চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার প্রকল্পে লাগানো ২ হাজার লাইট জ্বলে না, মরে গেছে গাছ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২১, ১৫: ০২
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২১, ১৫: ০৮

চট্টগ্রামের আখতারুজ্জমান ফ্লাইওভারের নিচে ১৩ কোটি টাকার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে লাগানো ২ হাজার লাইটের একটিও জ্বলে না। একই সঙ্গে ৪৫ হাজার সবুজ গাছের অর্ধেকই মরে গেছে কিংবা মরার পথে। ফ্লাইওভার নির্মাণের দেড় বছরের মাথায় এ অবস্থা হলেও দায় নিচ্ছে না সিটি করপোরেশন (সিডিএ)। বরং ফ্লাইওভারের নিচে এলইডি সাইনবোর্ড বসিয়ে ভালো ব্যবসা করছে বেসরকারি সংস্থা ট্রেড ম্যাক্স বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, সিডিএ ২০১৮ সালে ৬৯৬ কোটি টাকা খরচে ফ্লাইওভার নির্মাণের পর নিয়মানুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব পড়ে সিটি করপোরেশনের ওপর। অপরদিকে, সিটি করপোরেশন সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ তদারক ও রক্ষণাবেক্ষণে ট্রেড ম্যাক্সকে দায়িত্ব দেয়। ফ্লাইওভারের নিচে লাগানো ২ হাজার লাইটের মধ্যে চুরি হয়ে গেছে দেড় হাজার। বাকি ৫০০ লাইটের তার টেনে ছিঁড়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের বহদ্দারহাট থেকে জিইসি পর্যন্ত অংশ এবং দুই নম্বর গেট থেকে বেবি সুপারমার্কেট অংশের নিচে একটি লাইটও নেই। চোরেরা লাইট স্ট্যান্ডও ভেঙে নিয়ে গেছে। ছিন্নমূল শিশু-কিশোরেরা লাইট, লোহা সবকিছু চুরি করে ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছে। 

এ বিষয়ে জানত চাইলে ট্রেড ম্যাক্সের মালিক হেলাল আহমদ বলেন, পাহারা দিয়েও লাইট রাখা যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরা থানায়ও জানিয়েছি। সিডিএ যে লাইট দিয়েছে, তার কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। এ ছাড়া মাটির নিচে বসানো বিদ্যুতের তারও খুব একটা উপযোগী নয়।

সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এত লম্বা ফ্লাইওভার সারা রাত পাহারা দিয়ে রাখাও কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মানুষ সচেতন না হলে আমাদের কী করার আছে?

ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সিডিএর প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি দেশের প্রথম ফ্লাইওভার, যার নিচে আধুনিক আলোকসজ্জা, সবুজ গাছগাছালি লাগানো হয়েছে। ৪৫ হাজারের মতো গাছ আমরা সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক, তাঁরা ঠিকমতো এটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছেন না। 

নগরীর জাকির হোসেন রোডে ভাঙ্গারির ব্যবসায়ী মো. হারুন বলেন, ওই সব লাইট ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে আমার কখনো এসব লাইট কেনা হয়নি। টেক্সটাইল, ঝাউতলা এসব জায়গায় লাইটগুলো বিক্রি হয়। 

সচেতন নাগরিক সমাজ এবং টিআইবি চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী, মূলত মেগা প্রকল্পে এসব ছোট ছোট কাজের নামে লুটপাট চলছে। কয়েক গুন দামে লাইটগুলো কেনা হয়েছিল। আর এত গাছ ওইখানে লাগানোই হয়নি। এখানে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে যে ১৩ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে তার পুরোটাই অপচয়। এটার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। 

এ প্রসঙ্গ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবু বকর সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখান থেকে বহু মাদকসেবী, ছিনতাইকারী আর কিশোর অপরাধীদের আটক করেছি। ফ্লাইওভারের নিচে এভাবে অন্ধকার না থাকলে অপরাধ অনেকটা কমে যেত। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত