ঋণ নিয়ে চলছেন জেলেরা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২১, ১১: ০০

প্রায় চার মাস ধরে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বামউক)। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন খাগড়াছড়ির মহালছড়ির প্রায় ১ হাজার ৬০০ জেলে। বিকল্প আয় না থাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) বা দাদন ঋণ নিয়ে সংসার চলছে তাঁদের।

প্রজনন মৌসুম হওয়ায় মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাসে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ রাখে বামউক। প্রতিবছর ৯০ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও এবার আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।

বামউক সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কাপ্তাই লেকে পানি কম। এমন পরিস্থিতিতে লেকে জাল ফেললে মাছের পোনা ধরা পড়বে। এতে মাছের উৎপাদন কমার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে কাপ্তাই লেকে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপকেন্দ্রে মাছ আহরণ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৬৭ লাখ ৬০ হাজার ২৫৪ টাকা।

হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে ঋণ নিয়েছেন জেলে জয়নাল আবেদিন। তিনি জানান, প্রতিবছর ৯০ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ সময় আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এবার আরও ৩০ দিন নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘সরকারি সহায়তার ৬০ কেজি চাল পেয়েছি। মাসে ২০ কেজি চাল দিয়ে কি সংসার চলে? বাধ্য হয়ে এনজিও থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। মাছ শিকার শুরু হলে মাছ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ৫ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে।’

একইভাবে মৎস্যজীবী নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এ পর্যন্ত এনজিও থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। সরকার আমারদের মাসে ২০ কেজি করে রেশনের চাল দিচ্ছে। এটা দিয়ে আমাদের চার থেকে পাঁচ দিন চলবে। চালের সঙ্গে অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী জোগাড় করতে হয়।’

খাগড়াছড়ির মহালছড়ির ১ হাজার ৫৯১ জেলের জীবন প্রায় একই রকম। সবার প্রায় একই কথা, প্রতিটা দিন খুব কষ্টে যাচ্ছে। এদিকে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকে আইন অমান্য করে মাছ ধরছেন। এ সময় ৩১৩ কেজি মাছ জব্দ করেছে বামউক।

জেলেপল্লির ফরিদা বেগম-ফজর আলী দম্পতি জানান, প্রতিবছর ৯ মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরে সংসার চলে তাঁদের। এবার চার মাস বন্ধ থাকায় আট মাস মাছ ধরতে পারবেন। বিকল্প আয়ের সুযোগ না থাকায় এই সময়ে প্রতি পরিবারকে ২০ কেজি চাল দেয় সরকার।

ফরিদা-ফজর দম্পতি বলেন, ‘আমাদের পরিবারে আটজন সদস্য। সরকারি রেশন দিয়ে কিছুই হয় না। এ সময় যদি সরকার একটু বাড়তি সহযোগিতা করত, তাহলে কোনো রকমে চলতে পারতাম।’

মহালছড়ি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, ‘জেলেদের প্রতিটি পরিবারে সদস্য পাঁচ-ছয়জন থাকে। তাঁদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেলে কীভাবে সংসার চালাবেন? এবার মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা আরও এক মাস বাড়ানোয় জেলেদের অবস্থা খুবই খারাপ। কেউ লোন করেছেন, কেউ দাদন নিয়েছেন। তিন মাসে জেলেরা ৬০ কেজি চাল পেয়েছেন। অথচ অনেক পরিবার আছে, মাসে ৬০ কেজি চাল লাগে।’ 

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের উপকেন্দ্রপ্রধান মো. নাসরুল্লাহ জানান, ‘জেলার মহালছড়ি ও দীঘিনালা উপজেলায় ২ হাজার ৭৭৬ জন নিবন্ধিত জেলে আছেন। তাঁরা মাছ ধরা বন্ধের সময়টাতে প্রতি মাসে ২০ কেজি করে রেশন পান। এবার বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে লেকে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা আরও কয়েক ধাপে ৩০ দিন বাড়ানো হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত