Ajker Patrika

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গোমতিতে ফিরেছে প্রাণ

মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) 
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১: ৪৮
ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গোমতিতে ফিরেছে প্রাণ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একসময়কার খরস্রোতা গোমতী নদীকে খাঁখাঁ বালুচরে পরিণত হতে দেখা গেছে। ভরা বর্ষায়ও কাঙ্ক্ষিত পানির দেখা পাওয়া যায়নি। কিন্তু চলতি বছর বর্ষার শুরুতে ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে যেন যৌবন ফিরে পেয়েছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী নদীটি। বর্তমানে গোমতীতে থইথই করছে পানি। এতে অবতারণা হয়েছে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের। 

ভারত-বাংলাদেশের যৌথ নদীগুলোর একটি হলো গোমতী নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ডুমুর নামক স্থানে উৎপত্তি হয়ে এঁকেবেঁকে কুমিল্লা সদর উপজেলার কটকবাজার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশের অন্যান্য যৌথ নদীর মতো গোমতীতেও বছরের অধিকাংশ সময় পানির দেখা পাওয়া যায় না। স্থানে স্থানে বিশাল এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে চর। এসব চরে সবজিসহ নানা ফসলের আবাদ হয় বারো মাস। এ বছর আকস্মিক ভারী বর্ষণে মৌসুমি ফসলের কিছুটা ক্ষতি হলেও গোমতীর বুকে থইথই পানি দেখে খুশি গোমতীপারের মানুষ। 

কুমিল্লার গোমতী নদীতীরবর্তী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের মালাপাড়া, আসাদনগর, মনোহরপুর, অলূয়া, রামনগর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে থইথই করছে। 

মালাপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছি, এই নদীকে কেন্দ্র করে ৩০০ বছরে আগে মালাপাড়া বাজার গড়ে ওঠে। গোমতী নদীতে পানি না থাকায় ‍একসময়ের নামডাকওয়ালা বাজারও এখন যেন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। বহু বছর পর নদীতে পানি দেখে পুরোনো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এইতো সেদিন বড় বড় নৌকা ভিড়ত বাজারে।’
 
গোমতীপারের শতবর্ষী বৃদ্ধা আব্দুল মজিদ তিতু মেম্বার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, ‘একসময় এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান পথ ছিল গোমতী নদী। নদীতে ছোট-বড় অনেক নৌকা চলত। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই বাজারে আসত পণ্য কেনাবেচার জন্য। এখানে ছিল একসময়ের অর্থকরী ফসল পাটের বৃহত্তম বাজার। সেই সঙ্গে চাল, আলু ও মাছের বিশাল বাজার বসত। এখন সেই ভরা নদী মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। এ বছর নদীতে আবার পানি এসেছে দেখে অনেক ভালো লাগছে।’

জানা গেছে, ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুর-সোনাইমুড়ী থেকে উৎপত্তি হওয়া নদীটি কুমিল্লা সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি হয়ে মিলিত হয়েছে মেঘনা নদীর সঙ্গে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৫ মিটার। একসময়ের তীব্র খরস্রোতা গোমতীতে দীর্ঘদিন পানি না থাকায় নাব্যতা হারাতে থাকে। ‘খরস্রোতা’ পরিচয় মুছে এটি রূপ নিতে থাকে ‘রোগা খালে’। আর মানুষ হেঁটেই চলে যেত একসময়ের উন্মত্ত যৌবনা গোমতীর এপার থেকে ওপারে। 

কিন্তু এবার গ্রীষ্মের মাঝামাঝি থেকেই পাল্টে যেতে থাকে সেই চিত্র। কয়েক সপ্তাহের মাঝারি ও ভারী বর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি বানে যৌবন ফিরিয়ে দিতে থাকে তার। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পানি, সঞ্চার হতে থাকে প্রাণ। রোগা ভাব কাটিয়ে সে এখন পূর্ণ যৌবনা। খরস্রোতা না হলেও প্রবহমান। 

গোমতীর সুদর্শন বেড়িবাঁধ ও নদীর পাড়ঘেঁষা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ছোট ছোট বিনোদনকেন্দ্র। এগুলো ঘিরে শেষ বিকেলে জমে দর্শনার্থীদের ভিড়। নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড় বাড়ে নদীর পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত