলা হয়। বাবার কবরের স্মৃতি চিহ্ন রক্ষা করতে সকলের সহযোগিতা চাচ্ছি।’ 

আবদুল গণি মিয়ার মেয়ে রানু বেগম বলেন, ‘বাবা মসজিদের জন্য জমি দিয়েছেন। তাঁর ওসিয়ত অনুযায়ী মসজিদের পাশে করব দেওয়া হয়েছে। সেখানে কবরটি ৩০ বছর যাবৎ আছে। হঠাৎ আমাদের পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে বাবার কবরটি ভেঙে ফেলা হয়। কবরটি সরিয়ে ফেলা হয়। বাবার দান করা জমিতে তারা কবর থাকবে না তা কীভাবে হয়? আমরা জমির দাতা অথচ প্রতিষ্ঠাতা দাবি করেন তাঁরা।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনু মিয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার পরবর্তীতে আবদুল গণি মিয়া ও আব্দুর রহমান স্থানীয়দের মসজিদ করার বিষয়ে আলাপ করেন। জমি দেবেন বলে প্রস্তাব দেন। পরে তাঁরা মসজিদের নামে জমি দিলে প্রথমে মক্তব করা হয়। পরে টিন শেডের মসজিদ তৈরি করা হয়। পর্যায়ক্রমে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মসজিদটি দুই তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। মসজিদের দাতা ছিলেন আবদুল গণি মিয়া ও আব্দুর রহমান। পরে মসজিদের কাজ তদারকি ও সহযোগিতা করেন সুলতান আহাম্মদ মাস্টার। হয়তো এ কারণে তিনি প্রতিষ্ঠাতা দাবি করেন।’ 

আরেক বাসিন্দা নূরুল ইসলাম বলেন, ‘মসজিদের জমির দাতা আবদুল গণি মিয়ার কবরটি মসজিদ মাঠের পাশে ছিল। গত কয়েক দিন আগে তা সরিয়ে পাশে নেওয়া হয়। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’ 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মসজিদের মাঠ বড় করার জন্য কবর সরানো হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ নিয়ে পরিবারের ক্ষোভ রয়েছে।’ 

অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাকসুর রহমান টিটু বলেন, ‘মসজিদের যাবতীয় কাজ আমার বাবা করেছেন, দেখা-শোনাও করেছেন। মসজিদের জন্য আমরা আরও কিছু জমিও কিনেছি। আর মসজিদের সকল মুসল্লিদের উপস্থিতিতে তাদের পরামর্শে মসজিদ মাঠের জায়গা বড় করার জন্য কবরটি সরিয়ে একটু পাশে নেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ধর্ম অবমাননা: একই স্ট্যাটাসের জন্য দ্বিতীয়বার অভিযুক্ত হৃদয়

আমিরাতে অবৈধদের সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ আর মাত্র দুদিন

৫ আগস্ট সশস্ত্র সংগ্রামের ভিডিও বার্তা দিয়ে রেখেছিলাম: উপদেষ্টা নাহিদ

ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ইরানের সামরিক বাজেট তিনগুণ

রাজধানীতে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদ করায় লেগুনা চালককে ছুরিকাঘাতে হত্যা

আরও
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত