বান্দরবানের পার্বত্য জেলার আলীকদমের উত্তর পালংপাড়ায় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের নামে তিন মাস আগে এলজিইডির ঠিকাদার রাস্তার ইট তুলে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সড়ক দিয়ে গাড়ি ও গ্রামবাসীর চলাচলে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। এলজিইডির দায়িত্বশীল কর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দিলেও কোনো কাজ হয়নি।

জানা গেছে, এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আলীকদম সদর ইউনিয়নে মুরুং কমপ্লেক্স সড়ক ও উত্তর পালংপাড়া রাস্তা সংস্কারে বান্দরবান এলজিইডি থেকে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্মা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার বিএনপি নেতা শাহাদতকে নিয়োজিত করা হয়েছিল। কিন্তু গত অর্থবছরের শেষের দিকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ শুরু করার পর দুটি এইচবিবি সড়কের সমস্ত ইট তুলে নিয়ে যান। সড়কের অর্ধেকের বেশি আরসিসি ঢালাই দেওয়া হলেও অদ্যাবধি অবশিষ্ট রাস্তার কাজ আর করা হয়নি। ইট তুলে ফেলায় রাস্তার অবশিষ্ট অংশে গত তিন মাস ধরে গাড়ি ও স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। কিছুদিন পরপর বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কাদা জমে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের যে অংশে আরসিসি ঢালাই দেওয়া হয়েছে, সেখানে গুণগত মান বজায় রাখা হয়নি। আগের চেয়ে সড়ক নিচু করায় রাস্তার ঢালাইয়ের ওপর মাটি পড়ে আছে। তা ছাড়া সড়কের দুপাশের অনেকাংশে মাটি না দেওয়ায় কাঠামো দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে সঠিক পুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে উত্তর পালংপাড়ার বাসিন্দা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘ঠিকাদার এলজিইডির শিডিউলমতো কাজ করেননি। আরসিসি ঢালাইয়ের নিচে ভালোভাবে বালু দেওয়া হয়নি। ঢালাইয়ের পুরুত্বও বেশি নয়, যা সরেজমিন তদন্ত করলেই বোঝা যাবে।’

১ নম্বর আলীকদম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আবু সালাম বলেন, ‘প্রকল্পের রাস্তাটি আমার ওয়ার্ডের। এলজিইডির ঠিকাদার কেন সংস্কারের নামে রাস্তার ইট তুলে নিয়ে গেল তা আমি জানি না। এতে এলাকার লোকজনের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাস্তা রক্ষার্থে গাইড ওয়াল নির্মাণ করলেও সেখানে মাটি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যানকে দিয়ে ঠিকাদারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করানো হয়েছিল।’

কাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিএনপির নেতা ঠিকাদার শাহাদত বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে সঠিক সময়ে কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি।’

এ বছর তো এখানে তেমন বৃষ্টি হয়নি—এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে ঠিকাদার বলেন, ‘আমরা শিগগির কাজ শুরু করব।’ সঠিক সময়ে কাজ করতে না পারলে তিন মাস আগে কেন ইট তুলে নেওয়া হলো—জানতে চাইলে কথা শোনা যাচ্ছে না বলে কল কেটে দেন তিনি। 

বান্দরবান এলজিইডির সিনিয়র প্রকৌশলী জামাল উদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিকাদারকে ডেকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি। যদি না করেন, তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। একই সঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকেও মৌখিকভাবে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’