বেড়াতে গিয়ে ট্রলারডুবি, ৩ দিন সাগরে ভেসেছিল রাফি

ইসমাইল হোসেন কিরন, হাতিয়া (নোয়াখালী)
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬: ০২
Thumbnail image

হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। বারান্দায় রেখে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে ১২ বছর বয়সী মো. রাফিকে। সে কথা বলতে পারছে না। চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। ট্রলারডুবিতে তিন দিন সাগরে ভেসে থাকার পর উদ্ধার করা হয়েছে তাকে। রাফির শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবির ঘটনায় তিন দিন সাগরে ভাসতে থাকা ১০ জনের মধ্যে রাফি একজন। গতকাল রোববার সকালে স্থানীয় জেলেরা তাঁদের উদ্ধার করেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাফিসহ তিনজনকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

রাফির বাড়ি হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের আমতলী গ্রামে। বাবা মো. সাইফুল ইসলাম প্রবাসী। মা ঝর্ণা বেগম গৃহিণী। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রাফি বড়।

হাসপাতালে রাফির পাশে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন সৈকত নামের এক যুবক। তিনি ডুবে যাওয়া আমতলী গ্রামের রহিম মাঝির ট্রলারের জেলে। উদ্ধার হওয়ার পর তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

শয্যাশায়ী সৈকত জানান, রাফি তাঁদের ট্রলারের সদস্য না। একজনের সঙ্গে সে বেড়াতে গিয়েছিল। গত শুক্রবার বিকেলে ঝড়ে ট্রলার উল্টে গেলে রাফিসহ ১৫ মাঝি নদীতে ভাসতে থাকেন। এক ঘণ্টা পর নিঝুম দ্বীপের একটি ট্রলার তাঁদের তুলে নিয়ে ঘাটের দিকে রওনা হয়। পথে ঢেউয়ের আঘাতে ওই ট্রলার ডুবে যায়। এরপর সাগর উত্তাল হয়ে পড়ে। বারবার বলার পরও অন্য ট্রলারের লোকজন দুর্ঘটনার ভয়ে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করেননি।

তিন দিন সাগরে ভাসমান থাকার গল্প বলতে গিয়ে সৈকত জানান, ১২ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর রাফি অনেকটা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। সে মাকে দেখতে চায়। সে বাড়ি যেতে চায়। ক্ষুধাই সে চিৎকার করতে থাকে। তাকে শান্ত করার জন্য সাগরে ভাসতে থাকা কাঁচা গাছের ডাল এনে দিলে সে আখের মতো তা চিবিয়ে চিবিয়ে খেত। বেশ কয়েকটি ডাল একসঙ্গে বেঁধে তাতে ভাসমান ছিল সবাই। রাফি কাঁদতে কাঁদতে হাঁপিয়ে পড়লে তাকে একবার একজন কাঁধে নিয়ে ভাসতে থাকত, আরেকবার অন্যজন।

সৈকত বলেন, ‘শেষের দিন সন্ধ্যায় কেউ একজন একটি বাতি দেখতে পান। জোয়ারের কারণে স্রোতে আমাদের বাতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। আমরাও সাঁতরের চেষ্টা করি। পরে একসময় নদীতে মাছ ধরার জন্য পুঁতে রাখা খুঁটির অস্তিত্ব পাই। তা ধরে চিৎকার করলে দমারচরের জেলেরা আমাদের উদ্ধার করেন। জেলেদের সহযোগিতায় তীরে এসে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাফি অজ্ঞান হয়ে পড়ে।’

রাফির মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘রাফির মতো বয়সের অনেক ছেলে সাগরে মাছ শিকারে গেলেও সে কখনো যায়নি। মাছ ধরা কাজে তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এক সপ্তাহ আগে বন্ধু আরিফের সঙ্গে দুষ্টুমি করে বেড়াতে যায় স্থানীয় রহিম মাঝির মাছধরা ট্রলারে। আরিফ ওই ট্রলারের জেলে। এক দিন পর খোঁজাখুঁজি করলে প্রতিবেশীরা জানান রহিম মাঝির ট্রলারে সাগরে গেছে রাফি। প্রথমে বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হলেও শুক্রবার ঝড়ে ট্রলারডুবির সংবাদ পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। রোববার সকালে স্থানীয় জেলেরা রাফিসহ ১০ জনকে উদ্ধার করে ঘাটে নিয়ে আসে। ঘাট থেকে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে এনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।’

আমতলী ঘাটের ট্রলার মালিক লুৎফুল্লাহিল নিশান জানান, গত শুক্রবার ঝড়ে জাহাজমারা ইউনিয়নের চারটি ঘাটে ১০টি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে গতকাল সকাল পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল ২৭ জন। এদিন বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ও হাতিয়ায় বিভিন্ন ট্রলারের সহযোগিতায় ২২ জন জেলে উদ্ধার হয়। অন্য পাঁচজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত