নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো নেভেনি তুলার গুদামের আগুন, উঠছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩, ১১: ৩৩
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩, ১১: ৫৭

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি আগুন। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আজ রোববার ভোর থেকে ক্রমশ নিভে এলেও এখনো গুদামের ভেতরের কিছু স্থানে মৃদু আগুন জ্বলার পাশাপাশি উঠছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। আগুন পুরোপুরি নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল। 

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় রোববার সকাল ৯টার পর ঘটনাস্থল থেকে চলে গেছেন আগুন নির্বাপণে কাজ করা সেনাবাহিনীর চারটি ইউনিট, নৌবাহিনীর চারটি ও বিমানবাহিনীর দুটি ইউনিট। এরপর চলে গেছে ঘটনাস্থলে আসা বিজিবির চারটি ফায়ার ফাইটার ইউনিট ও সেনাবাহিনীর বিশেষ উদ্ধারকারী দল ইউএসএআর।

এর আগে শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের হিঙ্গুরিপাড়া এলাকার নেমসন ডিপো সংলগ্ন ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেডের তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রথম দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভানোর চেষ্টার পাশাপাশি সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এরপর তারা অগ্নিনির্বাপণ কাজে সহায়তা চেয়ে আগ্রাবাদ ও বায়েজিদ ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ও বায়েজিদ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে অগ্নিনির্বাপণের কাজে যোগ দেয়।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যার পর গুদামের ভেতরে জ্বলা তুলার আগুন আরও বেড়ে যায়। ঘটনাস্থলে ছুটে আসা চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সহায়তা চান। এরপর রাতে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের পাশাপাশি আগুন নেভাতে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। পাশাপাশি বিজিবির চারটি ফায়ার ফাইটার ইউনিট ও সেনাবাহিনীর বিশেষ উদ্ধারকারী টিম ইউএসএআর ঘটনাস্থলে এসে কাজ শুরু করে।  

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এসএল গ্রুপের মালিকানাধীন গুদামটি ইউনিটেক্স লিমিটেড ভাড়া নেয়। তাদের নিজস্ব সুতা তৈরির কারখানার জন্য সেখানে অনেক তুলা মজুত করা হয়। 

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল আজকের পত্রিকাকে জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট কাজ করে গেছে। রাতে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে কাজ করেছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ১০টি ইউনিট। গুদামটির আশপাশে কোনো পুকুর বা জলাশয় না থাকায় অগ্নিনির্বাপণের কাজে শুরু থেকে পানির সংকটে বেগ পেয়েছে তারা। আশপাশের এলাকার পুকুর থেকে পানি সংগ্রহের পর তা ঘটনাস্থলে এনে ছিটিয়েছে। তবে মাঝরাত থেকে আশপাশের পুকুরে পানি না পেয়ে সীতাকুণ্ড পৌর সদর, বাড়বকুণ্ডসহ বিভিন্ন এলাকার পুকুর থেকে পানি সংগ্রহের পর তা দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করেছে। 

নুরুল আলম দুলাল আরও বলেন, তাঁরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে গুদামের পাশের নেমসন ডিপোকে আগুন থেকে রক্ষা করেছেন। আগুন পুরোপুরি না নিভলেও তা নিয়ন্ত্রণে আছে। ভেতরে এখন যে আগুন জ্বলছে, তাতে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তা আশপাশে ছড়ানোরও ভয় নেই। দুপুরের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নিভে যাবে। 

আগুন লাগার সঠিক কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নুরুল আলম দুলাল বলেন, স্থানীয়রা ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার সময় তুলার গুদামে আগুন লেগেছে বলে জানিয়েছেন। তবে গুদামে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তার সঠিক কারণ এখনো নির্ণয় করতে পারেননি তাঁরা। তুলার গুদামের পাশাপাশি আগুনে চারটি চায়ের ও খাবারের দোকান পুড়ে গেছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, গুদামের আগুন প্রায় নিভে গেছে। এখন ভেতরে থাকা কিছু তুলায় মৃদু আগুন জ্বলছে, যার কারণে ধোঁয়ার কুণ্ডলী রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট এখনো কাজ করছে। দুপুরের মধ্যে পুরোপুরি নিভে যাবে বলে আশা করছেন তিনি। রোববার সকালে আগুন নেভাতে ছুটে আসা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ইউনিটগুলো ফিরে গেছে বলেও জানান ইউএনও।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত