চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা

বাবার অপেক্ষায় কবরের পাশে ৩ বছরের তাসকিয়া

সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
Thumbnail image
সাইফুল ইসলাম আলিফের কবরের পাশে তাঁর তিন বছরের ছোট্ট শিশু তাসকিয়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

কবরের পাশে বসে আছে তিন বছরের তাসকিয়া। তিন দিন হয়ে গেল বাড়িতে আসছে না বাবা। তাই চকলেটও জোটেনি তার। বাবাকে নিতে এসেছে সে। আলতো করে ডাকও দিল আব্বু বলে। কিন্তু বাবার সাড়া নেই।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি এলাকায় আইনজীবী বাবা সাইফুল ইসলাম আলিফকে সমাহিত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে সেখানেই ছোট্ট তাসকিয়াকে বসে থাকতে দেখা যায়। আর পৃথিবীতে আসার আগেই বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলো সাইফুল-তারিনের অনাগত সন্তান। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখেই না ফেরার দেশে সাইফুল।

জামাল উদ্দিন ও হোসনে আরা বেগমের সাত সন্তান। এর মধ্যে সাইফুল ইসলাম আলিফ চতুর্থ। সন্তানকে হারিয়ে কোনো ভাবেই মায়ের মন স্থির থাকতে পারছে না। বাবা জামাল উদ্দিন সওদাগরও একটা একটা দিন পার করছেন যেন একেকটা বছর হিসাবে।

দাফনের আগে সন্তানের নিথর মুখখানি বারবার স্পর্শ করা ডান হাতটি বারবার বুকে লাগিয়ে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করেছেন মা। দুচোখের পানি ছেড়ে দিয়ে শেষবারের মতো আদর করার ক্ষণটি বারবার আওড়াচ্ছেন তিনি। হোসনে আরা বলেন, ‘আমার ছেলে কারও ক্ষতি করেনি। কেন আমার কলিজা থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো?’

৩৫ বছরের ছোট্ট জীবনে সাইফুলের সাজানো সংসার যেন তছনছ হয়ে গেল। অনাগত সন্তানকে নিয়েও কত স্বপ্ন ছিল তাঁর। আর তিন বছরের মেয়ে তাসকিয়া কথা বলতে সবে শিখেছে। কিন্তু এত কিছু বোঝার বয়স হয়নি।

আলিফ অফিস থেকে ফিরলে তাসকিয়া ‘বাবা’, ‘বাবা’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠত। মা ইসরাত জাহান তারিনের কোল ছেড়ে জড়িয়ে ধরত বাবাকে। বাড়িতে গেলে চকলেট নিয়ে যেত বাচ্চার জন্য। তিন দিন ধরে সে বাবা আসছেন না। চকলেটও আনছেন না।

তাসকিয়ার চোখে যেন রাজ্যের জিজ্ঞাসা। কেউ জিজ্ঞেস করলেই বলে, বাবা শহরে। আবার বলে, বাবা মরে গেছে। আবার আসবে আব্বু।

আলিফে স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনও কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই কারও।

সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাস করেছিলেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাস করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাকটিস করতেন তিনি।

প্রতিদিনের মতো ঘটনার সময়ও আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বেলা আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে আদালত ভবনের প্রবেশমুখে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে রঙ্গম টাওয়ারের পেছনে হত্যা করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত