জমির উদ্দিন, বান্দরবান থেকে
পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এবার টার্গেট বান্দরবানের রোয়াংছড়ি। এর আগে তারা জেলার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি—এই তিন উপজেলায় হামলার ঘোষণা দিয়েছিল। এরই মধ্যে থানচিতে দুই দফা ও রুমায় এক দফা হামলা চালিয়েছে। দুটি ব্যাংক লুট ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে অপহরণ করেছে। ঘোষণা অনুযায়ী, তাদের পরবর্তী হামলা রোয়াংছড়িতে হওয়ার কথা।
‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি কেএনএ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ১২ মার্চ একটি পোস্ট দেওয়া হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, বাংলাদেশের একটি বাহিনী বম সম্প্রদায়ের নিরীহ জনগণ লালমুয়ানওম বম (গিলগাল বা অবচলিত পাড়া) এবং রামনুয়াম বমকে (দুনিবার পাড়া) আটক করেছে। এর ফল খুব সুন্দরভাবে ফিডব্যাক দেওয়া হবে। নিরীহ জনগণকে হয়রানি বন্ধ করা না হলে।’
‘বান্দরবনবাসী’ নামক আরেকটি পেজে গত ফেব্রুয়ারিতে আরও একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে এই তিন জায়গায় হামলার কারণ হিসেবে ‘তাদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ ও রুমায় এক মারমা যুবককে গুলি করার প্রতিবাদে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রুমায় কেএনএফের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে’ তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির ইনফরমেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন ফ্লেমিংয়ের বরাতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণার ২১ দিনের মাথায় বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলার ঘটনা ঘটে।
তবে এসব পেজ ও পেজে থাকা মেইলে আজকের পত্রিকা দুই দিন আগে প্রশ্ন লিখে পাঠায়। কিন্তু এসব পেজ ও মেইল থেকে কোনো ফিরতি বার্তা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কেএনএফের প্রধান নাথান বমের উপদেষ্টা লাল অংলিয়ান বমের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আজকের পত্রিকা; একটি সোর্সের মাধ্যমে কিছু প্রশ্ন করে পাঠানো হয়। তবে তিনি এসব প্রশ্নের জবাব দেননি।
সম্প্রতি কেএনএফের হামলার বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন।
রোয়াংছড়িতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোয়াংছড়ির দায়িত্বে থাকা বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. শাহ আলম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘রোয়াংছড়িতে এখন পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। তবে আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি।’
গত মঙ্গলবার থেকে হামলা শুরু করে কেএনএফ। এর মধ্যে বান্দরবানের রুমা, থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক, সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে থানচিতে আরেক দফা হামলা হয়।
সর্বপ্রথম মঙ্গলবার রাতে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে কেএনএফের ১০০ জনের সশস্ত্র দল বান্দরবানের রুমার সোনালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটায়। ইউনিফর্ম পরা সশস্ত্র লোক দেখে ভয় পেয়ে যান সবাই। তাঁরা মনে করেছিলেন, আজই তাঁদের জীবনের শেষ দিন। ঘটনার সময় সোনালী ব্যাংকের পাশের মসজিদে ২০-২৫ জন মুসল্লি জামাতে নামাজ পড়ছিলেন। ওই মসজিদের ইমাম মো. নুরুল ইসলাম ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তখন সবে এশার নামাজের তিন রাকাত শেষ। চতুর্থ রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর সময় কেএনএফের সশস্ত্র পাঁচজন লোক তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ান। নামাজ শেষে তাঁরা বলেন, ‘নামাজ তো শেষ। এবার সবার মোবাইল জমা দেন।’
এই ব্যাংকের অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ বা কুকি চিন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়। পরদিন বুধবার বেলা ১টার দিকে থানচি উপজেলার বাজারে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দুটি শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এটির সঙ্গেও কেএনএফ জড়িত বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
রুমা উপজেলা বান্দরবান সদর থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরে। বান্দরবান থেকে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে গাড়িতে যেতে লাগে দুই ঘণ্টা। এই পথে রয়েছে পুলিশের চারটি ক্যাম্প, একটি আনসার, দুটি বিজিবি ও তিনটি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। রুমায় যেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিনবার তল্লাশির মধ্যে পড়তে হয়। রুমার যে সোনালী ব্যাংক শাখায় কেএনএফ হামলা চালায়, সেটির পাশেই আছে আনসার ক্যাম্প। উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়। এই ব্যাংক থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ইডেনপাড়ায় কেএনএফের কার্যালয়। যদিও এটি বন্ধ পাওয়া গেছে। কার্যালয়ের পাশেই আবার কেএনএফের প্রধান নাথান বমের বাড়ি।
যেভাবে হামলা চালায় কেএনএফ
১০ জন স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। এর মধ্যে একজন সোনালী ব্যাংক শাখার কর্মচারী নারায়ণ চন্দ্র নাথ। তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকের এই ভবনটি একসময় উপজেলা অফিসারদের বাসভবন ছিল। এখন এটির দ্বিতীয় তলায় ব্যাংকের কার্যক্রম চলে। নিচে উপজেলা অফিসের কর্মকর্তারা থাকেন। ঘটনার দিন কোয়ার্টারের সবাই পাশের মসজিদে নামাজে চলে যান। ব্যাংকে চারজন আনসার সদস্য ছিলেন। কেএনএফের সদস্যরা ঢুকেই এই চারজন আনসার সদস্যের অস্ত্র জব্দ করে বসিয়ে রাখে। তারপর খুঁজতে থাকে ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে।
একই সঙ্গে কেএনএফের অন্য একটি দল সোনালী ব্যাংকের পাশের মসজিদ যান। আরেকটি দল পাশেই আনসার ক্যাম্পে হামলা চালায়। এ সময় সব আনসার সদস্যের অস্ত্র নিয়ে যায় তারা। মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এশার নামাজ পড়ার সময়ই সামরিক পোশাক পরা ও গালে কালি লাগানো সশস্ত্র পাঁচজন পাশে দাঁড়ায়। নামাজ শেষে বলে, কেউ নড়াচড়া করবা না। সবার মোবাইল দিয়ে দাও। আমাদের এক প্রকার জিম্মি করে ফেলে তারা। আমাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে যায়।’
নুর ইসলাম বলেন, ‘এরপর তারা ব্যাংকের ম্যানেজারকে খুঁজছিল, কিন্তু পাচ্ছিল না। এ সময় মসজিদে উপস্থিত সবাইকে বলা হয়, এখানে ব্যাংকের ম্যানেজার কে? ওই সময় ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি নিজেকে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। পরে তারা ব্যাংকের পুলিশকে মারধর করে ম্যানেজারকে শনাক্ত করে। ম্যানেজারকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও মারধর করে তারা।
এ সময় মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন মো. আবুল খায়ের। তিনি রুমা উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, কেএনএফ আক্রমণ করার আগে প্রায় সব সিসিটিভি ভেঙে ফেলে। ব্যাংকের দুই পাশের সড়কে ব্যারিকেড দেয়। তারা সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে।
রুমা উপজেলার স্থানীয় ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা অংটি মারমা বলেন, রুমায় তিনটি সরকারি ব্যাংক রয়েছে। সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। অস্ত্রধারীরা রুমায় সোনালী ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকে হামলা চালায়নি। অথচ যে ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, এর এক-দেড় শ গজ দূরে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও চার-পাঁচ শ গজ দূরে রুমা বাজারে রয়েছে কৃষি ব্যাংক।
কেএনএফ কারা
কেএনএফ হলো বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন। বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, খুমি ও ম্রোদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও সেখানে বম জনগোষ্ঠীর কিছুসংখ্যক লোক রয়েছে। যে কারণে সংগঠনটি পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিতি পায়।
কেএনএফের ফেসবুক পেজে বলা হয়, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদমসহ নয়টি উপজেলা নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ হিসেবে গঠন করা হবে। পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে আতঙ্কে সে সময় ভারতের মিজোরামে পালিয়ে আশ্রয় নেয় পাঁচ শতাধিক বম নারী-পুরুষ।
সশস্ত্র সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয় বলে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে জানায় র্যাব। এরপর ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমায় অভিযান চালায় র্যাব ও সেনা সদস্যের যৌথ বাহিনী। পরবর্তী সময়ে এ অভিযান চালানো হয় থানচিতেও।
কেএনএফের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষের পর গত বছরের মে মাসে বান্দরবানে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। এরপর জুলাই ও আগস্টে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফের মধ্যে দুইবার ভার্চুয়াল আলোচনা হয়। একই বছরের ৫ নভেম্বর রুমা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মুনলাই পাড়ায় প্রথমবারের মতো কেএনএফের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সরাসরি দুটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রথমবারের মতো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শুরুর পর পাহাড়ে ‘বম পার্টি’র সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতা কিছুটা কমে এসেছে বলে মনে করছিলেন পাহাড়িরা। বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাও তুলে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যেই আবার ব্যাংকে হামলা ও ডাকাতির ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনাও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এবার টার্গেট বান্দরবানের রোয়াংছড়ি। এর আগে তারা জেলার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি—এই তিন উপজেলায় হামলার ঘোষণা দিয়েছিল। এরই মধ্যে থানচিতে দুই দফা ও রুমায় এক দফা হামলা চালিয়েছে। দুটি ব্যাংক লুট ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে অপহরণ করেছে। ঘোষণা অনুযায়ী, তাদের পরবর্তী হামলা রোয়াংছড়িতে হওয়ার কথা।
‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি কেএনএ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ১২ মার্চ একটি পোস্ট দেওয়া হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, বাংলাদেশের একটি বাহিনী বম সম্প্রদায়ের নিরীহ জনগণ লালমুয়ানওম বম (গিলগাল বা অবচলিত পাড়া) এবং রামনুয়াম বমকে (দুনিবার পাড়া) আটক করেছে। এর ফল খুব সুন্দরভাবে ফিডব্যাক দেওয়া হবে। নিরীহ জনগণকে হয়রানি বন্ধ করা না হলে।’
‘বান্দরবনবাসী’ নামক আরেকটি পেজে গত ফেব্রুয়ারিতে আরও একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে এই তিন জায়গায় হামলার কারণ হিসেবে ‘তাদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ ও রুমায় এক মারমা যুবককে গুলি করার প্রতিবাদে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রুমায় কেএনএফের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে’ তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির ইনফরমেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন ফ্লেমিংয়ের বরাতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণার ২১ দিনের মাথায় বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলার ঘটনা ঘটে।
তবে এসব পেজ ও পেজে থাকা মেইলে আজকের পত্রিকা দুই দিন আগে প্রশ্ন লিখে পাঠায়। কিন্তু এসব পেজ ও মেইল থেকে কোনো ফিরতি বার্তা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কেএনএফের প্রধান নাথান বমের উপদেষ্টা লাল অংলিয়ান বমের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করে আজকের পত্রিকা; একটি সোর্সের মাধ্যমে কিছু প্রশ্ন করে পাঠানো হয়। তবে তিনি এসব প্রশ্নের জবাব দেননি।
সম্প্রতি কেএনএফের হামলার বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন।
রোয়াংছড়িতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোয়াংছড়ির দায়িত্বে থাকা বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. শাহ আলম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘রোয়াংছড়িতে এখন পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। তবে আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি।’
গত মঙ্গলবার থেকে হামলা শুরু করে কেএনএফ। এর মধ্যে বান্দরবানের রুমা, থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক, সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে থানচিতে আরেক দফা হামলা হয়।
সর্বপ্রথম মঙ্গলবার রাতে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে কেএনএফের ১০০ জনের সশস্ত্র দল বান্দরবানের রুমার সোনালী ব্যাংক শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটায়। ইউনিফর্ম পরা সশস্ত্র লোক দেখে ভয় পেয়ে যান সবাই। তাঁরা মনে করেছিলেন, আজই তাঁদের জীবনের শেষ দিন। ঘটনার সময় সোনালী ব্যাংকের পাশের মসজিদে ২০-২৫ জন মুসল্লি জামাতে নামাজ পড়ছিলেন। ওই মসজিদের ইমাম মো. নুরুল ইসলাম ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তখন সবে এশার নামাজের তিন রাকাত শেষ। চতুর্থ রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর সময় কেএনএফের সশস্ত্র পাঁচজন লোক তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ান। নামাজ শেষে তাঁরা বলেন, ‘নামাজ তো শেষ। এবার সবার মোবাইল জমা দেন।’
এই ব্যাংকের অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ বা কুকি চিন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়। পরদিন বুধবার বেলা ১টার দিকে থানচি উপজেলার বাজারে কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দুটি শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এটির সঙ্গেও কেএনএফ জড়িত বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
রুমা উপজেলা বান্দরবান সদর থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরে। বান্দরবান থেকে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে গাড়িতে যেতে লাগে দুই ঘণ্টা। এই পথে রয়েছে পুলিশের চারটি ক্যাম্প, একটি আনসার, দুটি বিজিবি ও তিনটি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। রুমায় যেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিনবার তল্লাশির মধ্যে পড়তে হয়। রুমার যে সোনালী ব্যাংক শাখায় কেএনএফ হামলা চালায়, সেটির পাশেই আছে আনসার ক্যাম্প। উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়। এই ব্যাংক থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ইডেনপাড়ায় কেএনএফের কার্যালয়। যদিও এটি বন্ধ পাওয়া গেছে। কার্যালয়ের পাশেই আবার কেএনএফের প্রধান নাথান বমের বাড়ি।
যেভাবে হামলা চালায় কেএনএফ
১০ জন স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। এর মধ্যে একজন সোনালী ব্যাংক শাখার কর্মচারী নারায়ণ চন্দ্র নাথ। তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকের এই ভবনটি একসময় উপজেলা অফিসারদের বাসভবন ছিল। এখন এটির দ্বিতীয় তলায় ব্যাংকের কার্যক্রম চলে। নিচে উপজেলা অফিসের কর্মকর্তারা থাকেন। ঘটনার দিন কোয়ার্টারের সবাই পাশের মসজিদে নামাজে চলে যান। ব্যাংকে চারজন আনসার সদস্য ছিলেন। কেএনএফের সদস্যরা ঢুকেই এই চারজন আনসার সদস্যের অস্ত্র জব্দ করে বসিয়ে রাখে। তারপর খুঁজতে থাকে ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে।
একই সঙ্গে কেএনএফের অন্য একটি দল সোনালী ব্যাংকের পাশের মসজিদ যান। আরেকটি দল পাশেই আনসার ক্যাম্পে হামলা চালায়। এ সময় সব আনসার সদস্যের অস্ত্র নিয়ে যায় তারা। মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এশার নামাজ পড়ার সময়ই সামরিক পোশাক পরা ও গালে কালি লাগানো সশস্ত্র পাঁচজন পাশে দাঁড়ায়। নামাজ শেষে বলে, কেউ নড়াচড়া করবা না। সবার মোবাইল দিয়ে দাও। আমাদের এক প্রকার জিম্মি করে ফেলে তারা। আমাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে যায়।’
নুর ইসলাম বলেন, ‘এরপর তারা ব্যাংকের ম্যানেজারকে খুঁজছিল, কিন্তু পাচ্ছিল না। এ সময় মসজিদে উপস্থিত সবাইকে বলা হয়, এখানে ব্যাংকের ম্যানেজার কে? ওই সময় ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন। তিনি নিজেকে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। পরে তারা ব্যাংকের পুলিশকে মারধর করে ম্যানেজারকে শনাক্ত করে। ম্যানেজারকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও মারধর করে তারা।
এ সময় মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন মো. আবুল খায়ের। তিনি রুমা উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, কেএনএফ আক্রমণ করার আগে প্রায় সব সিসিটিভি ভেঙে ফেলে। ব্যাংকের দুই পাশের সড়কে ব্যারিকেড দেয়। তারা সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে।
রুমা উপজেলার স্থানীয় ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা অংটি মারমা বলেন, রুমায় তিনটি সরকারি ব্যাংক রয়েছে। সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। অস্ত্রধারীরা রুমায় সোনালী ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকে হামলা চালায়নি। অথচ যে ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, এর এক-দেড় শ গজ দূরে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও চার-পাঁচ শ গজ দূরে রুমা বাজারে রয়েছে কৃষি ব্যাংক।
কেএনএফ কারা
কেএনএফ হলো বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন। বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, খুমি ও ম্রোদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও সেখানে বম জনগোষ্ঠীর কিছুসংখ্যক লোক রয়েছে। যে কারণে সংগঠনটি পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিতি পায়।
কেএনএফের ফেসবুক পেজে বলা হয়, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদমসহ নয়টি উপজেলা নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ হিসেবে গঠন করা হবে। পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে আতঙ্কে সে সময় ভারতের মিজোরামে পালিয়ে আশ্রয় নেয় পাঁচ শতাধিক বম নারী-পুরুষ।
সশস্ত্র সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয় বলে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে জানায় র্যাব। এরপর ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমায় অভিযান চালায় র্যাব ও সেনা সদস্যের যৌথ বাহিনী। পরবর্তী সময়ে এ অভিযান চালানো হয় থানচিতেও।
কেএনএফের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষের পর গত বছরের মে মাসে বান্দরবানে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। এরপর জুলাই ও আগস্টে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফের মধ্যে দুইবার ভার্চুয়াল আলোচনা হয়। একই বছরের ৫ নভেম্বর রুমা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মুনলাই পাড়ায় প্রথমবারের মতো কেএনএফের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সরাসরি দুটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রথমবারের মতো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শুরুর পর পাহাড়ে ‘বম পার্টি’র সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতা কিছুটা কমে এসেছে বলে মনে করছিলেন পাহাড়িরা। বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাও তুলে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যেই আবার ব্যাংকে হামলা ও ডাকাতির ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনাও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের খোলা স্পটে বর্জ্য অপসারণের সময় বোমা বিস্ফোরণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চারজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আহত হয়েছেন। তারা হলেন মো. আলমগীর হোসেন (৩৬), মো. ইয়াছিন (৪০), আসাদ মিয়া (৫৮) ও সাইফুল ইসলাম (৪৭)। আহত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বর্তমানে রাজধানীর শহীদ সোহ্রাওয
১ ঘণ্টা আগেরাজধানীর বনশ্রীতে লেগুনা স্ট্যান্ডের টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে মো. হাসান হাওলাদার (১৯) হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে রামপুরা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
১ ঘণ্টা আগেপটুয়াখালীর দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষার সময় সূচি পরিবর্তন করে ওই স্কুল মাঠে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল হক নুরের জনসভা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
১ ঘণ্টা আগেরাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে আয়েশা আক্তার (৩৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে নিজ বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
১ ঘণ্টা আগে