করোনায় নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২২, ২২: ৫৬

নারীর সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগকে সীমিত করে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অবৈতনিক কাজের চাপ এবং পারিবারিক সহিংসতা বাড়িয়ে দিয়েছে করোনা। মহামারির প্রভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নারী কর্মীরা আর্থিক সংকটের মুখে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। করোনার দুই বছরে হাজার হাজার নারী অভিবাসী শ্রমিককে কোনো বেতন ছাড়াই নিজ দেশে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। দেশে ফেরা এই শ্রমিকেরা আর্থিক সংকটের পাশাপাশি সামাজিকভাবে নিন্দা ও অপবাদের সম্মুখীন হয়েছেন। করোনায় বাল্যবিবাহও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

অনলাইনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেন (সিএসডব্লিউ) এর ৬৬ তম অধিবেশনের এক প্যারালাল ইভেন্টে এসব কথা বলেন বক্তারা। আজ রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

গত ১৪ মার্চ শুরু হয়ে ২৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই অধিবেশন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের স্ট্যাটাসভূক্ত সহযোগী সংগঠন হিসেবে প্রতি বছরের মতো এবারও এ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেছে।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। তিনি জানান, বাংলাদেশের মোট কর্মরত জনসংখ্যার ৯১ দশমিক ৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত। এর মধ্যে ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ নারী এবং ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ।

এ সময় শরমিন্দ নিলোর্মী ব্র্যাক, ইউএন উইমেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি সংস্থার জরিপ ও সমীক্ষার তথ্য পর্যালোচনা করে বলেন, দেশের ৯১ শতাংশের বেশি নারী কোনো বেতন ছাড়াই গৃহস্থালি ও পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী তাদের গৃহস্থালির কাজে স্বামীর সহায়তা পান। করোনাকালে নারীর ওপর সহিংসতা বেড়েছে। ৪৮ শতাংশ নারী মানসিক, ১৯ শতাংশ শারীরিক, ৩১ শতাংশ অর্থনৈতিক এবং ২ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

সভায় জানানো হয়, করোনাকালে ৪১ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাকে তাদের কর্মচারী ছাঁটাই করতে হয়েছে। ৬৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার কোনো আয় ছিলো না, তাদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এর ফলে ৯০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা এবং ৯৭ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নারী কর্মী আর্থিক সংকটের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। ৭৮ শতাংশ নারী প্রধান পরিবার আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ বলেন, কোভিড অভিঘাত মোকাবেলা করে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে টেকসই করতে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। নারীদের অনেকে জানে না কীভাবে অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতে হয়, তাদের সহায়তা দিতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে হটলাইন নাম্বার সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে, বাবা-মা ও কাজীকে সচেতন হতে হবে, শিক্ষা কারিকুলামে এ সম্পর্কে যুক্ত করতে হবে। যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভিবাসী হয়েছে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনতে হবে।

সভার আলোচকেরা। ছবি: সংগৃহীতঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক তানভীর মাহমুদ বলেন, নারী ও পুরুষের কোভিড অভিঘাত মোকাবেলার ক্ষেত্র ভিন্নভাবে চিহ্নিত করতে হবে। লৈঙ্গিক অসমতা দূর করতে হলে নারীদের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হবে কোভিড মোকাবেলা করে নারীর পূর্বের অর্জন ফিরিয়ে আনতে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করা।

এ সময় ফওজিয়া মোসলেম নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করতে মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার অনুরোধ জানান। এ ছাড়া তিনি জেন্ডারভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি এবং জেন্ডার বাজেট বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের ওপর জোর দেন।

সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ইন্টারন্যাশনাল উইমেন পিস গ্রুপসহ বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধিরা যুক্ত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত