দুদকের চিঠি পড়ে আছে বেনজীরের বাড়ির অভ্যর্থনাকক্ষে 

নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ১৯: ৫৪
আপডেট : ০২ জুন ২০২৪, ১৬: ৫৬

গুলশান-১-এর লেকপাড় থেকে ১৩০ নম্বর সড়ক ধরে কয়েক কদম হাঁটলেই ১২৬ নম্বর সড়ক। দুই সড়কের সীমানায় গড়ে ওঠা সুউচ্চ ভবনটিই পুলিশের সদ্য সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বাড়ি। চারপাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কয়েকটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হয় আশপাশ। 

ভেতরে ছোট ছোট দুটি কক্ষে নিরাপত্তারক্ষীদের অবস্থান। দুই দুয়ারি এই ভবনের বাইরে ফুটপাতঘেঁষা কাচে ঘেরা ফুলবাগান। ফুলবাগানের আড়ালে বাড়ির নামফলকে লেখা সড়ক ও বাড়ির নম্বরসহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা। 

এই ঠিকানায় গত ২৮ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের আগামী ৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

চিঠি যখন এই বাড়িতে এসে পৌঁছায়, তার আগেই সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়েছেন। তাই দুদকের চিঠি তাঁদের হাতে পৌঁছায়নি, পড়ে আছে আলিশান এই ভবনের অভ্যর্থনাকক্ষে। 

এই বাড়িতেই থাকতেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।আজ শনিবার দুপুরে গুলশানের এই বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য। 

বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের কেউ এখন এই বাড়িতে না থাকায় তাঁদের পক্ষে কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। কথা হয় বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী রাকিবের সঙ্গে। 

বেনজীর আহমেদমিলেনিয়াম সার্টিস সিকিউরিটি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি এজেন্সিতে কাজ করা এই নিরাপত্তারক্ষী আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘তিন সপ্তাহ আগে তিনি (বেনজীর আহমেদ) এই বাড়ি থাইকা বাইর হয়া গেছেন। তারপরে আর আসেন নাই। কই আছেন জানি না। খবরে দেখছি, উনি নাকি বিদেশ গেছেন।’

এখন বেনজীর আহমেদের খোঁজে কেউ এই বাড়িতে আসে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাকিব বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে দুদক থেকে তিনজন লোক আসছিল। কয়েকটা চিঠি দিয়া চইলা গেছে। তারা না থাকায় চিঠিগুলা রিসেপশনে দিয়া গেছে। এখনো ওইগুলা রিসেপশনেই আছে। এ ছাড়া কয়েকটা চ্যানেল থাইকা কয়েক দিন লোক আসছিল। তারা কিছুই পায় নাই।’

 পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বাড়িতে প্রবেশ করছে একটি প্রাইভেট কার।বেলা আড়াইটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় এই বাড়ির সামনে অবস্থান করে সুনসান অবস্থা দেখা গেছে। খুব বেশি লোকজনের যাতায়াত নেই। এই সময়ের মধ্যে একটি প্রাইভেট কারে করে চালকসহ একজন বাসিন্দাকে বের হতে দেখা গেছে। আবার একটি প্রাইভেট কারে করে তিনজন বাসিন্দাকে ঢুকতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া এই বাড়ির দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তিকে বের হতে ও ঢুকতে দেখা গেছে। এই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যান।

এরপর বাড়ির ১৩০ নম্বর সড়কঘেঁষা গেটের কাছে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর কাছে ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাওয়া হয়। নিরাপত্তারক্ষী রাকিব এতে বাধা দিয়ে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি নেই বলে জানান। এই গেটে দাঁড়িয়েই তাঁর সঙ্গে কথা হয়। কথা বলে জানা যায়, এই বাসার ১২ তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন বেনজীর আহমেদ। এখন সেই ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ। কেউ আর থাকেন না সেখানে। 

তিনি বলেন, ‘স্যার একসময় দামি গাড়িতে চলাচল করতেন। সেগুলা গ্যারেজেই থাকত। এখন গ্যারেজে হের কোনো গাড়ি নাই। একটা গাড়ি ছিল, পুলিশের লোকজন আইসা নিয়া গেছে।’ 

এই নিরাপত্তারক্ষী জানেন না একসময়ের দাপুটে পুলিশ কর্মকর্তা এখন কোথায় আছেন, কেনই-বা তিনি এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। হিসাবটা কোথাও গিয়ে মেলাতে পারছেন না রাকিব।

তবে বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ছাড়ার পরে বেনজীর আহমেদ সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে দুদক বলছে, গুলশানের এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মতো আরও কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের। এ ছাড়া তাঁর জন্মস্থান গোপালগঞ্জে ৩৪৫ বিঘা ও মাদারীপুরে ২৭৩ বিঘা অবৈধ জমির সন্ধান পেয়েছে এই সংস্থা। এসব তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে। কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে দুদক।

বিস্তারিত আরও পড়ুন—

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত