রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন কাপ্তাইয়ের এই চার ইউনিয়ন পরিষদের তফসিল ঘোষণা করেছে। 

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে কাপ্তাইয়ে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করা হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ এবং প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৬ অক্টোবর। 

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিশেষ করে নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। শেষ পর্যন্ত দলের টিকিট নিশ্চিত করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা। উপজেলার প্রতিটি গ্রাম, পাড়া, মহল্লা ও চায়ের স্টলে এখন একটি কথা—কে হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেম্বার পদে প্রার্থী। 

গত বছর কাপ্তাইয়ের পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার দলটির কেউ অংশ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি লোকমান আহমেদ। 

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কাপ্তাই উপজেলার ২ নম্বর রাইখালী ইউনিয়ন, ৩ নম্বর চিৎমরম ইউনিয়ন, ৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়ন এবং ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। মেয়াদ শেষ না হওয়ায় উপজেলার ১ নম্বর চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আরও ছয় মাস পর। 

গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে আসন্ন নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, `কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবার আমাদের দলের কেউ ইউপি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। দলের সমর্থিত কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' 
 
কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরী বলেন, গত নির্বাচনে কাপ্তাই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের নৌকা প্রতীক নিয়ে তিন জন প্রার্থী জয়ী হলেও এবার পাঁচটি ইউনিয়নে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়যুক্ত হবেন। 

অংসুইছাইন চৌধুরী আরও বলেন, `রাঙামাটি জেলার পাহাড়ি-বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা দীপংকর তালুকদার এমপি মহোদয়ের সুপারিশক্রমে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করব।' 

কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল বলেন, বিগত কয়েক দশকে আওয়ামী লীগ সরকার পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে উন্নয়ন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় জনগণ কাপ্তাইয়ের প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাপ্তাইয়ের শিল্প বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে সুপরিচিত ৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন দুই দুবার চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ। 

এ বিষয়ে তিনি বলেন, `আমার দায়িত্বকালীন দুর্গম এলাকাসহ সব জায়গায় শতভাগ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা; রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল, মসজিদ, মন্দির, শ্মশানঘাট নির্মাণ; সোলার প্যানেলের মাধ্যমে দুর্গম এলাকা আলোকিত করেছি। আশা করছি এবার দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি এলাকার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করব।' 

তবে এই ইউনিয়ন থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া কাপ্তাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদল। তিনি বলেন, `আগামী ইউপি নির্বাচনে অংশ নেব। কারণ চলমান ১১ বছরে কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদে হাজারো দুর্নীতি হয়েছে। এ ইউনিয়নকে মদ, জুয়া, শোষণ ও লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচাতে নির্বাচনে আমি অংশ নেব।'

শতবর্ষী চিৎমরম বৌদ্ধবিহারের জন্য সমগ্র বাংলাদেশে সুপরিচিত কাপ্তাইয়ের চিৎমরম ইউনিয়ন। বিগত দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেএসএস (সন্তু লারমা) সমর্থিত প্রার্থী খ‍্যাইসা অং মারমা এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। জনগণের সমর্থন নিয়ে এবারের নির্বাচনেও তিনি অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। 

পাহাড় আর দুর্গম এলাকা হিসাবে পরিচিত ২ নম্বর রাইখালী ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী মংক্যই মারমাকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন জেএসএস সমর্থিত প্রার্থী সায়ামং মারমা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি এ বছর অংশ নেবেন না বলে জানা গেছে। তবে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে তিনজন শক্তিশালী প্রার্থী। তাঁরা হলেন- রাইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ তালুকদার, রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এনামুল হক এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য থয়সাপ্রু চৌধুরী রুবেল। এ ছাড়া সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রাইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মংক্য মারমা চেয়ারম্যানকে নির্বাচিত করা হবে বলে জানা যায়। 

নির্বাচন সম্পর্কে ওই প্রার্থীরা বলেন, দুর্গম রাইখালীর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা প্রসারসহ নানা উন্নয়নে বিগত বছরগুলোতে আমরা জনগণের পাশে ছিলাম। তাই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে আমরা নির্বাচন করব। 

কাপ্তাই উপজেলার ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়নে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চিরনজীত তনচংগ্যা। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি এইবারও নির্বাচন করবেন বলে জানান। তবে এ ইউনিয়ন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জোরেশোরে যার নাম শোনা যাচ্ছেন তিনি হলেন কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুজন তনচংগ্যা ধনা। এরই মধ্যে তাঁরা উভয়েই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।