Ajker Patrika

কাপ্তাইয়ে ‘রিলং পোয়ে’ গেয়ে মারমাদের বর্ষবরণ

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ২১: ৫৩
কাপ্তাইয়ে ‘রিলং পোয়ে’ গেয়ে মারমাদের বর্ষবরণ

‘সাংগ্রাইমা ঞিঞি ঞাঞা রিকজাইগাইপামে, ওও ঞি কো রো ওও মি ম্রি রো, লাগাই লাগাই, চুইপ্যগাইমেলেহ্।’ অর্থাৎ নববর্ষে সবাই মিলে এক সমানে একসঙ্গে জল খেলতে যায়, ও ও ভাইয়েরা, ও ও বোনেরা, খুশিতে মিলিত হয়। আজ শনিবার সকালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মারমা রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে এই গান গেয়েই সাংগ্রাই বা বর্ষবরণের সূচনা করেছে। 

সাংগ্রাই উৎসবের অংশ জলকেলির অন্যতম জনপ্রিয় এই গানকে বলা হয় ‘রিলং পোয়ে’। গানটি গেয়ে যখন মারমা শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা করেন—তখন হাজারো লোকের কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে কাপ্তাইয়ের চিৎমরম বৌদ্ধবিহার মাঠ। এই যেন প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়েছেন তাঁরা। 

কাপ্তাইয়ে মারমা তরুণ–তরুণীদের জলকেলি খেলার প্রস্তুতিকাপ্তাইয়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধবিহারের সাংগ্রাই রিলং পোয়ে উদ্‌যাপন কমিটি এর আয়োজন করে। এর আগে আজ সকাল ১০টার দিকে বিহারসংলগ্ন মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। বাদ্যের তালে তালে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে শোভাযাত্রায় শত শত মারমা সম্প্রদায়ের নর-নারী অংশ নেন। 

পুরোনো বর্ষকে বিদায় ও নববর্ষকে বরণ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই রিলং পোয়ে গেয়ে থাকে। এদিন মারমা যুবক-যুবতীরা একে অপরের প্রতি জল ছিটিয়ে পুরোনো বছরের দুঃখ, গ্লানি ও বেদনাকে ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান। 

এ ছাড়া উৎসব উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। 

কাপ্তাইয়ে মারমাদের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আগত লোকজন‘সাংগ্রাই রিলং পোয়ে’ উৎসবে অংশ নিতে আসা কাপ্তাইয়ের মারমা শিল্পী শোয়ে মে চৌধুরী বলেন, ‘সাংগ্রাই উৎসব, আমাদের প্রাণের উৎসব। বছরের এই দিনে আমরা সবাই মিলিত হই, আনন্দ করি।’ 

উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক ক্যচিং প্রু মারমা বলেন, ‘মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে এখন উৎসবে-আনন্দে মাতোয়ারা সমগ্র চিৎমরম এলাকা। উৎসবকে ঘিরে নানা বর্ণের মানুষের আগমন ঘটেছে এই এলাকায়।’ 

উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যসচিব পাই সুই উ মারমা বলেন, ‘এই সাংগ্রাই জল উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরছি। সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নেব।’ 

কাপ্তাইয়ে মারমাদের সাংগ্রাইয়ের সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানএদিকে সাংগ্রাই রিলং পোয়ে: উৎসব উপলক্ষে বিহারসংলগ্ন মাঠে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আলোচনা সভা হয়। চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরীর সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেট হ্লা থোয়াই মারমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কাপ্তাই ৪১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ধ। আর সামাজিক উৎসবের মাধ্যমে এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’ 

কাপ্তাইয়ে মারমাদের সাংগ্রাইয়ের সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানএ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাঙামাটি জেলা যুগ্ম জজ মিল্টন হোসেন, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা, চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম বাবু ও চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী। 

স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক ক্যচিং প্রু মারমা। আলোচনা সভা শেষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন স্থানীয় মারমা শিল্পীরা। 

মূলত ১৫ এপ্রিল মূল সাংগ্রাই উৎসব উদ্‌যাপন হলেও ১৩ এপ্রিল হতে চিৎমরম এলাকায় বসে বৈশাখী মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে হরের রকম পণ্য নিয়ে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা তাঁদের পসরা সাজিয়েছেন এ উৎসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় যে কারণে চীনের সঙ্গে পেরে উঠছে না ভারত

মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ঢাকা: এনসিপি নেতা-কর্মীদের গলা ধাক্কা

সারা জীবন ‘একজনের কাছে কৃতজ্ঞ’ থাকবেন তামিম, কে তিনি

বিমসটেকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের চেষ্টায় মিয়ানমার: রয়টার্স

সচিবালয়ে কর্মরতদের রেশন দেবে সরকার, ক্ষুব্ধ বাইরে কর্মরতরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত