চবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন: সাদা দল নেই, হলুদ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী ‘উপাচার্যপন্থী’

মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ২০: ২৭

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এবারও অংশ নিচ্ছেন না বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকেরা। জাতীয় নির্বাচন বর্জনের ধারাবাহিকতায় তাঁরা এই নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

এদিকে আওয়ামী ও বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দল পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিলেও নিজেদের মূল হলুদ দল দাবি করে পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিয়েছে হলুদ দলের আরেক অংশ। হলুদ দলের বিপরীতে বিদ্রোহী এই প্যানেলকে ‘উপাচার্যের প্যানেল’ বলছেন হলুদ দলের নেতারা। 

অন্যদিকে হলুদ দলের বিদ্রোহী এক প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। 

এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১১টি পদে ২৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে অসম্পূর্ণতার কারণে একজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল ও অপর একজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। তবে ভোটারেরা ২ ও ৬ ফেব্রুয়ারি অগ্রিম ভোট দিতে পারবেন।’ 

জাতীয় নির্বাচন বর্জনের ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনও বর্জন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নসরুল কাদির। 

তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সারা দেশে নির্বাচনের চিত্র একই। জাতীয় নির্বাচনও বয়কট করা হচ্ছে। তাই আমরাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির বর্তমান যে অবস্থা, তাতে আমরা লজ্জিত ও বিব্রত।’ 

কাউকে সমর্থন দিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেব।’ 

একই কথা বলেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে সাদা দল নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে না। বর্তমানে এত বেশি দলীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যে, নির্বাচন করার মতো কোনো অবস্থা নেই।’ 

এ দিকে হলুদ দলের বিপরীতে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীদের উপাচার্যের প্রার্থী বলে দাবি করেছেন হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির একাধিক সদস্য। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তাঁরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, হলুদ দলের প্যানেলের বাইরে আরেকটি যে প্যানেল প্রার্থী দিয়েছে, ওটা উপাচার্যেরই প্যানেল। ওই প্যানেলের সিংহভাগই প্রশাসনের বিভিন্ন পদে রয়েছেন। 

সভাপতি পদে হলুদ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমরা মূল হলুদ দলের প্রার্থী। হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈধতা নেই। আমরা এটা বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কে কী বলল তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। এটা আমাদের বিষয়ও না। ওটা ওনাদের বিষয়। 

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করলেও নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘হলুদ দলের প্রার্থীদের বিপরীতে যুগ্ম সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থী ড. আদনান মান্নান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। নির্বাচন কমিশন তাঁকে জানিয়েছে, দুপুর ১টার মধ্যে হার্ড কপি জমা দিতে হবে। তিনি ১টার মধ্যে হার্ড কপি জমা দিলেও কমিশন তা গ্রহণ করেনি।’ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’–এ নির্বাচন কমিশন অনলাইনে আবেদন গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। 

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আমরা সবকিছু নিয়ম মেনেই সম্পন্ন করেছি।’ 

অন্যদিকে একাডেমিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেছেন কমিশনার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে এসেছি। আজকে আমার বিভাগের পরীক্ষা ছিল সেখানে আমি থাকতে পারিনি, ক্লাসের প্রিপারেশনেরও একটা ব্যাপার আছে সঙ্গে। সর্বোপরি আমার একাডেমি কাজে ব্যাঘাত ঘটছে, বিধায় আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’ 

নির্বাচনে প্রার্থী যারা
হলুদ দল থেকে সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকি, সহসভাপতি পদে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলা উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ পদে ড. মুহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুলতানা সুকন্যা বাশার, ৬ টি সদস্য পদে যথাক্রমে-মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এস. এম. সালামত উল্যা ভূঁইয়া, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল করিম, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শেখ সাদী, ওশানোগ্রাফি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. এনামুল হক ও ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌমিতা পাল। 

হলুদ দলের বিদ্রোহী প্যানেলের প্রার্থী যারা
সভাপতি পদে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন, সহসভাপতি পদে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ, কোষাধ্যক্ষ পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মীর সাইফুদ্দীন খালেদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, যুগ্ম সম্পাদক পদে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান ও ৬টি সদস্য পদে যথাক্রমে-পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জ্ঞান রত্ন শ্রমণ, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ঝুলন ধর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ড. মো. দানেশ মিয়া, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রকিবা নবী ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ। 

এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সহিদ উল্ল্যাহ প্রার্থী হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত