লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন: সিরিয়াল সিস্টেমে বছরে ১২০০ কোটি চাঁদাবাজি

সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০: ৩৯
Thumbnail image
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে লাইটার জাহাজের ‘সিরিয়াল সিস্টেম’কে চাঁদাবাজির নতুন সংস্করণ মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বছরে ৮ কোটি টন পণ্য পরিবহনে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয় বলে অভিযোগ তাঁদের। চাঁদাবাজির এ টাকা সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি পক্ষের পকেটে যায় বলে দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

তবে লাইটার জাহাজের মালিক ও ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর। তাদের দাবি, নৌ বাণিজ্যে শৃঙ্খলা আনার জন্যই সিরিয়াল সিস্টেম।

লাইটার জাহাজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য নিয়ে লাইটার জাহাজ যায় কর্ণফুলী নদী (চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা) থেকে। ব্যবসায়ীরা সরাসরি এ জাহাজগুলো ভাড়া করতে পারেন না। সিরিয়াল সিস্টেম এ ক্ষেত্রে বাধা। এর কারণে ভাড়া করার জন্য জাহাজ এজেন্টকে প্রতি টনে ১৫-২০ টাকা এবং কার্গোর জন্যও প্রতি টনে ২০ টাকা দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এ হিসাবে একটি জাহাজ যদি গড়ে ১০০০ টন পণ্য পরিবহন করে, সে ক্ষেত্রে লাইটার জাহাজ ও কার্গোমালিকদের প্রতিটি জাহাজে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। তবে স্বাভাবিকভাবে ১২০০ থেকে ৩০০০ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করে থাকে লাইটার জাহাজগুলো।

জাহাজ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, শুধু চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বছরে প্রায় ৮ কোটি টন পণ্য অভ্যন্তরীণ নদীপথে সারা দেশে পরিবহন হয়। বর্তমানে প্রতি লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহনে টনপ্রতি গড়ে মোট ৫৫০ টাকা খরচ হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকায় পণ্য পরিবহন করা যায় নির্বিঘ্নে। এ ক্ষেত্রে টনপ্রতি ১৫০ টাকা বাড়তি গুনতে হলে ৮ কোটি টনে চাঁদাবাজি হয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে সীকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, সিরিয়াল সিস্টেমের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে নানাভাবে চাঁদাবাজি হয়। কয়েকটি পক্ষ এ ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী। ৫ আগস্টের আগে এ ধরনের সিস্টেমে হওয়া চাঁদাবাজি এখনো বন্ধ হয়নি। নৌ-রুটে পণ্য পরিবহনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এ সিন্ডিকেটই বাড়াচ্ছে পণ্য পরিবহন ব্যয়। এটা চলতে থাকলে ভোগ্যপণ্যের দামে নিশ্চিত প্রভাব পড়বে।

চট্টগ্রামের জাহাজমালিকদের সংগঠন ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাংয়ের (আইভোয়াক) মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ জানান, বিআইডব্লিউটিসি নেয় প্রতি টনে সার্ভিস চার্জ বাবদ ২ টাকা। এ ছাড়া জাহাজ ও কার্গো—উভয়ের ভাড়ার ক্ষেত্রে সিরিয়াল সিস্টেমে লোকাল এজেন্ট নেয় প্রতি টনে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি টনে বাড়তি খরচের ঘানি টানতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

এ বিষয়ে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, যাঁরা সিরিয়ালে জাহাজ চালাতে চান, তাঁরা চালাবেন। অনেকে আদালত থেকে নির্দেশনা নিয়ে জাহাজ চালাচ্ছেন, তাঁরা ওইভাবে চালাচ্ছেন। লোকাল এজেন্টের ক্ষেত্রে খরচের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিষয়। আমরা নৌপথে শৃঙ্খলা আনার জন্য সিরিয়াল দিয়ে জাহাজ পরিচালনায় উৎসাহিত করি।’

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বছরে প্রায় ৮ কোটি টন পণ্য অভ্যন্তরীণ নদীপথে সারা দেশে পরিবহন হয়। এসব পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘাটে চাঁদাবাজি হয়। এসব চাঁদাবাজি বন্ধ হলে নিত্যপণ্যের দাম আরও কমে আসবে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বছরে অন্তত ১০ কোটি টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। বেসরকারি মালিকানাধীন প্রায় ১ হাজার ৮০০ লাইটার জাহাজ দেশের অভ্যন্তরীণ-রুটে এসব পণ্য পরিবহন করে। সারা দেশে লাইটার জাহাজের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত