শুরুটা লাখ টাকা দিয়ে, এখন আড়াই কোটি টাকার গরু খামারে

কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ২০: ৪৬

এক যুগেরও বেশি আগে লাখ টাকার কয়েকটি বাছুর দিয়ে শখের বসে বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন একটি খামার। পাঁচ বছর পরে ‘আশফাক ডেইরি’ নাম দিয়ে আধুনিক শেড তৈরি করে সেটিকে বাণিজ্যিক রূপ দেন। বর্তমানে বড় পরিসরে পারিবারিক এ খামার। 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী বড় উঠান ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ এয়াকুব, মোহাম্মদ শোয়েব, সোহেল মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ ও নঈম মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ চার ভাই মিলে গড়ে তোলা খামারটি এলাকায় এখন বেশ জনপ্রিয়। 

তাদের আরেকটি খামারে বিদেশি–দেশীয় জাতের শতাধিক গরু রয়েছে। যেগুলোর বাজারমূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে বড় গরুগুলোর দাম দেড় লাখ থেকে শুরু করে সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপরে। মূলত কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য বেশ কিছু গরু প্রস্তুত করেছেন তারা। 

খামারি সোহেল মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ বলেন, ‘আমাদের খামারে কোরবানির জন্য বেশ কিছু গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। খামারে ফ্রিজিয়ান এবং দেশীয় জাতের ১২০টি গরু রয়েছে। এগুলোর একেকটির দাম এক লাখ ২০ হাজার টাকার ওপরে। বাকিগুলোর দাম দুই লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার মধ্যে। কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য আরও কিছু দেশীয় প্রজাতির গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। সেগুলোর মূল্য এক লাখ ২০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে।’ 

তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে খামারে প্রায় আড়াই কোটি টাকার গরু রয়েছে। ঈদের আগেই এগুলো বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া পাশের একটি টিলার নিচে পাহাড়ি পরিবেশে নিজেদের প্রায় ৯৫ শতক জমিতে একটি শেডের নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে রেড চিটাগাং, ফ্রিজিয়ান ও দেশি জাতের গরু। খামারটি দেখভাল করেন মোহাম্মদ শোয়েব ও নঈম মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ।’ 

খামারি নঈম মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘দেড় কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে এবার খামারে। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে এবার অনেক খামারিরা একটু কমই বিনিয়োগ করেছেন। করোনাকালে গরু বেচাকেনা কম হয়েছিল। তবে এবার মনে হয় দামটা ভালো পাওয়া যাবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের খামারে সর্বোচ্চ ছয়-সাত লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে। এ ছাড়া চার-পাঁচ লাখ টাকা দামের পাঁচ-ছয়টি গরু রয়েছে। অন্যগুলো দুই-তিন লাখ টাকা দামের।’ এ ছাড়া খামার থেকে প্রতিদিন সাড়ে তিন শ লিটার গরুর দুধ সরবরাহ করা হয় বলেও জানান তিনি। 

খামারি মোহাম্মদ এয়াকুব বলেন, ‘দেশীয় জাতের গরু লালন-পালনে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। গো–খাদ্যের চাহিদা মেটাতে খামারের নিজস্ব জমিতে চাষ করা হয়েছে নেপিয়ার ও সুইট লেমন জাতের ঘাস। প্রতিদিন জমি থেকে এসব ঘাস কেটে নিয়ে আসার পর আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সাইজে কেটে গরুদের খাওয়ানো হয়।’ ঘাসের পাশাপাশি বাজার থেকে উন্নত মানের ফিড খাদ্য কিনেও খাওয়ানো হয় বলে জানান তিনি। 

এদিকে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত উপজেলার ১৫০০ খামারি। এবার কোরবানিতে উপজেলায় ২৮ হাজার চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২৯ হাজার গরু প্রস্তুত করেছে খামারিরা। যা চাহিদার থেকে এক হাজার বেশি। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার বলেন, ‘উপজেলায় এবার কোরবানির ঈদে চাহিদার চেয়ে এক হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এ অঞ্চলের খামারিরা গরু মোটাতাজা করছেন। মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা খামারিদের সেসব মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া নিয়মিত মনিটরিং করেছেন। এর আগে আমরা সঠিক পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণে খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এবার কর্ণফুলীর হাট বাজারে ক্রেতাদের মাঝে সুষ্ঠু পশু পৌঁছানো নিশ্চিত করতে তিনটি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে। কোনো রকম কৃত্রিম পন্থায় গরু হাট–বাজারে তুলে কি-না সেটা এই টিম নজরদারি করবে। এত দিন ভেটেরিনারি টিম পশুদের চিকিৎসা করা এবং খামারিদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করলেও এবার ক্রেতাদের স্বার্থের দিকেই এই টিম নজর রাখবে।’ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এই টিমে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন ইন্টার্ন ডাক্তার নিয়োজিত থাকবেন বলে জানান প্রাণিসম্পদ এ কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত