চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী-বিচারক বাগ্‌বিতণ্ডা, ৩ ঘণ্টা কর্মবিরতি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ২০: ৩৮
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ২০: ৪৪

চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতের ঘটনায় একটি নালিশি মামলার (সিআর) আবেদন করতে আসে ভুক্তভোগীর পরিবার। মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করতে থানাকে আদেশ দিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বিচারককে চাপ দেন বলে জানা গেছে। এ সময় আইনজীবী ও বিচারক বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান।

এ ঘটনায় এজলাস ছেড়ে সাময়িক কর্মবিরতি পালন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের আদালতের বিচারকেরা। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের আদালতের বিচারকেরা এই কর্মবিরতি পালন করেন।

কর্মবিরতি পালনকালে মহানগর হাকিমের ৬টি আদালতে কোনো মামলার কার্যক্রম চলেনি। আদালতে বিচারক না থাকায় পূর্ব নির্ধারিত তারিখের অনেকগুলোর মামলার শুনানি, সাক্ষ্যসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এ এম হুমায়ন কবীর বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের বাগ্‌বিতণ্ডার জের ধরে বিচারক এজলাস ছেড়ে নেমে যান এবং একই সঙ্গে সব মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা এজলাস ছেড়ে নেমে যান। বিকেল নাগাদ আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।

আদালত ও প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার সকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে বিএনপিপন্থী একদল আইনজীবী একটি সিআর মামলা অভিযোগ জমা দেন। নির্ধারিত সময়ে ওই মামলার শুনানি হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পিপি মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী।

শুনানিতে আইনজীবীরা মামলাটি সরাসরি এফআইআর অর্থাৎ থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ডের আদেশ দেওয়ার জন্য বিচারককে চাপ দেন। বিচারক মামলার অভিযোগ সংক্রান্ত নানা বিষয় এবং আসামিদের বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু বাদী বিচারকের সব উত্তর যথাযথ দিতে পারেননি। কিন্তু তারপরও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের আদেশ দেওয়ার জন্য চাপ দেন।

একপর্যায়ে আইনজীবী এবং বিচারকের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। বিব্রত হয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. অলি উল্লাহ এজলাস ছেড়ে নেমে যান। জানাজানি হলে অন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা এজলাস ছেড়ে নেমে যান।

ঘটনার বিষয়ে বাদীর আইনজীবী ও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘১৭ জুলাই গণআন্দোলনে মুরাদপুরের ঘটনায় আহত সোয়েব নামের একজন ভিকটিম একটি মামলার আবেদন নিয়ে আসে। ওই ঘটনায় ১২৬ জনকে আসামি করে ও ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে আমরা একটা মামলার ফাইল করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘সে মামলার অভিযোগের ফাইল নিয়ে আমরা কোর্টকে এটা এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করতে থানাকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আদেশে চেয়েছিলাম। কোর্ট বলেছে, ‘‘আমি পরীক্ষা করে আদেশ দিব।’ ’ বাদীকে পরীক্ষা করতে গিয়ে উনি বাদীকে মামলার আসামিদের নাম বলতে বলেন। এ সময় বাদী ২০ জনের নাম বলতে পেরেছেন। পরে কোর্ট বলেন, ‘‘সব আসামিদের নাম বলতে হবে এবং সব আসামিদের বিরুদ্ধে কি কি অভিযোগ তা এক এক করে বলতে হবে।’’ তখন আমি কোর্টকে বলি, এত নাম বলা সময়ের ব্যাপার। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের নাম দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ভিকটিমের মেডিকেল ট্রিটমেন্টের কাগজপত্র সাবমিট করেছি। এ সময় আমরা একটা আদেশ চেয়েছিলাম। পরে আদালত মামলার আবেদনটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞতাও জানাই। আমরা কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসার সময় উনি কটূক্তি করেছিলেন, ‘‘এই ধরনের মামলা নিয়ে আমার কোর্টে জোর খাটানোর চেষ্টা করবেন না।’ ’ তখন আমি বলি, জোর কোথায় খাটালাম। এরপর এজলাস থেকে নেমে তিনি সিএমএমের (মুখ্য মহানগর হাকিম) কাছে গেছেন। তারপর সিএমএম আদালতের সব বিচারক নেমে গেছেন।’

ছেলের পরীক্ষার সার্টিফিকেটে নাম সংশোধনীর জন্য আদালতে যাওয়া আব্দুল মোমিন বলেন, ‘আমি বেলা ১১টায় হলফনামার জন্য আদালতে গিয়েছিলাম। এ সময় আদালতে হট্টগোল চলছিল। আমার হলফনামার কাজটি ১ ঘণ্টায় শেষ হতো। কিন্তু বিচারক না থাকায় হলফনামা সংশোধন করতে বেলা সাড়ে ৩টায় বেজে গেছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত