চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধ টার্মিনাল: আ.লীগের দখলমুক্ত হয়ে বিএনপি নেতার কবজায়

  • দিনে অন্তত ৫০ হাজার টাকা তোলা হচ্ছে।
  • ঘটছে মাদক, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ।
  • বৈধ টার্মিনালের দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষা।
সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম 
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৩০
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ০৬
Thumbnail image
চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গাটি দেড় বছর আগে ছাত্রলীগ-যুবলীগের দখলমুক্ত করা হয়। এখন তা বিএনপি নেতাদের দখলে চলে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেড় বছর আগে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হাত থেকে দখলমুক্ত করা হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চার একর জমি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার তা বিএনপির নেতাদের দখলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জায়গাটিতে অবৈধভাবে ট্রাক টার্মিনাল বসিয়ে পার্কিং-বাণিজ্য চলছে। পার্কিং ফি বাবদ প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান থেকে অন্তত ৫০ হাজার টাকা তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া অবৈধ টার্মিনালটি ঘিরে চলছে মাদক সেবন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ ও সমাজবিরোধী কাজ।

বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকলেও দৃশ্যত দখলদারদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জায়গাটি দখলমুক্ত করার ব্যাপারে তাদের উদ্যোগ নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রের তথ্যমতে, অবৈধ দখলে যাওয়া জায়গাটিতে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে।

কয়েক বছর আগে আবর্জনায় ভরা জায়গাটি ভরাট করে সমতল করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদিত না হওয়ায় জায়গাটি খালি পড়ে থেকে এবং একসময় অবৈধ দখলে চলে যায়। পরে আবার একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে তা দখলমুক্তও করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে মার্চে জায়গাটি স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়।

উচ্ছেদের পর জমিটিতে আর যাতে গাড়ি ঢুকতে না পারে সে জন্য দেয়াল তুলে ঘিরে দেওয়াও হয়। সম্প্রতি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জায়গাটি আবার দখলে নেওয়া হয়েছে। টার্মিনাল বানাতে দেয়াল ভেঙে গাড়ি চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ আগ্রাবাদ ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসম্পাদক হাসান রুবেলের নেতৃত্বে এ সরকারি জায়গা দখল করা হয়। তাঁকে সহায়তা করেন মো. জমির নামে নগর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির একজন নেতা।

অভিযোগের বিষয়ে ফোনে জানতে চাইলে বিএনপির নেতা হাসান রুবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা সত্য নয়। আমি একজন রাজনৈতিক নেতা। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। আমার নাম বিক্রি করে অনেকে এসব করছে। আরও অনেক কিছু হচ্ছে।’

হাসান রুবেল এ সময় বিষয়টি নিয়ে ‘সামনাসামনি’ কথা বলতে বলেন এ প্রতিবেদককে।

ফোনে নগর বিএনপির নেতা মো. জমিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বন্দরের জায়গাটিতে প্রতিদিন চালকেরা শতাধিক ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান পার্ক করেন। এ গাড়িগুলো মূলত চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করে থাকে। পার্কিং বাবদ প্রতি শিফটে গাড়িপ্রতি আদায় করা হচ্ছে ২০০ টাকা করে। জানা গেছে, পার্কিংয়ের এই ফি আদায় করেন নাদিম ও সাহাবুদ্দিন নামের দুই যুবক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক (এস্টেট-২) মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অবগত না। আমরা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

তবে এস্টেট শাখারই আরেকজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা বিষয়টি জানেন। কিন্তু দখলদারেরা রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়ায় কর্তৃপক্ষ অ্যাকশনে যেতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।

বৈধ পার্কিংয়ের সুযোগ সীমিত

পরিবহনসংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে দৈনিক হাজার হাজার কাভার্ড ভ্যান, ট্রাকসহ বিভিন্ন যান চলাচল করে। বন্দরে পণ্য ওঠানামার সময় গাড়িগুলোকে সিরিয়ালের জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। বন্দরকেন্দ্রিক গাড়ির সংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট টার্মিনাল বা পার্কিংয়ের স্থান নেই। কিছু বেসরকারি টার্মিনাল থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় কম। অনেক মালবাহী গাড়ির চালক তাই সড়কের ধারেই গাড়ি রাখেন। সে ক্ষেত্রে আইন ভঙ্গ হওয়ায় মামলা দেয় ট্রাফিক পুলিশ। এ কারণে চালকদের একটা অংশ এমন অবৈধ টার্মিনাল ব্যবহার করেন।

আন্তজেলা মালামাল পরিবহন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমদ এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশে মালামাল পরিবহনের জন্য একটি টার্মিনাল নির্মাণ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। গত সরকারের সময় বে-টার্মিনালসংলগ্ন জাইল্ল্যাপাড়া এলাকায় একটি টার্মিনাল করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এখন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে চেয়ে আছি। ইতিমধ্যে আমরা দাবির বিষয়ে সরকারকে জানিয়েছি।’

দখলকৃত জায়গায় গড়ে তোলা টার্মিনাল স্থানীয় পরিবেশও নষ্ট করছে। কাছের বলিরপাড়া মসজিদ কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মসজিদের পাশেই ট্রাক রাখায় সেখানে মুসল্লিদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া জায়গাটিতে মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত