সংসার ভাঙার ভয়ে শ্বশুর খুনের কথা প্রকাশ করেননি পুত্রবধূ: আদালতে স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ২৩: ১৫

হত্যার পর শ্বশুরের কাটা মাথা স্কুলব্যাগে বহন করেন পুত্রবধূ। স্বামীর সঙ্গে সেই ব্যাগ নিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে যান। সেখানে পুলিশ বক্সের নিচে পাথরের ওপর ব্যাগটি ফেলে আসেন। নিজের সংসার টিকিয়ে রাখতেই এমন কাজ করেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন পুত্রবধূ আনারকলি (২০)। 

আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করেন তিনি। 

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছ খান আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালতে আসামি আনারকলি নিজের দোষ স্বীকার করে খুনের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর নগরের ইপিজেডে আকমল আলী রোডে খুন হওয়া হাসান আলীর পুত্রবধূ আনারকলি। 

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আনারকলি বলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁর শ্বশুর হাসান আলী ইপিজেডে আকমল আলী রোডে তাঁদের বাসায় আসেন। এর আগে শাশুড়ি অসুস্থ থাকায় ওই বাসায় এসেছিলেন। ১৯ সেপ্টেম্বর সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে ঘরের পাশে আরেকটা খালি ঘরে তাঁর শ্বশুর, স্বামী সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর ও ভাশুর মোস্তাফিজুর যায়। পরে বিকেলে তিনি জানতে পারেন তাঁরা শ্বশুরকে মেরে ফেলেছে। 

ওই সময় আনারকলি ও তাঁর স্বামী লাশটি তাঁদের ঘরে নিয়ে আসেন। এরপর তাঁরা লাশটি টুকরো টুকরো করে কেটে লাগেজ, স্কুলব্যাগ ও বস্তায় ভরেন। রাতে এক লোককে দিয়ে বস্তাটি ফেলে দেন। পরদিন ভোরে আনারকলি, তাঁর স্বামী ও ভাশুর মিলে লাগেজে থাকা কাটা লাশের অংশ পতেঙ্গা ১২ নম্বর ঘাটে ফেলে আসেন। আর স্কুলব্যাগের ভেতর ছিল শ্বশুরের কাটা মাথা। সেটি আনারকলি ও তাঁর স্বামী পতেঙ্গা সৈকতে পুলিশ বক্সের নিচে পাথরের ওপর ফেলে আসেন। 

জবানবন্দিতে আনারকলি আরও বলেন, ‘আমি এই খুনের বিষয়ে কিছু জানতাম না। পরে খুনের কথা জেনেও সংসার ভেঙে যাবে মনে করে চুপ ছিলাম।’ 

এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার মহেশখালীর ডোমঘাট থেকে আনারকলিকে গ্রেপ্তার করে। গত শনিবার তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। 

তদন্ত সূত্র বলেছে, খুনের ঘটনার পর আনারকলি ও তাঁর স্বামী এক জায়গায় ছিলেন। কিন্তু জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থাকতে অপরাধবোধ ও অস্বস্তি কাজ করছিল তাঁর। পরে তিনি পালিয়ে আনোয়ারায় বড়উঠান এলাকায় এক ফুপুর বাসায় চলে যান। ফুপু ঘটনা জানতে পেরে আনারকলিকে বের করে দেন। আনারকলি তখন তাঁর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মহেশখালীতে বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকে তাঁকে পিবিআই গ্রেপ্তার করে। 

গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের অদূরে ১২ নম্বর গেটে একটি খালের পাড়ে পাওয়া ট্রলিব্যাগের ভেতর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির হাত-পাসহ শরীরের খণ্ডিত আটটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

মামলাটি পিবিআই ছায়া তদন্ত চালিয়ে ওই লাশ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাতারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হাসানের (৬১) বলে নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি তাঁর শরীরের আরেকটি খণ্ডাংশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। 

রিমান্ডে মোস্তাফিজুর জানান, প্রায় ২৮ বছর নিখোঁজ থাকার পর দুই বছর আগে পরিবারের কাছে ফিরে আসেন হাসান। ফিরেই তিনি ভিটেমাটি বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এ নিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাঁধে। 

সম্পত্তির জন্য তাঁকে গলা টিপে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করা হয় বলে গত ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। এই কাজে তাঁর ছোট ভাই সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরও ছিল বলে জানান তিনি। 

তবে ঘটনার পর থেকে জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছেন। এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও হাসানের মাথার অংশবিশেষ এখনো পাওয়া যায়নি। 

এর আগে একাধিকবার খোঁজার পর গতকাল সোমবার পুত্রবধূ আনারকলিকে নিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় দিনভর তল্লাশি চালিয়ে নিহতের মাথার অংশ উদ্ধার করা যায়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত