সাগর থেকে খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯: ১৮

ভরা মৌসুমেও ইলিশশূন্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সন্দ্বীপ চ্যানেল। প্রচুর ইলিশের আশা নিয়ে জেলেরা সাগরে গেলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী  না পেয়ে হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁদের। জেলেরা সাগরে গিয়ে যে ইলিশ পেয়েছেন, তা দিয়ে নৌকার জ্বালানি খরচই মেটানো যাবে না। এতে অনেক জেলে মজুরি খরচ মেটাতে না পেরে শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অন্যদিকে বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব ও শিল্পকারখানার বর্জ্যের কারণে সীতাকুণ্ডের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ইলিশের পরিমাণ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সীতাকুণ্ডে ইলিশ ধরা পড়েছে ২৩৮ দশমিক ৪ টন, যা গতবারের তুলনায় প্রায় ৪০০ টন কম। এদিকে সীতাকুণ্ডে ৬ হাজার জেলে পরিবারের বসবাস। তার মধ্যে নিবন্ধিত জেলে পরিবারের সংখ্যা ৫ হাজার ৪০০। এসব জেলে পরিবারে নৌকা রয়েছে ১ হাজার ৬০০টি। তবে ইলিশের মৌসুম এলে বিভিন্ন উপজেলা থেকে শ্রমিক হিসেবে আরও ৫০০ লোক কাজ করতে সীতাকুণ্ডে আসেন। এসব শ্রমিকের মধ্যে কেউ জাল, কেউ নৌকা মেরামত করেন, আবার কেউ ইলিশ ধরতে সাগরে যান।

সম্প্রতি সরেজমিনে সীতাকুণ্ডের কুমিরাঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি ইলিশ ধরার নৌকা ভিড়ছে। তবে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে ঘাটে ফিরে আসা নৌকা থেকে মলিন মুখে নেমে আসছেন জেলেরা। আলাপকালে কুমিরা এলাকার জেলে সরদার বিপ্লব জলদাস বলেন, প্রতিবছর ইলিশের মৌসুমে সাগরে মাছ ধরার জন্য তিনি ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিক রাখতেন। এবারও তাঁদের রেখেছিলেন। কিন্তু খরচের তুলনায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে চার শ্রমিককে বাদ দিয়েছেন।

কথা হয় ঘাটে অপেক্ষমাণ পাইকার অনিল জলদাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর তিনজন শ্রমিক নৌকায় উঠে জেলেদের থেকে মাছ কেনার কাজ করছেন। প্রতিবেলায় তাঁদের জনপ্রতি মজুরি হিসাবে ৩০০ টাকা করে দিতে হয়। ফলে তিনজনের নাশতাসহ খরচ পড়ে ১ হাজার টাকা। এ ছাড়া ইলিশ সংরক্ষণের জন্য বরফ লাগে ৫০০ টাকার। সব মিলিয়ে প্রতিবেলায় তাঁর খরচ হয় ২ হাজার টাকা। কিন্তু যে ইলিশ পাওয়া যায়, তা দিয়ে খরচের ২ হাজার টাকাও পাওয়া যায় না।

সাগর থেকে ঘাটে নৌকা ভেড়ানো বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা জানান, অন্যবার ভরা মৌসুমে মনা ইলিশ (২০০ গ্রাম) কেজিপ্রতি বিক্রি হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, অথচ এবার সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। এ ছাড়া ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকায়, ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশ ধরা পড়েছিল ১ হাজার ৪৫৫ দশমিক ৯২ টন। যদিও পরের বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২ হাজার ৩১ দশমিক ৭৫ টনে। কিন্তু গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭৩৫ দশমিক ৭৩ টনে। এবার আরও কমে গতকাল পর্যন্ত ২৩৩ দশমিক ৫ টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে।

ফলে গড়ে প্রতিবছর ইলিশ কমেছে প্রায় ৩০০ টন।

জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ বছর জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। গতকাল পর্যন্ত ২৩৩ দশমিক ৫ টন ইলিশ ধরা পড়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে জো আছে মাত্র একটি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, ইলিশ মূলত সামুদ্রিক মাছ। প্রজননের জন্য উপকূলের দিকে আসে। তখনই আহরণ করা হয়। এখন চার কারণে ইলিশের আহরণ কমে যেতে পারে। এর মধ্যে উজান থেকে নেমে আসা মিঠাপানির প্রবাহ ও গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের কারণে, জলবায়ুর প্রভাবের কারণে বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি, সাগরে ইলিশের প্রাকৃতিক আবাসস্থলের ব্যাঘাত ঘটলে ও পূর্ববর্তী বছরে অতিরিক্ত আহরণ করলে পরবর্তী বছরে তা কমে যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত