ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাকশ্রমিকদের করা অবরোধ দেড় ঘণ্টা পর প্রত্যাহার

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৪, ২০: ০৩
Thumbnail image

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন ডেনিম প্রসেসিং প্ল্যান্ট লিমিটেড নামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকেরা। আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ চলে টানা দেড় ঘণ্টা। এতে মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে ঈদযাত্রায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রী ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স। 

জানা গেছে, গত দুই মাসের বকেয়া বেতনসহ বোনাসের টাকা না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে মহাসড়ক অবরোধে নামেন তাঁরা। প্রশাসনের উপস্থিতিতে মালিকপক্ষ শনিবার শ্রমিকদের সব বেতন-বোনাস পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলে মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকেরা। সময়মতো বেতন দেওয়া না হলে আবারও আন্দোলনে যেতে পারেন বলেও জানান তাঁরা। 

একাধিক বিক্ষুব্ধ শ্রমিক বলেন, ‘আমরা পেটের দায়ে গার্মেন্টসে চাকরি করি। এই গার্মেন্টসে সব সময়ই এক মাসের বেতন আটকে রাখা হয়। আর বছরে তিন-চার মাসের বেতন আটকে রাখা হয়। এ ছাড়া মাসে ৯০ ঘণ্টা ওভারটাইম করলেও ৩০-৩৫ ঘণ্টার টাকা দেয়। বাকি ওভারটাইম পুরোটাই কেটে দেয় তারা। শ্রমিকদের ঘাম ঝরা টাকা খেয়ে ফেলে মালিক কর্তৃপক্ষ। ঈদের আর মাত্র দুই দিন বাকি, এখনো আমাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া এমনকি বোনাসও দেওয়া হয় নাই। আমরা ঈদ করব কীভাবে?

শ্রমিক মাহাবুব, ফিরোজসহ একাধিক শ্রমিক বলেন, ‘বেতন না পেয়ে বাধ্য হয়ে আমরা মহাসড়কে এসেছি। এখানে আসার পর পুলিশের সঙ্গে মালিক পক্ষের গুন্ডা বাহিনীও আমাদের মারধর করেছে। আমাদের এক নারী শ্রমিকসহ তিনজনকে বেধড়ক মারধর করেছে তারা।’ 

এদিকে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক টানা দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকায় উভয় পাশে মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার কাবিলা থেকে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ২০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। অবরোধে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ঈদের ছুটেতে ঘরমুখী যাত্রী ও চালক-শ্রমিকদের। বেশি বেকায়দায় পড়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশগামী যাত্রী ও হাটের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া গরুবাহী ট্রাকচালকেরা। 

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার বিদেশগামী যাত্রী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বেলা ২টার মধ্যে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। দ্রুত পৌঁছার জন্য প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু যানজটে আটকে পড়ে চান্দিনাতেই দেড়টা বেজেছে।’ 

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা গরুবাহী ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গরু নিয়ে চট্টগ্রাম যাব। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে যানজটে আটকে আছি। এমন রোদে গরুগুলোও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।’ 

চট্টগ্রামগামী যাত্রী শাহানা পারভীন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শ্রমিকেরা চাকরি করেন গার্মেন্টসে, যদি তাদের বেতন বোনাস না দেওয়া হয় তাহলে তারা গার্মেন্টসে বিক্ষোভ করবে। মহাসড়কে উঠে হাজারো মানুষকে কেন দুর্ভোগে ফেলবে? মহাসড়কে চলাচলরত গাড়িচালকেরা কি তাদের বেতন দেবে? এসব ঘটনায় প্রশাসন আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।’ 

ডেনিম প্রসেসিং প্ল্যান্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গতকাল থেকেই বেতন–বোনাস দেওয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে আবারও বেতন–বোনাস দেওয়া হচ্ছিল। সব শ্রমিকেরা নয়, কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল পোলাপান মহাসড়কে উঠেছিল।’ 

ওভারটাইম কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে সব শ্রমিক ঘণ্টায় টার্গেট অনুযায়ী প্রোডাকশন দিতে পারে না। তখন টার্গেট হিসাব করে ওভারটাইমের টাকা দেওয়া হয়।’ 

চান্দিনা উপজেলা কর্মকর্তা (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব বলেন, ‘মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। শনিবার তাঁদের বেতন ও বোনাস নিশ্চিত করা হবে। তবে মহাসড়ক অবরোধ করে যাত্রীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করা দুঃখজনক।’ 

চান্দিনা-দাউদকান্দি সার্কেলের অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এনায়েত কবির সোয়েব বলেন, অনেক চেষ্টার পর শ্রমিকেরা অবরোধ উঠিয়ে নিলে যান চলাচল শুরু হয়। দেড় ঘণ্টায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লেগেছে। চান্দিনা থানা-পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ সহযোগিতা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত