চার কামালে পাহাড় বেসামাল: পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২: ৪৬
Thumbnail image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও তাঁর মেয়ে আইনজীবী সারা হোসেন এবং মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল—এই চারজনের জন্য পাহাড় বেসামাল হয়েছে বলে দাবি করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কাজী মো. মজিবর রহমান। 

আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তিন জেলার জন্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলছে, এই আইনের মাধ্যমে উপজাতিদের একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে মেজবাহ কামাল, ড. কামাল হোসেন ও তাঁর মেয়ে আইনজীবী সারা হোসেন এবং মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালকে ইঙ্গিত করে কাজী মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘এই চার কামালে পাহাড় বেসামাল। ওনারা কখনো পাহাড়ে যাননি, ঢাকায় বসে কথা বলেন। ওনাদের কারণে পাহাড়ের অবস্থা বেসামাল হয়ে যাচ্ছে।’ 

মজিবর রহমান বলেন, ‘উপজাতি পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, ঠিক তার বিপরীতে বাঙালি পরিবারগুলো তা পাচ্ছে না। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।’ 

তিনি বলেন, ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র বানানোর অন্যতম অনুষঙ্গ হলো—বর্তমান সময়ে কিছু উপজাতীয় নেতা পার্বত্য শাসনবিধি-১৯০০ আইন বহাল রাখার আন্দোলন করছেন। অথচ এই শাসনবিধি হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ উপজাতীয় জনগণকে শোষণের হাতিয়ার।’ 

পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী না সরানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই অঞ্চলের চারপাশে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত। এর মধ্যে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন হচ্ছে। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অবাধে এ দেশে চলে আসছে। সেখানকার নিরাপত্তা হুমকির মুখে।’ 

তিনি সন্তু লারমার বিচারের দাবি করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের অনেককে সাংবিধানিক পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। সেখানে সন্তু লারমা তাঁর পদে বহাল। তিনি ৩৬ হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন।’ 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাজনৈতিকভাবে তিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। এ ক্ষেত্রে বাঙালিরা বঞ্চিত হচ্ছে। এটি উন্মুক্ত করে সারা দেশের মতো ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা বা একজন চেয়ারম্যানের সমপরিমাণ ক্ষমতা দিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান বাঙালিদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। 

আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যানের পদটি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। এ ক্ষেত্রেও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন বা চেয়ারম্যানের সমপরিমাণ ক্ষমতা দিয়ে একজন বাঙালি ভাইস চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করা হয়। উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/উপদেষ্টা পদটিও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। 

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ১৯০০ সালের শাসনবিধির মাধ্যমে উপজাতিরা এককভাবে হেডম্যান, কারবারি, সার্কেল চিফ/রাজাসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছে। হাইকোর্ট ১৯০০ সালের শাসনবিধিকে মৃত আইন বলে রায় দিয়েছেন। আমরা ইতিমধ্যেই এই আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি তিন জেলা ও ঢাকায়। ১৯০০ সালের শাসনবিধি হলো একটি কালো আইন। এটা বাতিল করতে হবে। 

বক্তব্যে আরও বলা হয়, অসাংবিধানিক ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে উপজাতিদের দিয়ে। যার সদস্য—তিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজাতি, তিন সার্কেল চিফ উপজাতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান উপজাতি। এ ক্ষেত্রে জনসংখ্যা অনুপাতে ভূমি কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে কালো আইন করা হয়েছে। যেমন—রীতি, নীতি, প্রথা, পদ্ধতি, হেডম্যান, কারবারি ও রাজা/সার্কেল চিফ যা বলবেন তা-ই আইনে পরিণত হবে। এ ক্ষেত্রে ভূমিহারা কোনো বাঙালি কোথাও কোনো আপিল করতে পারবে না। এই কালো আইন বাতিল করতে হবে। 

উপজাতিদের জন্য ইনকাম ট্যাক্স ফ্রি উল্লেখ করে বক্তব্যে বলা হয়, বাঙালিদের ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। তাই অর্থনৈতিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা গরিব থেকে গরিব হচ্ছে আর উপজাতিরা দিনে দিনে ধনী থেকে ধনী হচ্ছে। ইনকাম ট্যাক্স পার্বত্য অঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের জন্য একই নিয়ম চালু করা উচিত। 

ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে সুদের বিষয়টি তুলে ধরে বক্তব্যে বলা হয়, ব্যাংক লোন নিলে উপজাতিদের কোনো সুদ দিতে হয় না, কিন্তু বাঙালিদের চড়া সুদ দিতে হয়। উপজাতিরা ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে না পারলে তাদের অনেক ক্ষেত্রেই মওকুফ করা হয়, কিন্তু বাঙালিরা পরিশোধ করতে না পারলে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয় এবং জেলখানায় যেতে হয়। লোনের ক্ষেত্রে সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য একই নীতি অবলম্বন করতে হবে। 

বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত কোটা থাকায় শিক্ষার ক্ষেত্রে উপজাতিরা আজ প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষিত আর বাঙালিরা মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষিত। উপজাতি ছাত্র-ছাত্রীরা কোটার মাধ্যমে বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারে আর বাঙালিরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চাকরির ক্ষেত্রেও বাঙালিরা বিশাল বৈষম্যের শিকার। কোটার কারণে উপজাতিরা সব ক্ষেত্রে চাকরি পায় আর বাঙালিরা বঞ্চিত। তিন জেলা পরিষদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়ই ৯২ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশ উপজাতি নিয়োগ দেওয়া হয় আর বাঙালি ৫ শতাংশের মতো। তাও সেখানে দারুণ একটা শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। যেমন—বাঙালি ৮ শতাংশের মধ্যে হিন্দু, বড়ুয়াই সিংহভাগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত