চকরিয়ায় দেয়ালে দেয়ালে স্বপ্ন বুননের রং তুলির আঁচড় 

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ২০: ১২
Thumbnail image

সংখ্যায় এক বা দুজন নয়। তাঁরা ১০০-এর অধিক তরুণ-তরুণী। কেউ কলেজ, কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ছেন। সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। আন্দোলন সফল হয়েছে। 

তাঁরা এখন ‘স্বপ্ন বুনন’ নামের একটি সংগঠন করেছেন। সংগঠনটির ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিচ্ছবি, স্লোগান ও আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে-তা রং তুলির আঁচড়ে দেয়াল রাঙিয়ে তুলেছেন। 

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, সড়ক ও স্কুল-কলেজের দেয়ালে ‘এখন দরকার, জনগণের সরকার’, ‘আমরাই গড়ব, নতুন বাংলাদেশ’, ‘শোনো মহাজন, আমরা অনেকজন’-এমন নানান স্লোগান রং তুলির মাধ্যমে সৃজনশীল চিত্রকর্ম ফুটে উঠেছে। 

‘স্বপ্ন বুনন’ সংগঠনের সদস্যরারং তুলি নিয়ে কয়েকজন কাজ শুরু করলেও ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন সংগঠনের সদস্য সংখ্যা শতাধিক পার হয়েছে। 

আনিকা হাসনাত তাহসিন কক্সবাজার সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রাণীবিদ্যা বিভাগে পড়ছেন। রঙের তুলি আঁচড়ে চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, থানা সেন্টার, ডাক বিভাগের দেয়ালে অসাধারণ দেয়াল লিখন এঁকেছেন। 

দেয়ালচিত্র আঁকছেন এক শিক্ষার্থীআনিকা হাসনাত তাহসিন বলেন, ‘আমি শখের বশে এঁকেছি। এই আঁকার আনন্দ অন্যরকম। বাংলাদেশের পতাকা, শহীদ মিনার, স্বাধীনতা মানে মুক্ত চিন্তা ও বাক স্বাধীনতার অধিকারসহ প্রায় ১৩টি দেয়াললিখন আঁকতে পেরেছি। একে ভালোও লেগেছে। আমরা চাই, দলীয়করণের বাইরে গিয়ে মেধার শক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হোক।’ 

তাঁদের কোমল হাতে দেয়ালে নানা রঙে সৃজনশীল গ্রাফিতি, ক্যালিগ্রাফি আঁকা হয়েছে। বাংলা, ইংরেজি ও আরবি শব্দে আঁকানো প্রতিবাদী স্লোগান সাধারণ জনগণকে আগামীর বাংলাদেশের বার্তা এনে দিয়েছে। দেয়ালে ঘুষ বন্ধ করতে গ্রাফিতিও আঁকা হয়েছে। 

‘স্বপ্ন বুনন’ সংগঠনের কয়েকজন সদস্যসরেজমিন উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় দেখা যায়, একদল শিক্ষার্থী দেয়ালে জমে থাকা শেওলা সিরিশ কাগজ দিয়ে পরিষ্কার করে আঁকছেন স্কেচ। আরেকদল এক রঙের সঙ্গে আরেকটি রং মিশিয়ে তৈরি করছেন মিশ্রণ। 

আন্দোলনে নিহত সাহসী তরুণদের ছবি তুলি রঙে রাঙানো হয়েছে। কেউ আঁকছেন শহীদ মিনার ও নতুন ভোরের বাংলাদেশের স্কেচ। সেখানে নানান রং দিয়ে প্রকৃত ছবির রূপ দিচ্ছেন আরেকদল শিক্ষার্থী। শখের বশে আঁকা এসব চিত্রলিখন দেখতে সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন। স্মৃতি ধরে রাখতে কেউবা স্মার্টফোনের ক্যামেরায় ক্লিক করছেন। 

‘স্বপ্ন বুনন’ সংগঠনের কয়েকজন সদস্যতোহফা চৌধুরী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অণুজীববিজ্ঞান অনুষদে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। দেয়ালে ছবি আঁকছিলেন আর বলছিলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হয়, তখন বাড়ি চলে আসি। সরকার প্রধান পদত্যাগ করে দেশত্যাগও করেন, আমাদের আন্দোলন সফল হলো। আন্দোলনের অনেক স্মৃতি আমরা জমা রেখেছিলাম। তা রঙের তুলিতে দেয়াল রাঙিয়ে দিয়েছি। মানুষকে বার্তা দিয়েছি, আমরাই গড়ে তুলব বাংলাদেশ।’ 

মো. আরিফুল ইসলাম মারুফ ও মিজবাহ উদ্দীন ইয়াহিয়া বলেন, ‘আমরা ছাত্ররা বৈষম্য ছাড়া বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সফল হয়েছি। তাই আন্দোলনের পর চকরিয়া শহরে চিত্রকর্মের মাধ্যমে মানুষ নতুন বার্তা পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চকরিয়া পৌরশহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমরা দুই শতাধিক গ্রাফিতি, স্লোগান ও ক্যালিগ্রাফি এঁকেছে স্বপ্ন বুনন।’ 

আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে দেয়ালে নানা স্লোগান লেখা হয়েছেস্বপ্ন বুননকে সহযোগিতা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চকরিয়ার সমন্বয়ক সায়েদ হাসান, মোবারক হোসাইন জিহান, শামসুল আলম সাঈদী, মুসলিমা জান্নাত নূরী। তাঁরা একসঙ্গে পুরো চকরিয়ায় চিত্রকর্ম কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। 

সমন্বয়ক সায়েদ হাসান ও মোবারক হোসাইন জিহান বলেন, ১৪ জুলাই আমরা প্রথমবার মিছিল করি। এরপর রংপুরে আবু সাইদ মারা যাওয়ার পর আন্দোলন আরও জোরালো হয়। ছাত্র-জনতা এক হয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে আমরা সফল হই। এরপর আন্দোলনের নানা চিত্র নিয়ে কাজ শুরু করে ‘স্বপ্ন বুনন’। আমাদের প্রচেষ্টায় পুরো চকরিয়া শহরে দেয়াললিখন হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত